সরকারের ঋণ হবে সাড়ে ২৩ লাখ কোটি টাকা
Published: 12th, July 2025 GMT
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষে সরকারের দেশি-বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ কোটি টাকায়। সেই হিসাবে আগামী বছর ঘোষিত সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে নির্বাচিত সরকারের কাঁধে শুরুতেই বড় অঙ্কের ঋণের বোঝা চাপবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ বলছে, চলতি অর্থবছর শেষে সরকারের দেশি-বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৩ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে দেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়াবে ১৩ লাখ ২৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা; আর বিদেশি ঋণের স্থিতি ১০ লাখ ১৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের বাজেট উপলক্ষে অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রকাশিত তিন বছর মেয়াদি মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি-বিবৃতি পর্যালোচনায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। বিবৃতিতে অর্থ বিভাগ প্রাক্কলন করেছে, ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে সরকারের ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ২৬ লাখ ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। তার পরের বছর শেষে ঋণ ২৮ লাখ ৯৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
অর্থ বিভাগ যখন এই প্রাক্কলন করছে, তখন দেশের রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি ভালো নয়। রাজস্ব-জিডিপির হার ৮ শতাংশের ঘরে। আবার ২০২৬ সালের শেষে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে যাবে বাংলাদেশ। তখন বহুপক্ষীয় ও দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ নিতে হবে উচ্চ সুদে। ঋণ পরিশোধের সময়ও কমবে অর্থাৎ স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ আর পাওয়া যাবে না।
■ গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটে ঋণ-জিডিপির অনুপাত ধরা হয়েছিল ৩৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ■ ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ঋণের স্থিতি বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ২৯ লাখ কোটি টাকা।অর্থ বিভাগের নীতি-বিবৃতির তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের ঋণের স্থিতি ছিল ১৮ লাখ ৮১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের জন্য ঋণে স্থিতি প্রাক্কলন করা হয় ২২ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। তবে অন্তর্বর্তী সরকার তা সংশোধন করে ২১ লাখ ১১ হাজার ৯০০ কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছে।
বাজেট বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিগত সরকারের রেখে যাওয়া সংকটাপন্ন অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে রাখা হবে।
ঋণঝুঁকিতে বাংলাদেশনীতি-বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ঋণ-জিডিপির অনুপাত এখন পর্যন্ত সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তবে ধীরে ধীরে তা বাড়ছে। এ পর্যন্ত বৈদেশিক ও সামগ্রিক ঋণ ‘নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ’ অবস্থানে রয়েছে। তবে বিবৃতিতে এ-ও বলা হয়েছে, বহিঃশক অর্থাৎ বৈদেশিক ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি হওয়া চাপের কারণে আরও ঝুঁকির মুখে পড়তে হতে পারে বাংলাদেশকে।
এদিকে সদ্য প্রকাশিত সরকারের মধ্যমেয়াদি (২০২৫-২৬ থেকে ২০২৬-২৭) ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, পরিমাণ বেশি হওয়ায় নিম্ন থেকে প্রায় উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছেছে বাংলাদেশ।
বিদ্যমান বাস্তবতায় অর্থ বিভাগের বেশি দুশ্চিন্তা হচ্ছে, বৈদেশিক ঋণ ও রপ্তানি অনুপাত। অর্থ বিভাগ বলছে, এ অনুপাত এখন ১৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে না পারলে মধ্য মেয়াদে ঋণ ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকার গত অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করেছিল। তবে গত আগস্টে সরকার বদলের পর অন্তর্বর্তী সরকার সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৫৫ লাখ ৫২ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছে; আর ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য জিডিপির প্রাক্কলন করেছে ৬২ লাখ ৪৪ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের ঋণ-জিডিপির অনুপাত ছিল ৩৭ দশমিক ৬২ শতাংশ। পরের বছর মূল বাজেটে তা বেড়ে ৩৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়। যদিও সংশোধিত বাজেটে অন্তর্বর্তী সরকার তা কমিয়ে ৩৭ দশমিক ৪১ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।
নীতি-বিবৃতির প্রাক্কলন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর থেকে ঋণ-জিডিপির অনুপাত একটু একটু করে বাড়বে। যেমন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সাড়ে ৩৭ শতাংশ, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৩৭ দশমিক ৬৩ এবং ২০২৭-২৮ অর্থবছরে তা বেড়ে হবে ৩৭ দশমিক ৭২ শতাংশ।
সুদাসল পরিশোধে বিপুল ব্যয়নীতি-বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের আসল পরিশোধ করা হয় ২০২ কোটি মার্কিন ডলার। গত অর্থবছর শেষে তা বেড়ে দাঁড়াবে ২৬১ কোটি ডলারে। আর ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ২৯০ কোটি, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে ৩১২ কোটি এবং ২০২৭-২৮ অর্থবছরে ৩৩৪ কোটি ডলার ব্যয় করতে হবে বিদেশি ঋণের আসল পরিশোধে। বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল যোগ করলে এ অঙ্ক আরও বাড়বে।
সার্বিক বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ঋণ-জিডিপির অনুপাত যে জায়গায় এসে পৌঁছেছে, তাতে যথেষ্ট দুশ্চিন্তার কারণ আছে। কয়েক বছরের মধ্যে বিদেশি ঋণের বড় অঙ্কের আসল পরিশোধ করতে হবে। এখন দরকার ঋণ নেওয়ার দর-কষাকষি করার সক্ষমতা অর্জন করা। আবার কর-জিডিপির অনুপাত যে দুষ্টচক্রে আটকে গেছে, তা থেকে বের হওয়াও জরুরি।
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, আইএমএফের হিসাবে ঋণ-জিডিপির অনুপাত নির্ধারিত সীমার মধ্যে আছে বাংলাদেশ—এই কথা বলে আগের সরকার বাছবিচারহীনভাবে ঋণ নিয়েছে। এ ছিল অনেকটা অন্ধকারে শিস দিয়ে নিজেকে সাহস দেওয়ার মতো। এ অবস্থার অবসান চাইলে ভবিষ্যতে সরকারকে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঋণ র স থ ত অর থ ব ভ গ সরক র র বছর শ ষ পর শ ধ বছর র র আসল অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
আট পণ্যে আটকা দেশের রপ্তানি খাত
রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনার কোনো চেষ্টাই যেন কাজে আসছে না। সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া নগদ সহায়তা এবং উদ্যোক্তাদের নানা উদ্যোগের পরও পরিস্থিতির উন্নতি নেই। বরং রপ্তানি আয়ে গুটি কয়েক পণ্যের ওপর নির্ভরতা যেন বাড়ছেই। মূলত আট পণ্যে আটকে আছে দেশের রপ্তানি খাত।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যবহৃত বিশ্ব শুল্ক সংস্থার (ডব্লিউসিও) পণ্য শনাক্তকরণ নম্বর হারমোনাইজড সিস্টেম বা এইচএস কোড অনুযায়ী রপ্তানির তালিকায় বাংলাদেশের মৌলিক পণ্যের সংখ্যা ৭৫১। ৬ কিংবা ৮ সংখ্যার এইচএস কোড অনুযায়ী পণ্যের সংখ্যা অন্তত ১০ হাজার। এসব পণ্যের মধ্যে মাত্র আট পণ্য থেকে রপ্তানি আয় আসে প্রায় ৯২ শতাংশ। বাদবাকি ৯ হাজার ৯৯২ পণ্য থেকে আসে মাত্র ৮ শতাংশের মতো।
সদ্যসমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের উপাত্ত বলছে, অর্থবছরটিতে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় এসেছে ৪ হাজার ৮২৯ কোটি ডলার। এর মধ্যে আট পণ্যের অবদানই চার ৪১৬ কোটি ডলার। বাকি পণ্যের অবদান ৪১৩ কোটি ডলার। প্রধান আট পণ্য হচ্ছে– তৈরি পোশাকের নিট বা গেঞ্জি জাতীয় পণ্য, ওভেন বা শার্ট, প্যান্ট জাতীয় পণ্য, হোম টেক্সটাইল, কৃষিজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা, হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ এবং প্রকৌশল পণ্য ।
প্রথম অবস্থানে নিট পোশাক
রপ্তানি খাতে নিট পোশাকের অবস্থান প্রথম। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে দেখা যায়, গত অর্থবছরে মোট রপ্তানিতে নিট পোশাকের অবদান ৪৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। রপ্তানির পরিমাণ ২ হাজার ১১৬ কোটি ডলারের মতো, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছর, অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নিট পোশাক রপ্তানি থেকে আয় আসে ১ হাজার ৯২৮ কোটি ডলার।
ওভেনের অবস্থান দ্বিতীয়
মোট রপ্তানিতে পোশাক খাতের ওভেনের অবদান নিটের তুলনায় কিছুটা কম ৩৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ। রপ্তানির পরিমাণ ১ হাজার ৮১৯ কোটি ডলারের মতো। এ আয় গত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৮ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর ওভেন থেকে রপ্তানি আয় আসে ১ হাজার ৬৮৭ কোটি ডলার।
চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য
রপ্তানি আয়ের দিক থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং পাদুকার অবস্থান তৃতীয়। মোট রপ্তানিতে এ পণ্যের অবদান এখন ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। গত অর্থবছর এ খাতে রপ্তানি বেড়েছে ১০ শতাংশেরও বেশি। রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১১৫ কোটি ডলারের। আগের অর্থবছর যা ছিল ১০৪ কোটি ডলারের কিছু কম।
কৃষিজাত পণ্যের অবস্থান চতুর্থ
মোট রপ্তানি আয়ে এ খাতের হিস্যা ২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে রয়েছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, তাজা ও হিমায়িত সবজি, ফলমূল ইত্যাদি। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মধ্যে মসলা, চানাচুর, ঝালমুড়ি, বিস্কুট, সস, জেলি, আলুপুরি, পাঁপড়, নুডলস, চকলেট, বিভিন্ন ধরনের আচার, জুস, ফ্রুট ড্রিঙ্ক, চিপসসহ বিভিন্ন পণ্য। গত অর্থবছর এ খাতের রপ্তানি বেড়েছে ২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১০১ কোটি ডলার। আগের অর্থবছর এ পরিমাণ ছিল ৯৮ কোটি ডলার।
হোম টেক্সটাইল
পোশাক খাতের সমজাতীয় পণ্য হোমটেক্স বা হোম টেক্সটাইল। রপ্তানি খাতে হোম টেক্সটাইলের অবস্থান তৃতীয়। সরাসরি পোশাকের অংশ না হলেও গৃহসজ্জার বিভিন্ন সামগ্রী, যেমন– বিছানার চাদর, বালিশের কভার, পর্দা, কার্পেট, টেবিল ক্লথ, কুশন, টাওয়েল ইত্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত। রপ্তানি খাতে এ হোম টেক্সটাইলের অবদান ২ শতাংশের মতো। গত অর্থবছর এ খাতের রপ্তানি বেড়েছে আড়াই শতাংশের মতো। রপ্তানি হয় ৮৭ কোটি ডলারের বিভিন্ন হোম টেক্সটাইল পণ্য। আগের অর্থবছর এ খাতের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৫ কোটি ডলারের কিছু বেশি। অবশ্য অতিমারি করোনাকালে হোম কোয়ারেনটাইনের কারণে বিশ্বব্যাপী ২০২০-২১ অর্থবছর হোম টেক্সাইল পণ্যের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যায়। ওই অর্থবছর প্রথমবারের মতো ১০০ কোটি ডলারের ঘর ছাড়ায় হোম টেক্সটাইল খাত। মোট রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১১৩ কোটি ডলার। পরের অর্থবছর প্রায় ১৫০ কোটি ডলারের এ ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এতে রপ্তানি আয়ের হিসাবে তৈরি পোশাকের পরই দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি পণ্যের মর্যাদা পায় হোম টেক্সটাইল পণ্য। এ সুবাদে দেশের মোট রপ্তানি আয়ে এ খাতের অবদান এখন ৩ শতাংশের বেশি। তবে দেশে গ্যাসের সংকটে হোম টেক্সটাইল পণ্যের রপ্তানি আবার কমতে থাকে।
পাটের অবস্থান ষষ্ঠ
একসময় রপ্তানি খাতের প্রধান পণ্য ছিল পাট ও পাটপণ্য। মোট রপ্তানির ৯৭ শতাংশই আসত খাতটি থেকে। সেই সূত্রে স্বর্ণসূত্র বা সোনালি আঁশ বলা হতো পাটকে। ক্রমেই খাতটি রপ্তানিতে গৌরব হারায়। সমাপ্ত অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের বিবেচনায় পাট ও পাটপণ্যের হিস্যা কমে মাত্র ১ দশমিক ৭০ শতাংশে নেমে আসে। রপ্তানি হয় ৮২ কোটি ডলারের পাটপণ্য, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪ শতাংশ কম। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাট ও পাটপণ্যের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৮৬ কোটি ডলারের মতো।
প্রকৌশল পণ্য
প্রকৌশল পণ্য রপ্তানি খাতে খুব বেশি দিনের নয়। তবে ইতোমধ্যে খাতটি সম্ভাবনা জাগাতে সক্ষম হয়েছে। সমাপ্ত অর্থবছর রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৫৪ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। ওই অর্থবছর রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৯ কোটি ডলার। ইপিবির তথ্যমতে, বাংলাদেশ বর্তমানে যেসব প্রকৌশল পণ্য রপ্তানি করছে, তার মধ্যে আছে আয়রন-স্টিল, তামার তার, স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি সামগ্রী, প্রকৌশল যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রিক পণ্য, বাইসাইকেল এবং অন্যান্য পণ্য।
অষ্টম অবস্থানে মাছ
রপ্তানি খাতে একসময় হিমায়িত ও জীবন্ত মাছের প্রাধান্য ছিল। রপ্তানি তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল রূপালি সোনাখ্যাত খাতটি। তবে বিভিন্ন কমপ্লায়েন্স শর্ত পরিপালন ইস্যুতে খাতটি পিছিয়ে পড়ে। গত অর্থবছর এ খাতে রপ্তানি বেড়েছে ১৭ শতাংশ। পরিমাণে রপ্তানি দাঁড়ায় ৪৪ কোটি ডলারে। মোট রপ্তানি আয়ে এ খাতের অবদান এখন ১ শতাংশেরও কম।
নানামুখী প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রপ্তানি পণ্যে কেন বৈচিত্র্য আসছে না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, রপ্তানি নীতি ও কাঠামোগত নানা সমস্যার কারণে পণ্য রপ্তানি বছর বছর আরও কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বন্ডেড ওয়্যারহাউসের সুবিধা রপ্তানি খাতের সব পণ্যের জন্য উন্মুক্ত। বাস্তবে তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য কোনো খাত এ সুবিধা নিতে পারে না। কারণ এতসব কাগজপত্র চাওয়া হয় যে, অন্য খাতের অনেক উদ্যোক্তার পক্ষে সেগুলো দেওয়া সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, পণ্যে বৈচিত্র্য চাইলে পণ্যভিত্তিক পরিকল্পনা নিতে হবে।
দেশে রপ্তানি সংক্রান্ত সেবা দিয়ে থাকে ১৪টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের সেবায় কী ধরনের দুর্বলতা আছে, তা জানার চেষ্টা করছে ইপিবি। ইপিবির একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জরিপের ভিত্তিতে রপ্তানি সংক্রান্ত দুর্বলতা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সমস্যা সমাধানে একটি কর্মকৌশল নির্ধারণের কথা রয়েছে।
জানতে চাইলে ইপিবির পণ্য উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ শাহজালাল সমকালকে বলেন, জরিপের সুপারিশের ভিত্তিতে নেওয়া কর্মকৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে রপ্তানি সংক্রান্ত নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করা সহজ হবে। বিশেষ করে পণ্য উৎপাদন, মোড়কীকরণ ও রপ্তানি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হওয়ার মতো সামর্থ্য নেই– এমন ক্ষুদ্র এবং অদক্ষ উদ্যোক্তাও খুব সহজে রপ্তানি প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারবেন। ফলে রপ্তানি ঝুড়িতে অনেক পণ্য যুক্ত হবে। বৈচিত্র্য আসবে রপ্তানি খাতে। রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কোনো কোনো পণ্যে বিভিন্ন হারে নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ইপিবির এক জেলা এক পণ্য, বিশেষ পণ্য উন্নয়ন, বিদেশে মেলা-প্রদর্শনীতে উদ্যোক্তাদের অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়াসহ বেশ কিছু উদ্যোগ আছে।
আট পণ্য সীমিত থাকলেও রপ্তানি তালিকায় সম্ভাবনাময় পণ্য অনেক। অনেক দিন ধরে এসব পণ্যের সম্ভাবনার কথা শোনা যায়। আশার কথা হচ্ছে, কয়েক বছর ধরে এ ধরনের কিছু পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে। সর্বশেষ গত অর্থবছর আগের অর্থবছরের চেয়ে রপ্তানি বেড়েছে এমন পণ্যের তালিকায় রয়েছে কাগজ ও কাগজ পণ্য, ইলেকট্রিক পণ্য, জাহাজ, চা, স্পেশালাইজড টেক্সটাইল, হ্যান্ডিক্রাফটস, রাবার, গলফ সাফট, তামাক, কার্পেট, বাইসাইকেল, নিট ফেব্রিকস, ক্যাপ, সিরামিক প্রডাক্টস, জুট সকস অ্যান্ড ব্যাগ, ক্র্যাবস, ওষুধ, কেমিক্যাল প্রডাক্টস, উইগস ও মানুষের চুল, কপার ওয়্যার, প্লাস্টিক দ্রব্যাদি, পেট্রোলিয়াম বাই প্রডাক্টস ইত্যাদি। অন্যদিকে সম্ভাবনা কাজে লাগছে না এ রকম পণ্যের সংখ্যাও কম নয়। আগের অর্থবছরের চেয়ে গত অর্থবছর রপ্তানি কমেছে এমন পণ্যের তালিকায় রয়েছে সিমেন্ট, শাকসবজি, প্রকৌশলী যন্ত্রাংশ, চামড়া, জুট ইয়ার্ন অ্যান্ড টোয়াইন, চামড়াজাত পণ্য, শুকনো খাবার, কাঁচা পাট, টেরি টাওয়েলস, ফার্নিচার, গুঁড়া মসলা ইত্যাদি।