ছুরি মেরে স্কুলছাত্র হত্যা যুবকের বাড়িতে আগুন
Published: 10th, May 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুরে এক স্কুলছাত্রকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর হামলাকারীর বাড়িতে আগুন দিয়েছে জনতা। শুক্রবার রাতে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের লোহাগাছ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। রাত ১০টার দিকে হামলার শিকার হয় স্কুলছাত্র জিহাদ হাসান জয়। ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আগুন দেওয়া হয় একই এলাকার মোজাম্মেল
হকের বাড়িতে।
নিহত জিহাদ হাসান জয় (১৫) ওই এলাকার বোরহান উদ্দিনের ছেলে। সে শ্রীপুর টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এলাকাবাসী জানায়, শুক্রবার বিকেলে জিহাদ হাসান জয় ও তার বন্ধুরা স্থানীয় সরকারবাড়ী মাঠে ফুটবল খেলছিল। খেলা শেষ করে তারা মাঠে বসে বিশ্রাম নেওয়ার সময় একই এলাকার মোজাম্মেল হক (৩৩) সেখানে যান। সে জয়ের বন্ধু একই এলাকার মুদি দোকানি হাবিবুর রহমানের ছেলে জুনায়েদকে হত্যার হুমকি দেন। এর প্রতিবাদ করে জয়। বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি হলে মোজাম্মেল চলে যান। জয়ও চলে যায় বাসায়।
কয়েক ঘণ্টা পরই মোবাইল ফোনে কল করে সরকার মার্কেটে যেতে বলে। বন্ধুরা জানায়, রাত ১০টার দিকে পাঁচ বন্ধুর সঙ্গে সেখানে যায় জয়। এর আনুমানিক ১৫ মিনিট পর মোজাম্মেল সেখানে এসেই জয়কে গালাগালি শুরু করে। এক পর্যায়ে ধারালো ছুরি দিয়ে জয়ের পেটে আঘাত করে পালিয়ে যান।
এলাকাবাসীর জয়কে উদ্ধার করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত ১২টার দিকে মারা যায় জয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মোজাম্মেলের বাড়িতে হামলা চালায় এলাকার লোকজন। এক পর্যায়ে তারা আগুন ধরিয়ে দিলে বাড়ির আসবাব পুড়ে যায়।
মোজাম্মেল এলাকায় সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্ত হিসেবে পরিচিত। নিহত জয়ের বাবা বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘মোজাম্মেল এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। সে সহযোগীদের নিয়ে আমার নিষ্পাপ ছেলেটাকে মেরে ফেলেছে। পেটে ছুরিকাঘাতের পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে অণ্ডকোষেও আঘাত করেছিল তারা।’
এ ঘটনায় বোরহান উদ্দিন বাদী হয়ে শনিবার সকালে চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১২ জনকে আসামি করে শ্রীপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। আসামি তালিকায় মোজাম্মেল (৩৩), সাগর (৩০) ও আবু বকর সিদ্দিকের (৫৫) নাম আছে।
শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল জানান, এরই মধ্যে ৩ নম্বর আসামি আবু বকর সিদ্দিককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। শনিবার দুপুরে তাকে গাজীপুর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রধান আসামি মোজাম্মেলসহ অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণে এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে সরকারের চুক্তি
লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এই চুক্তি করা হয়েছে।
আজ সোমবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দুই পক্ষ এ চুক্তিতে সই করে। এতে ডেনমার্ক, বাংলাদেশ সরকার ও বন্দর সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকেরা অংশ নেন।
চুক্তিতে সই করেন এপিএম টার্মিনালসের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টেইন ভ্যান ডোঙ্গেন ও চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
ডেনমার্কের পক্ষে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইবিএস এপিএম টার্মিনালসের হেড অব ইনভেস্টমেন্ট ভাস্কর সেনগুপ্ত, ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টেট সেক্রেটারি লিনা গান্ডলোসে হ্যানসেন ও বাংলাদেশে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার। বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী, নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.) ও নৌপরিবহন সচিব নুরুন্নাহার চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনবলেন, ‘এই চুক্তি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতির জন্য বড় অবদান। যাঁদের মধ্যে এ নিয়ে সন্দেহ ছিল, আশা করি, আজ তা দূর হবে।’ তাঁর আরও আশা, এই ধারাবাহিকতায় মোংলা সমুদ্রবন্দর পরিচালনায়ও বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।
পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী বলেন, ‘লালদিয়া দেখিয়ে দিয়েছে—পিপিপি শুধু তত্ত্বে নয়, বাস্তবেও কার্যকর। ভবিষ্যতেও আমরা বাস্তবায়ন-কেন্দ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নেই মনোযোগ দেব।’ তিনি আরও জানান, আগামী কয়েক বছরে চারটি নতুন সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এর মধ্যে আছে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর, একটি আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ও একটি নির্ধারিত মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল।
ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোক্কে রাসমুসেন বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ডেনমার্কের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত পাঁচ দশকে দুই দেশের উন্নয়ন সহযোগিতার সফলতা দেখা গেছে। তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমাদের সম্পর্ক সহায়তা থেকে ব্যবসায় রূপ নিয়েছে। মাথাপিছু হিসাবে ডেনমার্ক বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রপ্তানি গন্তব্য। বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্য পূরণে লালদিয়া প্রকল্প নতুন মাইলফলক।’
পরিবহন কোম্পানি মেয়ার্স্কের চেয়ারম্যান রবার্ট মেয়ার্স্ক উগলা বলেন, লালদিয়া হবে অত্যাধুনিক গ্রিনফিল্ড টার্মিনাল; সেখানে নিরাপত্তা, অটোমেশন ও স্থায়িত্বের সর্বোচ্চ মান থাকবে। এতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়বে। সেই সঙ্গে লজিস্টিকস খাতের অগ্রযাত্রায় এটি বিশেষ মুহূর্ত হয়ে থাকবে।