নব কিশলয় স্কুল এন্ড কলেজের সুবর্ণ জয়ন্তি উৎসব পালন
Published: 1st, February 2025 GMT
রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়া এলাকার নব কিশলয় স্কুল এন্ড কলেজের ৫০ বছর পূর্তিতে শুক্রবার রাতে সুর্বণ জয়ন্তি উৎসব শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে পালন করা হয়েছে।
স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও রূপগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিয়া।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো.
নব কিশলয় স্কুল এন্ড গার্লস কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলন মেলা ও ৫০ বছর পূর্তি উৎসবে শত শত শিক্ষার্থী উপস্থিত হন। শুক্রবার দিনভর বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা নানান কর্মসূচির মাধ্যমে আনন্দ উল্লাস করেন।
পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিয়া, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাকিব আল রাব্বি, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম, শিল্পপতি ও এনজেড গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান খান তার সহধর্মিনীকে নিয়ে মঞ্চে উপস্থিত হন। ঘন্টা ব্যাপী আলোচনা শেষে রাতভর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি শিক্ষণীয় উদাহরণ দেন। সেই সাথে স্কুল এন্ড কলেজের যত ধরণের সমস্যা আছে সবই অল্প সময়ের মধ্যে সমাধানের আশ^াস দেন।
তিনি আরো বলেন, চনপাড়া এক সময় মাদক আখড়া ছিল বলে শুনেছি। কিন্তু ৫ আগষ্টের পর আর এখানে মাদক নেই। মানুষ স্বস্তি পাচ্ছে। এখানে মাদকের কোনো সন্ধান পেলে আমাকে জানাবেন। সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তাছাড়া চনপাড়ার বিদ্যাপীঠ নব কিশলয় স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি (ইউএনও সাইফুল ইসলাম)। আপনাদের সকল সমস্যায় পাশে আছি এবং থাকবো বলেও কথা দিচ্ছি।
সভায় প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিয়া বলেন, আজকের শিশুরাই আগামী দিনে দেশ পরিচালনা করবে। স্কুল জীবনই নিজের ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ন দেখতে হবে। জীবনে বড় কিছু হতে গেলে ছোট থেকেই গড়ে তুলতে হয়। বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও সার্বিক উন্নয়ন দেখে তিনি ভূয়সী প্রশংসা করেন।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: র পগঞ জ ন র য়ণগঞ জ র পগঞ জ উপজ ল উপস থ ত কল জ র
এছাড়াও পড়ুন:
বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
নীল-সাদা পোশাকে সজ্জিত হয়ে নানা বয়সী মানুষ এসে জড়ো হতে থাকেন। যেন শহরের হৃদয়ে নেমে আসে গ্রামবাংলার ঘ্রাণ। মেঘলা আকাশের নিচে কণ্ঠে সুর, পায়ে তাল, কল্পনায় বর্ষার রূপই দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় গতকাল রোববার এভাবে উদযাপন হলো ‘বর্ষা উৎসব ১৪৩২’।
বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে আষাঢ়ের প্রথম দিনে রাগ, রস ও রং মিলে তৈরি হলো এক বর্ষামুখর ক্যানভাস। এবারের আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন নবীন সংগীতশিল্পী সোহানী মজুমদার। সেতারের কোমল তারে বেজে ওঠে রাগ ‘আহীর ভৈরব’। রাগভিত্তিক এ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মিলে যায় প্রাচ্যের সংগীত ঐতিহ্য ও বর্ষার আধ্যাত্মিকতা। সেই মুহূর্তে বকুলতলায় যেন ভেসে বেড়ায় বৃষ্টির সুর আর আকাশের নরম আলো।
‘বর্ষাকথন’ পর্বে বর্ষার ভাবনা, পরিবেশ ও সময়ের প্রেক্ষাপটে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমান।
ঘোষণা পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট এবং সভাপতিত্ব করেন লেখক ও গবেষক অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সংস্কৃতিকর্মী নুসরাত ইয়াসমিন রুম্পা।
ঘোষণাপত্র পাঠে জানানো হয়, ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে আজ ঋতুচক্রে দেখা দিচ্ছে অসামঞ্জস্য। গ্রীষ্ম হয়ে উঠছে খরতর, বর্ষা রুষ্ট, বসন্ত ক্ষীয়মাণ। এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে মানুষের সীমাহীন ভোগবাদী আচরণ, প্রকৃতির ওপর অনবরত অনাচার। ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত, সমুদ্রজল স্ফীত, ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত– প্রকৃতি আজ সংকটে।
এ প্রসঙ্গে মানজার চৌধুরী সুইট সমকালকে বলেন, এ উৎসব শহুরে জীবনে আমরা প্রায় ১৮ বছর ধরে পালন করে আসছি। উৎসবের শিকড় নিহিত রবীন্দ্রনাথের ‘বর্ষামঙ্গল’-এ। আমরা তারই উত্তরসূরি হয়ে আষাঢ়ের প্রথম দিনটিকে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিই। এতে শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, বরং তার সংকটও তুলে ধরা হয়। আমরা চাই, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক
গড়ুক, তার বিপন্নতাকে বুঝুক এবং তা রক্ষায় সক্রিয় হোক।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম, এ ধরনের উৎসবই সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ। শিকড়ের দিকে ফিরে যাওয়ার মধ্যে নিহিত আমাদের সংস্কৃতি ও চেতনার পুনর্জাগরণ।
বর্ষা মানে নতুন জন্মের বারতা। সেই বারতা ছড়িয়ে দিতে উৎসবে প্রতীকীভাবে শিশু-কিশোরের হাতে তুলে দেওয়া হয় বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা। এই চারাগুলো শুধু বৃক্ষ নয়, বরং হয়ে উঠেছে সবুজ ভবিষ্যতের আশ্বাস।
উৎসবে একক সংগীত পরিবেশন করেন ইয়াসমিন মুশতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী ও নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা।
রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন অণিমা রায়, শামা রহমান, মকবুল হোসেন ও ফেরদৌসী কাকলি। লোকসংগীত পরিবেশন করেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, শ্রাবণী গুহ রায় ও এস এম মেজবাহ। আধুনিক গান গাইতে মঞ্চে ওঠেন রত্না সরকার।
দলীয় সংগীতে অংশ নেয় সীমান্ত খেলাঘর আসর (শিশু-কিশোর), সুর বিহার, বহ্নিশিখা, সুর নন্দন এবং সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি ও আসান উল্লাহ তমাল। শিল্পবৃত্ত শিশু-কিশোর দল পরিবেশন করে আবৃত্তি ও নৃত্য কোলাজ।
নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেয় ধৃতি নর্তনালয়, নৃত্যাক্ষ, স্পন্দন, বেমুকা ললিতকলা কেন্দ্র, সিনথিয়া একাডেমি অব আর্টস ও নৃত্যম।