কারাবন্দী ইমামোগলু বিরোধীদলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনীত, চলছে এরদোয়ানের ধরপাকড়
Published: 24th, March 2025 GMT
তুরস্কের ইস্তাম্বুলের কারাবন্দী মেয়র একরেম ইমামোগলুকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী মনোনীত করেছে। আজ সোমবার দলের একজন মুখপাত্র এ তথ্য জানিয়েছেন। ২০২৮ সালে দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
এমন এক পরিস্থিতিতে সিএইচপি ইমামোগলুকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ঘোষণা করল, যখন বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রশাসন বিক্ষোভকারীদের ধরপাকড় অব্যাহত রেখেছে। পাঁচ দিনে দেশজুড়ে ১ হাজার ১৩৩ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
গত রোববার প্রার্থী বাছাইয়ে ভোটাভুটির আয়োজন করে সিএইচপি। ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করায় দলীয় প্রাইমারিতে সাধারণ মানুষকেও ভোট দেওয়ার সুযোগ দেয় দলটি। এতে প্রায় দেড় কোটি মানুষ ভোট দিয়েছেন, যাঁদের ১ কোটি ৩২ লাখের বেশি দলটির সদস্য নন। অবশ্য এই ভোটাভুটিতে ইমামোগলুই একমাত্র প্রার্থী ছিলেন।
সিএইচপি দেশটির পার্লামেন্টের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল। ইমামোগলুকে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হচ্ছে। দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহযোগিতার অভিযোগে বুধবার ইমামোগলুকে আটক করা হয়। তাঁর মুক্তির দাবিতে বুধবার রাত থেকে রাজধানী আঙ্কারা, প্রধান শহর ইস্তাম্বুলসহ বিভিন্ন শহরে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন।
এরপর দুর্নীতি মামলায় গতকাল রোববার ইমামোগলুকে আনুষ্ঠানিকভাবে কারাগারে পাঠান ইস্তাম্বুলের একটি আদালত। ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের ঘটনাকে বিরোধী দল ‘রাজনৈতিক ক্যু’ আখ্যায়িত করেছে।
এদিকে ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গতকাল পঞ্চম রাতের মতো দেশটির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় গণহারে ধরপাকড়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে বার্তা সংস্থা এএফপির একজন ফটোসাংবাদিকসহ ১০ সাংবাদিকও রয়েছেন।
অধিকার সংগঠন এএলএসএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইস্তাম্বুলসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভের সংবাদ সংগ্রহের সময় ১০ সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে।
আদালত আনুষ্ঠানিকভাবে কারাগারে পাঠানোর পর ইমামোগলুকে মেয়রের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়েছে। গতকাল দিবাগত রাতটা ইস্তাম্বুলের উপকণ্ঠে সিলিভরি কারাগারে কেটেছে তাঁর। নিজের আইনজীবীদের মাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘আমি একটি সাদা জামা পরেছি, যে জামায় তোমরা দাগ লাগাতে পারবে না। আমার একটি শক্তিশালী হাত রয়েছে, যা তোমরা মচকাতে পারবে না। আমি সামান্যতমও মাথা নত করব না। এই লড়াইয়ে আমি জয়ী হব।’
ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছে ফ্রান্স। গতকাল দিনের শেষ দিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইমামোগলুকে কারাগারে প্রেরণের ঘটনা ‘গণতন্ত্রের ওপর মারাত্মক আঘাত’।
আরও পড়ুনইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর ডিপ্লোমা ডিগ্রি বাতিল১৮ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
সাপ্তাহিক ‘পঙক্তি’র দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নারীর সমান অধিকার, সাংস্কৃতিক জাগরণ ও মুক্তচিন্তার বিকাশ ছাড়া বৈষম্যহীন সমাজ গঠন সম্ভব নয় এমন মত প্রকাশ করেছেন বক্তারা।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাপ্তাহিক পঙক্তির দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আরো পড়ুন:
‘নো ওয়েজ বোর্ড, নো মিডিয়া’সহ ৩৮ দাবি সংবাদকর্মীদের
‘সাম্য, মর্যাদা ও আলোকিত সমাজের স্বপ্নে ৭১ ও ২৪ এর তরুণরা’
অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ বলেন, “নারীরা অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও পুরুষতান্ত্রিক নানা বৈষম্য ও হেনস্তার শিকার হন। আমরা দেখছি, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ও নারী ও শিশুরা লাঞ্ছিত, নিপীড়িত হচ্ছে, এটি লজ্জার বিষয়। আমরা এমন সমাজ চাই না। আমরা চাই একটি সত্যিকারের বৈষম্যমুক্ত সমাজ, যেখানে নারী–পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত থাকবে।”
প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া বলেন, “আমরা বর্তমানে একটি সাংস্কৃতিকভাবে খারাপ সময় পার করছি। একটি নতুন রাজনৈতিক আন্দোলন বারবার ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে। সর্বক্ষেত্রে যে অবক্ষয় দেখা দিয়েছে, তাতে একমাত্র একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লবই আমাদের জাতিকে রক্ষা করতে পারে।”
কবি ও কলামিস্ট সোহরাব হাসান বলেন, “ফেসবুক–ইউটিউবের যুগে একটি সাহিত্য পত্রিকা টিকিয়ে রাখা অত্যন্ত কঠিন কাজ। বর্তমানে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এক ধরনের বৈরী পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আক্রান্ত হচ্ছে মাজার, দরগা, শিল্পী ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক তৎপরতা। এই আক্রমণ জাতিসত্তার উপর আক্রমণ, আমাদের শিল্প–সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সুকুমার ভিত্তির উপর আঘাত। এর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে লড়াই করতে হবে।”
সভাপতির বক্তব্যে সাপ্তাহিক পঙ্ক্তির সম্পাদক কবি জান্নাতুল ফেরদৌস পান্না ওরফে পান্না বেগম বলেন, “আজ আমি খুব আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত। আমি একজন সফল নারী বলে নিজেকে সম্মান করি। আমি ২৬ বছর ধরে কাজ করি। কারোর মুখাপেক্ষী হইনি। একটি পত্রিকা কারোর সহযোগিতা ছাড়া নিয়মিত প্রকাশ করা এতোটা সহজ নয়। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আজকের এই জায়গাটি তৈরি হয়েছে।”
বাংলাদেশের আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মফিজুর রহমান বাবু বলেন, “সাপ্তাহিক পঙ্ক্তি পত্রিকাটি নিয়ে প্রথম থেকেই আমার একটি চিন্তা ছিল। পত্রিকাটির নাম পঙ্ক্তি কেন? খুব চিন্তা করে এর দুইটি কারণ খুঁজে পেলাম। একটি হলো-এই পত্রিকাটির সম্পাদক একজন কবি ও সাংবাদিক। উনার কবিসত্তার চিন্তাধারা থেকে এই নামটি নির্ধারণ করেছেন। কারণ পঙ্ক্তি শব্দের অর্থ কবিতার লাইন বা সারি। আর দ্বিতীয়টি হলো- সম্পাদকের একমাত্র কন্যার নাম পঙ্ক্তি। সন্তানের প্রতি একজন মায়ের যে অসাধারণ ভালোবাসা, তারই বহিঃপ্রকাশ হলো সাপ্তাহিক পঙ্ক্তি।”
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক মানিক মুনতাসির, কবি ও সাংবাদিক বজলুর রহমান, কবি মোশাররফ হোসেন ইউসূফ, বাংলানিউজের সাংবাদিক তুলনা আফরিন প্রমুখ।
ঢাকা/এসবি