বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের করা শুল্কনীতি নিয়ে যেসব কথাবার্তা হয়, সেগুলোর একটি বড় অংশ অনুমাননির্ভর। তবে উচ্চ শুল্ক আরোপের পেছনে বাণিজ্য–ঘাটতির বাস্তবতাও ছিল। এ জন্য আমরা স্পষ্ট হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে কিছু পণ্যের তালিকা ও একটি পথনকশা নির্ধারণ করেছি। এর মাধ্যমে আশা করছি বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য–ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারব।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মাসিক ওয়েবিনারে বাণিজ্য উপদেষ্টা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন (আশিক চৌধুরী)।

ওয়েবিনারে আকাশপথে ট্রান্সশিপমেন্ট বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার কাছে জানতে চান বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান। জবাবে শেখ বশীরউদ্দিন বলেন, ‘সাধারণত এ ধরনের ট্রান্সশিপমেন্ট প্রদানকারী দেশের খরচ উৎস দেশের তুলনায় কম হয়। এ কারণে বিভিন্ন দেশ অন্য দেশ থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা নেয়। তবে নতুন পরিস্থিতিতে আমরা কিছু সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়েছি। এর মাধ্যমে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পণ্য পরিবহনে আরও দক্ষ ও প্রতিযোগীসক্ষম হতে পারব।’

এ খাতে কিছু কাজের উদাহরণ দিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘সম্প্রতি একটি নতুন কার্গো বিমানবন্দর চালু করা হয়েছে। ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মতো কয়েকটি বিমানবন্দর রয়েছে, যেগুলোকে কাজে লাগানো সম্ভব। কক্সবাজারে আমরা রানওয়ে দীর্ঘ করছি, যাতে বোয়িং ৭৪৭-৮০০ ধরনের বড় কার্গো বিমান অবতরণ করতে পারে। আমরা ইতিমধ্যে একটি দেশীয় এয়ারলাইনের জন্য নতুন একটি বিমান অনুমোদন দিয়েছি। আমি আরও বিদেশি কার্গো পরিবহনকারী বিমান সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এ জন্য কিছু বিধিনিষেধও শিথিল করা হবে, যাতে নতুন কার্গো বিমান পরিষেবা ও ব্যবসা শুরু করা যায়।’

দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকার আরও কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, সরকারি প্রায় ৩০টি পাটকল এবং প্রায় সমসংখ্যক বস্ত্রকল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব কারখানা খুব দীর্ঘ মেয়াদে, ন্যূনতম ৩০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হবে এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রায় ৩ বছর ভাড়ামুক্ত সুবিধা থাকবে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, দেশে শস্য উৎপাদনের পর অনেক অপচয় ঘটে। এ জন্য সরকার বাফার বা সংরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চায়। সরকার ইতিমধ্যে এ খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এ জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও প্রয়োজন।

জ্বালানি তথা গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ ও দাম নিয়ে উদ্যোক্তারা অসুবিধায় রয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, দেশে গ্যাস বিতরণের জন্য একটি ভালো সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে পর্যাপ্ত রিগ্যাসিফিকেশন স্টেশন নেই। জ্বালানি মন্ত্রণালয় নতুন রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট নির্মাণ করছে, যার মাধ্যমে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) এনে তা রিগ্যাসিফাই করে পাইপলাইনের মাধ্যমে বিতরণ করা সম্ভব হবে।

ভোলায় বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ভোলায় প্রাকৃতিক গ্যাস উদ্বৃত্ত রয়েছে। সেখানে যেকোনো আগ্রহী বিনিয়োগকারী এলে দ্রুতই গ্যাস–সংযোগ পেতে পারেন।

দেশের বাণিজ্য সংগঠনগুলোর কাঠামোগত সংস্কার করা হবে বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের খসড়া প্রস্তুত করেছি। এটি বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য রয়েছে।’

অতীতে অনেক সময় প্রভাবশালী গোষ্ঠীর মনোনীত ব্যক্তিরাই শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন, সমিতি ও চেম্বারের নেতৃত্বে এসেছেন উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাণিজ্য ও শিল্প সংগঠনগুলোর কার্যক্রম আরও গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালনা এবং যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ণ জ য উপদ ষ ট র জন য এ জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণে এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে সরকারের চুক্তি

লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এই চুক্তি করা হয়েছে।

আজ সোমবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দুই পক্ষ এ চুক্তিতে সই করে। এতে ডেনমার্ক, বাংলাদেশ সরকার ও বন্দর সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকেরা অংশ নেন।

চুক্তিতে সই করেন এপিএম টার্মিনালসের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টেইন ভ্যান ডোঙ্গেন ও চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।

ডেনমার্কের পক্ষে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইবিএস এপিএম টার্মিনালসের হেড অব ইনভেস্টমেন্ট ভাস্কর সেনগুপ্ত, ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টেট সেক্রেটারি লিনা গান্ডলোসে হ্যানসেন ও বাংলাদেশে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার। বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী, নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.) ও নৌপরিবহন সচিব নুরুন্নাহার চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনবলেন, ‘এই চুক্তি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতির জন্য বড় অবদান। যাঁদের মধ্যে এ নিয়ে সন্দেহ ছিল, আশা করি, আজ তা দূর হবে।’ তাঁর আরও আশা, এই ধারাবাহিকতায় মোংলা সমুদ্রবন্দর পরিচালনায়ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।

পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী বলেন, ‘লালদিয়া দেখিয়ে দিয়েছে—পিপিপি শুধু তত্ত্বে নয়, বাস্তবেও কার্যকর। ভবিষ্যতেও আমরা বাস্তবায়ন-কেন্দ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নেই মনোযোগ দেব।’ তিনি আরও জানান, আগামী কয়েক বছরে চারটি নতুন সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এর মধ্যে আছে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর, একটি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ও একটি নির্ধারিত মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল।

ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোক্কে রাসমুসেন বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ডেনমার্কের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত পাঁচ দশকে দুই দেশের উন্নয়ন সহযোগিতার সফলতা দেখা গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমাদের সম্পর্ক সহায়তা থেকে ব্যবসায় রূপ নিয়েছে। মাথাপিছু হিসাবে ডেনমার্ক বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানি গন্তব্য। বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্য পূরণে লালদিয়া প্রকল্প নতুন মাইলফলক।’

পরিবহন কোম্পানি মেয়ার্স্কের চেয়ারম্যান রবার্ট মেয়ার্স্ক উগলা বলেন, লালদিয়া হবে অত্যাধুনিক গ্রিনফিল্ড টার্মিনাল; সেখানে নিরাপত্তা, অটোমেশন ও স্থায়িত্বের সর্বোচ্চ মান থাকবে। এতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। সেই সঙ্গে লজিস্টিকস খাতের অগ্রযাত্রায় এটি বিশেষ মুহূর্ত হয়ে থাকবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ