আমরা গাজাবাসী নিজেদের আর কত মিথ্যা বলব
Published: 21st, March 2025 GMT
আমরা গাজার মানুষ বারবার হুমকির মুখে পড়েছি। আমরা আমাদের ‘সাফ’ করে দেওয়ার হুমকি শুনেছি; গণহত্যার হুমকি শুনেছি। আমাদের ওপর ‘জাহান্নাম’ নামিয়ে আনার হুমকি শুনেছি। আসলে আমরা তো ইতিমধ্যেই জাহান্নাম পার করেছি। ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে ১৯ মার্চ ২০২৫—গণহত্যার এই দহনকালে গাজার ২০ লাখ ফিলিস্তিনির মতো আমিও বেঁচে আছি।
সত্যি বলতে, আমি বেঁচে আছি জীবনকে আঁকড়ে ধরে নয়, বরং ‘লাইফ’ (জীবন) শব্দ থেকে ‘এফ’ ফেলে দিয়ে ‘লাই’ (মিথ্যা) ধরে রেখে বেঁচে আছি। যত বেশি নিজেকে মিথ্যা বলেছি, ততই আমার নাজুক অস্তিত্ব টিকেছে। প্রথম মিথ্যাটার কথা এখনো মনে পড়ে। সেটা গণহত্যারও অনেক আগের কথা।
২০০৮-০৯ সালে ইসরায়েলের গাজা আক্রমণের পর নিজেকে বলেছিলাম, ‘আর কখনো এমন যুদ্ধ দেখব না।’ সেটি একেবারেই শিশুসুলভ মিথ্যা ছিল। এরপর ২০১২ সালেও যুদ্ধ দেখলাম। ২০১৪ সালে দেখলাম। ২০২১ সালে দেখলাম। এমনকি ২০২৩ সালের মে মাসেও।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় যখন ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো গাজার ওপর নির্বিচার বোমাবর্ষণ শুরু করল; তখন আমার মা ভয়ে কাঁপতে লাগলেন। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন। আমি মাকে জড়িয়ে ধরলাম। সেই মুহূর্তে সত্য বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেদিন মাকে আর নিজেকে বললাম, ‘এটাই আমাদের করুণ জীবনের শেষ অধ্যায়।’ মনে হচ্ছিল, সামনে যা আসছে, তাতে কোনো না কোনোভাবে মরবই। বাঁচার কোনো পথ নেই। মা-ও তা–ই ভেবেছিলেন; তাই কাঁদছিলেন।
কিন্তু নিশ্চিত মৃত্যুকে পুরোপুরি মেনে নিয়ে কীভাবে বাঁচা সম্ভব? মানুষ স্বভাবতই বাঁচতে চায়। তাই আবার নিজেকে মিথ্যা বলা শুরু করলাম.
শিগগিরই যখন ১৭ অক্টোবর ইসরায়েল ব্যাপ্টিস্ট হাসপাতালে হামলা করে শত শত মানুষকে হত্যা করে, তখন আমি নিজেকে মিথ্যা বলেছিলাম। আমি
নিজেকে বলেছিলাম, গাজার জন্য পৃথিবী উঠে দাঁড়াবে এবং আর কখনো ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান গাজাকে বোমা মারবে না। এটা ছিল একটি স্বল্পস্থায়ী মিথ্যা। এরপর ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ তীব্রতর হয়ে উঠেছিল এবং গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছিল।
যখন ইসরায়েল আমাকে ওই বছর ডিসেম্বর মাসে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করেছিল, আমি নিজেকে বলেছিলাম, কয়েক দিনের মধ্যে আমি ফিরে আসব। ২০২৪ সালের মে মাসে ফিরে আসার পর, আমি নিজেকে বলেছিলাম, এবার আর আমাকে বাস্তুচ্যুত করা হবে না।
যখন ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমার সপ্তম বাস্তুচ্যুতি থেকে ফিরে এলাম, তখন ইসরায়েল গাজায় ত্রাণপ্রবাহ কঠোরভাবে সীমিত করে দিয়েছিল। তখন আমি নিজেকে বলেছিলাম, পৃথিবী আমাদের ক্ষুধার্ত হতে দেবে না। কিন্তু তা-ই হলো। কয়েক সপ্তাহ, আমি এবং আমার পরিবার প্রায় না খেয়ে বেঁচে ছিলাম। আল-মাওয়াসিতে বাস্তুচ্যুত অবস্থায় কিছু রুটি, জাআতার এবং টুনা মাছের কিছু ক্যান সঞ্চয় করেছিলাম, তা একটু একটু করে খেয়ে কোনোমতে বেঁচে ছিলাম।
আরও পড়ুনইসরায়েলের নৃশংসতা নিয়ে যদি সবাই মুখ খুলত১৮ ঘণ্টা আগেকিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্রবিরতির প্রথম পর্ব কার্যকর হওয়ার পর আমি নিজেকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট মিথ্যা বলেছিলাম। বলেছিলাম, ‘এটাই শেষ, যুদ্ধের গণহত্যার অংশ শেষ হয়েছে। কারণ, ইসরায়েল আর কী করতে পারে, যা তারা আগে করেনি? আমরা তো সব ধরনের যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গেছি!’ কিন্তু ভেতরে-ভেতরে জানতাম, আমি নিজের কাছে মিথ্যা বলছিলাম।
আমি জানতাম, গাজার অনেক মানুষের মতো, এটা শুধু সময় এবং উপায়ের ব্যাপার ছিল যে ইসরায়েল আবার কখন ও কীভাবে গণহত্যা শুরু করবে।
এতটুকু সময়ের মধ্যে একটি সংকেত মিলেছিল যে আবার হামলা আসছে। পবিত্র রমজানের শুরু হওয়ার পরপরই ইসরায়েল সব সাহায্যপ্রবাহ বন্ধ করে দেয়। এটি আরেকটি খাদ্যসংকট সৃষ্টি করে। দুই সপ্তাহ পর, সাহ্রির ডাকের বদলে আমরা প্রচণ্ড বোমাবর্ষণের শব্দে জেগে উঠলাম। ওই বোমায় ৪০০ জনের বেশি মানুষ মরেছে। এর মধ্যে অন্তত ১০০টি শিশু ছিল।
ইসরায়েল তাদের ‘সম্পূর্ণ’ বিজয় অর্জন করতে আর কত শিশুকে হত্যা করবে? এ দফায় তাদের ‘কাজ শেষ করতে’ কত সময় লাগবে? আমাদের আর কতটা ভীতি ও দুর্দশা সহ্য করতে হবে? আর এবার এই হামলা কীভাবে শেষ হবে?
ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধের ১৫ মাস পার হওয়ার পরও আমি এ প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তর জানি না। কারণ, একের পর এক তাদের পাশবিকতা দিয়ে ইসরায়েল আমাকে চমকে দিতে থাকে।
এখনো আমি বলে যাচ্ছি, এগুলো কী? এটি কি গণহত্যার চূড়ান্ত পর্যায়? আক্রমণ চালিয়ে যাওয়া, সব সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া এবং পানি ও বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়া কি চলতেই থাকবে? আমার ভয়, ইসরায়েল নৃশংসতার পথে আরও বহুদূর যাবে।
ইসরায়েলি সরকার বলছে, যতক্ষণ না তারা তাদের বন্দীদের ফিরে পায়, ততক্ষণ এই আক্রমণগুলো চলবে। যদি এটা সত্যি হয়, তবে যুদ্ধবিরতির কী দরকার ছিল? এটা কি হত্যাকারীদের কিছু সময়ের ‘বিশ্রাম’ ছিল?
এদিকে পৃথিবী আবারও শুধু নিন্দা জানাচ্ছে, কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এটি আমাদের বহুবার ব্যর্থ করেছে। আমরা এতবার ব্যর্থ হয়েছি যে আমি গণনা করা ছেড়ে দিয়েছি।
আমি যুদ্ধের মধ্যে বড় হয়েছি এবং ১৫ মাসের গণহত্যার মধ্যেও বেঁচে থেকেছি। তবু আমি আশ্চর্য হচ্ছি, এত বড় যন্ত্রণার পরও আমি ভয় থেকে বাঁচার কোনো প্রতিরোধব্যবস্থা তৈরি করতে পারিনি। আমি এখনো সামনের দিন নিয়ে ভয় পাচ্ছি।
আমি আবার মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছি। কিন্তু এবার আমি নিজেকে সত্য বলতে চাই। আমি বলতে চাই, ইসরায়েল আমার ওপর যে জীবন চাপিয়ে দিয়েছে, আমি তার চেয়ে ভালো জীবন পাওয়ার যোগ্য। আমি আর নিজেকে মিথ্যা বলতে চাই না, আমি বাঁচতে চাই।
কাসেম ওয়ালিদ গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি পদার্থবিদ ও লেখক
আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র গণহত য র র গণহত য বল ছ ল ম আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠনই বলছে, ‘গাজায় গণহত্যা চলছে’
ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংগঠন বিটসেলেম ‘আমাদের গণহত্যা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
সোমবার (২৮ জুলাই) প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধকে কঠোরভাবে নিন্দা করা হয়েছে। চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৯ হাজার ৭৩৩ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে; আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৭ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নীতি এবং এর ভয়াবহ পরিণতির বিশ্লেষণ, সঙ্গে ইসরায়েলি শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাদের ও সামরিক কর্মকর্তাদের এই হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে দেওয়া বিবৃতিগুলো একত্রে বিচার করলে স্পষ্টভাবে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় যে, ইসরায়েল সমন্বিতভাবে এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে যার উদ্দেশ্য গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনি সমাজকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করা।”
আরো পড়ুন:
‘আমরা মরে যাচ্ছি’, গণঅনাহারে বৈশ্বিক নীরবতায় গাজার ধিক্কার
‘আজ তুমি কিছু খেয়েছো?’ গাজায় অনাহার আর টিকে থাকার গল্প
“অন্য কথায় বলতে হয়, ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাচ্ছে,” বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-নেতৃত্বাধীন হামলায় আনুমানিক ১ হাজার ১৩৯ জন ইসরায়েলি নিহত হন এবং প্রায় ২০০ জনকে জিম্মি করা হয়।
‘আমাদের গণহত্যা’
বিটসেলেমের প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সংঘটিত বিভিন্ন নিপীড়নের বিশ্লেষণ করা হয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই নিপীড়ন শুরু হয়।
“এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই একটি সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন পুরো অঞ্চলে ইহুদি গোষ্ঠীর প্রাধান্য স্থাপন করা,” বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এতে আরো বলা হয়েছে, “এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল রাষ্ট্র উপনিবেশবাদী বসতি স্থাপন-ভিত্তিক কাঠামোর বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে, যার মধ্যে রয়েছে ব্যাপকভাবে বসতি স্থাপন, উচ্ছেদ ও জমি দখল, জনসংখ্যাগত প্রকৌশল, জাতিগত নির্মূল এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর সামরিক শাসন চাপিয়ে দেওয়া।”
প্রতিবেদনটিতে দেখানো হয়েছে, ইসরায়েল কীভাবে ‘ইহুদি আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে আইনের শাসনের মিথ্যা ছদ্মাবরণ ব্যবহার করেছে, অথচ বাস্তবে ফিলিস্তিনিদের অধিকারগুলো রক্ষা করা হয়নি। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এসব প্রচেষ্টা আরো ব্যাপকভাবে ত্বরান্বিত হয়েছে।”
‘গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত বিস্তৃত ও সমন্বিত আক্রমণের’ কথা তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। যেখানে বলা হয়েছ, “অধিকাংশ ইহুদি-ইসরায়েলিদের পাশাপাশি ইসরায়েলের আইনগত ব্যবস্থাও নানাভাবে সমর্থন, বৈধতা ও স্বাভাবিকীকরণের গ্যারান্টি পেয়েছে।”
২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের প্রচেষ্টা আরো জোরদার করা হয়েছে।
“উত্তর গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে অনেক বিশেষজ্ঞ জাতিগত নির্মূলের প্রচেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বাস্তবে ২০২৪ সালের নভেম্বরের মধ্যে উত্তর গাজায় বসবাসকারী প্রায় ১ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়েছে,” তথ্য-প্রমাণ দিয়ে বলেছে বিটসেলেম।
প্রতিবেদনটি শুধু গাজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এতে বলা হয়েছে, “৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েল দখলকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে তাদের সহিংস অভিযান জোরদার করেছে এতটা ভয়ংকর মাত্রায়, যা ১৯৬৭ সালে পশ্চিম তীর দখলের পর থেকে আর দেখা যায়নি।”
বিটসেলেম প্রথম ২০২১ সালে ‘বর্ণবৈষম্যমূলক শাসন’ শব্দটি ব্যবহার করে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনে বিরাজমান দ্বৈত বাস্তবতাকে তুলে ধরে।
কথায় ও কাজে গণহত্যা
বিটসেলেমের এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধের পরপর। ওই প্রবন্ধে হলোকাস্ট-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যামোস গোল্ডবার্গ গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। একইসঙ্গে ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে প্রতিবাদ আন্দোলন ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তবে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা এখনো ইসরায়েলি সমাজে ব্যাপকভাবে বিতর্কিত। জুন মাসে পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপ অনুযায়ী, মাত্র ১৬ শতাংশের কাছাকাছি ইহুদি-ইসরায়েলি মনে করেন, ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সম্ভব।
জেরুজালেম সেন্টার ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ফরেইন অ্যাফেয়ার্স (জেসিএফএ) এর একটি জরিপ অনুযায়ী, প্রায় ৬৪ শতাংশ ইহুদি ইসরায়েলি মনে করেন, ইসরায়েলের উচিত গাজা উপত্যকা সাময়িকভাবে দখলে নেওয়া।
ইসরায়েলের প্রচলিত মনোভাবের সমালোচকদের মধ্যে রয়েছেন দেশটির রাজনৈতিক ভাষ্যকার, সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ওরি গোল্ডবার্গ, যিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এই দৃষ্টিভঙ্গিগুলোকে ‘ঘৃণ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন।
ওরি গোল্ডবার্গের মন্তব্যের বিষয়ে লেখক, গবেষক এবং ‘দ্য ফায়ার দেজ টাইমস’ পডকাস্টের প্রতিষ্ঠাতা এলিয়া আয়ুব আলজাজিরাকে বলেন, “আমি একমাত্র এই উপসংহারেই পৌঁছাতে পারি যে, ইসরায়েলি সমাজের ভেতরের চাপ সত্যিই ওরি গোল্ডবার্গ সম্প্রতি যেভাবে উল্লেখ করেছেন, ঠিক ততটাই গভীর।”
তিনি আরো বলেন, “ইসরায়েলি সমাজ প্রায় দুই বছর ধরে একটি গণহত্যাকে স্বাভাবিক করে তুলেছে এবং এটি তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মূলে থাকা এক গভীর নৈতিক পচনের প্রমাণ।”
ইসরায়েলের সরকারি কর্মকর্তারাও গাজার জনগণের বিরুদ্ধে তাদের সহিংস আহ্বান রেখে যাচ্ছেন।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলি রেডিওতে হেরিটেজ মন্ত্রী আমিচাই এলিয়াহু বলেন, “সরকার গাজাকে নিশ্চিহ্ন করার কাজ করছে এবং ঈশ্বরের কৃপায় আমরা এই ‘পাপময়তা’ (গাজার বাসিন্দারা) নিশ্চিহ্ন করছি। গাজার সব অঞ্চল ইহুদিদের হবে।”
অনেক দেরিতে হলেও সাংবাদটিকে স্বাগত
বিটসেলেমের প্রতিবেদনটি ৭৯ পৃষ্ঠাবিশিষ্ট এবং এতে গাজায় গত ২২ মাস ধরে চলমান হামলার মধ্যে থাকা অসংখ্য ফিলিস্তিনির সাক্ষাৎকার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ইসরায়েলের সবচেয়ে প্রখ্যাত মানবাধিকার সংগঠনগুলোর একটি বিটসেলেম। সংগঠনটি গাজায় ইসরায়েলের কার্যকলাপকে গণহত্যা বলে বর্ণনা করায় দেশের ভেতরে তারা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গাজায় নিজেদের দেশের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করা অনেক ইসরায়েলি এরইমধ্যে তাদের দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে কঠোর নিন্দার মুখোমুখি হয়েছেন।
এই কারণে বিটসেলেমের ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহারের গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়, যদিও কিছু লোক মনে করেন এটি আগেই হওয়া উচিত ছিল।
এ বিষয়ে এলিয়া আয়ুব বলেন, “এই সংবাদকে আমি স্বাগত জানাই, যদিও এটি গণহত্যার অনেক পরে এসেছে।”
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে বলে মামলা করে। ব্রাজিল, স্পেন, তুরস্ক ও আইরিশ প্রজাতন্ত্রসহ কয়েকটি দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে মিলিত হয়ে আইসিজেতে মামলায় যোগ দিয়েছে।
ঢাকা/রাসেল