সবার আগে চাই রাজনৈতিক সংস্কৃতির বদল
Published: 14th, February 2025 GMT
দুর্নীতির ধারণাসূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের অবনমনই বলে দেয় দুর্নীতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের অবস্থান কতটা হতাশাজনক। জার্মানির বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল মঙ্গলবার বিদায়ী ২০২৪ সালের জন্য দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সংবাদ সম্মেলন করে একযোগে বাংলাদেশেও এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০২৩ সালে ১০০ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশ যেখানে ২৪ নম্বর পেয়েছিল, ২০২৪ সালে সেখানে পেয়েছে ২৩। যেসব দেশে দুর্নীতির মাত্রা সবচেয়ে বেশি, তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৪তম। ২০২৩ সালে ছিল ১০তম।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানই বাংলাদেশের পেছনে আছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে টিআইবি তাদের পর্যবেক্ষণে বলছে, দুর্নীতির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে বসেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, শাসনকাঠামো, আমলাতন্ত্র ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে দুর্নীতিকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। টিআই দুর্নীতির যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছে তাতে স্পষ্ট করেই বলা আছে, ব্যক্তিগত সুবিধা বা লাভের জন্য ‘সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার’। এখানে বলা দরকার, এই সংজ্ঞার বাইরেও বাংলাদেশের সমাজে দুর্নীতির বিস্তার আরও ব্যাপক ও সর্বব্যাপী।
দুর্নীতি মোকাবিলায় বাংলাদেশের এই নিদারুণ ব্যর্থতার পেছনে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে পতন হওয়া আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী সরকারের দায়টা অনেক বড়। মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার কথা বললেও তারা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে এবং দুর্নীতি সংঘটনে সহায়তা ও অংশগ্রহণ করেছে। সরকারি কেনাকাটা ও উন্নয়ন প্রকল্পে অবাধে দুর্নীতি হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনকে অকেজো করে রাখা হয়েছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার বিভাগকে ব্যবহার করা হয়েছে সরকারদলীয়দের রক্ষা ও বিরোধীদের দমনের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে। এটাই দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
দুর্নীতির ধারণাসূচক তৈরির জন্য যেসব তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে গত বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসেরও তথ্য আছে। টিআইবি বলছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরও ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির চর্চা অব্যাহত ছিল। এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে সহমত পোষণ করেই যে প্রশ্নটি সামনে আনা প্রয়োজন, সেটি হলো চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির কেন্দ্রগুলো দখলে নেওয়ার জন্য রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর যে প্রতিযোগিতা ও সংঘাত আমরা দেখেছি, তাতে করে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির কতটা পরিবর্তন হলো?
একটা সমাজে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নাগরিক সমাজ সংগঠনগুলোর কাজের পরিবেশ যত বাধাহীন ও মুক্ত হবে, সেই সমাজ গণতন্ত্রের পথে ততই এগোবে এবং দুর্নীতি ততই কমে আসবে। এই মাপকাঠিগুলোর বিবেচনায় ২০২৪ সালকে বিচার করলে দুর্নীতির ধারণা সূচকে কেন বাংলাদেশের অবনমন, তা অনুমান করা সম্ভব।
চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান বাংলাদেশের সামনে ঘুরে দাঁড়ানোর একটি বড় সুযোগ এনে দিয়েছে। সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আমরা আশা করি, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারগুলো ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সুরক্ষার প্রশ্নে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণহারা দুর্নীতির লাগাম যেকোনো মূল্যেই টেনে ধরতে হবে। এর জন্য সবার আগে দরকার, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় রাজনীতির প্রভাব থেকে বের করে আনা, সেগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া। এটা সবার মনে রাখা জরুরি যে বিশ্বে যেসব দেশ দুর্নীতি মোকাবিলায় সফল হয়েছে, তাদের হাতে কোনো জাদুকরি চেরাগ ছিল না। আমাদের প্রথাগত রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটাতে পারলে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে পারা মোটেই কঠিন কোনো কাজ নয়। এর জন্য চাই সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অঙ্গীকার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক ব যবহ র র জন য র র জন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘মিয়ানমারকে মানবিক করিডোর দেওয়া স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সংকট’
মিয়ানমারের জন্য তথাকথিত মানবিক করিডোর দেওয়ার খবরে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেই। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশের বিদ্যমান সংবিধান লংঘন করে এই ভয়ংকর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সংকটে ফেলবে।
নেতারা বলেন, এই করিডোর দেয়া হলে বাংলাদেশের সীমান্ত অরক্ষিত হয়ে পড়বে। এমনিতেই মায়ানমারের নাসাকা বাহিনীর সাথে বাংলাদেশের বিজিবির নিয়মিত সংঘর্ষ চলছে। এই করিডোর দেয়া হলে মায়ানমার জান্তা বাংলাদেশের নিরাপত্তাকেও নানা অজুহাতে বিপন্ন করে তুলবে।
সিপিবি নেতারা বলেন, হঠাৎ করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর এই উৎসাহ সন্দেহজনক। এটি সাম্রাজ্যবাদের ভূ-রাজনৈতিক চক্রান্ত থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। কারণ, জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা দেশগুলো মানবিক করিডরের জন্য বাংলাদেশের বিকল্প হিসেবে মিয়ানমারের সিতওয়ে বন্দর ছাড়াও বঙ্গোপসাগরের মিয়ানমার উপকূলের অনেক জায়গাই ব্যবহার করতে পারে।
সুতরাং বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির কথা বিবেচনায় না রেখে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যদি এ ধরনের দেশবিরোধী কোন পদক্ষেপ নেয়, বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনতা তাকে প্রতিহত করবে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে এবং ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী শক্তিকে যেকোন সুবিধে দেওয়ার বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের পদক্ষেপ সচেতনভাবে রুখে দাঁড়াতে গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এটা চব্বিশের জুলাইয়ে শত শহীদের স্বৈরাচারী বিরোধী গণতন্ত্রের আকাংখা ও প্রত্যাশাকে ভুণ্ডল করে দেবে।
তাই এই ষড়যন্ত্রকে দেশের গণতন্ত্রের লড়াকু জনগণে নিয়ে প্রতিহত করা হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
ঢাকা/হাসান/রাসেল