সু চির বাড়ি তৃতীয় দফায় নিলামে বিক্রি করতে ব্যর্থ মিয়ানমারের জান্তা
Published: 5th, February 2025 GMT
মিয়ানমারের সাবেক গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির ইনিয়া লেকের পাশে অবস্থিত বাড়িটি নিলামে বিক্রির চেষ্টা করে আবারও ব্যর্থ হয়েছে সামরিক জান্তা। আজ বুধবার এই নিলাম হয়। বাড়িটি কেনার জন্য কেউই দাম হাঁকায়নি। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো বাড়িটি বিক্রির চেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
ইয়াঙ্গুনে অবস্থিত দুই তলাবিশিষ্ট বাড়িটি দশমিক ৮ হেক্টর বা ১ দশমিক ৯ একর জমির ওপর অবস্থিত। ন্যূনতম দাম ১৪ কোটি ডলার ধরে বাড়িটি বিক্রির জন্য নিলাম শুরু করা হয়। কয়েক দশক এই বাড়ি নিয়ে সু চির সঙ্গে তাঁর ভাইয়ের বিরোধ ছিল।
সাবেক জান্তা সরকারের অধীন গৃহবন্দী অবস্থায় ওই বাড়িতে অনেক বছর কাটিয়েছেন অং সান সু চি। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিয়ানমারের ক্ষমতা পুনর্দখলের পর সামরিক বাহিনী সু চিকে গ্রেপ্তার করেছিল।
মিয়ানমারের মার্কিন দূতাবাসের কাছেই লিফি ইউনিভার্সিটি অ্যাভিনিউয়ে ঔপনিবেশিক আমলের বাড়িটির বাইরে সাদা পোশাকের নিরাপত্তাকর্মীদের তত্ত্বাবধানে নিলামের আয়োজন করা হয়। এতে প্রায় এক ডজন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত এএফপির সাংবাদিকেরা জানান, নিলামে সু চির বাড়িটির দাম হাঁকা হয় ২৯ হাজার ৭০০ কোটি কিয়েটে, যা দেশটির সরকারি বিনিময় হার অনুযায়ী ১৪ কোটি ডলারের সমান। কিন্তু নিলামে কোনো সাড়া না পেয়ে নিলামকারী বিক্রয় বাতিল করে দেন।
নিলামকারী বলেন, ‘তিনবার দরপত্র আহ্বান করার পরও আমি ঘোষণা করছি, নিলাম সফল হয়নি।’
গত বছরের মার্চ ও আগস্ট মাসেও নিলামে সু চির বাড়িটি বিক্রির চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল।
সামরিক অভ্যুত্থানে সৃষ্ট গৃহযুদ্ধের ফলে মিয়ানমারের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার পর ক্রমেই জীর্ণ হয়ে পড়া বাড়িটির জন্য কেউ ১৪ কোটি ডলার ব্যয় করতে পারবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।
রিয়েল এস্টেট এজেন্টরা বলছেন, অভিজাত ইয়াঙ্গুন অঞ্চলে একই আকারের সম্পত্তির দাম ১০ থেকে ২০ লাখ ডলার হতে পারে।
মিয়ানমারের ইতিহাসে বাড়িটি একটি বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের সময় জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন অং সান সু চি। এরপর তাঁকে বাড়িটির জীর্ণ চার দেয়ালের মধ্যে টানা ১৫ বছর গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিল।
সে সময় সু চির স্বামী ও সন্তানেরা ইংল্যান্ডে ছিলেন। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন সু চি বন্দিদশায় পিয়ানো বাজিয়ে, গোয়েন্দা উপন্যাস পড়ে ও ধ্যান করে সময় কাটাতেন।
গণতন্ত্র ও অহিংসার মাধ্যমে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিষয়ে অং সান সু চির বক্তব্য শুনতে শত শত মানুষ নিয়মিত বাড়িটির বাইরের ফুটপাতে জড়ো হতেন।
২০১০ সালে মুক্তি পাওয়ার পর সু চি ওই বাড়িতেই থাকতেন। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, সাংবাদিক, কূটনীতিকসহ বিভিন্ন বিদেশি নেতার সঙ্গে সেখানেই তিনি সাক্ষাৎ করেছেন।
বর্তমানে রাষ্ট্রদ্রোহ, ঘুষ কেলেঙ্কারি, আইন লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন সু চি। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, সু চিকে রাজনৈতিকভাবে নির্মূল করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানাল জেএসডি
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের আলোচনা ও ঐকমত্যের সূচনাকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। দলটি বলেছে, আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জনগণ শুধু কথায় নয়, বাস্তবে সংস্কার ও বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতির পদক্ষেপ দেখতে চায়।
শুক্রবার জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।
তারা বলেন, এই উচ্চপর্যায়ের সংলাপ দেশে রাজনৈতিক সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের কাঙ্ক্ষিত অভিপ্রায় অনুযায়ী রাষ্ট্র সংস্কার, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, অধ্যাপক ইউনূস এবং তারেক রহমানের বৈঠক ও বিবৃতিতে আগামী বছরের পবিত্র রমজানের আগেই একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ এবং তার পূর্বশর্ত হিসেবে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচারের প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জনের ঘোষিত প্রত্যয়ে রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, গণমানুষের রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম দাবি- গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কাঠামোগত মৌলিক সংস্কার এবং গণহত্যাকারী ফ্যাসিবাদী শক্তির বিচারের ব্যবস্থা। এই বিষয় দুটির দৃশ্যমান অগ্রগতিই কেবল একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ভিত্তি রচনা করতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সমাজের শ্রমজীবী, কর্মজীবী ও পেশাজীবীদের মতামত, আকাঙ্ক্ষা ও অংশগ্রহণে রাষ্ট্রীয় রাজনীতির মৌলিক সংস্কারের লক্ষ্যে দ্রুত ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়নের আহ্বান জানায় জেএসডি।