বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘‘পুঁজিবাজার (স্টক মার্কেট) অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। অথচ বিগত সরকারের সময়ে আমরা দেখেছি, পুঁজিবাজারকে কেউ কখনো ধারণ করেনি। আমরা দেখেছি, গত ১৫ বছর কীভাবে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করা হয়েছে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আগামীতে যদি নির্বাচিত সরকার আসে আর আমরা (বিএনপি) সেই সুযোগ পাই, তাহলে পুঁজিবাজারকে ধারণ করব।’’

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে ডিএসই ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ পথ’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘বিগত সরকারের সময়ে কেউ কখনো পুঁজিবাজারকে ধারণ করেনি। পুঁজিবাজার যে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি এটা কেউ বোঝেনি। অর্থনীতি চালাতে পুঁজিবাজার যে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘পুঁজিবাজার যদি স্বচ্ছভাবে চলে তাহলে সাধারণ মানুষও মনে করবে এখানে বিনিয়োগ করা যায়। সবাই তাদের পরিবারের ভবিষ্যৎ সঞ্চয়ের জন্য বিনিয়োগ করবে। পুঁজিবাজারের সাথে জড়িত প্রত্যেকটা ব্রোকারেজ হাউজে শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের অনেক বড় চাকরির সুযোগ রয়েছে।’’ 

আমির খসরু বলেন, ‘‘আমি বক্তৃতার জন্য বলছি না, আমাদের দলে অভ্যন্তরীণ আলাপ হয়েছে; আমরা পুঁজিবাজারে নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণে সিরিয়াসভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি। নিয়ন্ত্রণমুক্তকরণ ছাড়া পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করবে।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘যারা পুঁজিবাজার লুটপাট করেছে তাদের চিহ্নিত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে তারাই ঘুরেফিরে আবারো পুঁজিবাজারে এসব কর্মকাণ্ড চালাবে। কারণ দিন শেষে টাকা কথা বলে। তাদের লুটপাটের কারণে অনেকে আত্মহত্যা করেছে অনেকে নিঃস্ব হয়েছে। তাই তাদের আইনের আওতায় আনতে ডিবিএকেও ভূমিকা রাখতে হবে।’’ 

আমির খসরু বলেন, ‘‘বিএসইসিতে সরকারের নাক গলানোর কোনো সুযোগ নেই। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করার কথা। গত দিনে যা হয়েছে বিএসইসি কমিশন হিসেবে নয় বরং রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ করেছে। আমি অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনো দোষ দিতে চাই না। কারণ এটা তাদের কাজ না। তারা সুন্দরভাবে একটি রাজনৈতিক দলের কাছে সবকিছু হস্তান্তর করে দেবে, এটাই তাদের কাজ। তাই তাদের দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই।’’

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, ‘‘ব্যাংকিং ব্যবস্থার মানি মার্কেটের সংকট এসে পড়েছে পুঁজিবাজারে। অর্থনীতি যদি সুস্থ না হয়, তাহলে পুঁজিবাজারও সুস্থ হবে না। উচ্চ মূল্যস্ফীতি তৈরি হয়েছে। একটি কম আলোচিত বড় সমস্যা হচ্ছে, আমাদের রাজস্ব আয় অনেক কম। আমাদের বাজেট বড় করা যায় না। আমাদের ট্যাক্স জিডিপি রেশিও ৮ শতাংশের কম যা দক্ষিণ এশিয়ায় নিম্ন ট্যাক্স আয়ের দেশ এবং বিশ্বে সর্বনিম্ন।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘ব্যাংক থেকে ধার করার কারণে ব্যাংকের রিসোর্স চলে যাচ্ছে সরকারের কাছে। ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ ইন্টারেস্ট বেশি। এতে বিনিয়োগকারীদের মনে দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে যে, ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করবে নাকি পুঁজিবাজারে। মানি মার্কেট থেকে ক্যাপিটাল মার্কেটে বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা খুবই কম।’’ 

বিএসইসির সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘গত ১৫ বছরে পুঁজিবাজারের গভর্নেন্স অনেক প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের বিরুদ্ধে অনেক কথা শোনা যায়। অনেক কোম্পানিকে আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে যেগুলো এখন জেড ক্যাটেগরিতে চলে গেছে। ডিএসইর কথা না শোনে তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থাও নেমেছে তলানিতে।’’ 

তিনি বলেন, ‘‘গত ১৫ বছরে এই প্রথম নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। টাস্কফোর্স করা হয়েছে অনেক মাস হয়ে গেছে। এই পর্যন্ত তারা মাত্র কয়েকটা বিষয়ে সুপারিশ দিয়েছে।’’ 

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জহিরউদ্দিন স্বপন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, সিএমজেএফ সভাপতি গোলাম সামদানি, ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা, ডিবিএ সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী প্রমুখ।

ঢাকা/এনটি/এনএইচ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র র ব এসইস আম দ র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। শুভেচ্ছা বিনিময়কালে পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ও বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টায় ঢাকার আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে এ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এ জন্য দেশের পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। উভয় পক্ষের এ বৈঠকে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু সুপারিশ অন্তুর্ভুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। এ বৈঠকে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, “বিএসইসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আজকে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে আমরা পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরব। বিশেষ করে প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কিছু সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আমরা বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে দাবি জানাবো। আলোচনার মাধ্যমেই যে কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে।”

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম রাইজিংবিডিকে বলেন, “ঈদের আগেই এ বৈঠকের বিষয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিএসইসি। আমরা বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করব। আলোচনার মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে।”

তবে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমআইএ) সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরা বিএসইসির এ আমন্ত্রণকে প্রত্যাখ্যান করেছি। একই সঙ্গে আমরা বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করছি।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম রাইজিংবিডিকে বলেন, “বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করা হবে। এ জন্য আজকে বিনিয়োগকারীদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।”

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল সদস্য মনোনয়নে বিএসইসির কমিটি
  • ৯ ব্রোকার-মার্চেন্ট ব্যাংকের কার্যক্রম তদন্তে বিএসইসির কমিটি
  • পুঁজিবাজার অংশীজনদের সঙ্গে বিএসইসির ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়
  • ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ বিএসইসির