প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্দোলন কী বার্তা দিচ্ছে
Published: 15th, February 2025 GMT
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক পদে সুপারিশপ্রাপ্তরা চাকরিতে নিয়োগের দাবিতে ১০ দিন ধরে শাহবাগে অবস্থান করছেন। সেখানে গিয়ে দেখা হলো ২ মাস বয়সী এক সন্তানের মায়ের সঙ্গে। তিনি স্বামী হারিয়ে নিরুপায় হয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছেন। কথা হলো কয়েকজনের সঙ্গে যাঁরা কোলের শিশুকে নিয়ে এসেছেন। রোদ-ঘামে-ধুলায় শিশুরা ক্লান্ত। আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ জলকামানের পানিতে ভিজে অসুস্থ হয়ে গেছেন, জ্বরে ভুগছেন।
তাঁদের দুই চোখ বলে দিচ্ছে, কী অনিশ্চয়তা, কষ্ট, অপমান ও অবহেলার শিকার হয়ে তাঁরা আজ এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। একজন এসে ছবি দেখালেন, দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে শায়িত অবস্থায় পুলিশ লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে। একজন জানালেন, পুলিশ বলেছে, এখানে বসে না থেকে স্বামীর ঘর করতে। ধরেই নিয়েছেন, এই নারীরা স্বামীর আয়েই চলেন।
একজন এসে বললেন, ‘চাকরি নেই শুনে স্বামীও ছেড়ে চলে গেছে।’ অনেকের তো স্বামীই নেই। কেউ কেউ তার আগের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কাগজপত্রও দেখালেন। সবারই প্রশ্ন, এখন আমাদের কী হবে?
১০ দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচিতে আসা লড়াকু নারীরা কক্সবাজার, নোয়াখালী, হাতিয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন এই কর্মসূচিতে। সারা দিন শাহবাগে অবস্থান করে রাতে প্রেসক্লাবে রাস্তায় গিয়ে ঘুমান। সকালে আবার ফিরে আসেন শাহবাগে। রোববার হাইকোর্টের শুনানির অপেক্ষায় দিন গুনছেন তাঁরা।
প্রতিটি আন্দোলন থেকেই আমরা কিছু না কিছু শিখছি; অথবা বলা যায় শেখা উচিত। এগুলোকে শুধুই বিভিন্ন গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার আন্দোলন হিসেবে দেখলে হবে না। সংস্কারের তাগিদেই প্রতিটির পেছনের ইতিহাস দেখা জরুরি। আন্দোলনটি সেদিক থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে।
প্রথমত, গণ-অভ্যুত্থানের আগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির নিয়োগ কি নতুন কোটাব্যবস্থা অনুযায়ী হবে, নাকি আগের আইন অনুযায়ী হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, ২০২৩ সালে বিজ্ঞপ্তি দিলেও ২০২৪–এর ২১ এপ্রিল লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। ১২ জুন ভাইভা (মৌখিক পরীক্ষা) অনুষ্ঠিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর ৩১ অক্টোবর ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে ৬ হাজার ৫৩১ জন চূড়ান্তভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন।
সব জেলার প্রায় সব উপজেলার চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্তরা যোগদানপত্রও হাতে পেয়েছে, বাকি ছিল শুধু পদায়ন। অর্থাৎ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগের নিয়মেই নিয়োগ হবে, যেহেতু তাদের বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষা সবই আগের নিয়মে হয়েছে। এ কারণে সরকার নিয়োগ আদেশও জারি করেছিল। সাধারণ যুক্তিতে সরকারের এই সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল বলেই প্রতীয়মান হয়।
কিন্তু যাঁরা সুপারিশপ্রাপ্ত হননি, তাঁদের রিটের ভিত্তিতে হাইকোর্ট ২ ফেব্রুয়ারি ফলাফল বাতিল ঘোষণা করেন। দেখা যাচ্ছে, সমস্যাটা শুরু হয়েছে হাইকোর্টের রায় দেওয়ার পর। প্রশ্ন হচ্ছে, হাইকোর্ট কিসের ভিত্তিতে সরকারের সিদ্ধান্তের বিপরীতে সাড়ে ছয় হাজার মানুষের নিয়োগ বাতিল করলেন?
দ্বিতীয় প্রশ্নটি হলো, আগের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কোনোটি আগের পদ্ধতি অনুসরণ করে, আবার কোনোটি পরের পদ্ধতি অনুসরণ করা কি সংগতিপূর্ণ হবে? প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি তিন ধাপে দেওয়া হয়েছিল। প্রথম দুই ধাপে নিয়োগ আগের নিয়মে সম্পন্ন করে তৃতীয় ধাপে নিয়োগ কীভাবে স্থগিত করা হয়েছে। এ ধরনের বৈষম্য কীভাবে সম্ভব?
তৃতীয় প্রশ্ন হলো, যে আন্দোলনই হোক, শিশুদের ওপর অথবা শিশুর অভিভাবকের ওপর আক্রমণ করলে তার শাস্তি কী হবে? যেকোনো আন্দোলনেই পুলিশি হামলা নিন্দনীয়। কিন্তু যেখানে মায়ের সঙ্গে শিশুরাও রয়েছে, সেখানে ন্যূনতম সতর্কতা থাকা উচিত। মনে রাখতে হবে, জুলাই আন্দোলনে যারা শিশুদের রক্ত ঝরিয়েছে, তাদের এখনো বিচার হয়নি। তার আগেই শিশুদের ওপর সহিংসতা শুরু হয়ে গেছে।
চতুর্থ প্রশ্নটি বেশ জটিল এবং চিন্তা উদ্রেককর। কেন ২০১৯–এর বিধি মোতাবেক প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ কোটা নারীদের জন্য বরাদ্দ ছিল? এর পেছনে কি কোনো পূর্বাভিজ্ঞতা ছিল? সামাজিক কোনো কারণ ছিল? প্রশ্নটি আমি তুলছি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে। যেহেতু বিষয়টি আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে, আমি মনে করি এ নিয়ে আলোচনা জরুরি।
আমরা কিছু কিছু পেশায় পুরুষের আধিক্য দেখি। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ থেকে শুরু করে ফায়ার সার্ভিস, গণপরিবহন ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীদের সুযোগ যেমন কম, তেমনি সামাজিক বাধাও অনেক। আবার অন্যদিকে চিকিৎসক, নার্সিং, শিক্ষকতা ও প্রশাসনিক কাজে নারীদের অংশগ্রহণের প্রবণতা বেশি। এই যে শিক্ষকতায়, বিশেষ করে প্রাইমারি শিক্ষক পদে নারীদের অংশগ্রহণ বেশি—এ বিষয় নিশ্চয়ই একদিনে তৈরি হয়নি।
আন্দোলনকারীদের মতে, অনেক পুরুষ শিক্ষক চাকরি শুরুর পর অন্য ভালো সুযোগ পেলে চলে যান। প্রাইমারি শিক্ষকদের বেতন কম, কাজ বেশি। এ কারণে তাঁরা চলে গেলে প্রায়ই অনেক স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা কমে যায়। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলে নারীরা সামাজিক ও পারিবারিক কারণে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় থাকেন।
প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নারী শিক্ষকদের সঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। নারীদের মাতৃসুলভ আচরণ, নরম ব্যবহার, কথা বলার ধরন ও শিশু সম্পর্কে জ্ঞানের কারণে শিশুরা নারী শিক্ষকদের বেশি পছন্দ করে। পঞ্চম শ্রেণির মেয়েশিশুদের অনেক সময় মাসিক শুরু হয়ে থাকে। এ সময় তারা তাদের সুবিধা–অসুবিধার কথা নারী শিক্ষকদের সঙ্গে বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এ কারণেই এই পেশায় নারী শিক্ষকদের প্রাধান্য দেওয়ার রীতি তৈরি হয়েছে।
এখন যে কেউ বলতে পারেন, পুরুষ শিক্ষকদেরও তো প্রশিক্ষণ দিয়ে শেখানো যায়। আমি মনে করি, এই বাস্তবতাও নিশ্চয়ই পরিবর্তনযোগ্য; কিন্তু যত দিন পরিবর্তন হচ্ছে না, তত দিন যদি বহুদিনের তৈরি হওয়া সংস্কৃতি ও সামাজিক বাস্তবতার বিরুদ্ধে গিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিই, তাহলে সেটা কি ইতিবাচক হবে?
আমরা জানি, গণ-অভ্যুত্থানের পর ৯৩ শতাংশ মেধাভিত্তিক কোটা নির্ধারণের কারণে অনেকেই মনে করছেন শুধু প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকই নন, ভবিষ্যতে সব খাতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়াই যথাযথ হবে। কিন্তু প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের যে নিজস্ব সংস্কৃতি, অভ্যাস, অন্তর্গত বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং এর সঙ্গে জনকল্যাণও যুক্ত রয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে কি আমরা একই পদ্ধতি ব্যবহার করব?
প্রথম দুটি প্রশ্নের মীমাংসা সরকার করেছে। কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা নিয়োগ–বাণিজ্যের কারণে যদি কেউ প্রভাবিত না হন, তাহলে আদালতের সিদ্ধান্ত তো আন্দোলনকারীদের পক্ষেই যাওয়ার কথা।
তৃতীয় প্রশ্নটির মীমাংসা করতে হবে দ্রুত। আর চতুর্থ প্রশ্নটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা তুলতে হবে। প্রচলিত পরীক্ষার পদ্ধতি দিয়ে সব সময় মেধা মূল্যায়ন করা যায় না। মেধা বলতে শুধু পরীক্ষায় কয়টি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া না। সেই মানুষটির ‘ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স’ আছে কি না, শিশুশিক্ষা বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি কেমন, আচরণ কেমন—এগুলো শুধু লিখিত পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে বিচার করা যায় না।
এই আন্দোলন আমাদের সামনে সুযোগ এনেছে শিক্ষক, নারী ও শিশু প্রশ্নে একটি অবস্থান নেওয়ার। এখন একটি অন্তর্বর্তী সময়। প্রতিটি আন্দোলনকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার জায়গা থেকে না দেখে, প্রতিবিপ্লবের সম্ভাবনার লেন্স দিয়ে না দেখে, বরং সংস্কারের তাগিদের জায়গা থেকে দেখা যেতে পারে।
মোশাহিদা সুলতানা
সহযোগী অধ্যাপক
অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র অবস থ ন পর ক ষ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ