সীমান্তের গ্রামটি থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া প্রথম দুজন ফারহানা ও তামান্না
Published: 15th, March 2025 GMT
শুকনা মৌসুমে ধুলা আর বর্ষায় কাদামাখা মেঠো পথ পাড়ি দিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে দাখিল সম্পন্ন করেছিলেন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম দক্ষিণ দাউদপুরের দুই মেয়ে ফারহানা আক্তার ও সাদিয়া তামান্না। আলিমের গণ্ডি পেরোতে গ্রাম থেকে সাত কিলোমিটার দূরের মাদ্রাসায় যেতে হয়েছে তাঁদের। সেখানে ভালো ফল করে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন এই দুজন। তাঁরা এ গ্রামের প্রথম, যাঁরা এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন।
ফারহানা আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। শিক্ষক হয়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আলোকিত করতে চান সমাজের অবহেলিত মানুষকে। আর বিসিএস ক্যাডার হয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে চান ফারহানার সহপাঠী তামান্না।
৬ মার্চ ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের খ ইউনিট তথা কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ভর্তির জন্য উত্তীর্ণ হয়েছেন দুই সহপাঠী। ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে ফারহানার মেধাক্রম ৬৭৩। আর তামান্নার মেধাক্রম ৭২১।
ফারহানা আক্তার ওই গ্রামের দবিরুল ইসলাম ও শিউলি আক্তার দম্পতির মেয়ে। তাঁর বাবা পেশায় একজন বর্গাচাষি। সংসারে বাড়তি আয়ের জন্য বর্ষা মৌসুমে মাছের পোনার ব্যবসা করেন। সাদিয়া তামান্না একই গ্রামের আতাউর রহমান ও কাওকাবুন নাহার দম্পতির মেয়ে। তামান্নার বাবা গ্রামের মাদ্রাসার একজন সহকারী মৌলভি। দুজনে দাউদপুর দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২০২২ সালের দাখিল পরীক্ষা এবং মুকুন্দপুর ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ২০২৪ সালের আলিম পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
আলাপচারিতায় ফারহানা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, বাবা সংসারের অভাব-অনটনের মধ্যে বড় হয়েছেন। তিনি টেনেটুনে প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পার করেছেন। কিন্তু পরে আর মাধ্যমিকে পড়তে পারেননি। বাবা এখন রোদে পুড়ে আর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তাঁর পড়াশোনার খরচ জোগাচ্ছেন। কষ্ট করে পড়াশোনা করেছেন। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে খুব ভালো লাগছে তাঁর।
ফারহানা ও তামান্না বলেন, তাঁদের গ্রাম সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় সেটি অত্যন্ত মাদকপ্রবণ এলাকা। গ্রামের যুবকেরা মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সেই গ্রাম থেকে সব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির টাকা জোগাতে সাদিয়া তামান্নার কোনো সমস্যা না হলেও ফারহানার ভর্তি জন্য ২৫–৩০ হাজার টাকা জোগাড় করতে মা–বাবার কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ। ফারহানার মা শিউলি আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মেয়েটা ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় ভালো। মেয়ের সাফল্যে তাঁরা খুব খুশি। তবে মেয়েকে কীভাবে ভর্তি করাবেন, সেটা নিয়ে চিন্তায় আছেন। কেউ পাশে দাঁড়ালে মেয়েটার জন্য ভালো হতো।
ফারহানা ও তামান্নার শিক্ষক ও মুকুন্দপুর ফাজিল মাদ্রাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক জাকির হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফারহানা ও তামান্না আমার ছাত্রী। তারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে থেকে লেখাপড়া করে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ে এত ভালো স্কোর নিয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, এটি আমাদের জন্য গর্বের ব্যাপার। তাঁরা আমাদের এলাকার সম্পদ, দেশের সম্পদ। আমি আশা করছি, পড়াশোনায় ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়েও সর্বোচ্চ ভালো করবে তারা।’
এ বিষয়ে বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুজহাত তাসনীম প্রথম আলোকে বলেন, সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে লেখাপড়া করে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া ফারহানা ও তামান্না শুধু বিরামপুর নয়, সারা দেশের মেয়েদের জন্য গর্ব ও অনুপ্রেরণার। তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বা লেখাপড়ার জন্য যদি কোনো আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, তাহলে এ বিষয়ে সরকারি দপ্তর ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কথা বলা হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভর ত র স য গ প প রথম আল ক র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ডেঙ্গু-করোনায় দুই মৃত্যু, আক্রান্ত ২৭৫ জন
ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৭৫ জন। তাদের মধ্যে ডেঙ্গুতে ২৪৯ ও করোনা নিয়ে ভর্তি ২৬ জন।
রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কভিড-১৯ ৩০০ শয্যার হাসপাতাল ডেঙ্গু ও করোনা রোগীর চিকিৎসায় প্রস্তুত। বর্তমানে করোনা আক্রান্ত ১০ ও ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ১৫ রোগী চিকিৎসাধীন। কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীদের ৬০ শতাংশের বেশি ঢাকার বাইরে থেকে আসা। করোনা আক্রান্ত তিনজনকে আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে রোববার পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন একজনসহ চলতি বছর ডেঙ্গুতে ৩০ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৮৮ জনে। মারা যাওয়া ব্যক্তি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪৩, ঢাকা বিভাগে ৯, চট্টগ্রামে ৩৯, ময়মনসিংহে ৭, খুলনায় ৮, রাজশাহীতে ৫, রংপুরে ৩ ও সিলেট বিভাগে একজন ভর্তি হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৬৫৯ জন।
আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে নতুন করে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা বিভাগের ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষ এ রোগী একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ নিয়ে চলতি বছর করোনায় চারজনের মৃত্যু হলো। নতুন করে ২৬ জনসহ এ বছর আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে ২৪৬ জনে। গত এক দিনে ২৯১ নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ রোগী পজিটিভ হয়েছেন।
ঢাকায় বাড়ছে বাইরের রোগী
ডেঙ্গু ও করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় রাজধানীর মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কভিড-১৯ হাসপাতালের ৩০০ শয্যা প্রস্তুত করেছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এখানে ২৫ রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে আইসিইউতে থাকা তিনজনের অবস্থা জটিল।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, চিকিৎসাধীন রোগীর বড় অংশ ঢাকার বাইরের। প্রকোপ বাড়লে আগের মতো ধাপে ধাপে লোকবলের পাশাপাশি শয্যা বৃদ্ধি করা হবে।
সরেজমিন হাসপাতালটির বহির্বিভাগে ২০ থেকে ৩০ রোগী ও তাদের স্বজনের ভিড় দেখা যায়। জ্বর-সর্দি নিয়ে এসেছেন। লক্ষণ দেখে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিলেও, অনেকেই তা না করে ফিরে যান। প্রায় আধা ঘণ্টার অপেক্ষায় অ্যাম্বুলেন্সে গাজীপুর থেকে এক রোগীকে পাওয়া যায়। স্বজন জানান, চার দিন ধরে শরীর ব্যথা, জ্বর। পরীক্ষা করে রোগ শনাক্ত না হওয়ায় এ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
মাকে ভর্তি করেছেন লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার ইউনিয়নের বাহার হোসেন। তিনি সমকালকে জানান, স্থানীয় হাসপাতালে অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় ডিএনসিসি হাসপাতালে মাকে নিয়ে এসেছেন তিনি। বর্তমানে অবস্থা ভালো। পেটে একটু ব্যথা আছে, আলট্রাসনোগ্রাম করে ছাড়পত্র দেবেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল তানভীর আহমেদ জানান, গত মাস থেকে রোগী বাড়ছে। মে মাসে করোনা নিয়ে ভর্তি হন ২৪ জন। এ মাসের ১৫ দিনে ভর্তি হয়েছেন ১৪ জন। ডেঙ্গু নিয়ে মে মাসে ভর্তি হন ৪৭ জন। চলতি মাসে এ পর্যন্ত এসেছেন ২৬ জন। রোববার বহির্বিভাগে পাঁচ শতাধিক রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হয়। বেশির ভাগ রোগী আসছেন জ্বর-সর্দি ও গায়ে ব্যথা নিয়ে। গুরুতর রোগীরা অন্য হাসপাতালের রেফারে আসছেন।
বাইরের রোগী বেশি হলেও তা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ভর্তি রোগীদের ৬০ শতাংশের বেশি ঢাকার বাইরের বাসিন্দা।
কর্নেল তানভীর আহমেদ বলেন, হাসপাতালে প্রতিটি শয্যার সঙ্গে অক্সিজেন লাইন রয়েছে। বর্তমানে একসঙ্গে ৩০০ শয্যায় চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব। ৪৫ আইসিইউ সক্রিয়, ৭৯ চিকিৎসক ও নার্স রয়েছেন ৮৪ জন।
চট্টগ্রামে দুই হাসপাতালে শুরু পরীক্ষা
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ৬৫ শয্যা করোনা চিকিৎসায় প্রস্তুত করা হয়েছে। গতকাল এখানে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তবে রোগীদের মধ্যে তেমন কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। দুই হাসপাতালে বর্তমানে তিনজন চিকিৎসাধীন। পাঁচ শয্যার আইসিইউ প্রস্তুত করার কথা থাকলেও পারেনি কর্তৃপক্ষ। আজ তিনজনের নমুনা পরীক্ষা করে একজনের করোনা শনাক্ত হয়।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আকরাম হোসেন বলেন, ‘আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত হলেও যন্ত্রপাতির অভাবে আইসিইউ শয্যাগুলো সক্রিয় করা সম্ভব হয়নি।’ চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘আপাতত ডেঙ্গু ওয়ার্ডকে করোনা রোগীর জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে। আইসিইউ প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা করব।’
খুলনার পিসিআর ল্যাব বিকল
খুলনা ব্যুরো জানায়, জেলায় সরকারিভাবে করোনা পরীক্ষার একমাত্র আরটিপিসিআর ল্যাব খুলনা মেডিকেল কলেজে। মেরামত না করায় দীর্ঘদিন পিসিআর ল্যাবটি বিকল পড়ে আছে। বর্তমানে র্যা পিড অ্যান্টিজেন্ট কিট দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
খুমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান জানান, ৪০ শয্যা করোনা রোগীর জন্য প্রস্তুত করেছেন তারা।
সিলেটের দুই বন্দরে বিকল থার্মাল স্ক্যানার
সিলেট ব্যুরো জানায়, সরকারি নির্দেশে সিলেটে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও এর অধীনে শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। দুয়েক দিনের মধ্যে এখানে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হবে। অবশ্য গত শুক্রবার শামসুদ্দিন হাসপাতালে দুই করোনা রোগী ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্যের বিভাগীয় পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান জানান, দুই নারী-পুরুষ চিকিৎসাধীন। একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
এদিকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তামাবিল স্থলবন্দরের থার্মাল স্ক্যানার বিকল হয়ে যাওয়ায় শরীরের তাপমাত্রা মাপা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ওসমানী বিমানবন্দরে বিকল্প পদ্ধতি ইনফারেড থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।