নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলের চার বছর পর মিয়ানমারের শাসক জেনারেলরা বৈধতা অর্জনের জন্য তাদের সর্বাধিক সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এর জন্য তারা আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর জোর দিচ্ছেন।

গত দুই মাসে, জান্তা ২০২৫ সালের নির্বাচনের জন্য প্রতিবেশীদের কাছে পরিকল্পনার রূপরেখা দিয়েছে, ভোটার তালিকা তৈরির জন্য পরিচালিত একটি আদমশুমারির ফলাফল প্রকাশ করেছে এবং রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে ঘোষণা করেছে যে তারা নির্বাচনের জন্য ‘স্থিতিশীলতা’ নিশ্চিত করতে কাজ করছে। সব মিলিয়ে, এই পদক্ষেপগুলো ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির সরকার উৎখাতের পর থেকে মিয়ানমারের জান্তার নির্বাচন অনুষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইচ্ছার ঘোষণা। 

বিশ্লেষক, বিদ্রোহী এবং কূটনৈতিক সূত্রসহ আটজনের মতে, জান্তার শাসন এবং নির্বাচনের বিরোধিতাকারী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কারণে ভোটের আগে উত্তেজনা বাড়তে পারে, যা উভয় পক্ষের অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর জন্য প্রচেষ্টার ফলে আরো সহিংসতার ঝুঁকি তৈরি করবে। । 

অবশ্য নির্বাচনের তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি। তবে দেশের মাত্র অর্ধেক অংশে ভোটগ্রহণ, কয়েক ডজন বিরোধী দল নিষিদ্ধ এবং শুধুমাত্র পূর্ব-পরীক্ষিত, সামরিকপন্থি দলগুলোকে প্রতিযোগিতায় অন্তর্ভুক্ত করার কারণে সমালোচকরা ইতিমধ্যেই জান্তার এই পদক্ষেপকে প্রহসন বলে উপহাস করেছেন। 

ডিসেম্বরে প্রকাশিত আদমশুমারির প্রতিবেদন অনুসারে, জান্তা দেশের ৩৩০টি শহরের মধ্যে মাত্র ১৪৫টিতে পূর্ণাঙ্গ আদমশুমারি পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছিল।

রাজধানী নেপিদোতে সরকারের আলোচনার সাথে পরিচিত এক সূত্রের মতে, জেনারেলরা চলতি বছরের শেষ নাগাদ মাত্র ১৬০-১৭০টি শহরতলিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করছেন।

সূত্র বলেছে, “তারা এগিয়ে যেতে চায়।” জান্তা নির্বাচনের আগে ওই অঞ্চলগুলিকে স্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছেন ওই সূত্র।

জান্তার একজন মুখপাত্রের কাছে মন্তব্য জানতে ফোন করলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

অভ্যুত্থানের পর থেকে প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সমন্বয়ে গঠিত একটি সশস্ত্র বিরোধী দল, জান্তা সরকারের কাছ থেকে দেশের একাংশ অঞ্চল ছিনিয়ে নিয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে জান্তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে এবং ক্রমবর্ধমানভাবে জান্তার নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলোকে দখলের চেষ্টা করছে।

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই

বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।

একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।

আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।

ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।

ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।

পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ