ভবন ভাঙার চেষ্টা, বনকর্মীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ
Published: 31st, January 2025 GMT
বনের জমিতে মাদ্রাসা ও এতিমখানা। গত বৃহস্পতিবার সেই মাদ্রাসা ভাঙতে যান বন বিভাগের লোকজন। মাদ্রাসার ছাত্ররা বাধা দিতে গেলে মারধর করে বন্দুক তাক করে বলে অভিযোগ উঠেছে। একজন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসীকে এগিয়ে আসতে বলেন। ঘোষণা শুনে পিঁপড়ার মতো ছুটে আসে মানুষ। মারধরের শিকার হন ৯ বনকর্মী।
এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন এলাকাবাসী। বন বিভাগের লোকজনের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মাওলানা হাবিবুর রহমান। বক্তব্য দেন স্কুলশিক্ষক আবু তালিব, ধলাপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, উপজেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল বাদশা আজাদ প্রমুখ।
জানা গেছে, ঘাটাইল উপজেলার শহরগোপীনপুর এলাকায় বনের জমিতে বহু বছর ধরে বসবাস করে আসছেন স্থানীয়রা। এখানে রয়েছে দিঘুলিয়াচালা মদিনাতুল উলুম রাহমানিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা। টিনের ঘর থেকে প্রায় পাঁচ মাস আগে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার সকালে মাদ্রাসার ভবন ভেঙে জমি উদ্ধার করতে যান বন বিভাগের লোকজন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, ভবন নির্মাণের সময় দফায় দফায় টাকা নিয়েছেন বন বিভাগের লোকজন। বৃহস্পতিবারও মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় মাদ্রাসা ভাঙতে যান তারা। ফলে মাইকে ঘোষণা দিয়ে বন বিভাগের পাঁচ কর্মীকে মাদ্রাসার একটি ঘরে আটকে রাখে এলাকাবাসী। মারধরের শিকার হন ৯ বনকর্মী। খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও যৌথ বাহিনী।
মাদ্রাসার সভাপতি রুহুল আমীন জানান, মাদ্রাসার ভবন নির্মাণের শুরু থেকেই টাকা দাবি করে আসছেন বন বিভাগের লোকজন। দফায় দফায় এক লাখ টাকা দেওয়া হয় তাদের। বৃহস্পতিবার সকালে এসে চার লাখ টাকা দাবি করেন তারা। টাকা না দেওয়ায় মাদ্রাসার এক ছাত্রের গায়ে হাত তোলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এলাকাবাসী তাদের আটকে রাখেন। তাঁর অভিযোগ, এলাকায় কেউ একটা ঘর তুলতে গেলেই বন বিভাগের লোকজনকে ঘুষ দিতে হয়।
স্থানীয় আবুল বাদশা আজাদের দাবি, ২০ বছর ধরে স্থানীয়দের কাছে থেকে টাকা নিচ্ছে বন বিভাগ। শুধু আত্মাটা ছাড়া প্রায় সব নিয়েছেন বন বিভাগের লোকজন। তাদের অপরাধ শত বছর ধরে বনের জমিতে বসবাস।
স্কুলশিক্ষক আবু তালিব হোসাইন বলেন, ‘আমাদের অপারাধ একটাই, শত বছর ধরে বংশপরম্পরায় বনের জমিতে বসবাস। অপরাধ যদি করে থাকি আমাদের বংশধররা করেছেন। আমরা এখন কোথায় যাব?’
বন বিভাগের ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা ওয়াদুদুর রহমানের ভাষ্য, বৃহস্পতিবার বনের জমি দখলমুক্ত করতে দিঘুলিয়াচালায় যান বন বিভাগের লোকজন। স্থানীয়রা তাদের ওপর হামলা করেছেন। এ ঘটনায় বন কর্মকর্তাসহ ৯ কর্মী আহত হয়েছেন। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
ঘাটাইল থানার ওসি রকিবুল ইসলাম বলেন, হামলার ঘটনায় শুক্রবার বন বিভাগ অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ময়মনসিংহে সাহিত্য আড্ডার স্থানসহ নানা স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিল প্রশাসন
ময়মনসিংহ ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে যৌথ অভিযানে নেমেছে জেলা প্রশাসন ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন। এ সময় সাহিত্য সংসদের ‘বীক্ষণ’ আসরের সাহিত্য আড্ডার স্থাপনাসহ পার্কের ভেতরে এবং বাইরে গড়ে উঠা ভ্রাম্যমাণ দোকান, বিজয়ী পিঠা বাড়িসহ সব ধরনের অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আজ বুধবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত নগরীর সার্কিট হাউজ মাঠ সংলগ্ন জয়নুল উদ্যান পার্কে এই অভিযান চালানো হয়।
এ অভিযানের এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মুফিদুল আলম নিজে উপস্থিত থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রম তদারকি করেন। এ সময় পার্কের সৌন্দর্য রক্ষা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান নগরবাসী। তবে এ উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষোভ ও অসেন্তাষ প্রকাশ করেছেন কবি সাহিত্যিকরা। তারা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে এই স্থানটিতে দেশের খ্যাতনামা এবং নবীণ কবি সাহিত্যকদের নিয়ে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার বসে সাহিত্য সংসদের ‘বীক্ষণ’ আসর নামে সাহিত্য আড্ডা। এতে কবিতা পাঠের পাশাপাশি শিল্প সংস্কৃতি নিয়ে চলে আলোচনা ও মতবিনিময়।
স্থানীয়রা জানান, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ফলে পার্কটি তার স্বরূপ ফিরে পাবে। এতে আমার মত অন্য দর্শনার্থীরা প্রকৃতির নিরিবিলি পরিবেশে সময় কাটাতে পারবে।
নতুন বাজার এলাকার শাহজাহান কবির বলেন, একাধিকবার পার্কেও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হলেও প্রভাবশালী মহলের মদদে ফের তৈরি হয় অবৈধ স্থাপনা। কিন্তু দর্শনার্থীরা চায় পার্কের নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশ। তবে এ উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষোভ ও অসেন্তাষ প্রকাশ করেছেন কবি সাহিত্যিকরা। তারা এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে এই স্থানটিতে দেশের খ্যাতনামা এবং নবীণ কবি সাহিত্যকদের নিয়ে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার বসে সাহিত্য সংসদের ‘বীক্ষণ’ আসর নামে সাহিত্য আড্ডা। এতে কবিতা পাঠের পাশাপাশি শিল্প সংস্কৃতি নিয়ে চলে আলোচনা ও মতবিনিময়।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সচিব সুমনা আল মজীদ বলেন, মূলত জেলা প্রশাসনের জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য জয়নুল উদ্যোনের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি এবং প্রকৃতির নির্মল পরিবেশ গড়ে তোলা। তাছাড়া পার্কের বেশ কয়েকটি স্থাপনায় দীর্ঘদিন ধরে অসামসাজিক কার্যকলাপ চলার অভিযোগে অভিযান চালানো হয়েছে।