শবে বরাত উপলক্ষে গরুর মাংসের বাজারে ভিড়, কত দামে মিলছে বাজারে
Published: 13th, February 2025 GMT
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে চট্টগ্রামের নগরের বাজারে গরুর মাংস কিনতে এসেছেন নুর মোহাম্মদ। ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে তিনি নগরের দুই নম্বর গেট এলাকায় থাকেন। সেখানে কর্ণফুলী কমপ্লেক্স বাজারে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে। পরিবারের জন্য দুই কেজি গরুর মাংস কিনে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
কত করে কিনেছেন—জানতে চাইলে নুর মোহাম্মদ বলেন, এক হাজার টাকা করে দাম চেয়েছে। দরদাম করে ৯৫০ টাকায় রাজি হয়েছে দোকানি। এক কেজি হাড় ছাড়া মাংস নিয়েছেন তিনি। এক কেজি হাড়সহ মাংসও নিয়েছে ৭৭০ টাকা দরে। তবে দুই সপ্তাহ আগে হাড় ছাড়া মাংস ৯০০ টাকা এবং হাড়সহ মাংস ৭৫০ টাকা ছিল।
নুর মোহাম্মদের মতো অনেক বাসিন্দা পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে গরুর মাংস কিনতে ব্যস্ত ছিলেন গতকাল রাতে। কেউ কেউ কিনবেন আজ বৃহস্পতিবার সকালে। নগরের বহদ্দারহাট চকবাজার ও দুই নম্বর গেটের আশপাশে বিভিন্ন স্থানে গরুর মাংসের দোকানগুলোতে এ নিয়ে বেচাবিক্রি বেড়েছে। এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন এলাকায়ও গরু জবাই করা হবে।
আজ সন্ধ্যার পর নগরের বহদ্দারহাট, কাজীর দেউড়ি, রিয়াজউদ্দিন, পাহাড়তলী, কর্ণফুলী বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে হাড় ছাড়া গরুর মাংস। দোকানভেদে মাংসের গুণগত মানের কথা বলে বাড়তি টাকা নিতে দেখা যায় অনেক বিক্রেতাকে। বিশেষত মাংসের সঙ্গে চর্বি যাঁরা একেবারেই নিতে চান না, তাঁদের কিছু বেশিই গুনতে হচ্ছে। তবে হাড়সহ সিনার মাংস ৭৫০ টাকায় মিলছে।
চট্টগ্রামের বাজারে সাধারণত হাড়সহ ও হাড় ছাড়া—এই দুইভাবে গরুর মাংস বিক্রি হয়। ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গত কয়েক বছরে গরুর মাংসের দাম ৭০০ থেকে ৯৫০ টাকার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। মাঝখানে দাম এক হাজার টাকা পার হয়েছিল। উৎসব এলে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন। এলাকাভিত্তিক কিছু বিক্রেতা বিক্রি করেন। সেখানে বাজার থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা কমে পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদন ও টিসিবির তথ্য বলছে, দেশের বাজারে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গরুর মাংসের জাতীয় গড় খুচরা দর ছিল প্রতি কেজি ৩১৭ টাকা। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সে দাম বেড়ে দাঁড়ায় গড় ৪১৯ টাকায়। ২০২৩ ও ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গরুর মাংসের গড় দাম পৌঁছেছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকার ঘরে।
চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে ২০২১ সালে মার্চ মাসে গড় গরুর মাংসের দাম ছিল ৫৫০ থেকে ৫৬০ টাকা। পরের বছর একই মাসে তা ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা হয়ে যায়। ২০২৩ সালের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে গড়ে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে। আর এ বছর হাড় ছাড়া মাংসের দাম ৯৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। খামারিদের বরাত দিয়ে দোকানিরা জানান, খামারে খরচ বাড়ায় মাংসের দাম বেড়েছে।
পবিত্র শবে বরাত সামনে রেখে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়ও অস্থায়ী গরুর মাংসের দোকান দিয়েছেন অনেকেই। স্থানীয়ভাবে টাকা তুলে গরু কিনেছেন কয়েকজন। স্থানীয় লোকজনের কাছে কিছুটা কম মূল্যেই এসব দোকানে মাংস বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, বাজারের চেয়ে কম মূল্যে মাংস বিক্রি করার উদ্দেশ্যে স্থানীয়ভাবে কয়েকটি গরু জবাই করা হয়। অন্তত বাজারের চেয়ে কম মূল্যে মাংস কিনতে পারেন এলাকাবাসী।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নগর র ব
এছাড়াও পড়ুন:
১৫ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে তিন গুণ
নীতি সহায়তার নামে মন্দ ঋণ নিয়মিত দেখানোর সুযোগ বন্ধের পর যেন লাফিয়ে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। গত ১৫ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়েছে। মার্চ প্রান্তিক শেষে বিরূপ মানে শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
খেলাপি ঋণ যে এভাবে লাফিয়ে বাড়বে তা আগেই ধারণা দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। গত আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পরই তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ অনেক বাড়বে। গত ফেব্রুয়ারিতে আগের সেই কথা স্মরণ করিয়ে বলেন, খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে। কোনো তথ্য লুকিয়ে রাখা হবে না। তবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর পর এটা আবার কমবে। এ ছাড়া নতুন করে বিতরণ করা ঋণ যেন খেলাপি না হয় সে জন্য বিভিন্ন আইনি কঠোরতা আনা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ করেছে। সেখানে এভাবে খেলাপি বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, মেয়াদি ঋণখেলাপির সময় পুনর্নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে কিছু বড় অঙ্কের ঋণ বিরূপমানে শ্রেণিকৃত হওয়ায় এভাবে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এ ছাড়া গ্রাহকের চলতি ঋণ নবায়ন না হওয়া, পুনঃতপশিল করা ঋণের কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধ না হওয়া এবং বিদ্যমান খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে সুদ যোগ হয়ে বেড়েছে খেলাপি।
বিগত সরকারের সময়ে নানা নীতি সহায়তার মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হতো। অবশ্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর সংস্থাটি নীতি সহায়তা তুলে দেওয়ার শর্ত দেয়। বিশেষ করে মেয়াদি ঋণ অনাদায়ী থাকার ৬ মাস পর থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ হিসাব করার বিধান বাতিল এবং ঋণ পরিশোধ না করেও নিয়মিত দেখানোর সুযোগ বন্ধ করতে বলে সংস্থাটি। এর মধ্যে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন হয়। বিভিন্ন জালিয়াতি করে ঋণের নামে বিপুল অর্থ বের করে নেওয়া শীর্ষ ঋণগ্রহীতাদের বেশির ভাগই এখন পলাতক। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়ে
জেলে আছেন। এসব কারণেই খেলাপি ঋণ লাফিয়ে বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা। এর মানে শেষ তিন মাসে ঋণ বেড়েছে মাত্র ৩০ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। যেখানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে যেখানে খেলাপি দেখানো হয়েছিল মাত্র ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। এর মানে ১৫ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। আর সরকার পরিবর্তনের আগে গত জুন শেষে খেলাপি ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। সে তুলনায় বেড়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৯৪৩ কোটি টাকা। শেষ ৯ মাসে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে খেলাপি ঋণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে। এর অন্যতম কারণ বিগত সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন ব্যাংক দখল করে ঋণের নামে বিপুল অর্থ লুট হয়। সেই টাকা আর ফেরত আসছে না। দখল করা কোনো কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার এখন ৯৮ শতাংশে ঠেকেছে। এক সময় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের যেখানে ৫ শতাংশের কম ছিল খেলাপি। চলতি বছরের মার্চ শেষে বেসরকারি ব্যাংকের ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এসব ব্যাংকের মোট ঋণের যা ২০ দশমিক ১৬ শতাংশ।
রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা বা ৪৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। আর বিশেষায়িত ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে ৬
হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা, যা ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর ৩ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ ঋণ খেলাপি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। বিগত সরকারের শুরুর দিকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রীতিনীতির আলোকে ব্যাংক খাত পরিচালিত হচ্ছিল। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগ থেকে বিশেষ বিবেচনায় ঋণ পুনঃতপশিল চালু হয়। এরপর থেকে নানা শিথিলতায় খেলাপি ঋণ কম দেখানো হচ্ছিল। এ ক্ষেত্রে কখনও বিশেষ সুবিধায় ঋণ পুনঃতপশিল, কখনও ঋণ ফেরত না দিলেও নিয়মিত দেখানোর সুযোগ দেওয়া হয়। গুটিকয়েক ব্যবসায়ীকে সুবিধা দিতে গিয়ে পুরো ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। এতদিন লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ এখন বেরিয়ে আসছে। এতে করে দ্রুত বাড়ছে।