নববর্ষ ও চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বড় ডোমরাশুর গ্রামে অনুষ্ঠিত হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী চড়ক ঘুল্লী। চড়ক ঘুল্লীর মূল আকর্ষণ ছিল অষ্টক ঘুল্লী। যা দেখতে ভিড় করে হাজার হাজার মানুষ। আর এ চড়ক ঘুল্লীকে কেন্দ্র করে বসে গ্রামীণ মেলা।

পঞ্জিকা মতে বাংলা বছরের চৈত্র মাসের শেষে চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়ক ঘুল্লীর আয়োজন করা হয়ে থাকে। তবে এবার বাংলা নববর্ষে আনন্দ দিতে বৈশাখের তৃতীয় দিন বুধবার (১৬ এপ্রিল) বিকালে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বড় ডোমরাশুর গ্রামের পঞ্চপল্লী বড় ডোমরাশুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজন করা হয় চড়ক ঘুল্লীর। 

এসময় ঢাকের বাদ্যের তালে মুখোরিত হয়ে ওঠে মাঠ। তবে এ মেলার মূল আকর্ষণ ছিল অষ্টক ঘুল্লী। এ ঘুল্লীতে অংশ নেওয়া আট যুবকের পিঠে লোহা দিয়ে তৈরি দুটি করে বড় বড়শি ফোটানো হয়। পরে মাঠের মাঝখানে গাছের লম্বা খুঁটির আট মাথায় রশি দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় আট যুবককে। রশি দিয়ে বেঁধে ঘুরানো হয় কয়েক দফা। বিকাল থেকে গোধূলী পর্যন্ত চলে এ চড়ক ঘুল্লী। পূন্য লাভের আশায় এ চড়ক ঘুল্লীতে অংশ নেন তারা।

এ চড়ক মেলা দেখতে গোপালগঞ্জসহ মাদারীপুর, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুরসহ বিভিন্ন এলাকার শিশু-নারীসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমায়। অনুষ্ঠান স্থল পরিণত হয় মিলন মেলায়। এ চড়ক ঘুল্লীকে কেন্দ্র করে বসে গ্রামীন মেলা। খাবার, গহনা, মিষ্টির দোকান ও মাটির খেলনাসহ বসে বিভিন্ন দোকান।

চড়ক ঘুল্লীতে অংশ নেওয়া যুবক অর্ঘ্য রায় বলেন, “পূণ্য লাভ, দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় এ চড়ক ঘুল্লীতে অংশ নেন তারা। তবে এভাবে ঘোরানোতে ব্যাথা বা শারীরিক সমস্যা হয় না।”

চড়ক ঘুল্লীতে অংশ নেওয়া যুবক সজল রায় বলেন, “এতে অংশ নিলে আমাদের কোনো ব্যাথা লাগে না। ঈশ্বরের আশির্বাদ লাভের আশায় আমরা অংশ নিয়ে থাকি। এতে আমরা যেমন আনন্দ পাই, তেমনি দর্শনার্থীদেরকেও আনন্দ দিয়ে থাকি।”

চড়ক ঘুল্লী দেখতে আসা বাপ্পী দাস বলেন, “আমি বিভিন্ন জায়গায় দুই বা চরে জনের চড়ক ঘুল্লী দেখেছি। তবে এবারই প্রথম এখানে আট জনের ঘুল্লী দেখলাম। দেখে খুব ভালো লাগলো। আগামীতেও এমন আয়োজনের দাবি জানাই।”

চড়ক ঘুল্লী দেখতে আসা স্কুল শিক্ষার্থী সাথী বিশ্বাস বলেন, “এবারই প্রথম আমি চড়ক ঘুল্লী দেখতে আসলাম। দেখে খুব ভালো লাগছে। তবে এখানে মূল আকর্ষণ ছিল আট জনের চড়ক ঘুল্লী। প্রথমবার দেখে কতটা আনন্দ পেলাম তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।”

চড়ক ঘুল্লী দেখতে আসা বয়োবৃদ্ধ সুশীল বৈরাগী বলেন, “আমরা যখন চড়ক ঘুল্লী দেখতাম তখন দুই বা চার জনের ঘুল্লী হতো। আজ এখানে আট জনের ঘুল্লী দেখে খুব ভালো লাগলো। এছাড়া চড়ক ঘুল্লীকে কেন্দ্র করে মিলন মেলায় পরিণত হয় প্ররো এলাকা। পরিবারের সবাই একসাথে এসে এ চড়ক ঘুল্লী উপভোগ করে।”

চড়ক ঘুল্লী ও মেলার আয়োজক উজ্জ্বল ভক্ত জানান, দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে দীর্ঘ বছর ধরে আমরা চড়ক পূজা ও চড়ক ঘুল্লীর আয়োজন করে আসছি। এটা আমাদের গ্রামের একটি ঐতিহ্য। শুধু হিন্দু ধর্মাম্বালম্বীরাই নয়, অনান্য ধর্মের লোকজন চড়ক ঘুল্লী দেখতে আসেন। সৃষ্টি হয় ধর্মীয় সম্প্রিতীর বন্ধন।

ঢাকা/বাদল/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চড়ক ঘ ল ল র চড়ক ঘ ল ল ত এ চড়ক ঘ ল ল গ প লগঞ জ আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা

চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।

কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।

এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।

অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।

একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।

যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা