উড়োজাহাজে নিজের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নিজের ৯ বছরের পোষা কুকুরকে ডুবিয়ে মেরেছেন এক মার্কিন নারী। কুকুরটি নিয়ে যাত্রায় বিপত্তি দেখা দেওয়ায় অবলা প্রাণীটির প্রাণই কেড়ে নিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ওরল্যান্ডো শহরে এমন এক অপরাধে শাস্তিও পেয়েছেন ওই নারী।

স্থানীয় সময় গত বুধবার প্রাণীকে গুরুতর নির্যাতনের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই নারীকে। পরে তিনি প্রায় ৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা (৫ হাজার ডলার) জরিমানা দিয়ে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

একটি নিষ্পাপ প্রাণীকে এভাবে হত্যার অভিযোগ ওঠা ওই নারীর পক্ষে আদালতের নথিতে কোনো আইনজীবীকে লড়তে দেখা যায়নি। পুলিশ জানায়, ওই নারী ইচ্ছাকৃতভাবেই একটি অবুঝ প্রাণীকে হত্যা করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।

পুলিশ জানায়, গত ডিসেম্বরে ওরল্যান্ডো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাথরুমে ময়লার ঝুড়িতে ৯ বছর বয়সী স্নাউজার প্রজাতির একটি কুকুরের মরদেহ পান বিমানবন্দরের এক কর্মচারী।

একই সঙ্গে কুকুরটির মালিকের তথ্যসংবলিত একটি পরিচয় ট্যাগও পেয়েছিলেন বলে জানান তাঁরা। এরপর অনুসন্ধান চালিয়ে এ হত্যার তথ্য পান শহরের পুলিশ সদস্যরা।

কুকুরটির শরীরে স্থাপন করা মাইক্রোচিপের মাধ্যমে এর পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানান তাঁরা। পরে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে টারউইন নামের কুকুরটিকে ডুবিয়ে মারার তথ্য উঠে আসে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত বছর বিমানে ভ্রমণের সময় তাঁর কাগজপত্রে কিছু জটিলতার কারণে ৯ বছর বয়সী পোষা কুকুর ‘টারউইনকে’ নিয়ে তাঁর যাত্রায় বাধার সৃষ্টি হয়।

বিমান কর্তৃপক্ষ জানায়, কুকুরটির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় তাকে বিমানে নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি। মূলত মার্কিন কৃষি বিভাগের বিধি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কলম্বিয়ায় নিয়ে যেতে হলে অবশ্যই কুকুরের একজন পশুচিকিৎসকের অনুমোদিত স্বাস্থ্যসনদ ও রেবিস টিকার সনদ থাকতে হয়। এসব কাগজপত্র না থাকার কারণেই কুকুরটি নিয়ে ভ্রমণে ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছিল।

এরপরই ওই নারী এ অপরাধ করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। বিমানবন্দরের সিসিটিভি ক্যামেরায় এ ঘটনা ধরা পড়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে দেখা যায়, লাতাম এয়ারলাইনসের এক এজেন্টের সঙ্গে ১৫ মিনিট ধরে কথা বলছেন ওই নারী। এ সময় টারউইন তাঁর সঙ্গেই ছিল। এরপর কুকুরটিকে নিয়ে তিনি টিকিটিং অঞ্চলের কাছে একটি বাথরুমে প্রবেশ করেন। তবে ২০ মিনিটেরও কম সময় পর টাইউইনকে ছাড়াই বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসেন।

এ সময় এক কর্মচারী বাথরুমে ওই নারীকে তড়িঘড়ি করে পানি ও কুকুরের খাবার পরিষ্কার করতে দেখেছেন বলেও মামলার এজাহারে বলা হয়েছে। ওই কর্মচারীই ২০ মিনিট পর বাথরুমের ময়লার ঝুড়িতে টারউইনকে মৃত অবস্থায় পেয়েছিলেন।

ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন (সিবিপি) গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, কলম্বিয়ার বোগোতার উদ্দেশে একটি ফ্লাইটে উঠেছিলেন ওই নারী, পরে ইকুয়েডরে যাত্রা করেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ওই ন র

এছাড়াও পড়ুন:

কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়

রাজধানীর সবুজবাগের প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনের সঙ্গে থাকা আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতেই ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁকে ছয় টুকরা করে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এর আগে আজহারুল ইসলাম (গ্রেপ্তার) মুঠোফোনে সবুজবাগের ভাইগদিয়ায় তাঁর ভাড়া বাসায় জাকিরকে (৫৫) ডেকে নেন।

গ্রেপ্তার আজহারুল ইসলাম (৩৯) আজ শুক্রবার আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। আদালত তাঁর জবানবন্দি নিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী (৪৪), মো. রাজীব (২৬) ও স্বপনকে (২৫) পাঁচ দিন করে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার শুক্কুর আলী পেশায় রাজমিস্ত্রি এবং বাকিরা রংমিস্ত্রি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় দুপুরে তাঁদের ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে আজহারুল আদালত জবানবন্দি দেন। অপর তিনজন জবানবন্দি দিতে রাজি হননি। পরে তাঁদের সাত দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার তদন্ত–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁদের চারজনের (আজহারুল, শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন) বন্ধুত্ব ছিল। তাঁরা একসঙ্গে আড্ডা দিতেন। মাঝেমধ্যে জাকিরের সঙ্গে তাঁর ভাইগদিয়ার ভাড়া বাসায় তাঁরা একসঙ্গে মদ্যপান করতেন। ৪ জুন রাতে জাকির নন্দীপাড়ায় শেখের বাজারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তখন আজহারুল মুঠোফোনে জাকিরকে তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। আগেই জাকির তাঁদের জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা আছে এবং ডেমরার আমুলিয়া পশুরহাট থেকে কোরবানির জন্য গরু কিনবেন। জাকির তাঁর বাসায় পৌঁছানোর পর ওই টাকার ওপর তাঁদের সবার লোভ জাগে। তাঁরা টাকা ছিনিয়ে নিতে গেলে জাকির বাধা দেন। তখন ইস্পাতের পাইপ দিয়ে জাকিরের মাথায় সজোরে আঘাত করেন আজহারুল। এতে জাকির অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর কাছ থেকে এক হাজার টাকার দুটি বান্ডিল ছিনিয়ে নিয়ে সেই টাকা শুক্কুর আলীর কাছে জমা রাখেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, আজহারুল আদালতকে জানান, জাকিরকে বাঁচিয়ে রাখা হলে তাঁরা সবাই ফেঁসে যাবেন—এমন আশঙ্কায় জাকিরকে হত্যা করে লাশ গুম করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এরপর শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন তাঁর শরীর টুকরা টুকরা করেন। পরে লাশের ছয়টি টুকরা রঙের দুটি পাত্রে ভরে একটি অটোরিকশায় করে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় নিয়ে যান। শুক্কুর, রাজীব ও স্বপন অন্য পথ দিয়ে দক্ষিণ ভাইগদিয়ায় আসেন। তখন তাঁরা সবাই মিলে বালতিভর্তি লাশের টুকরাগুলো পাশের ঝোপে নিয়ে যান। এরপর সেখানে খুঁড়ে লাশের টুকরাগুলো পুঁতে রাখেন।

আজহারুল আদালতকে বলেন, জাকিরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া টাকা ভাগাভাগি করার আগেই তাঁরা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।

পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, আজহারুলের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাহেরচরে। বাকি তিনজন ঢাকার সবুজবাগের ভাইগদিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা।

প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন।

পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, এ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এলাকার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহারুলকে শনাক্ত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাতে জাকির হোসেনকে ভাইগদিয়ায় দাফন করা হয়।

সবুজবাগ থানার ওসি ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে জাকিরকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করলেও তদন্তে এখন পর্যন্ত এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। জাকির হত্যায় আরও একজন জড়িত। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুরনো স্বাদের ঝুরা মাংসের
  • ভাত খাওয়ার সময় কেন ভাতটাই পরে খেতে বলেন চিকিৎসকেরা?
  • অ্যান্টার্কটিকায় বিরল স্কুইডের সন্ধান
  • পানিতে ভাসছিল ২২ দিনের শিশুর মৃতদেহ, ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন মা
  • বাঁধন কাঁদলেন, কিন্তু কেন...
  • মামাত বোনকে ধর্ষণ-হত্যা করে নিখোঁজের গল্প সাজায় নয়ন: পুলিশ
  • আমাদের যত ঘুঘু 
  • বাউন্ডারি সীমানায় ক্যাচের নিয়ম পাল্টাচ্ছে এমসিসি
  • কমিটি নেই, সবাই নেতা
  • কোরবানির গরু কেনার আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নিতে ব্যবসায়ী জাকিরকে হত্যা করা হয়