জলবায়ুর প্রভাবে সিলেট ও পিরোজপুরে জীবন–জীবিকায় ব্যাপক পরিবর্তন
Published: 18th, March 2025 GMT
জলবায়ু পরিবর্তন এখন বিশ্বজুড়ে একটি গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য দেশের দীর্ঘ উপকূলরেখা ও নিম্নভূমি এলাকা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। এরমধ্যে সিলেট ও পিরোজপুর জেলায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের জীবন ও জীবিকায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। সিলেটে ৯৫ ভাগ উত্তরদাতা তাপমাত্রা বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন, যা কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ৫৬ ভাগ কৃষক ফসলহানির শিকার হয়েছেন। যার ফলে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। অভিবাসনের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে অভিবাসন নিরাপদ ও টেকসই না হওয়ায় অনেকেই শ্রম শোষণ, মানব পাচার ও আধুনিক দাসত্বের শিকার হচ্ছেন। অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর এক হোটেলে ‘রাউন্ডটেবিল কনসাল্টেশন ও মিডিয়া ফেলোশিপ ২০২৫’ শীর্ষক পরামর্শক সভায় এ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম সোহেল।
আরও উপস্থিত ছিলেন ফ্রেন্ডশিপের সিনিয়র ডিরেক্টর কাজী এমদাদুল হক, এফইএস-এর রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ ড.
অনুষ্ঠানে এ বছর চারটি ক্যাটাগরিতে চার সাংবাদিককে ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছে। তারা হলেন- প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মো. মহিউদ্দিন নিলয়, ডিবিসি নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক তাহসীনা সিদ্দিক, ডেইলি স্টারের স্টাফ রিপোর্টার আবদুল্লাহ মো. আব্বাস ও জাগোনিউজে‘র স্টাফ রিপোর্টার রায়হান আহমেদ।
ওকাপের গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০০৭ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৮১ ভাগ দুর্যোগকবলিত মানুষ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ঋণ নিয়েছেন, যার মধ্যে ৫৮ ভাগ বারবার ঋণের চক্রে পড়েছেন। এক ঋণ শোধ করতে গিয়ে তারা নতুন ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছেন এবং চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়ছেন। এই পরিবারগুলোর অনেকেই ঋণ শোধ করতে না পেরে বাধ্য হয়ে অভিবাসনের পথ বেছে নিচ্ছেন।
এতে আরও বলা হয়, পিরোজপুরে ৭২ ভাগ কৃষক মাটির লবণাক্ততার কারণে ফসলের উৎপাদন হ্রাসের কথা জানিয়েছেন, এবং ৬৬ ভাগ জেলে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ার কথা বলেছেন। নদী ভাঙ্গনের ফলে ৪৭ ভাগ পরিবার কৃষিজমি হারিয়েছে, যা তাদের খাদ্য সংকট ও কর্মসংস্থানের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, সিলেট ও পিরোজপুরের ৪১.৯৮ ভাগ পরিবারের অন্তত একজন সদস্য অভ্যন্তরীণ অভিবাসী, এবং ২৮.০৯ ভাগ পরিবারের অন্তত একজন সদস্য আন্তর্জাতিক অভিবাসী। অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের মধ্যে ৯২ ভাগ শ্রম শোষণের শিকার হয়েছেন, যেখানে ৫৬ ভাগ বিলম্বিত বা আংশিক মজুরি পেয়েছেন, ৪৩ ভাগ বিনা পারিশ্রমিকে অতিরিক্ত সময় কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন। আন্তর্জাতিক অভিবাসীদের ৯৯ ভাগ কোনো না কোনোভাবে আধুনিক দাসত্বের শিকার হয়েছেন। তারমধ্যে, ৮১ ভাগ অভিবাসীর মজুরি আটকে রাখা হয়েছে, ৬৭ ভাগ এর পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে, এবং ৪৫ ভাগ হুমকি ও ভয়ভীতির শিকার হয়েছেন। বিশেষত গৃহকর্মী নারীরা শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৬ ভাগ অভিবাসী ছয়টিরও বেশি রকমের শ্রম শোষণের শিকার হচ্ছেন, যা চরম মাত্রার নির্যাতনের ইঙ্গিত দেয়।
ওকাপের চেয়ারপার্সন শাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগের মাত্রা ও ক্ষতির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ১৯৬০-১৯৯০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বছরে গড়ে ৪টি বড় দুর্যোগ ঘটত, যা ১৯৯০-২০২২ সালের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। একই সময়ে, প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত বাৎসরিক গড় ক্ষতির পরিমাণ ১৪৫.৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ৫৫৭.৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে।’
তিনি আরও বলেন, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে দীর্ঘমেয়াদী সহায়তার অভাবের কারণে দুর্যোগপ্রবণ এলাকার মানুষ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হচ্ছেন। বর্তমানে দুর্যোগকালীন সহায়তা হিসেবে খাদ্য, ত্রাণ, কাজের বিনিময়ে খাদ্য সহায়তা বা এককালীন ঘর মেরামতের অর্থ সহায়তা প্রদান করা হলেও এটি মোটেও পর্যাপ্ত নয়। ফলে, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ টিকে থাকার জন্য ঋণের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সভায় জলবায়ু-প্রবণ অঞ্চলের মানুষের জন্য টেকসই সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, নিরাপদ কর্মসংস্থান ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসীদের মজুরি ও শ্রম অধিকার রক্ষায় গন্তব্য দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বিত চুক্তি করার সুপারিশ করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব র সহ য ত জলব য
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্দিককে মারধর ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা, যা বললেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি
শোবিজের একঝাঁক একঝাঁক অভিনয়শিল্পীকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি করা হয়েছে। প্রথমে ইরেশ যাকের, তারপর সুবর্ণা মুস্তাফা, অপু বিশ্বাস, নুসরাত ফারিয়া, নিপুণসহ ১৭ অভিনয়শিল্পীর নাম প্রকাশ্যে এসেছে। এরই মধ্যে গতকাল অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর ও লাঞ্ছিত করে রাজধানীর রমনা থানায় সোপর্দ করা হয়। এসব বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চর্চা চলছে। এ নিয়ে অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আজাদ আবুল কালাম নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।
সিদ্দিকের ওপর হামলা ও লাঞ্ছনা ঘটনা নিয়ে আজাদ আবুল কালাম গণমাধ্যমে বলেন, “সিদ্দিকের সঙ্গে যা ঘটেছে, এটা তো মব। এই মব ভায়োলেন্সকে তো ঠেকাচ্ছে না। কেন যেন মনে হচ্ছে, মব ভায়োলেন্সকে নীরবে বলা হচ্ছে, করে যাও। আমাদের কিছুই করার নেই। একজনের রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা থাকতে পারে। অভিনেতা হিসেবে সিদ্দিক সবার কাছে পরিচিত। কিছু লোক তাকে এভাবে রাস্তায় ধরে মেরে দেবে!”
প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে আজাদ আবুল কালাম বলেন, “দলবদ্ধভাবে সিদ্দিককে শারীরিকভাবে আঘাত করেছে, আক্রমণ করেছে, গায়ে থেকে জামাকাপড় খুলে ফেলেছে, এরপর থানায় সোপর্দ করেছে। থানায় যদি সোপর্দ করতেই হয়, তাহলে প্রথমে কেন আইন হাতে তুলে নিল? তাকে হেনস্তা করে আইনের হাতে তুলে দেবে— এই মব জাস্টিস, মব ভায়োলেন্স সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। এটা তো একটা সময় নানা স্তরে হবে। এসব কর্মকাণ্ড সরকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে, যেখানে মব ভায়োলেন্স, সেখানে কঠোর হস্তে দমন করবে।”
ঢালাওভাবে অভিনয়শিল্পীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়ে বিস্মিত আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, “ঢালাওভাবে হত্যা মামলা হচ্ছে! দেখে মনে হচ্ছে, সবাইকে মামলার মধ্যে ফেলতে হবে। ৩০০-৪০০ জন মামলার আসামি, এটা অবাস্তব একটা অবস্থা। একজন সুবর্ণা মুস্তাফার মতো শিল্পী রাস্তায় গিয়ে মানুষকে গুলি করবে? যে মানুষটি মামলা করেছেন, তিনি আন্দোলনের সময় আহত হয়েছেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন; তিনি মামলা করেছিলেন অনেক লোকের নামে। মামলার নথিতে শিল্পীদের অনেকের নাম দেখলাম, তারা রাস্তায় নেমে মানুষকে গুলি করবে!”
সরকারিভাবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা উচিত বলে মনে করেন আজাদ আবুল কালাম। তিনি বলেন, “সরকারিভাবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও উচিত হবে এ ধরনের মামলাকে প্রতিরোধ করা। নিরুৎসাহিত করা। যে ব্যক্তি মামলা করছেন, যদি প্রমাণিত হয়, শিল্পীরা কেউই গুলি করেনি, তখন তো এটা মিথ্যা মামলা হবে। এ রকম মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে, যে ব্যক্তি শিল্পীদের নামে মামলা করেছেন, তার কী শাস্তি হবে, তারও বিধান থাকতে হবে।”
“কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে, তা জানানোর একটা প্রক্রিয়া আছে। শুধু শিল্পী না, একজন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধেও যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে আপনি তার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগপর্যন্ত তাকে অপরাধী বলতে পারেন না। তাকে সামাজিকভাবে হেয় করতে পারেন না। মামলা করে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করা শুরু করলেন, এই প্রক্রিয়া যদি চলতে থাকে, এটাই যদি আমাদের মনস্তত্ত্ব হয়, তাহলে বিভক্তি আরো বাড়বে।” বলেন আবুল কালাম আজাদ।