বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে এমওডিসি পদে চাকরির সুযোগ
Published: 22nd, March 2025 GMT
বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে এমওডিসি (এয়ার) পদে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। এমওডিসি (জিডি) ও এমওডিসি (ক্লার্ক) ট্রেডে লোক নেওয়া হবে। আগ্রহী প্রার্থীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। শুধু পুরুষ প্রার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।
আবেদনের যোগ্যতাএসএসসি বা সমমান পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ২.০০ থাকতে হবে। ২০২৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তারিখে বয়স ১৬ থেকে ২১ বছরের মধ্যে হতে হবে। উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। বুকের মাপ স্বাভাবিক অবস্থায় ৩০ ইঞ্চি, প্রসারিত অবস্থায় ৩২ ইঞ্চি। চোখের ক্ষমতা ৬/৬ ও স্বাভাবিক দৃষ্টিসম্পন্ন হতে হবে। বর্ণান্ধ গ্রহণযোগ্য নয়। ওজন হতে হবে বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী। অবিবাহিত হতে হবে।
আরও পড়ুনশাহজালাল ইসলামী ব্যাংক নেবে ম্যানেজমেন্ট ট্রেইনি ও প্রবেশনারি অফিসার, সর্বোচ্চ বেতন ৭১ হাজার১৬ মার্চ ২০২৫যেভাবে আবেদনআগ্রহী প্রার্থীদের এই ওয়েবসাইটে প্রবেশের পর ‘অ্যাপ্লাই নাউ’ অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী নিবন্ধন করে আবেদন ফি বাবদ ১৫০ টাকা জমা দিতে হবে। আবেদন ফি জমা দিলে নিবন্ধন করা মুঠোফোনে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হবে। এই ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসব শিক্ষাগত যোগ্যতার সাময়িক সনদ, প্রশংসাপত্র ও নম্বরপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি। নাগরিকত্ব, চারিত্রিক সনদ, বৈবাহিক অবস্থা ও স্থায়ী ঠিকানার সনদ জমা দিতে হবে। সদ্য তোলা পাসপোর্ট আকারের ১২ কপি সত্যায়িত ছবি (অবশ্যই ল্যাব প্রিন্ট, কালারসহ হতে হবে)। বর্তমান অথবা সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তৃক প্রদত্ত চারিত্রিক সনদ। স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণস্বরূপ জন্মনিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি।
পরীক্ষার বিষয়আবেদনকারী প্রার্থীদের মধ্য থেকে লিখিত পরীক্ষা (এসএসসি সমমানের) নেওয়া হবে। এরপর ডাক্তারি ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীদের চূড়ান্তভাবে বাছাই করা হবে। পরীক্ষাকেন্দ্রে সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও ব্যাগ বহন করা নিষেধ।
আরও পড়ুনপাকিস্তানের বৃত্তি, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা৬ ঘণ্টা আগেসুযোগ–সুবিধাপ্রশিক্ষণের সময় মাসিক বেতন ৮ হাজার ৮০০ টাকা। প্রশিক্ষণ শেষে পদবি অনুসারে আকর্ষণীয় বেতন ও ভাতা পাবেন। বিমানবাহিনীর তত্ত্বাবধানে উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের সুযোগ। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণেরও সুযোগ রয়েছে। সন্তানদের যোগ্যতার ভিত্তিতে এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি, বিইউপি, আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ, এমআইএসটি, ক্যাডেট কলেজ ও বিমানবাহিনী পরিচালিত বিএএফ শাহীন স্কুল–কলেজে অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে। বিমানবাহিনীর এক ঘাঁটি থেকে অন্য ঘাঁটিতে সপরিবার বিমান বা হেলিকপ্টার বা বাসযোগে যাতায়াতের সুযোগ, বাসস্থান ও রেশনপ্রাপ্তির সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া সামরিক হাসপাতালে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে।
আবেদনের সময়সীমা৩ থেকে ১০ এপ্রিল ২০২৫।
আরও পড়ুনকোল পাওয়ার জেনারেশনে চাকরি, মূল বেতন ১ লাখ ৭৫ হাজার, আছে সার্বক্ষণিক গাড়ি১৮ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
মুহাম্মদ ইলিয়াসের তাবলিগি দর্শন
মানুষের হৃদয়ে ঈমানের আগুন জ্বালানোর প্রয়াসে শায়খ মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভী (১৮৮৫-১৯৪৪) গড়ে তুলেছিলেন জামায়াতে তাবলিগ, যা বিশ্বব্যাপী দাওয়াতের এক অপূর্ব নজির। তাঁর বাণী ও উপদেশের সংকলন ‘মালফুজাত’ নামে আরবি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে, যা তাঁর দাওয়াতি দর্শন ও তরবিয়তি পদ্ধতির এক জীবন্ত দলিল। দামেস্কের দারুল কলম থেকে প্রকাশিত এই গ্রন্থ, শায়খ আদিল হাররাজি আল-ইয়ামানি আন-নাদভির তত্ত্বাবধানে সম্পাদিত, তাবলিগ জামায়াতে মূল দর্শনের প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত। এটি শুধু মুহাম্মদ ইলিয়াসের বাণীর সংকলন নয় বরং একটি ঐতিহাসিক ও দাওয়াতি দলিল, যা আধুনিক ইসলামি আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পুনর্মূল্যায়নের দাবি রাখে।
‘মালফুজাত’-এর শিক্ষা
শায়খ মুহাম্মদ ইলিয়াসের মজলিস মালফুজাত সংরক্ষণ করেছেন তাঁর শিষ্য মুহাম্মদ মানজুর। তাবলিগ জামায়াতে ছয়টি মূলনীতি—কালিমা, নামাজ, ইলম ও জিকর, ইকরামুল মুসলিমিন, ইখলাস ও নিয়ত এবং আল্লাহর পথে বের হওয়ার ভিত্তিতে গ্রন্থটি রচিত। তিনি তাওহিদকে (আল্লাহর একত্ব) নাজাতের মূল ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তাওহিদের দুর্বলতা মুসলিমদের অধঃপতনের কারণ’। তিনি ফরজ ইবাদতের প্রাধান্য, জিকিরের প্রাচুর্য এবং তাকওয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ফরজগুলোর মর্যাদা নফলের চেয়ে অনেক উঁচুতে। নফলের উদ্দেশ্য ফরজগুলোর ঘাটতি পূরণ করা’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
তাঁর দাওয়াতি পদ্ধতি ছিল সরল কিন্তু গভীর। তিনি আল্লাহর পথে বের হওয়াকে আত্মশুদ্ধির মাধ্যম হিসেবে দেখতেন, যা তাবলিগের একটি বৈশিষ্ট্য। তিনি রিয়া (লোকদেখানো) ও বিতর্ক এড়ানোর পরামর্শ দেন, বলেন, ‘ইখলাস (খাঁটি আল্লাহর জন্য) ছাড়া কোনো কাজ কবুল হয় না।’ তাঁর দৃষ্টিতে, দাওয়াতের লক্ষ্য হলো আল্লাহর আদেশকে মানুষের স্বভাবে পরিণত করা, যাতে নিষিদ্ধ কাজ তার কাছে অপছন্দনীয় হয়। তিনি জিকিরকে এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রধান উপায় হিসেবে বিবেচনা করতেন।
শায়খ ইলিয়াসের দাওয়াতি পদ্ধতি ছিল তাওয়াজ্জুহ বা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের পরিবর্তে তাজকিয়া (আত্মশুদ্ধি) ও ইখলাসের ওপর কেন্দ্রীভূত। তিনি জটিল তাত্ত্বিক আলোচনার পরিবর্তে সরল নসিহতের ওপর জোর দিতেন। তাঁর মতে, দাওয়াত হবে এমন, যেন ‘আল্লাহর আদেশ মানুষের স্বভাব হয়ে যায়’। তিনি আল্লাহর পথে বের হওয়াকে তুলনা করতেন সাহাবিদের ত্যাগের সঙ্গে, যা দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক উন্নতি আনে। তিনি বলেন, ‘দাওয়াতে আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার ফরজ, কিন্তু কতজন এই ফরজ পালন করে?’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
আরও পড়ুনসুরা হুমাজাতে চারটি পাপের শাস্তির বর্ণনা০৬ মে ২০২৫ঐতিহাসিক পটভূমি
মুহাম্মদ ইলিয়াস ভারতের কান্ধলায় একটি আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দেওবন্দি সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে তাঁর শৈশব কাটে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন, সাধারণ মুসলিমদের ধর্মীয় অজ্ঞতা এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ তাঁর দাওয়াতি চিন্তার পটভূমি। তিনি বিশ্বাস করতেন, শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মুসলিমদের সংস্কার করতে পারবে না। তাই তিনি একটি জনগণভিত্তিক, বিকেন্দ্রীকৃত আন্দোলন শুরু করেন, যেখানে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা দাওয়াতে অংশ নেয়। তিনি নবীর (সা.) মক্কার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হন, যেখানে তিনি ঘুরে ঘুরে মানুষকে দাওয়াত দিতেন। তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) মক্কায় তাওয়াফ করে মানুষকে হকের দাওয়াত দিতেন’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
গ্রন্থের গঠন ও সম্পাদনা
মালফুজাত তাঁর মজলিসের সংকলন হলেও এটি একটি সুশৃঙ্খল দাওয়াতি দলিল। সম্পাদনা করেছেন আবুল হাসান আলী নাদভি (রহ.)-এর শিষ্য শেখ আদিল হাররাজি। মুফতি মুহাম্মদ তকী উসমানী, ড. খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানি ও নূরুল হাসান রাশিদ কান্ধলভী প্রমুখের মতো পাকিস্তান ও ভারতের শীর্ষস্থানীয় ইসলামবেত্তাদের ভূমিকা গ্রন্থটিকে মহামূল্য করে তুলেছে। তাদের ভূমিকাগুলো গ্রন্থের দাওয়াতি ও ঐতিহাসিক পটভূমি বুঝতে সাহায্য করবে। আলী নাদভির সঙ্গে মুহাম্মাদ ইলিয়াসের আধ্যাত্মিক সম্পর্ক এবং তাবলিগের বিশ্বব্যাপী প্রভাবও এতে তুলে ধরা হয়েছে।
আজ যখন মুসলিম বিশ্ব নানা সংকটের মুখোমুখি, এই গ্রন্থ আমাদের তাওহিদ, ইখলাস ও তাজকিয়ার প্রতি ফিরে যেতে আহ্বান জানায়। এটি প্রতিটি দাঈ ও মুসলিমের জন্য একটি পাঠ্য, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ‘দাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীনকে জীবন্ত করে তুলতে হবে।’
সূত্র: আল-জাজিরা ডটনেট
আরও পড়ুন সুরা ইউসুফের সারকথা১৫ জুলাই ২০২৪