যে সাতটি মনস্তাত্ত্বিক কৌশল আপনাকে প্রভাবশালী করে তুলবে
Published: 12th, July 2025 GMT
ক্ষমতা মানেই শুধু টাকাপয়সা, উঁচু পদ বা শারীরিক শক্তি নয়। সত্যিকার ক্ষমতা আসে অন্যের মন বুঝে, সঠিক সময়ে সঠিক কথা বলার দক্ষতা থেকে। আর এই ক্ষমতা গড়ে তুলতে মনোবিজ্ঞান হতে পারে আপনার সবচেয়ে বড় সহায়।
কখন কীভাবে কথা বলবেন, কার সামনে নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করবেন কিংবা কীভাবে কারও আস্থা অর্জন করবেন—এসব জায়গায় একটু বুদ্ধি খাটালেই আপনি হয়ে উঠতে পারেন আরও আত্মবিশ্বাসী ও প্রভাবশালী।
মনোবিজ্ঞানের শক্তি কাজে লাগিয়ে বাড়াতে পারেন আপনার আত্মবিশ্বাস ও প্রভাব। শরীরী ভাষা, শব্দ নির্বাচনের কৌশল ও সময়জ্ঞান কাজে লাগিয়ে আরও কার্যকর ও যুক্তিসংগত হয়ে উঠতে পারেন যেকোনো আলোচনা বা সম্পর্কে।
বেতন বাড়ানো নিয়ে আলোচনা, সম্পর্ক উন্নয়ন কিংবা কোনো কঠিন পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইলে কিছু সহজ মনস্তাত্ত্বিক কৌশল আপনার জন্য হতে পারে দারুণ সহায়ক। এসব কৌশল আপনাকে দ্রুত আস্থা ও শ্রদ্ধা অর্জন এবং আগের চেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে।
১.নীরবতার শক্তি ব্যবহার করুন
বেশির ভাগ মানুষ অস্বস্তিকর নীরবতা সহ্য করতে পারে না, বিশেষ করে কথোপকথনের সময়। কিন্তু এই নীরবতাই হতে পারে আপনার গোপন অস্ত্র। গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য বা কঠিন প্রশ্ন করার পর একটুখানি চুপ করে থাকুন। এই নীরবতা অন্য পক্ষের ওপর চাপ তৈরি করবে। অনেক সময় তাঁরা না ভেবেই এমন কিছু বলে ফেলবেন, যা তাঁরা বলতে চাইছিলেন না।
২. অন্যের শরীরী ভাষা অনুকরণ করুনকাউকে স্পষ্টভাবে না বুঝিয়ে বরং সূক্ষ্মভাবে তাঁর অঙ্গভঙ্গি, বসার ভঙ্গি বা কণ্ঠস্বরের ভঙ্গি অনুকরণ করতে পারেন। এতে তিনি আপনাকে আপনজন ভাবতে শুরু করবেন। একে বলে ‘মিররিং’ বা আয়নার মতো অনুকরণ করা, যা বিশ্বাস তৈরি করার একটি স্বাভাবিক কৌশল।
মানুষ সাধারণত তাঁদের মতো মানুষদেরই বেশি পছন্দ করে। তাই যদি আপনি দ্রুত কারও সঙ্গে সংযোগ তৈরি করতে বা তার চোখে ভালো ভাবমূর্তি গড়তে চান, তাহলে তাঁর শরীরী ভাষার সঙ্গে খানিকটা মিলিয়ে চলুন।
৩. সম্মতি পাওয়ার জন্য কথা বলার সময় মাথা নাড়ুনআপনি যখন কথা বলেন, সে সময় মাথা নাড়লে অন্যদের আপনার মতের সঙ্গে একমত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এটি একটি অচেতন সংকেত, যা আমাদের মস্তিষ্কে একধরনের বার্তা পাঠায়—‘এই কথাটা যুক্তিসংগত।’
বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আপনি আগে মাথা নাড়ালে শ্রোতারাও মাথা নাড়াতে শুরু করেন, এমনকি আপনার কথায় সম্মতিও প্রকাশ করেন।
আরও পড়ুনচাকরির ইন্টারভিউয়ে জেফ বেজোস একটা উদ্ভট কিন্তু দুর্দান্ত প্রশ্ন করতেন, কী সেটা০৭ জুলাই ২০২৫৪. আদেশ না দিয়ে বিকল্প দিয়ে দিনমানুষকে সরাসরি কিছু করতে বললে তাঁরা ভালোভাবে নেন না, কিন্তু নিজের মতো বেছে নিতে পারলে তাঁরা খুশি হন। তাই ‘এটা এখন করুন’ না বলে আপনি বলতে পারেন, ‘আপনি এই কাজটা আজ করবেন, নাকি আগামীকাল?’ এভাবে বললে তাঁরা মনে করেন, সিদ্ধান্তটা তাঁদের নিজেদের, কিন্তু আপনি যেটা চাইছেন, সেটাই তাঁরা শেষ পর্যন্ত করেন।
৫. কথার মধ্যে ব্যক্তির নাম ব্যবহার করুনমার্কিন লেখক ও আত্ম–উন্নয়ন প্রশিক্ষক ডেল কার্নেগি বলেছিলেন, ‘নিজের নাম প্রত্যেকের কানে সবচেয়ে মধুর শব্দ।’ কথার মাঝে মাঝে মানুষের নাম ব্যবহার করলে এটা তাঁদের মনোযোগ কাড়ে এবং আপনার কথা আরও আপন মনে করেন। এতে তৈরি হয় আন্তরিকতা এবং অপর পক্ষ বুঝতে পারে, আপনি মনোযোগ দিচ্ছেন। এতে অন্যরা আপনার কথায় আরও ইতিবাচকভাবে সাড়া দেন।
আরও পড়ুনশেফালি জরিওয়ালার মৃত্যুতে অ্যান্টি-এজিং ওষুধকে কেন দায়ী ভাবা হলো? কী বলছেন চিকিৎসক?০৩ জুলাই ২০২৫৬. ভালো লাগা বাড়াতে ছোট্ট অনুরোধ করুনউপকার করার অনুরোধ করলে কোনো ব্যক্তি আদতে আপনাকে আরও বেশি পছন্দ করতে শুরু করেন। এই মনস্তাত্ত্বিক কৌশলটি ‘বেন ফ্র্যাঙ্কলিন ইফেক্ট’ নামে পরিচিত। এর কারণ হলো, কেউ যদি আপনার জন্য কিছু করেন, তাহলে তিনি নিজের মনকে বোঝান, তিনি আপনাকে পছন্দ করেন বলেই এটা করেছেন। আপনি চাইলে খুব ছোট্ট একটি পরামর্শ বা সাহায্য চেয়ে শুরু করতে পারেন।
৭. ভরসা গড়তে তাঁদের কথার কিছু অংশ রিপিট করুনকেউ যখন কথা বলছেন, তখন তাঁদের কিছু শব্দ বা বাক্যাংশ আপনি আপনার উত্তরে ব্যবহার করুন। এতে তাঁরা বুঝতে পারেন আপনি মন দিয়ে তাঁদের কথা শুনছেন, আর তাঁরা নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। যেমন কেউ যদি বলেন, ‘অফিসে খুব চাপ যাচ্ছে!’ তখন আপনি উত্তর দিতে পারেন, ‘হ্যাঁ, তোমার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে ভীষণ চাপে আছ!’ এই ছোট কাজটাই মানুষের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করে।
সূত্র: এমএসএন
আরও পড়ুনবর্ষাকালে দেয়ালে ড্যাম্প এড়ানোর ঘরোয়া সমাধান জেনে রাখুন০৯ জুলাই ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর করব ন আপন র ন রবত আপন ক
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।
এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস