বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) মধ্যে টেকসই কূটনৈতিক সংলাপের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা ইস্যু পুনরায় শুরু করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ইউএই’র বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলি আলহমুদি রোববার ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন।

সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রদূত সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইউএই সরকারের সঙ্গে লুৎফে সিদ্দিকীর সক্রিয় সম্পৃক্ততার প্রশংসা করেন, যার মধ্যে অর্ধ-ডজনেরও বেশি মন্ত্রী পর্যায়ের সফর রয়েছে। যেখানে ভিসা সহজ করা থেকে শুরু করে বিনিয়োগ সহযোগিতার নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

রাষ্ট্রদূত আলহমুদি বিশেষ দূতকে জানান যে, ঢাকায় ইউএই দূতাবাস বর্তমানে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৫০টি ভিজিট ভিসা ইস্যু করছে। এর পাশাপাশি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের জন্য দলীয় ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুততর করা হয়েছে, যা ব্যক্তি পর্যায়ে যোগাযোগ এবং বাণিজ্য বিনিময়কে ত্বরান্বিত করছে।

এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির অংশ হিসেবে ইউএই মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় দক্ষ কর্মসংস্থানের জন্য অনলাইন ভিসা সিস্টেম পুনরায় চালু করেছে।

ফলে মার্কেটিং ম্যানেজার ও হোটেলকর্মীদের মতো পেশাজীবীদের জন্য সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। এছাড়াও নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য ৫০০ ভিসা ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে এবং আরও ১,০০০ ভিসা অনুমোদিত হয়েছে যা অচিরেই ইস্যু করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আশা করা হচ্ছে, সময়ের সাথে সাথে ইউএই ধীরে ধীরে ভিসা সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা আরও শিথিল করবে। রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে উত্থাপিত মানবিক ও সহানুভূতিশীল মামলাগুলোর প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শনের প্রতিশ্রুতি দেন।

বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এই  অগ্রগতিকে স্বাগত জানান এবং রাষ্ট্রদূত আলহমুদির উন্মুক্ততা ও সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সেপা) নিয়ে আলোচনার সূচনার জন্যও কৃতজ্ঞতা জানান এবং উল্লেখ করেন যে উভয় পক্ষ ইতিমধ্যে আলোচনার রূপরেখা নিয়ে একমত হয়েছে।

এই মাসের শেষের দিকে ইউএই মন্ত্রী পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে, যা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে আরও এগিয়ে নেবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণে এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে সরকারের চুক্তি

লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এই চুক্তি করা হয়েছে।

আজ সোমবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দুই পক্ষ এ চুক্তিতে সই করে। এতে ডেনমার্ক, বাংলাদেশ সরকার ও বন্দর সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকেরা অংশ নেন।

চুক্তিতে সই করেন এপিএম টার্মিনালসের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টেইন ভ্যান ডোঙ্গেন ও চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।

ডেনমার্কের পক্ষে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইবিএস এপিএম টার্মিনালসের হেড অব ইনভেস্টমেন্ট ভাস্কর সেনগুপ্ত, ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টেট সেক্রেটারি লিনা গান্ডলোসে হ্যানসেন ও বাংলাদেশে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার। বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী, নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.) ও নৌপরিবহন সচিব নুরুন্নাহার চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনবলেন, ‘এই চুক্তি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতির জন্য বড় অবদান। যাঁদের মধ্যে এ নিয়ে সন্দেহ ছিল, আশা করি, আজ তা দূর হবে।’ তাঁর আরও আশা, এই ধারাবাহিকতায় মোংলা সমুদ্রবন্দর পরিচালনায়ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।

পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী বলেন, ‘লালদিয়া দেখিয়ে দিয়েছে—পিপিপি শুধু তত্ত্বে নয়, বাস্তবেও কার্যকর। ভবিষ্যতেও আমরা বাস্তবায়ন-কেন্দ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নেই মনোযোগ দেব।’ তিনি আরও জানান, আগামী কয়েক বছরে চারটি নতুন সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এর মধ্যে আছে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর, একটি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ও একটি নির্ধারিত মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল।

ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোক্কে রাসমুসেন বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ডেনমার্কের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত পাঁচ দশকে দুই দেশের উন্নয়ন সহযোগিতার সফলতা দেখা গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমাদের সম্পর্ক সহায়তা থেকে ব্যবসায় রূপ নিয়েছে। মাথাপিছু হিসাবে ডেনমার্ক বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানি গন্তব্য। বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্য পূরণে লালদিয়া প্রকল্প নতুন মাইলফলক।’

পরিবহন কোম্পানি মেয়ার্স্কের চেয়ারম্যান রবার্ট মেয়ার্স্ক উগলা বলেন, লালদিয়া হবে অত্যাধুনিক গ্রিনফিল্ড টার্মিনাল; সেখানে নিরাপত্তা, অটোমেশন ও স্থায়িত্বের সর্বোচ্চ মান থাকবে। এতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। সেই সঙ্গে লজিস্টিকস খাতের অগ্রযাত্রায় এটি বিশেষ মুহূর্ত হয়ে থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ