মাত্র আট মাস হলো যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশি ক্রিয়েটিভ অ্যাডভারটাইজিং এজেন্সি ‘পপ ফাইভ’। ব্যতিক্রমী চিন্তা ও পারপাজ ড্রিভেন কাজের মাধ্যমে তারা চেষ্টা করছে নতুন কিছু করতে। তরুণ এই বিজ্ঞাপনী সংস্থা এবার যুক্ত হলো গ্লোবাল ইন্ডিপেন্ডেন্ট ক্রিয়েটিভ এজেন্সি নেটওয়ার্ক ‘বাই দ্যা নেটওয়ার্ক’ (bTN)-এর সঙ্গে।

‘বাই দ্যা নেটওয়ার্ক’ এমন একটি গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২৭টি স্বাধীন বিজ্ঞাপন সংস্থা একসাথে কাজ করে। এই নেটওয়ার্কে এখন রয়েছে ৭৫০ জনেরও বেশি অভিজ্ঞ ক্রিয়েটিভ ট্যালেন্ট, যারা লোকাল কাজকে গ্লোবাল মানে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

এই নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পপ ফাইভ-কে বেছে নেওয়ার মূল কারণ ছিল তাদের ভিন্ন ভাবনা ও অর্থবহ কাজ, আর সাহসী আইডিয়া নিয়ে কাজ করার মানসিকতা। তারা মনে করে, পপ ফাইভ এমন একটি দল, যারা লোকাল ইনসাইট থেকে আন্তর্জাতিক মানের কাজ করতে পারে।

বাই দ্যা নেটওয়ার্ক-এর গ্লোবাল ক্রিয়েটিভ চেয়ার জন মেসক্যাল বলেন, “পপ ফাইভ-এর টিম, নেতৃত্ব আর ক্রিয়েটিভ চিন্তা আমাদের মুগ্ধ করেছে। আকরুমের সঙ্গে আমাদের আগের সম্পর্কটা এবার আরো গভীর হলো। তাদের কাছ থেকে আমরা দারুণ সব কাজের অপেক্ষায় আছি।”

এই গ্লোবাল নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার ফলে পপ ফাইভ এখন আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাবে। কোনো গ্লোবাল পিচ বা বড় ক্যাম্পেইন হলে বাই দ্যা নেটওয়ার্ক-এর অন্য ২৭টি এজেন্সি তাদের সঙ্গে মিলে কাজ করতে পারবে। এতে করে পপ ফাইভ শুধু নিজে বড় হবে না, বরং দেশের তরুণ ক্রিয়েটিভদের জন্যও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের সুযোগ তৈরি করবে।

পপ ফাইভ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজ বলেন, “আমরা এমন একটা জায়গা তৈরি করতে চেয়েছি, যেখানে নতুন আইডিয়া সবসময় গুরুত্ব পাবে। শুরু থেকেই আমরা বিশ্বাস করি—বাংলাদেশ থেকে গ্লোবাল মানের কাজ সম্ভব। বাই দ্যা নেটওয়ার্ক-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়াটা আমাদের সেই বিশ্বাসকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার বড় সুযোগ।”

প্রতিষ্ঠানটির চিফ ক্রিয়েটিভ অফিসার আকরুম হোসেন, যিনি অনেক দিন ধরেই বাই দ্যা নেটওয়ার্ক-এর সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি বলেন, “আমার স্বপ্ন ছিল এমন একটা এজেন্সি তৈরি করা, যেখান থেকে আমরা আন্তর্জাতিক মানের কাজ করতে পারবো। পপ ফাইভ সেই স্বপ্নের রূপ। বাই দ্যা নেটওয়ার্ক-এর অংশ হওয়াটা শুধু আমাদের জন্য নয়, পুরো দেশের বিজ্ঞাপন ইন্ডাস্ট্রির জন্য বড় একটা সম্ভাবনা তৈরি করবে।”

বাংলাদেশে তুলনামূলক নতুন হলেও, পপ ফাইভ দেখিয়ে দিয়েছে যে সাহসী ভাবনা আর লক্ষ্য ঠিক থাকলে, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও জায়গা করে নেওয়া সম্ভব। আর এখন, সেই যাত্রার সঙ্গী হলো বাই দ্যা নেটওয়ার্ক। দেশীয় ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির এই গ্লোবাল কোলাবোরেশন নিঃসন্দেহে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করলো। এখন দেখার অপেক্ষা, পপ ফাইভ-এর হাত ধরে বিশ্ববাজারে কতটা আলো ছড়াতে পারে বাংলাদেশের সৃজনশীলতা।

ঢাকা/সাজ্জাদ/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এমন একট ক জ কর আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

১০ টাকায় গোসল, তেল ও মাজন ফ্রি 

দিনরাত ২৪ ঘণ্টা, সারা বছর খোলা। গোসল করলে তেল ফ্রি। কোথাও কোথাও সঙ্গে দাঁতের মাজনও সংযুক্ত। একুনে খরচ ১০ টাকা। যতক্ষণ মনে চায়, গায়ে–মাথায় পানি ঢালা যায়। আপত্তি করার কেউ নেই। গোসলের এই প্যাকেজ আছে কারওয়ান বাজারের গোসলখানায়।

রাজধানীর অন্যতম প্রধান কাঁচাবাজার হলো কারওয়ান বাজার। এখানে সকাল থেকে সারা দিন চলে খুচরা ও পাইকারি বেচাকেনা। রাত গভীর হলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সবজি, ফলমূলসহ অনেক রকম পণ্যবোঝাই ট্রাক একের পর এক এসে থামে এখানে। এসব শ্রমজীবী ও স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্যই কারওয়ান বাজারে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু গোসলখানা।

কারওয়ান বাজারের উত্তর প্রান্তে ফলের আড়তগুলোর পাশে টিনের ছাউনির পাইকারি বাজারটি হাসিনা মার্কেট নামে পরিচিত। এখানে আছে কিছু পরপর পাঁচটি গোসলখানা। এক দুপুরে শুঁটকি মাছ পট্টির গোসলখানার সামনে দেখা গেল গায়ে শর্ষের তেল মেখে গোসলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন মো. মুসা। তিনি এই মার্কেটেই ‘পিতা-মাতা হোটেল’–এর কর্মচারী। হোটেলের ওপরে কাঠের পাটাতন। সেখানেই কর্মচারীদের বিনা খরচায় থাকার ব্যবস্থা। বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া। শৈশবে এখানে এসেছিলেন। এখন যৌবন। জীবনের বড় একটা সময় এই মার্কেটেই কেটে গেছে। জানালেন, এখানে গোসল করতে লাগে ১০ টাকা। শর্ষে ও নারকেল তেলের দুটি বোতল আর একটি দাঁতের মাজনের ডিব্বা রাখা আছে ম্যানেজারের টেবিলের সামনে। যার যা প্রয়োজন ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো গোসলের সঙ্গে ফ্রি। 

এক দুপুরে শুঁটকি মাছ পট্টির গোসলখানার সামনে দেখা গেল গায়ে শর্ষের তেল মেখে গোসলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন মো. মুসা। তিনি এই মার্কেটেই ‘পিতা-মাতা হোটেল’–এর কর্মচারী। হোটেলের ওপরে কাঠের পাটাতন। সেখানেই কর্মচারীদের বিনা খরচায় থাকার ব্যবস্থা।

এই গোসলখানাটি সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ব্যবস্থাপক কলিম উদ্দিন জানালেন প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি এখানে এই চাকরি করছেন। এখানেই বিনা খরচায় থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা। বেতন প্রতিদিন দুই শ টাকা। 

ফলপট্টির পাশের গোসলখানায় গিয়ে দেখা গেল, ব্যবস্থাপকের টেবিলের পাশে ছোট আকারের একটি কাঠের তাক। সেখানে লাল, সাদা, গোলাপি ও নীল রঙের অনেক সাবান সারি করে রাখা। সাবানগুলো কাগজ দিয়ে পেঁচিয়ে রাবার দিয়ে আটকে রাখা। প্রতিটি কাগজে ফরহাদ, কবির, ইয়াছিন, সফিক এমন অনেকের নাম লেখা। ব্যবস্থাপক মো. ওলিউল্লাহ জানালেন, যাঁরা নিয়মিত গোসল করতে আসেন এই সাবানগুলো তাঁদের। আলাদাভাবে চেনার জন্য প্রতিটিতে আলাদা করে নাম লেখা আছে। এই গোসলখানা সারা বছর দিনরাত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। প্রতিদিন এখানে দুই থেকে তিন শ লোক গোসল করেন। তবে শীতকালে সংখ্যা কিছু কমে বলে জানালেন তিনি। 

সারা দিন খাটুনির কাজ। ধুলাবালিতে থাকতে হয়। গোসল না করে থাকা যায় না। গা ভেজালেই শান্তি। আশপাশে গোসলের আর কোনো ব্যবস্থা নেই। কারওয়ান বাজারের এই গোসলখানাগুলোর পানি যেমন ঠান্ডা, জায়গাও পরিষ্কার। তাঁদের মতো অল্প আয়ের মানুষের জন্য এটা অনেক উপকারী।চাঁদপুরের উত্তর তরপুরচণ্ডী গ্রামের খোরশেদ আলম

কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেল, কিচেন মার্কেটের উত্তর পাশের নিচের তলায়, ডিএনসিসি মার্কেটের ওপরে ও নিচের তলায়, কাঠপট্টি মার্কেটসহ এই এলাকার মার্কেটগুলোতে অন্তত ১৭টি গোসলখানা রয়েছে। এসব গোসলখানায় শৌচাগারও রয়েছে। এ ছাড়া গোসলখানা ছাড়া শুধু গণশৌচাগার আছে প্রায় ২০টির মতো।

এসব গোসলখানায় প্রতিদিন কত মানুষ গোসল করেন সঠিক বলা অসম্ভব। তবে গোসলখানার ব্যবস্থাপকদের ধারণা, প্রতিদিন গড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ গোসল করেন। গরমের সময় সংখ্যা বাড়ে এবং শীতে গোসলের ব্যবসায় কিছুটা মন্দা। কবে থেকে এসব গোসলখানা চলছে জানতে চাইলে এক ব্যবস্থাপক বলেন, কেউ বলে পাকিস্তান আমল থেকে, কেউ বলে ব্রিটিশ আমল। আদতে গোসলখানাগুলো কবে থেকে চলছে তার নির্দিষ্ট কোনো সময় জানা যায়নি।

চাঁদপুরের উত্তর তরপুরচণ্ডী গ্রামের খোরশেদ আলম ৫ বছর ধরে কাজ করেন ফলের আড়তে। আড়তেই থাকেন। তিনি বললেন, সারা দিন খাটুনির কাজ। ধুলাবালিতে থাকতে হয়। গোসল না করে থাকা যায় না। গা ভেজালেই শান্তি। আশপাশে গোসলের আর কোনো ব্যবস্থা নেই। কারওয়ান বাজারের এই গোসলখানাগুলোর পানি যেমন ঠান্ডা, জায়গাও পরিষ্কার। তাঁদের মতো অল্প আয়ের মানুষের জন্য এটা অনেক উপকারী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ