সিলেটের আবহাওয়ার নিজস্ব একটা ঢং আছে। কখন রোদ উঠবে, কখন বৃষ্টি নামবে বোঝা কঠিন। সেই সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলও দেখিয়েছে ব্যাটিংয়ের নিজস্ব ঢং। কখন যে কী হবে বোঝা কঠিন!

যখনই কেউ উইকেটে থিতু হয়েছেন, বড় ইনিংস খেলার আশা জাগিয়েছেন; তখনই উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন! আর হঠাৎ ব্যাটিং ধস তো সেই কবে থেকেই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

বাটিংয়ে চিরাচরিত সবকিছুই যখন এভাবে দাড়ি-কমাসহ মিলে যাবে, সেদিন বাংলাদেশের সংগ্রহ বড় না হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। হয়েছে সেটাই। সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ১৯১ রানে।

উপহার না দিলে এই উইকেটে ব্যাটসম্যানদের আউট করা যে কঠিন, সে তো প্রথম দিনের শেষবেলায় জিম্বাবুয়ের প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং দেখেই বোঝা গেছে। কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৭ রান নিয়ে দিনের খেলা শেষ করেছেন জিম্বাবুয়ের দুই ওপেনার ব্রায়ান বেনেট ও বেন কারেন। বেনেট ৩৭ বলে ৪০ রানে অপরাজিত, কারেন ৪৯ বলে ১৭ রানে। প্রথম দিনে খেলা হয়েছে ৭৫.

১ ওভার, জিম্বাবুয়ে পিছিয়ে ১২৪ রানে।

বাংলাদেশি ঢংয়ের ব্যাটিংয়ের ‘নেতৃত্বে’ ছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেনই। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে ২০২৪ সালে নিজের ব্যাটিংয়ের কিছু ভুল তুলে ধরেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৩০-৪০ রানের ইনিংসগুলোকে কীভাবে বড় করা যায়, সেটি নিয়েই কাজ করেছেন বলেই জানান নাজমুল। এত কিছু বলে বছরের প্রথম টেস্টে সেই একই ভুল! ব্লেসিং মুজারাবানির অফ স্টাম্পের বাইরে করা শর্ট বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েছেন ব্যক্তিগত ৪০ রানে।

সাদা পোশাকের ক্রিকেটে কেন এমন শট খেলতে গেলেন, এই যুগে সেই প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। বরং অফ স্টাম্পের বাইরে থাকা বলটি কেন ফিল্ডারের হাতে গেল, সেই প্রশ্ন নিজেকে করতে পারেন নাজমুল। সঙ্গে আর কত দিন ভালো খেলতে খেলতে মনযোগ হারিয়ে এভাবে উইকেট দিয়ে আসবেন, সেটিও!

নাজমুলের বিদায়ে যিনি উইকেটে আসেন, সেই মুশফিকুর রহিম যেভাবে আউট হয়েছেন, তা আরও দৃষ্ট কটু। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার যে বলটিতে আউট হয়েছেন, সেটিতে চার মারার চেয়ে আউট হওয়া কঠিন। মুশফিক কঠিন কাজটাই করেছেন। নিরীহ শর্ট বলে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন ৪ রান করে।

ক্রিকেটে দিনটা নিজেদের হলে অবিশ্বাস্য কিছুই করেন ব্যাটসম্যানরা। অন্তত বিশ্বমানের ক্রিকেটে সেটাই হয়। তবে আজ মুমিনুল হকের বিষয়টি ছিল অন্যরকম। শূন্য রানে জীবন পেয়েছেন, এজ হয়ে চার পেয়েছেন কয়েকটি। এরপরও ৫৬ রানের বেশি করতে পারেননি। হয়তো বুঝতেই পারেননি, ভাগ্যবিধাতাও তাঁর কাছ থেকে একটা বড় ইনিংস চাইছেন! তাই শেষ পর্যন্ত মাসাকাদজার হাওয়ায় ভাসানো বলে স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন।

কাছাকাছি সময়ে বাউন্সারে ব্যাটসম্যানদের একের পর এক পরীক্ষা নিচ্ছিলেন মুজারাবানি। এই পেসার গতির ঝড় তুলতে না পারলেও সিলেটের উইকেট আর নিজের উচ্চতা কাজে লাগিয়ে বাউন্স ঠিকই আদায় করেছেন। ব্যাটসম্যানদের বিপদে ফেলেছেন। তাঁর লাফিয়ে ওঠা বলে অনেকটা অসহায় আত্মসমর্পণ করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

দলের ৪ জন মূল ব্যাটসম্যানের এমন হতশ্রী বিদায়ে ব্যাটিং ধস তো হবেই! এরপর তাইজুল ইসলামও যোগ দেন এই তালিকায়। এতে ২ উইকেটে ৯৮ রান করা বাংলাদেশ পরের ৫৬ রান করতে হারায় ৫ উইকেট। ১৪৬ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে জাকের আলী লড়াইটা না করলে সংগ্রহটা আরও ছোট হতে পারত। সেখান থেকে হাসান মাহমুদকে সঙ্গে নিয়ে ৪১ রানের জুটি গড়েন জাকের।

সেই জুটি ১৮৭ রানে ভাঙার পর বাংলাদেশ দল আর টিকেছে ৯ বল। যোগ করতে পেরেছে ৪ রান। জাকের আউট হয়েছেন ২৮ রানে। ঘরের মাঠে টেস্টে ২০০ রানের নিচে গুটিয়ে যাওয়া অনেকটা অভ্যাসে পরিণত করেছে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে সর্বশেষ ৮ ইনিংসে এ নিয়ে ছয়বার দুই শর নিচে অলআউট।

মুজারাবানি উইকেট নিয়েছেন ৩ টি। প্রথম দিনে নাহিদ রানার সঙ্গে লড়াইয়ে আপাতত এগিয়েই আছেন এই পেসার। বল হাতে ৩ উইকেট নিয়েছেন স্পিনার ওয়েলিংটন মাসাকাদজাও।

অথচ তাঁকে জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন প্রথম বল দেন ম্যাচের ৩৮ তম ওভারে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যে এত এত ‘উপহার’ দেবেন, আরভিনের অবশ্য তা জানার কথা নয়!

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব য টসম য ন কর ছ ন হয় ছ ন প রথম উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

বিজয়-সাদমানের শতরানের জুটি, প্রথম সেশন বাংলাদেশের

চট্ট্রগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনটা দুর্দান্ত কেটেছে বাংলাদেশ। ৯ উইকেটে ২২৭ রানে দিন শুরু করে জিম্বাবুয়ে। দিনের প্রথম বলেই সফরকারীদের শেষ উইকেটটি তুলে নেন তাইজুল। ৬০ রানে ৬ উইকেট নিয়ে প্রথম ইনিংসের সেরা বোলার টাইগার এই স্পিনার।

জিম্বাবুয়েকে ২২৭ রানে গুটিয়ে দিয়ে ইতিবাচক শুরু করেন দুই ওপেনার এনামুল হক বিজয় ও সাদমান ইসলাম। কোনো উইকেট না হারিয়েই প্রথম সেশন শেষ করেন তারা। বিজয় ৩৮ এবং সাদমান ৬৬ রানে ব্যাট করছেন। ২৬ ওভারে বাংলাদেশ করে বিনা উইকেটে ১০৫ রান। এরপরই মধ্যাহ্নভোজে যায় দুই দল। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের পর এবারই প্রথম টেস্টের ওপেনিং জুটিতে পঞ্চাশ রান তুলতে পারল বাংলাদেশ। শুধু তাই নয় ৩২ ইনিংস পর বাংলাদেশ পেয়েছে ওপেনিং জুটিতে শতরানের জুটি। 

সাদমানের ফিফটি

সিলেট টেস্টে ব্যাট হাতে আলো ছড়াতে পারেননি সাদমান। তবে চট্টগ্রামে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। ৭৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। ক্যারিয়ারে এটি তার ষষ্ঠ হাফ সেঞ্চুরি। ২৩ ওভার শেষে বাংলাদেশ কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮৬ রান। সাদমান ৫০ রানে এবং বিজয় ৩৬ রানে ব্যাট করছেন।

সাদমান-বিজয়ের জুটির ফিফটি

সাদমান ইসলাম এবং এনামুল হক বিজয়ের ব্যাটে ইতিবাচক সূচনা পেয়েছে বাংলাদেশ।  ১৩.৪ ওভারে  বিনা উইকেটে ৫০ রান করেছে স্বাগতিকরা।  ১২ ইনিংস পর পঞ্চাশ পেরোনো শুরুর জুটি পেল তারা।  ভারতের বিপক্ষে গত বছর সেপ্টেম্বরে শেষবার ৬২ রানের জুটি গড়েছিলেন সাদমান ও জাকির হাসান।

প্রথম বলেই তাইজুলের আঘাত, ২২৭ রানে অলআউট জিম্বাবুয়ে

প্রথম দিনের দুই সেশনে দাপট দেখালেও শেষ সেশনে ব্যাটিং ধসে পড়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইনআপ। ২ উইকেটেই ১৭৭ রান থেকে জিম্বাবুয়ে দিনশেষ করে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে। তাইজুল ইসলাম ৫ উইকেট নিয়ে গতকাল তাদের এলোমেলো করে দিয়েছিলেন। 

দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল যত দ্রুত সফরকারীদের অলআউট করা যায়। এই লক্ষ্যে দিনের প্রথম বলেই মুজারাবানিকে ফেরায় তাইজুল। এতে প্রথম ইনিংসে ২২৭ রানেই অলআউট জিম্বাবুয়ে। ৬০ রানে ৬ উইকেট নিলেন তাইজুল।

তাইজুলের ঘূর্ণিতে প্রথম দিন বাংলাদেশের
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিজয়-সাদমানের শতরানের জুটি, প্রথম সেশন বাংলাদেশের
  • সাদমানের ফিফটি
  • সাদমান-বিজয়ের জুটির ফিফটি
  • প্রথম বলেই তাইজুলের আঘাত, ২২৭ রানে অলআউট জিম্বাবুয়ে