রুবেন আমোরিম যেন হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছেন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে কোচিং করানো কতটা কঠিন। ওল্ড ট্রাফোর্ডকে ‘স্বপ্নের গালিচা’ বলা হলেও পর্তুগিজ কোচের জন্য যেন দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠছে দিন দিন। রেড ডেভিলদের সামলাতে রীতিমত হিমশীম খাচ্ছেন স্পোর্টিং সিপিতে দারুণ সফল এই ট্যাকটেশিয়ান। এসবের সঙ্গে ছিল ম্যানুয়েল উগার্তে, কোবি মাইনো, এবং লিসান্দ্রো মার্টিনেজের মত একাদশের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারদের চোটের কারণে স্কোয়াডের বাইরে থাকা। এবার সেই তালিকায় যোগ দিলেন আমাদ দিয়ালো।

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) রাতে চোটগ্রস্ত দল নিয়ে আরও একবার হোঁচট খেলেন আমোরিম। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে টটেনহ্যাম হটস্পারের বিপক্ষে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড হেরে গেছে ১-০ গোলে।

এই মৌসুমে টটেনহ্যামও চোটের কারণে দারুণ ভুগছে। এখনও তাদের মূল একাদশের গুরুত্বপূর্ণ ৫ ফুটবলার চোটের কারণে বাইরে। ম্যাচ জয়ের পর স্পার্স ম্যানেজার অ্যাঞ্জ পোস্তেকোগলু তাই আমোরিমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আমার দুনিয়ায় স্বাগতম।”

আরো পড়ুন:

তোমার হলো শুরু, আমার হলো সারা

পুচকে ব্রাইটনের বিপক্ষে উড়ে গেল বিলিয়ন ডলারের চেলসি 

টটেনহাম স্টেডিয়ামে ম্যাচের ১৩ মিনিটে করা জেমস ম্যাডিসনের গোলটির সৌজন্যেই এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ইউনাইটেডের বিপক্ষে টানা তৃতীয় জয় পেল টটেনহাম। সুদীর্ঘ ৪৫ বছর পর ইউনাইটেডের বিপক্ষে জয়ের হ্যাটট্রিক পেল উত্তর লন্ডনের ক্লাবটি।

অন্যদিকে এর আগে সবশেষ ১৯৭৩-৭৪ মৌসুমে শীর্ষ লিগে প্রথম ২৫ ম্যাচের ১৩টি হেরেছিল ইউনাইটেড; সেবার অবনমিত হয়েছিল দ্বিতীয় স্তরে নেমে গিয়েছিল রেড ডেভিলরা। ৫১ বছর পর এই মৌসুমে প্রথম ২৫ ম্যাচে ১২ ম্যাচ হেরেছে তারা। চোখ রাঙ্গাচ্ছে অবনমন।

ম্যাচটি শুরুর আগে ইউনাইটেড ছিল পয়েন্ট তালিকার ১৪ নম্বরে। অন্যদিকে স্পার্সের অবস্থান ছিল ১৫ নম্বরে। মৌসুমের নবম জয়ে ২৫ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে টটেনহাম উঠে গেছে ১২ নম্বরে। সমান সংখ্যক ম্যাচ শেষে ১২তম হারের দেখা পাওয়া রেড ডেভিলরা ২৯ পয়েন্ট নিয়ে নেমে গেছে ১৫ নম্বরে।

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে স্পার্স ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করা হয় চোটগ্রস্থ স্কোয়াড নিয়ে যুদ্ধ করা আমোরিমের প্রতি সহানুভূতি অনুভব করেন কিনা? জবাবে পোস্তেকোগলুকে বলেন, “যদি আমি আমার অফিস খুঁজি, তবে দেখব আমি অন্যান্য ম্যানেজারদের কাছ থেকে কোনো সহানুভূতির কার্ড পাইনি। তাই আমি বলতে পারি যে অনুভব করিনি।”

তবে এরপরই পেশাদারিত্বের খোলস থেকে বের হয়ে আসেন এই গ্রীক ম্যানেজার, “কিন্তু অবশ্যই সহমর্মিতা ছিল। আমি দেখতে পাচ্ছি আজ রুবেন একটি দল তৈরি করেছে যেখানে খেলোয়াড়দের নিজস্ব পজিশনের বাইরে খেলিয়েছে। আমার দুনিয়ায় স্বাগতম। কিন্তু এটা এক ম্যাচের জন্য। এখন দুই মাসের জন্য সেটা করুক। যে কোনো ক্লাব, দুই মাস ধরে সেটা করে দেখাক।”

ঢাকা/নাভিদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম র ম

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচিত সরকার ছাড়া ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি হবে না, অর্থনীতিতে গতি আসবে না

শ্রম আইন এবং শ্রমিক সংগঠন গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ইস্যুর ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি আগামী নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্বাচিত সরকার ছাড়া ব্যবসার পরিবেশেরও উন্নতি হবে না, অর্থনীতিতেও গতি ফিরবে না। আর জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ পিছিয়ে দিতে জাতিসংঘে আবেদনের জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

আজ সোমবার দুপুরে গুলশানের একটি হোটেলে ইংরেজি দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস আয়োজিত অর্থনৈতিক সংস্কারবিষয়ক এক সেমিনারে এ কথাগুলো বলেন ব্যবসায়ীরা। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ। সেমিনারে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা তাঁদের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

সেমিনারে বাংলাদেশ থাই চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ‘শ্রম আইন এবং শ্রমিক সংগঠন গঠনের বিষয়ে এখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে কেন? তিন মাস পরই নির্বাচিত সরকার আসবে, এ বিষয়ে নির্বাচিত সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে দেন। এখন আমরা অর্থনৈতিক অনেক সংস্কারের কথা বলছি। কিন্তু কিচ্ছু হচ্ছে না। কোনো মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) অথবা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) হচ্ছে না।’

নিট পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যবসা–বাণিজ্যের যে অবস্থা, তাতে এখনই এলডিসি উত্তরণের পরিস্থিতি নেই। এরই মধ্যে আমরা ১৬টি ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে এলডিসি উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, প্রয়োজনে জাতিসংঘ এসে আমাদের পরিস্থিতি তদন্ত করে দেখুক। এর মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে এলডিসি থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করা হোক।’

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, ‘এখন আমাদের নির্বাচিত সরকার দরকার। আগামী ১০ থেকে ১৫ বছর মানুষ জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না পেলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে না।’

সিরামিকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমইএ) সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, সুশাসন ছাড়া কোনো দেশের ও ব্যবসা–বাণিজ্য পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে না। ক্রেতারা এখন আতঙ্কিত, তারা পণ্য কিনতে চায় না। এই পরিস্থিতিতে একমাত্র সমাধান নির্বাচন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার সময় ব্যবসা সহজ করার পরিবেশ ৯৯ শতাংশ খারাপ ছিল। এখন সেটা হয়তো ৯৫ শতাংশে এসেছে। ধীরে ধীরে এটা ৯০ শতাংশ হবে এবং আরও উন্নতি হবে। কেন এটা হয় না, সেটা নিয়ে আলোচনা দরকার। বর্তমান সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করেছে। এতে দুই মাসে প্রায় ১২ লাখ সরাসরি সাক্ষাৎ কমেছে। অর্থাৎ ১২ লাখ বার এনবিআর এ কাগজ নিয়ে আসতে হয়নি।’ বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি এমন তথ্য জানিয়েছে বলে জানান তিনি।

সভায় আরও বক্তব্য দেন বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চেয়ারম্যান শরীফ জহীর, বাংলাদেশ অ্যাগ্রো কেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এস এম মোস্তাফিজুর রহমান, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আহসান-উজ জামান, আকিজ বশির গ্রুপের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম প্রমুখ।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আপনারা বেপরোয়া (ডেসপারেট) হচ্ছেন। কিন্তু যে দেশের বিমানবন্দর আগুনে পোড়ে, সেখানে কে বিনিয়োগ করবে? দেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ নেই।’

ইউসিবির চেয়ারম্যান শরীফ জহীর বলেন, ব্যাংক খাতে বিগত সরকারের সময়ের মতো অবস্থা চলতে থাকলে খাতটিকে দুই বছরের বেশি টিকে থাকতে পারত না। বিশেষ উদ্যোগের মাধ্যমে খেলাপি ঋণের মামলা নিষ্পত্তির সময় কমিয়ে আনতে হবে। তা না হলে প্রকৃত ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ