২০১৭ সাল থেকে চট্টগ্রাম শহরে থাকতে শুরু করেন মোহাম্মদ ওয়াসিম। প্রতিবছর ঈদে টিউশনির টাকায় মায়ের জন্য শাড়ি কিনতেন। ঈদের এক বা দুদিন আগে বাড়ি ফিরতেন। শহর থেকে গাড়িতে উঠেই মাকে ফোন করতেন। বলতেন, ‘মা আসছি, হালিম করো।’ সেই কথাগুলো এখনো কানে বাজে মা জোসনা বেগমের।

গতকাল শনিবার এভাবে ওয়াসিমের কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা জোসনা বেগম। গত বছরের ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নিহত হন ছাত্রদল নেতা ও চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ওয়াসিম। তাঁর বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাঘগুজারার বাজারপাড়া এলাকায়।

আনোয়ারা-বাঁশখালী-চকরিয়া (এবিসি) আঞ্চলিক মহাসড়কের পেকুয়া সদর ইউনিয়নের বাঘগুজারা সেতুর পাশ ঘেঁষে পূর্ব দিকে ইট বিছানো সড়কে ৮০০ মিটার গেলে মোহাম্মদ ওয়াসিমদের বাড়ি। গতকাল দুপুর ১২টায় গেলে দেখা যায়, মা জোসনা বেগম ছাদে মরিচ শুকানোর কাজ করছেন। বাবা শফিউল আলম বসতঘরে যাওয়ার রাস্তা মেরামত নিয়ে ব্যস্ত। খবর পেয়ে জোসনা বেগম ও শফিউল আলম দোতলা ভবনের নিচতলায় অতিথিকক্ষে আসেন। ছেলের কথা তুলতেই চোখ ভিজে যায় জোসনা বেগমের। বলেন, ‘বাবাজি আঁর পোয়ার হতা ফুচার গরইলে হাঁন্দানি রাহিত নপারি।’ (বাবা আমার ছেলের কথা জিজ্ঞেস করলে কান্না চেপে রাখতে পারি না।)

ওয়াসিমকে ছাড়া এবারই প্রথম ঈদ করছেন জোসনা বেগম। প্রতিবছর ওয়াসিম মায়ের জন্য শাড়ি, বোনের জন্য থ্রি–পিস ও ছোট দুই ভাগনে-ভাগনির জন্য রঙিন কাপড় কিনতেন চট্টগ্রাম শহর থেকে। এটি করতেন টিউশনির টাকা জমিয়ে। এসব কথা স্মরণ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা জোসনা বেগম। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর আমার জন্য শাড়ি আনত ওয়াসিম। বাহানা ধরত, তার দেওয়া শাড়িটিই ঈদের দিন পরতে হবে। পুরো ঘর মাতিয়ে রাখত সে। শহর থেকে এলে কমপক্ষে ১০-১২ দিন গ্রামে থাকত। সহজে আমাদের ছেড়ে শহরে যেতে চাইত না।’

ওয়াসিম অনেক স্মৃতি রেখে গেছেন বলে জানালেন তাঁর বাবা শফিউল আলম। তিনি বলেন, ‘আসলে ওয়াসিম আমাদের মাঝে এত স্মৃতি রেখে গেছে যে কোনটি ফেলে কোনটি বলব। সে ছিল বাড়ির প্রাণভোমরা।’

শফিউল আলম ১৮-২০ বছর বিদেশে ছিলেন। মাঝেমধ্যে কয়েক মাসের জন্য আসতেন। ওয়াসিমের মৃত্যুর পর একেবারে দেশে ফিরে এসেছেন তিনি। শফিউল আলম বলেন, ‘পরিবারের সুখের জন্য বড় একটা সময় বিদেশে কাটিয়েছি। বাচ্চাদের সবকিছু দেখত ওদের মা-ই।’ এ কারণে প্রতিটি কাজে, প্রতিটি কথায় ছেলেকে খুঁজে বেড়ান তিনি (জোসনা)। দিনের বেশির ভাগ কাজকর্মে ওয়াসিমের কথা মনে করেন। এরপর আর কোনো কাজ করতে পারেন না। কয়েক ঘণ্টা পর স্বাভাবিক হলে আবার কাজ শুরু করেন জোসনা।

জোসনা বেগম বলেন, ‘এবার ওয়াসিম আমার কাছ থেকে অনেক দূরে। তবে ওয়াসিমের বন্ধু, দলীয় সহকর্মী অনেকে ইফতারি পাঠিয়েছেন, আমাদের জন্য নতুন কাপড় পাঠিয়েছেন। এসবের মাঝে আমার ছেলেকে খুঁজে ফিরি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

গভীর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আমল মাসঊদের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিনোদপুরের মণ্ডলের মোড় এলাকায় তাঁর বাড়ির দরজার সামনে এ ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ আহত হয়নি।

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়েছে। তবে কে বা কারা এটি করেছে, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগও কেউ করেনি। তাঁরা দুর্বৃত্তদের শনাক্তের চেষ্টা করছেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আমল মাসঊদের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে ঘটনার পর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘ফ্যাসিবাদী অপশক্তির জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। কোনো রক্তচক্ষুর ভয়ংকর হুমকি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। তবে তারা কখনো বাড়ি পর্যন্ত আসার ঔদ্ধত্য দেখাতে পারেনি। কিন্তু আজ আমার বাড়ির দরজায় গভীর রাতের অন্ধকারে হামলার সাহস দেখিয়েছে কাপুরুষের দল! এরা কারা? এদের শিকড়সহ উৎপাটনের দাবি জানাই।’

এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ভেবেছিলাম বাড়ির গেটে কিংবা গেটের বাইরে। কিন্তু গিয়ে দেখলাম একেবারে বাড়িতে হামলা হয়েছে। গতকালই ওনার অসুস্থ বাবা হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় এসেছেন। জানি না শেষ কবে একজন শিক্ষকের বাড়িতে রাতের আঁধারে এভাবে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। আমরা শঙ্কিত, স্তম্ভিত।’

এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে এ সমাবেশের আয়োজন চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ