দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের অ্যানালগ শিক্ষা
Published: 6th, February 2025 GMT
প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের তিনটি ধারণা রয়েছে– এক. চ্যারিটি মডেল, দুই. মেডিকেল মডেল, তিন. সামাজিক মডেল। প্রথম মডেল অনুযায়ী প্রতিবন্ধীরা সমাজে কোনো অবদান রাখতে পারেন না। দান-দক্ষিণার মাধ্যমে তাদের জীবন চলে।
দ্বিতীয় মডেল অনুযায়ী শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কারণে তারা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝাস্বরূপ। শেষ মডেল অনুযায়ী প্রায় সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কোনো না কোনো যোগ্যতা আছে। সামাজিক নানা বাধার কারণে তারা সেই যোগ্যতা ও দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে পারেন না। উচ্চশিক্ষা গ্রহণে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নানা ধরনের বাধা সামাজিক মডেলের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।
উচ্চশিক্ষার প্রথম বাধা শুরু হয় আবেদন করার মাধ্যমে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হয়। সেখানেই বাধে বিপত্তি। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটগুলো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীবান্ধব না হওয়ায় তারা নিজেরা আবেদন করতে পারেন না। অন্যের সহায়তা নিতে গিয়ে প্রায়ই নানা ধরনের ভুল হয়।
এর পর পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা সবার কাছে অনেক কঠিন। কিন্তু একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর কাছে এটি অগ্নিপরীক্ষার চেয়ে কম নয়। কারণ তারা নিজেরা পরীক্ষা দিতে পারেন না; একজন শ্রুতিলেখকের সহায়তায় পরীক্ষাটি সম্পন্ন করতে হয়। শ্রুতিলেখক নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিকই আছে। পাশাপাশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী যেন নিজে পরীক্ষা দিতে পারেন, সে ব্যবস্থা থাকা একান্ত কাম্য। কারণ এতে তাদের ইচ্ছা ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন্তু বাংলাদেশে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রকম ব্যবস্থা নেই।
ভর্তি পর্যায়ের বাধা পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহদ্দিতে পা রাখার পর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নতুন সংগ্রাম শুরু হয় টিকে থাকা এবং ভালো ফল করার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে এখন প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। সে ক্ষেত্রে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা অনেক পিছিয়ে।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ ভিজুয়ালি ইম্পায়ার্ড পিপলস সোসাইটি একটি গবেষণা করে। সেই গবেষণায় অংশ নেওয়া প্রায় ৯৮ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, ক্লাসে যেসব প্রাযুক্তিক সহায়তা দেওয়া হয়, সেগুলো তারা নিতে পারেন না। এর মাঝে আছে পড়ার সহায়ক বই কিংবা অনুলিপি, যেগুলো প্রবেশগম্য করে দেওয়া হয় না।
পাঠাগার হলো শিক্ষার্থীদের কাছে প্রাণস্বরূপ। কিন্তু আমাদের দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগার তাদের জন্য প্রবেশগম্য নয়। এতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী জ্ঞান আহরণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এতে একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সত্যিকার অর্থে মানবসম্পদ হয়ে গড়ে উঠছেন না।
অন্য শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো বিষয়ে পড়তে পারলেও একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সে সুযোগ পাচ্ছেন না। এর একমাত্র কারণ উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের লেখাপড়ার বিষয়ে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তার পরও আমাদের দেশে শতাধিক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন এবং তারা নানা ক্ষেত্রে কর্মরত। আমরা যদি তাদের অনুকূল পরিবেশ দিতে পারতাম, তাহলে তারা আরও অবদান রাখতে পারতেন সমাজ বিনির্মাণে। উচ্চশিক্ষায় প্রবেশগম্য করার বিষয়টি খুব জটিল কিছু নয়। ইউরোপ-আমেরিকার বড় সব বিশ্ববিদ্যালয় অনেক আগেই তাদের পাঠ ব্যবস্থাকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য প্রবেশগম্য করে গড়ে তুলেছে। আমাদের দেশের সরকার কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি তাদের থেকে কারিগরি সহায়তা নেয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীবান্ধব করা সম্ভব। তাই এখনই এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তাদের মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করতে হবে।
তালুকদার রিফাত পাশা: পলিসি কর্মকর্তা, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবিং বাংলাদেশ
rifatir2@gmail.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
ফরিদপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেয়েছেন জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা।গত মঙ্গলবার এনসিপির সদস্যসচিব আক্তার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই চিঠিতে ফরিদপুর অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক করা হয়েছে মো. আব্দিুর রহমানকে এবং সংগঠক করা হয়েছে মো. রাকিব হোসেনকে।
এছাড়া ফরিদপুর অঞ্চলের পাঁচটি জেলা, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী জেলার দু’জন করে ব্যক্তিকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফরিদপুর জেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে যে দু’জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের একজন হলেন সৈয়দা নীলিমা দোলা। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহ্মুদা বেগমের মেয়ে এবং জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ নাসিরের ভাগনি। দোলার বাবা সৈয়দ গোলাম দস্তগীর পেশায় ব্যবসায়ী।
সৈয়দা নীলিমা ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীত বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি কিছুদিন একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি করেন। বর্তমানে ‘সিনে কার্টেল’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী।
এ বিষয়ে সৈয়দা নীলিমা দোলা বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যদের আওয়ামী রাজনীতি করা সংক্রান্ত কিছু পোস্ট আপনাদের সামনে আসতে পারে। আমি নিজে এর একটা ব্যাখ্যা রাজপথের সহযোদ্ধাদের দিয়ে রাখতে চাই। আমি ১০ বছর ধরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন করছি। নো মেট্রো অন ডিইউ মুভমেন্ট, রামপাল বিরোধী আন্দোলন, ডিএসএ বাতিলের আন্দোলন, সুফিয়া কামাল হলকে ছাত্রলীগ মুক্ত করাসহ অন্যান্য সকল আন্দোলনে আমি পরিচিত মুখ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লেখালেখিও পুরনো। ২০১২ সালে পরিবার ছাড়ার পর রাজপথই আমার আসল পরিবার। জুলাইয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অন্যতম মামলা তাহির জামান প্রিয় হত্যা মামলার একজন প্রত্যক্ষদর্শী আমি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরাসরি ছাত্রলীগ করে অনেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়েছেন। আমি কখনও ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, তাই আমার নাগরিক কমিটির সদস্য হতে বাধা কোথায়? এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা জেনে-বুঝে এবং আমি ‘লিটমাস’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ নেত্রীর মেয়ে দায়িত্ব পেয়েছেন জেলার এনসিপি কমিটি গঠনে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সোহেল রানা বলেন, ‘তার (সৈয়দা নীলিমা) পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড আওয়ামী লীগ। আমরা দেখেছি, গত জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে তার মামা গোলাম নাসির কিভাবে আমাদের ওপর নির্বিচার গুলি ছুড়েছিল। তার মায়ের কর্মকাণ্ডও আমাদের অজানা নয়।’
সৈয়দা নীলিমা দোলার সঙ্গে আমাদের পরিচয় পর্যন্ত নেই মন্তব্য করে সোহেল রানা বলেন, ‘আসলে দায়িত্ব দেওয়ার আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া হলে ভাল হতো। যাচাই-বাছাই করা হলে এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’