একাডেমিক কার্যক্রম চালু হওয়ার পঞ্চম দিনেও ক্লাসে ফেরেননি খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষকরা। কবে থেকে ক্লাস শুরু হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না শিক্ষক, শিক্ষার্থী কিংবা প্রশাসনের কেউ। শিক্ষকদের লাঞ্ছনার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। 

বৃহস্পতিবার সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাসরুমগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। শিক্ষকরা ক্লাসে না ফেরায় যাননি শিক্ষার্থীরা। ক্লাসরুমের চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চ ও মেঝেতে ধুলা জমেছে। ক্যাম্পাসের সড়কগুলোয় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসেননি। হলের শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই নিজ নিজ কক্ষে অবস্থান করছেন। কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীকে হলের সামনে আড্ডা দিতে দেখা যায়। প্রধান গেটে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। 

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সাহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের পর কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী ১০ থেকে ১৫ জন শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। জড়িত শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাস-পরীক্ষা নেবেন না। 

এদিকে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় প্রতিদিন শিক্ষকদের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইছেন শিক্ষার্থীরা। তবে কোনো লাভ হয়নি। শিক্ষকরা তাদের দাবিতে অনড় রয়েছেন। শিক্ষকরা ক্লাসে না ফেরায় বিপাকে পড়েছেন ৭ হাজার ৫৬৫ জন শিক্ষার্থী। কুয়েটে আগে থেকেই প্রায় দেড় বছরের সেশনজট রয়েছে। এর ওপর গত আড়াই মাস কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি। এ অবস্থা চলমান থাকায় বাড়ছে সেশনজট। 

কুয়েটের শিক্ষার্থী শেখ মুজাহিদ ও রাহাতুল ইসলাম বলেন, আমরা ইতোমধ্যে একাধিকবার ভুলত্রুটির জন্য শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আমরা চাই দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক। 

অভিভাবক সিরাজুল আলম ও আনোয়ার হোসেন বলেন, কুয়েটে এতদিন ধরে সংকট চলছে; কিন্তু সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে দ্রুত সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার বলেন, উপাচার্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে সংকট নিরসনের জন্য চেষ্টা করছেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুয়েট সিন্ডিকেটের একজন সদস্য বলেন, শিক্ষকদের দাবির বিষয়টি কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। গত ৬ মে সিন্ডিকেট সভায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষকদের সাইবার বুলিংয়ের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া সহিংসতার ঘটনায় জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শৃঙ্খলা কমিটি ব্যবস্থা নেবে বলে সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয়। শৃঙ্খলা কমিটি ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনা শুরু করেছে। 
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সংঘর্ষের পর থেকে বন্ধ রয়েছে ক্লাস-পরীক্ষা। 


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র শ ক ষকর র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

৪০ দিন পর খুলল ডিএসসিসির প্রধান কার্যালয় নগর ভবন, আংশিক চালু সেবা

টানা ৪০ দিন বন্ধ থাকার পর অবশেষে খুলেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় নগর ভবন।

আজ রোববার সকালে নগর ভবনের প্রধান ফটক খুলে দেওয়া হয়। সকাল ৯টা থেকে ডিএসসিসির কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী নগর ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন। নগর ভবনে আংশিকভাবে শুরু হয়েছে নাগরিক সেবা কার্যক্রম।

এর ফলে গত ১৪ মে থেকে শুরু হওয়া অচলাবস্থার একধরনের সমাপ্তি ঘটল। তবে এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি নগর ভবনের কার্যক্রম।

ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সিটি করপোরেশনের কিছু কর্মচারীর আন্দোলনে প্রায় দেড় মাস নগর ভবনে সেবা কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

দক্ষিণ সিটির দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে নগর ভবনের বিভিন্ন শাখায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রবেশ করে নিজ নিজ কক্ষে যান। যদিও অনেক কর্মকর্তা আজ অফিসে আসেননি। তবে কিছু জরুরি বিভাগ ধীরে ধীরে কাজ শুরু করেছে।

জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু সেবা পেতে নাগরিকেরা নগর ভবনে ভিড় করছেন। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, এখনো পুরোদমে সেবা শুরু হয়নি। তবে আগের চেয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

নগর ভবনের ফটকে দায়িত্বে থাকা একজন নিরাপত্তাকর্মী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ সকালে নির্দেশ এসেছে—ভবন খুলে দিতে হবে। আমরা ফটক খুলে দিয়েছি। কর্মকর্তারা আসছেন। অনেক দিন পর নগর ভবনে স্বাভাবিকতা ফিরছে।’

ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি। তবে নগরবাসীর দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে কিছুটা নমনীয় হয়েছেন আন্দোলনকারীরা। নাগরিক সেবার প্রয়োজনে নগর ভবন খুলে দেওয়া হয়েছে।’

অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তারা নগর ভবনে এলেও প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তাদের কক্ষগুলোতে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। এমনকি ডিএসসিসির প্রশাসকের দপ্তরেও তালা ঝুলতে দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগর ভবনের বাইরে থাকা ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়েও আজ স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু হয়েছে। তবে সেসব অঞ্চলেও প্রকৌশলীরা প্রবেশ করেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসসিসির একজন প্রকৌশলী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সকালে সায়েদাবাদ এলাকায় অঞ্চল-৫ অফিসের আশপাশে ঘোরাঘুরি করেছেন। ভেতরে প্রবেশ করবেন কি না, বুঝতে পারছেন না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, গতকাল রোববার আন্দোলনকারীরা সব বিভাগ চালুর কথা বললেও প্রকৌশল বিভাগ চালু হবে কি না, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। তাই পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন তিনি।

আরও পড়ুননগর ভবনে অবস্থান কর্মসূচি: ডিএসসিসি কর্মকর্তাদের কাজে ফেরার আহ্বান২১ ঘণ্টা আগে

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফলাফল গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়ে বাতিল করা হয়। বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ঘোষণা করা হয়। ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গত ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ইশরাককে শপথ না পড়ানোয় আন্দোলন শুরু হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ