পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে চট্টগ্রামের নগরের বাজারে গরুর মাংস কিনতে এসেছেন নুর মোহাম্মদ। ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে তিনি নগরের দুই নম্বর গেট এলাকায় থাকেন। সেখানে কর্ণফুলী কমপ্লেক্স বাজারে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে। পরিবারের জন্য দুই কেজি গরুর মাংস কিনে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।

কত করে কিনেছেন—জানতে চাইলে নুর মোহাম্মদ বলেন, এক হাজার টাকা করে দাম চেয়েছে। দরদাম করে ৯৫০ টাকায় রাজি হয়েছে দোকানি। এক কেজি হাড় ছাড়া মাংস নিয়েছেন তিনি। এক কেজি হাড়সহ মাংসও নিয়েছে ৭৭০ টাকা দরে। তবে দুই সপ্তাহ আগে হাড় ছাড়া মাংস ৯০০ টাকা এবং হাড়সহ মাংস ৭৫০ টাকা ছিল।

নুর মোহাম্মদের মতো অনেক বাসিন্দা পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে গরুর মাংস কিনতে ব্যস্ত ছিলেন গতকাল রাতে। কেউ কেউ কিনবেন আজ বৃহস্পতিবার সকালে। নগরের বহদ্দারহাট চকবাজার ও দুই নম্বর গেটের আশপাশে বিভিন্ন স্থানে গরুর মাংসের দোকানগুলোতে এ নিয়ে বেচাবিক্রি বেড়েছে। এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন এলাকায়ও গরু জবাই করা হবে।

আজ সন্ধ্যার পর নগরের বহদ্দারহাট, কাজীর দেউড়ি, রিয়াজউদ্দিন, পাহাড়তলী, কর্ণফুলী বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে হাড় ছাড়া গরুর মাংস। দোকানভেদে মাংসের গুণগত মানের কথা বলে বাড়তি টাকা নিতে দেখা যায় অনেক বিক্রেতাকে। বিশেষত মাংসের সঙ্গে চর্বি যাঁরা একেবারেই নিতে চান না, তাঁদের কিছু বেশিই গুনতে হচ্ছে। তবে হাড়সহ সিনার মাংস ৭৫০ টাকায় মিলছে।

চট্টগ্রামের বাজারে সাধারণত হাড়সহ ও হাড় ছাড়া—এই দুইভাবে গরুর মাংস বিক্রি হয়। ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গত কয়েক বছরে গরুর মাংসের দাম ৭০০ থেকে ৯৫০ টাকার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। মাঝখানে দাম এক হাজার টাকা পার হয়েছিল। উৎসব এলে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন। এলাকাভিত্তিক কিছু বিক্রেতা বিক্রি করেন। সেখানে বাজার থেকে ৫০ থেকে ১০০ টাকা কমে পাওয়া যায়।

চট্টগ্রাম কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদন ও টিসিবির তথ্য বলছে, দেশের বাজারে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গরুর মাংসের জাতীয় গড় খুচরা দর ছিল প্রতি কেজি ৩১৭ টাকা। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সে দাম বেড়ে দাঁড়ায় গড় ৪১৯ টাকায়। ২০২৩ ও ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গরুর মাংসের গড় দাম পৌঁছেছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকার ঘরে।

চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে ২০২১ সালে মার্চ মাসে গড় গরুর মাংসের দাম ছিল ৫৫০ থেকে ৫৬০ টাকা। পরের বছর একই মাসে তা ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা হয়ে যায়। ২০২৩ সালের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে গড়ে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে। আর এ বছর হাড় ছাড়া মাংসের দাম ৯৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। খামারিদের বরাত দিয়ে দোকানিরা জানান, খামারে খরচ বাড়ায় মাংসের দাম বেড়েছে।

পবিত্র শবে বরাত সামনে রেখে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়ও অস্থায়ী গরুর মাংসের দোকান দিয়েছেন অনেকেই। স্থানীয়ভাবে টাকা তুলে গরু কিনেছেন কয়েকজন। স্থানীয় লোকজনের কাছে কিছুটা কম মূল্যেই এসব দোকানে মাংস বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, বাজারের চেয়ে কম মূল্যে মাংস বিক্রি করার উদ্দেশ্যে স্থানীয়ভাবে কয়েকটি গরু জবাই করা হয়। অন্তত বাজারের চেয়ে কম মূল্যে মাংস কিনতে পারেন এলাকাবাসী।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নগর র ব

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রম আইনের সংশোধন কবে হবে, তা বলছে না শ্রম মন্ত্রণালয়

শ্রম আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ কবে হবে, সে বিষয়ে আর সময়সীমার কথা বলছে না শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত নভেম্বর মাসে এই মন্ত্রণালয় বলেছিল, ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এ অধ্যাদেশ হবে। মার্চ শেষে এপ্রিলও শেষ হচ্ছে আজ বুধবার।

সচিবালয়ে আজ ‘মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইন সংশোধনীর ক্ষেত্রে সময়সীমা থাকার পক্ষে নন তিনি। শ্রমিক–মালিকদের স্বার্থ রক্ষাসহ শিগগিরই তা করা হবে। বিষয়টি এখন কোন প্রক্রিয়ায় আছে, তা বলতে রাজি হননি শ্রম উপদেষ্টা।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। তিনি আরও বলেন, ‘একসময় স্লোগান ছিল দুনিয়ার মজদুর, এক হও।’ এখন তা বদলে গেছে। এখন হবে ‘দুনিয়ার মালিক-শ্রমিক, এক হও’। এখন ভালো মালিকেরা শ্রমিকদের সন্তানের মতো মনে করেন।

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে ১০১টি ধারা ও উপধারা সংশোধন হবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১০ থেকে ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

আইএলওর বৈঠকে যোগ দিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে যে দলটি জেনেভা সফর করে, সেখানে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ুন কবীর, যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ হোসেন সরকার ও শ্রম উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. জাহিদুল ইসলাম ছিলেন।

এর আগে গত বছরের ১০ নভেম্বর তৎকালীন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠক থেকে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মার্চের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন হবে। উপদেষ্টা তখন এ–ও বলেছিলেন, আগের সরকারের আইনমন্ত্রীর (আনিসুল হক) নেতৃত্বাধীন দলকে আইএলও পর্ষদে অপদস্থ করা হয়েছিল। অথচ এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো নিয়ে বরং প্রশংসা করা হয়েছে। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো তুলে নেওয়ার কথাও বলেছিল।

জানা গেছে, শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে ঘাটতির অভিযোগ এনে জাপানসহ ছয়টি দেশের পক্ষ থেকে আইএলওতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলাগুলো চলমান।

আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে দেশে ৭ কোটি ৬৫ লাখ শ্রমিক রয়েছে। এদিকে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদকে (টিসিসি) শ্রমিকপক্ষ জানিয়েছে, আইন সংশোধনের সময় সব শ্রমিকের কথা মাথায় না রেখে প্রধানত পোশাক খাতের শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মে দিবস আর জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ–স্কুল পর্যায়ে রচনা ও প্রবন্ধ লেখার ওপরে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হবে।

এ ছাড়া শ্রম অধিকার বিষয়ে প্রকাশিত বা প্রচারিত মানসম্মত সংবাদ বা স্থিরচিত্র যাচাই করে সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহকদের দেওয়া হবে পুরস্কার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ক্ষমতায় গেলে নারীদের মর্যাদা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে: জামায়াত আমির
  • এখনো শ্রমিকদের লড়াই করতে হচ্ছে, কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি
  • শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের মহান মে দিবস আজ
  • কর্মক্ষেত্রে অধিকার আদায়ের রক্তাক্ত গৌরবময় দিন
  • শ্রম আইনের সংশোধন কবে হবে, তা বলছে না শ্রম মন্ত্রণালয়
  • শিগগিরই শ্রম আইন সংশোধন করা হবে: শ্রম উপদেষ্টা 
  • আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসে শিল্পকলা একাডেমির  দুই দিনের আয়োজন
  • মেরাদিয়ায় পশুর হাট বসানো যাবে না, নির্দেশ হাইকোর্টের
  • আইনগত সহায়তা দিবসে আলোচনা সভা-শোভাযাত্রা
  • আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন