বিগত দু-এক বছরের তুলনায় পবিত্র রমজান মাসে প্রায় সব আলুসহ নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। আলুর দাম কম হওয়ায় স্বস্তি পাচ্ছেন ক্রেতা। কিন্তু কৃষকরা ঠিক উল্টো অবস্থায় রয়েছেন। কম দামে আলু বিক্রি করে তারা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আলুর উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে যে দামে বিক্রি হচ্ছে, তা তাদের জন্য লাভজনক নয়। আশানুরূপ দাম না পাওয়া ও হিমাগারে পর্যাপ্ত জায়গার সংকটের কারণে কৃষকরর বিপাকে পড়েছেন। 

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আড়তে আলু বিক্রি করতে এসেছেন মুন্সিগঞ্জের কৃষক মো.

শহিদুল হক। ট্রাক ভাড়া দিয়ে এনে প্রতি মণ (৪০ কেজি) আলু বিক্রি করছেন ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা টাকা করে বিক্রি করেছেন। এতে কেজিপ্রতি দাম হয় ২০ টাকা। 

সোমবার (২২ মার্চ) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মমতা আড়তে কৃষক মো. শহিদুল হকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, “চলতি বছর এক বিঘা জমিতে আলু উৎপাদনে ব্যয় ৫৫-৬০ হাজার টাকা।  আলু উৎপাদন হয়েছে গড়ে ৭০-৮০ মণ। এক মণ আলু বিক্রি করছি ৭৫০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ৭০ মণ উৎপাদন হলে ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হয় ৫২ হাজার ৫০০ টাকা। লোকসান হওয়ায় আগামীতে মুন্সিগঞ্জের অনেক কৃষক  আলু উৎপাদন করবেন না। পাশাপাশি হিমাগারের সংকটের কারণে কম দামে আলু বিক্রি করে দিচ্ছি।”

শুধু শহিদুল হক একা নয়, এরকম অনেক কৃষক উৎপাদন খরচ অনুযায়ী আলুর দাম না পাওয়ায় নীরবে চোখের পানি ফেলছেন।

যাত্রাবাড়ীতে কথা মাদারীপুরের আরেক আলুচাষি সবুজ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, “প্রতি বিঘা জমিতে এবার আলু চাষাবাদে ব্যয় হয়েছে ৫৫-৬০ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ৯০-১০০ মণ হারে আলুর ফলন হলেও আলুর পাইকারি বাজার মূল্য আশানুরূপ নয়। আলু চাষ করে লাভ তো দূরের কথা, উল্টো লোকসান হচ্ছে। হিমাগারে যাদের আলু বেশি তাদেরকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যাদের কম তাদেরটা পরে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। আলু পচনশীল তাই দ্রুত বিক্রি করে দিচ্ছি।”  

বশির উদ্দীন নামের নারায়ণগঞ্জের এক কৃষক বলেন, “সরকার বিদেশে আলু রপ্তানির উদ্যোগ নিলে আমরা ভাল দাম পেতাম। জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছিল বৈষম্যর অবসানের জন্য। কিন্তু আমরা আলু চাষ করে আজ বৈষম্যের শিকার হয়েছি। উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম মূল্যে আলু বিক্রি করছি। সঠিক দাম পাচ্ছি না। সরকারের কাছে আলু দাম মণপ্রতি ১৫০০-১৬০০ টাকা করার দাবি করছি।” 

যাত্রাবাড়ী মমতা আড়তের প্রোপাইটার শফিকুল আলম বলেন, “এ বছর আলুর দাম কম থাকায় ক্রেতারা সন্তুষ্ট। দীর্ঘ দুই/তিন বছরেও ২৫-৩০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি হয়নি। আমরা কৃষকের কাছ থেকে যে দামে কিনি, তার চেয়ে সামান্য লাভে বেচি। এ বছর দেখেছি কৃষকদের চোখে-মুখে কান্না। তারা নীরবে কান্না করছেন। তারা যে দামে আলু উৎপাদন করছেন, সেই দামে বিক্রি করতে পারেননি। এজন্য অনেকেই আলু বিক্রি করে হতাশ হয়ে এখান থেকে চলে যাচ্ছেন। আর বলছেন আগামী বছর চাষ করবেন না।” 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছর সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ১৬ লাখ টন। এর মধ্যে উচ্চফলনশীল আলু আবাদ করা হয়েছে ৩ লাখ ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে। আর স্থানীয় আলু আবাদ করা হয়েছে ৫৬ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, “কৃষক যাতে লাভে আলু বিক্রি করতে পারে সেজন্য কোল্ড স্টোরেজ ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। আলু রাখার ক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষকদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের বিরুদ্ধে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়ার অভিযোগ পেলে প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “মৌসুমের সময় কৃষক আলু একসঙ্গে উত্তোলন ও বিক্রি করায় দাম কিছুটা কম থাকে। আলু সংরক্ষণ করে বিক্রি করা হলে কৃষকরা সঠিক দাম পাবেন। কৃষক প্রান্তিক পর্যায়ে যেন আলু সংরক্ষণ করতে পারে, সে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।”

ঢাকা/টিপু

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আল র দ ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পঞ্চগড়ে বিবাহবিচ্ছেদের চার দিনের মাথায় লাউখেত থেকে নারীর লাশ উদ্ধার

পঞ্চগড়ে স্বামীর মৃত্যুর দুই বছর পর সন্তানদের রেখে গোপনে বিয়ে করে ঘর ছেড়েছিলেন এক নারী। দ্বিতীয় বিয়ের প্রায় এক মাস পর বিবাহবিচ্ছেদ হয় তাঁদের। এ ঘটনার চার দিনের মাথায় বাড়ির পাশের লাউখেত থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

আজ সোমবার দুপুরে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার ধামোর ইউনিয়নের ধামোর মধ্যপাড়া এলাকার একটি লাউখেত থেকে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁর নাম তানজিনা আক্তার (৩৫)। তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা।

এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তানজিনার দ্বিতীয় স্বামী মিনাল হোসেনের বাবা দিলু হোসেনকে (৫৫) হেফাজতে নিয়েছে আটোয়ারী থানার পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, তানজিনা আক্তারের প্রথম স্বামী মজিবর রহমান প্রায় দুই বছর আগে মারা যান। তাঁদের দুটি ছেলে আছে। এর মধ্যে প্রায় এক মাস আগে স্থানীয় যুবক মিনাল হোসেনকে (২৭) গোপনে বিয়ে করে পার্শ্ববর্তী মির্জাপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর বাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তাঁরা। এর পর থেকেই মিনালকে ছেড়ে দিতে তানজিনার ওপর চাপ দিতে থাকে মিনালের পরিবার। গত ৩০ অক্টোবর তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। এর পর থেকেই মিনালকে এলাকায় দেখা যায়নি।

পুলিশ জানায়, আজ সকালে ধামোর-মধ্যপাড়া এলাকার একটি লাউখেতে কয়েকজন লাউ তুলতে গিয়ে এক নারীর লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের জানান। এ সময় স্বজনেরা সেখানে গিয়ে লাশটি তানজিনার বলে শনাক্ত করেন। খবর পেয়ে বারঘাটি পুলিশ তদন্তকেন্দ্র ও আটোয়ারী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। প্রাথমিক সুরতহাল শেষে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।

আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম সরকার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক সুরতহালে ওই নারীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর মৃত্যুর কারণ জানতে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজনকে থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ