গণতন্ত্র, সুশাসন, বাকস্বাধীনতা, সাম্য এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। বিভিন্ন সংস্কারের জন্য যেসব কমিশন গঠন করা হয়েছে, সেসব কমিশনের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। সেই প্রত্যাশা পূরণে আমার কিছু প্রস্তাবনা এখানে তুলে ধরা হলো।  

আমাদের জনসংখ্যার মধ্যে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী ৬৮ শতাংশ। বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে যদি সততার সঙ্গে সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায়, তবে এ দেশ সুন্দর, সুশঙ্খল হতে কোনো বাধা থাকবে না। এসব মানুষকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য মেকানিজম তৈরি করে দিতে হবে। 
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবস্থায় অনির্বাচিত ব্যক্তিরা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন বলে যে অভিযোগ আছে, সে সমস্যার সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার নির্বাচন যেমন ইউনিয়ন পরিষদ, ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্দলীয়ভাবে হতো। সেই নির্দলীয় ব্যবস্থা পুনরায় ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশের সব ইউনিয়ন ও সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচনের আয়োজন করা যেতে পারে। সারাদেশের সব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি এবং রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা যেতে পারে। পার্লামেন্ট সদস্যরা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে এবং রাষ্ট্রপতি ও তাঁর উপদেষ্টা পরিষদ প্রান্তিক জনগণের প্রতিনিধিদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন। অনির্বাচিত ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা এই বদনাম থেকে যাতে রক্ষা পায়।


রাষ্ট্রের জ্ঞানী, শিক্ষিত নির্দলীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ১০ বা ১৫ সদস্য রাষ্ট্রপতি ও উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হবে। পার্লামেন্ট সদস্যরা রাষ্ট্রপতি ও উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের জন্য ৩০ থেকে ৫০ সদস্যবিশিষ্ট ব্যক্তিদের তালিকা প্রস্তাব ও অনুমোদন করবেন, যাদের বাংলাদেশের যে কোনো রাজনৈতিক দল সহযোগী বা অঙ্গসংগঠনের কোনো পদে অধিষ্ঠিত থাকা অযোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে। রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন মন্ত্রণালয়, নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, অব্যাহতি, জনপ্রশাসনের একটি অংশ থাকবে। রাষ্ট্রপতি উপদেষ্টা পরিষদের সহায়তায় পরিচালনা করবেন।
সব মন্ত্রণালয়, দপ্তর ও অধিদপ্তরের শীর্ষ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এবং রাষ্ট্রপতি দপ্তর আলোচনা করে সমঝোতার মাধ্যমে নিয়োগ দেবেন। রাষ্ট্রপতি এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা মাত্র একবারের জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছর নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন।
বাংলাদেশের নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ইউনিয়ন পরিষদ, ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শোভনীয় নয়। তবে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কোনো সদস্য দলের প্রাথমিক সদস্য থেকে পদত্যাগ করার পর পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হলে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বা ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য কমপক্ষে ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী হতে হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের কাজের এলাকা, ক্ষমতা, দক্ষতা বাড়ানোর নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

বাংলাদেশের আনুমানিক ১ কোটি ২০ লাখ নাগরিক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাস করে। তারা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবস্থা করছেন অথচ দেশের জাতীয় নির্বাচনে তারা ভোট দিতে পারেন না। বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের জন্য পোস্টাল ভোটের ব্যবস্থা করা উচিত। 

যারা বিসিএস বা অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজে যোগদান করেন, সবাই নিজের সর্বোচ্চটা রাষ্ট্র বা জনগণকে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সংকীর্ণ বা দলীয় রাজনীতির অভিশাপে অনেকে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। বেশির ভাগ স্বপ্ন ভঙ্গ হয় দলীয় নিকৃষ্ট রাজনৈতিক কালচারের কারণে। কীভাবে প্রতিভা নষ্ট হয়ে যায়, তার একটি অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা।


জাতীয় সরকার অর্থাৎ ভবিষ্যতে অনুষ্ঠিত নিরপেক্ষ নির্বাচনে যে দল যত আসন পাক না কেন, সবাই মিলে একটি জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। অন্যটি হচ্ছে, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে সংসদে উচ্চকক্ষ গঠন করা। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একনায়ক স্বৈরাচারের পতন এবং পলায়নের পর আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বে এবং তাদের দোসরদের বিচার এবং শাস্তি অবশ্যই হতে হবে। বিচারের ক্ষেত্রে ন্যায় ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ে বিচারের কাজ শেষ করতে হবে। 


যে কোনো যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সঠিক বা উপযুক্ত পরিবেশ এবং সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপামর ছাত্র-জনতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের ফলে একনায়ক স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর বর্তমানে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সংস্কারের যুগান্তকারী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। দলীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং নির্দলীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি– যারা জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে অথবা প্রান্তিক জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত– উভয়ের সমন্বয়ে একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা বাংলাদেশের বর্তমান সমস্যা সমাধানে, সব প্রতিষ্ঠান পুনরায় নির্মাণসহ নতুন বৈষম্যহীন বাংলাদেশ তৈরিতে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী বলে আমি মনে করি।  অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দিয়ে বাংলাদেশ পরিচালনার অপবাদ থেকে দেশ রক্ষা পাবে। বিচার ব্যবস্থায় এবং বিচারকের বিভাজন-দলাদলি থেকে রক্ষা করে তাদের প্রকৃত কাজে যত্নবান হওয়ার সুযোগ তৈরি করবে।


মো.

নঈম তাহের: গবেষক 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ষ ট রপত র ব যবস থ ন র দল য উপদ ষ ট র জন য সদস য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

স্বচ্ছতার জন্য ডিএনসিসির প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে:

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।  

সোমবার (২৮ এপ্রিল) ডিএনসিসির ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত পশ্চিম শেওড়াপাড়া, পশ্চিম কাজীপাড়া ও সেনপাড়া পর্বতা এলাকায় ৪ কিলোমিটার রাস্তা, ৫ কিলোমিটার নর্দমা ও দেড় কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণকাজের উদ্বোধন ও গণশুনানি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা জানান।

ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, ডিএনসিসির সব প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। প্রকল্পটি কবে শুরু হবে, কবে শেষ হবে, কতা টাকা বরাদ্দ আছে—এসব তথ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এছাড়া, রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ হলে নির্মাণ সামগ্রী কী, সেটা জনগণের জানা দরকার। যখন জনগণ জানবে, তখন তারা জবাবদিহি করতে পারবে।

তিনি বলেন, “আমি গত সপ্তাহে কাউকে না জানিয়ে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডে চলমান কাজ পরিদর্শন করতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, রাস্তাকে ধরে রাখার জন্য যে ওয়াল (বিশেষ দেয়াল) দেওয়া হয়েছে, সেটার পিলার বানানোর কথা ছিল স্টোন দিয়ে; কিন্তু বানিয়ে রেখেছে ব্রিক দিয়ে। এটা বড় দুর্নীতি। স্থানীয় মানুষ যদি না জানে, কী নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হবে, তাহলে দুর্নীতি করাটা সহজ। তথ্যের যত বেশি আদান-প্রদান হবে, তথ্য যত বেশি পাবলিক করা হবে, জনগণ তত বেশি জবাবদিহি করতে পারবে। আমি ঠিকাদারকে জানিয়ে দিয়েছি, সঠিক নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার না করলে বিল দেব না। তারা বলেছে, এটা ঠিক করে দেবে।” 

মোহাম্মদ এজাজ বলেন, যার যার এলাকার কাজ তারা বুঝে নেবেন। বুঝে নেওয়ার জন্য যত তথ্য ও সহযোগিতা লাগবে, সেটা আমরা দেব। ডিএনসিসির ওয়েবসাইটে প্রকল্পের সব তথ্য ও ঠিকাদারের ফোন নম্বরসহ দেওয়া থাকবে। স্থানীয় জনগণ স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাজ বুঝে নেবেন। আমরা চাই, সকলের অংশগ্রহণে উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হবে। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।”

তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে গিয়ে স্থানীয় সোসাইটি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতা পাচ্ছি। সবার অংশগ্রহণ বাড়াতে আমি বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের নিয়ে গণশুনানি করছি। প্রতি মাসে ফেসবুক লাইভে দেশে-বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের সাথে যুক্ত হচ্ছি। ডিএনসিসির সবার ঢাকা অ্যাপ আছে, সেটির পাসওয়ার্ড পর্যন্ত আমাদের দিচ্ছে না। আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা ৪ কোটি টাকা খরচ করে এই অ্যাপ বানিয়েছে। পাসওয়ার্ড না দিলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।”

ডিএনসিসির প্রশাসক বলেন, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর এলাকায় হকারদের জন্য হাটা যায় না। মানুষের অবাধ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। ঢাকা শহরে মানুষের চলাচলের অধিকার সবার আগে, সেই অধিকার আমরা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। মিরপুর-১০ এর প্রধান সড়কের যত হকার ও অটোরিকশা আছে, সেগুলো আমরা বন্ধ করে দেব। যারা এ ধরনের ইনফরমাল পেশায় যুক্ত আছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্যও আমরা প্ল্যাটফর্ম করব। তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা আমরা তৈরি করব। এই শহরটা সবার, সবাই একসাথে বসবাস করব; কিন্তু অন্যদের কষ্ট না দিয়ে, অন্যের অধিকার নষ্ট না করে। 

বক্তৃতা শেষে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন এবং মোনাজাতে অংশ নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহাবুব আলম, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

ঢাকা/এএএম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের সাথে পুলিশের মতবিনিময়
  • ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সিপিবি নেতার সৌজন্য সাক্ষাৎ
  • রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত স্থগিতের দাবি রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের
  • ট্রাম্প কানাডাকে ‘ভেঙে ফেলতে’ চেয়েছিলেন
  • পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
  • মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
  • হামদর্দের গাজার জনগণের প্রতি মানবিক সহায়তা
  • প্রশাসক নিয়োগের বিরুদ্ধে রিট, ইউনিয়ন পরিষদটিতে চার মাস ধরে সব সেবা বন্ধ
  • সংসদে সংরক্ষিত আসন, না তৃণমূল রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সুযোগ?
  • স্বচ্ছতার জন্য ডিএনসিসির প্রকল্পের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে: