আ’লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে একাত্মতা জানালেন বিএনপি নেতা হাবিব
Published: 20th, March 2025 GMT
ফ্যাসিবাদী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো নিষিদ্ধের দাবির প্রতি একাত্মতা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব।
তিনি বলেছেন, “আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এটি একটি ফ্যাসিস্ট ও সন্ত্রাসী সংগঠন। তাই আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে।”
বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে আওয়ামী লীগ ও মিত্র দলগুলো নিষিদ্ধের দাবিতে ৩৬ দিন ধরে চলা ছাত্র-জনতার গণঅবস্থান কর্মসূচির সমাপনী সমাবেশে তিনি একাত্মতা জানিয়ে এ কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
হিন্দু ধর্ম নিয়ে ঢাবি শিক্ষার্থীর কটূক্তি অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন
‘নিরাপত্তা শঙ্কায়’ ঢাবিতে আরেফিন সিদ্দিকের দোয়া মাহফিল স্থগিত
তিনি বলেন, “গত ৩৬ দিন ধরে রাজু ভাস্কর্যে যে দাবিতে ছাত্র-জনতা গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন, তা অত্যন্ত যৌক্তিক। কারণ আওয়ামী লীগ বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যা ঘটিয়েছে। তারা ১৬২ জনকে হত্যা করেছে, যাদের বয়স ১৮ বছরের কম তথা শিশু। কাজেই এ দলকে আর রাজনৈতিক দল বলা যায় না। তারা ফ্যাসিস্ট ও সন্ত্রাসী সংগঠন। তাই ইতালিতে যেমন ফ্যাসিস্টদের ও জার্মানিতে নাৎসিদের নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তেমনি আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ করতে হবেন।”
১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগের সভাপতি ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নেতা ছিলেন হাবিবুর রহমান। ওই সময়ে গণঅভ্যুত্থানের পর স্বৈরাচারী এরশাদের দল জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে বাধা না দেওয়ার কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “আমি, আমানুল্লাহ আমান, নাজিমুদ্দিন আলম বা অন্য কেউ যদি ভুল না করে শুধু বলতাম, তাহলেই কিন্তু জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হয়ে যেত। কাজেই এখন আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে ভুল করা যাবে না। শুধু আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করলে হবে না। তাদের মিত্র ১৪ দল এবং জাতীয় পার্টির দুই গ্রুপকেও নিষিদ্ধ করতে হবে।”
এ সময় জুলাই শহীদ মো.
তিনি বলেন, “আমার বাসা রাজধানীর পশ্চিম ধোলাইপাড়। গত ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারে আমার ছেলে শাহাদাত হোসেন শাওন শহীদ হয়। আজ পর্যন্ত আমার ছেলের একজন খুনীও গ্রেপ্তার হয়নি। আমার ছেলের খুনী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়নি। আমাদের ন্যায়বিচার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের ছেলেদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে যারা ক্ষমতায় আসতে চায়, তাদের বলতে চাই, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না করে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচন করতে হলে আওয়ামী লীগ ও সঙ্গে থাকা সব দলকে নিষিদ্ধে করতে হবে। পাড়া মহল্লায় যেসব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে।”
এদিকে, সমাবেশে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন গণঅবস্থানের সংগঠক বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান।
তিনি বলেন, “গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দুই নেতা মো. ওমর ফারুক ও আবু সাঈদের নেতৃত্বে অনশনের মধ্য দিয়ে আমাদের অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। পরে এতে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ ও বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরাসহ ছাত্র-জনতা সম্পৃক্ত হন।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র-জনতার এ অবস্থান কর্মসূচি দেশের রাজিনীতিতে এক বিরল ঘটনা। কর্মসূচির প্রথম ১৮ দিন দিনরাত ২৪ ঘণ্টা অবস্থান করে, প্রতিদিন সন্ধ্যায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে জুলাই গণহত্যার ভিডিও প্রদর্শনী করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী এমপিদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে এবং গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে।”
বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের সদস্য সচিব বলেন, “আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। তবে দুঃখনজক হলেও সত্য সরকার কোনো সাড়া দেয়নি। পবিত্র রোজার জন্য রাতের বেলা অবস্থান সীমিত করে দিনের বেলা অবস্থান করাসহ প্রতিদিন গণইফতারের আয়োজন করা হয়েছে।”
সদস্য সচিব আরো বলেন, “ফ্যাসিবাদ নিষিদ্ধ করার দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। গণঅবস্থানের অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখে এ আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ফ্যাসিস্টদের নিয়ে যেমন আমাদের কোনো বিভ্রান্তি নেই, তেমনি ফ্যাসিস্টদের দমনের বিষয়েও আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিধা-সংকোচ নেই।”
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, শহীদ শাওনের মা শামসুন্নাহার, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের রাজনৈতিক প্রধান আনিছুর রহমান, সাংগঠনিক প্রধান মো. শফিউর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক সাইয়েদ কুতুব, সহকারী সদস্য সচিব আব্দুস সালাম, মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার ও গালীব ইহসান, কেন্দ্রীয় সদস্য ওয়াসিম আহমদ।
আরো উপস্থিত ছিলেন, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ, সদস্য সচিব ফজলুর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক ডা. নাবিল আহমদ, সহকারী সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম ও হামিম হোসাইন শুভ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ ও নিয়াজ আহমদ, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন ষ দ ধ করত গণঅবস থ ন ন ষ দ ধ কর ছ ত র জনত র জন ত ক র রহম ন আম দ র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)