সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সুরক্ষিত থাকুক
Published: 15th, February 2025 GMT
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাধার খবর আমাদের উদ্বিগ্ন না করিয়া পারে না। সমকাল অনলাইনের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত ৩১ বৎসর যাবৎ বসন্ত উৎসবের আয়োজন করিয়া আসিতেছে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ। এই বৎসর তাহাদের উদ্যোগে উক্ত অনুষ্ঠান চারুকলা অনুষদের বকুলতলা, পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক ও উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরে হইবার কথা ছিল। তবে বকুলতলা ও বাহাদুর শাহ পার্কে এই উৎসব হইলেও উত্তরায় হয় নাই। বকুলতলায় উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জানাইয়াছেন, পুলিশের অনুমোদন গ্রহণ, সিটি করপোরেশনের ফি পরিশোধসহ নিয়ম অনুযায়ী সকল কিছু সম্পন্ন করিবার পরও উত্তরার কতিপয় ব্যক্তির ‘বাধার মুখে’ অনুষ্ঠানটি তাহারা আয়োজন করিতে পারেন নাই।
কেবল বসন্ত উৎসব নহে; আমরা দেখিয়াছি সম্প্রতি দিনাজপুর ও জয়পুরহাটে নারীদের ফুটবল খেলায়ও বাধা প্রদান করা হইয়াছিল। গত ১২ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের মধুপুরে লালন স্মরণোৎসবও ‘স্থগিত’ হইয়াছিল। বিশেষত গত পাঁচ মাসের অধিক সময়ে দেশের অন্তত ৯০টি মাজারে হামলা ও ভাঙচুর হইয়াছে। বিভিন্ন এলাকায় বাউল গান, এমনকি কনসার্ট ও সাধারণ গানের আসরেও আসিয়াছে বাধা। পাঠ্যপুস্তক হইতে বৈচিত্র্যের গ্রাফিতি অপসারণ এবং উহার প্রতিবাদে সংগঠিত আদিবাসী ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলার ঘটনাও আমরা দেখিয়াছি।
আমরা গভীর উদ্বেগের সহিত দেখিয়া আসিতেছি, সাধারণভাবে যাহা কিছু এই দেশের বহুপক্ষীয় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতির অংশ, উহার অনেক কিছুই বর্তমানে বিরোধিতার সম্মুখীন হইতেছে। বিশেষ বৈশিষ্ট্য, স্বীয় রক্ষণশীল মত অন্য সকলের উপর চাপাইয়া দিবার অপচেষ্টা করিয়া যাইতেছে একটি মহল। বিস্ময়কর হইল, আলোচ্য ঘটনাবলি এমন সময়ে ঘটিতেছে, যখন দেশে এমন একটি সরকার রহিয়াছে; যাহারা বিশেষত বহু মত ও বহু সংস্কৃতির সুরক্ষা নিশ্চিত করিবার অঙ্গীকারবদ্ধ। সত্য, অতীতের প্রায় সকল আমলে রাষ্ট্রের পরিচালকরা বিভিন্ন অপশক্তির প্রতি এক প্রকার তোষণ নীতি অনুসরণ করায় পরিস্থিতি জটিল রূপ ধারণ করিয়াছে। অতীতের দোহাই দিয়া পার পাওয়া যাইবে না, ইহাও স্বীকার করিতে হইবে।
বারো মাসে তেরো পার্বণের এই দেশে বসন্ত উৎসব কতটা গুরুত্ব বহন করে, উহা কাহারও অজানা নহে। এই জনপদে সহস্রাধিক বৎসরের ভাব আন্দোলনে মরমি কবি লালন সাঁইজির অবদানও সকলের জানা। ফলে এই সকল বিষয়ে বাধা প্রদান কোনো প্রকারেই মানিয়া লওয়া যায় না। আশার বিষয়, প্রতিবেদন অনুসারে শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এক সমঝোতা বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হইয়াছে যে, মধুপুরের লালন স্মরণোৎসব আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হইবে। যেই সকল পক্ষের বাধায় অনুষ্ঠান স্থগিত ঘোষণা করা হয়, তাহারাও ইহাতে সম্মতি প্রদান করিয়াছে। কিন্তু ইহাও স্মরণে রাখা প্রয়োজন, ইতোপূর্বে দিনাজপুরে যাহারা নারী ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠান পণ্ড করিয়া দিয়াছিল, প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তাহারাও পরবর্তী সময়ে টুর্নামেন্টটি পুনরায় অনুষ্ঠিত হইবার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করিয়াছিল।
অন্যত্র অনুরূপ এক গোষ্ঠী একই প্রকার ফুটবল অনুষ্ঠানে বাধা প্রদান করিয়াছে। আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকার অনতিবিলম্বে অন্যের অধিকার ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের এইরূপ প্রবণতার বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ না করিলে কাজের কাজ হইবে না। জাতি হিসাবে আমাদের অগ্রগতির পথে বাধা সৃষ্টিকারী অপশক্তির বিরুদ্ধে সচেতন মহলেরও ধারাবাহিকভাবে সোচ্চার হইবার
সময় আসিয়াছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বসন ত উৎসব অন ষ ঠ ন কর য় ছ হইয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
প্রাণের গানে সালাহর উৎসব
শেষ বাঁশি বাজতেই নেচে-গেয়ে উৎসবে মাতেন সালাহ-অ্যালিসন-এলিস্টাররা। তবে পর্বটা খুব বেশি লম্বা হয়নি। অধিনায়ক ভার্জিল ফন ডাইক সবাইকে ডেকে মাঠের একটি গোলপোস্টের সামনে জড়ো করেন। আর্নে স্লটের নেতৃত্বে কোচিং স্টাফরাও যোগ দেন সেখানে। গ্যালারি সামনে রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চেইনের মতো করে সারিবদ্ধভাবে দেয়াল বানিয়ে দাঁড়ান সবাই। পুরো এনফিল্ড তখন সমবেত কণ্ঠে গাইতে শুরু করে– You’ll Never Walk Alone...। অলরেডদের হৃদয় থেকে উৎসারিত এ গানেই পূর্ণতা পায় উৎসব।
এ গানের সঙ্গে সঙ্গে অন্য রকম এক আবহ তৈরি হয় সেখানে। বিশ্বের কোনো স্টেডিয়াম ছুঁতে পারবে না এনফিল্ডের এই আবহ। এই আবহ তৈরি অলরেডদের বিশ্বাসে, বছরের পর বছর যারা কেউ কাউকে একা হাঁটতে দেয়নি। রোববার সকাল থেকেই এনফিল্ডের চারপাশে তৈরি হয়েছিল উৎসবের পরিবেশ। আতশবাজি ও লাল আবিরে রঙিন হয়ে উঠেছিল লিভারপুলের আকাশ-বাতাস। আগে থেকেই বন্দর শহরটির দেয়ালে দেয়ালে ঐতিহাসিক গানটির সঙ্গে ‘২০’ লেখা গ্রাফিতি আঁকা শুরু হয়ে গিয়েছিল।
ম্যাচ শুরুর দুই ঘণ্টা আগেই এনফিল্ড চত্বর রীতিমতো অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। আর্নে স্লট, সালাহদের স্বাগত জানাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাজার হাজার সমর্থক। লাল জার্সি পরা কাতারে কাতারে সমর্থকদের মাঝখান দিয়ে লাল বাসে করে লিভারপুলের ফুটবলাররা স্টেডিয়ামের আঙিনায় প্রবেশ করেন অন্যরকম এক পরিবেশে। ১৯৮৯-৯০ মৌসুমের পর ৩০ বছর ট্রফি জেতেনি তারা। পাঁচ বছর আগে ট্রফি জিতলেও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে উদযাপন হয়েছিল দর্শকশূন্য গ্যালারিতে। তাই এমন অনেক সমর্থক আছেন, যারা প্রিয় ক্লাবকে লিগ জিততে দেখেননি। সেই তরুণ প্রজন্মের উচ্ছ্বাসটা ছিল বেশি।
২০তম শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব আর্নে স্লট দিয়েছেন সাবেক কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপকে। এমনকি তিনি সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে পুরো গ্যালারিকে নিয়ে ক্লপের নামে গানও গেয়েছেন। ২০১৫ সালে লিভারপুলে যোগ দেওয়ার পর ক্লপ তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন ক্লাবটিকে। এর মধ্যে দুবার অবিশ্বাস্য লড়াই করেও মাত্র ১ পয়েন্টের ব্যবধানে ম্যানসিটির কাছে শিরোপা হারাতে হয়েছিল তাদের। ২০২০ সালে জিতলেও সমর্থকদের নিয়ে উল্লাস করতে পারেননি।
ক্লপের লিগজয়ী দলের সদস্য ছিলেন মোহামেদ সালাহ। এবার ভিন্ন স্বাদ পেয়েছেন মিসরীয় এ তারকা। শিরোপা জয়ের পর স্কাই স্পোর্টসকে তিনি বলেন, ‘সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে শিরোপা জয়ের অনুভূতি অবিশ্বাস্য। গতবারের (২০২০) চেয়ে এবার শতভাগ ভালো ছিল। এটা অনেক বেশি আনন্দময়। এটা সত্যিই বিশেষ কিছু।’
প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগ জেতা আর্জেন্টাইন তারকা এলেক্সিস ম্যাক এলিস্টারের জন্যও এ শিরোপা বিশেষ কিছু, ‘বিশ্বকাপ জিতেছিলাম, এখন জিতেছি প্রিমিয়ার লিগ। আমার জন্য সত্যই এটা বিশেষ কিছু। সতীর্থদের ছাড়া এটা সম্ভব হতো না। আমাদের দলটি সত্যিই অসাধারণ।’