জীবিকার তাগিদে নিরন্তর লড়াই করে যাচ্ছেন মাধবপুর উপজেলার পাঁচটি চা বাগানের হাজারো নারী শ্রমিক। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু বদলে গেলেও তাদের কঠিন জীবনের বিধি আজও অপরিবর্তিত।
এসব চা বাগানের নারী শ্রমিক কাজের পাশাপাশি পরিবারের ভরণপোষণ, রান্নাবান্নাসহ যাবতীয় কাজ সামাল দেন। সেই সঙ্গে অনেকে আবার বাড়তি আয়ের আশায় সবজি চাষও করেন।
চা বাগানের সবুজ চা পাতা চয়নে নারী শ্রমিকের দক্ষতা অনেক বেশি। কাজের বিনিময়ে যে মজুরি ও রেশন পান, তা দিয়ে তাদের পরিবারের সব চাহিদা মিটছে না। বাগানের পক্ষ থেকে যে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা, সরকারিভাবে তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধাও মিলছে না।
উপজেলায় নোয়াপাড়া, বৈকুণ্ঠপুর, জগদীশপুর, সুরমা ও তেলিয়াপাড়া চা বাগানে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার নারী শ্রমিক কাজ করেন। বাগানে যারা কাজ করেন, সেসব নারীর রয়েছে সংগ্রামী জীবন।
নোয়াপাড়া চা বাগানের সুখন্তি রেলি নামে এক নারী শ্রমিক জানান, নারী শ্রমিকরা কঠোর পরিশ্রম করেন। ভোরে ঘরের কাজ সেরে ঠিক সময়ে বাগানের কাজে হাজির হন। এর বিনিময়ে যে পরিমাণ মজুরি ও রেশন পান, তা দিয়ে ভালো থাকা কঠিন।
জগদীশপুর চা বাগানের নারী শ্রমিক মালতি মুন্ডা জানান, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাহাড়, টিলা, জঙ্গল ঠেলে তাদের বাগানে কাজ করতে হয়। বৈরী আবহাওয়াতেও তারা কাজ করেন বিনা দ্বিধায়। অনেক নারী শ্রমিক কাজের সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাগানে কোনো ভালো চিকিৎসক না থাকায় সঠিক চিকিৎসা পাওয়া যায় না।
এসব বাগানের নারী শ্রমিকদের অধিকাংশ অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগেন। সরকারিভাবে বাগানের অবহেলিত নারীদের জন্য তেমন কিছু করা হয় না।
উপজেলার মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা পিয়ারা বেগম জানান, নারী শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সরকারি সহায়তা প্রকল্প রয়েছে। সবাইকে সেবার আওতায় নেওয়া সম্ভব নয়। এসব সেবার পাশাপাশি নারীর স্বাস্থ্য বিষয়ে জোর দিতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
যখন টাকা খাওয়া যাবে, তখন শিক্ষক নিয়োগ দেবেন?: ইবি শিবির সভাপতি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেছেন, “ইবিতে উপাচার্য নিয়োগ হওয়ার পরে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। তাদের সার্কুলারে যারা প্রভাষক হয়েছিলেন, তারা এখন অধ্যাপক হচ্ছেন। কিন্তু ইবি প্রশাসন শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে শুধু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ছাড়া কোনো পদক্ষেপ গ্রহণনি।”
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বিভাগও আছে, যেখানে শিক্ষক মাত্র দুইজন। শিক্ষক নিয়োগে কেনো এত দেরি হচ্ছে আপনাদের? সুবিধাজনক সময়ে যখন টাকা খাওয়া যাবে, তখন শিক্ষক নিয়োগ দেবেন? এই সমস্ত তালবাহানা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলবে না।”
রবিবার (২ আগস্ট) বিকেল ৩টায় নিরাপদ ক্যাম্পাস, সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষার আলোকে ক্যাম্পাস সংস্কারের দাবিতে শাখা ছাত্রশিবির আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহমুদুল হাসান বলেন, “ছাত্র সংসদ গঠনে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন বলার পরেও আইনের দোহাই দিয়ে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। কিন্তু ইবির পরে প্রতিষ্ঠিত অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ গঠনের পদক্ষেপ নিয়েছে। আপনারা কেনো পারছেন না? এই ভয়ে যে, চেয়ার চলে যাবে? শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করলে তারাই আপনাদের চেয়ারে রাখবে। আর না হয় হাসিনাকে যেভাবে সরিয়েছে, আপনাদেরও সেভাবে সরাবে।”
তিনি বলেন, “জুলাই বিপ্লবের ১ বছরে পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লেখযোগ্য সংস্কার চেখে পড়েনি। আমরা ভেবেছিলাম জুলাইয়ের পরে আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে না, আমরা কথা বলার অধিকার পাব, সনদপত্র তুলতে ভোগান্তি হবে না, চিকিৎসা কেন্দ্র সংস্কার হবে, ক্যাম্পাস ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মুক্ত হবে, গুম হওয়া ওয়ালীউল্লাহ-মুকাদ্দাস ভাইকে ফেরত পাব। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রশাসন কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে পারেনি।”
তিনি আরো বলেন, “এর মধ্য দিয়ে প্রশাসন জুলাই বিপ্লবকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। ক্যাম্পাস কতটা অনিরাপদ হলে আমাদের ভাইয়ের লাশ পুকুরে পাওয়া যায়। কিন্তু এর নির্ভরযোগ্য কোনো ফুটেজ বা তথ্য প্রশাসন দিতে পারেনি।”
নিরাপদ ক্যাম্পাস, সাজিদ আব্দুল্লাহর মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষার আলোকে ক্যাম্পাস সংস্কারে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। অন্যথায় তারা প্রশাসনকে আসসালামু আলাইকুম বলতে বাধ্য হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সংগঠনটি। পরে মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রধান ফটকে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
এ সময় তারা ‘যদি না হয় সংস্কার, এই প্রশাসন কি দরকার’, ‘পুকুরে লাশ কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘সাজিদ হত্যার তদন্ত, করতে হবে করতে হবে’, ‘অনলাইন পেমেন্ট চালু কর, ভোগান্তি দূর কর’, ‘কর্মকর্তা জমিদার, লাঞ্চ করতে দিন পার’, ‘ইবিতে ছাত্র সংসদ, চালু কর করতে হবে’, ‘ইকসু নিয়ে টালবাহানা, আর না আর না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের হাতে হল ডাইনিং ও ক্যাফেটেরিয়ার পানি ও খাবারের মান নিশ্চিত করতে হবে, স্বৈরশাসনের সময় বর্ধিত ও অযৌক্তিক ফি কমাতে হবে, গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে, নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে হবে, ওয়ালিউল্লাহ ও আল মুকাদ্দাস ভাইয়ের সন্ধান চাই ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী