ফ্যাসিবাদ ও উগ্র জাতীয়তাবাদ নিয়ে রবীন্দ্রনাথ
Published: 12th, May 2025 GMT
‘ফ্যাসিবাদের কর্মপদ্ধতি ও নীতি সমগ্র মানবজাতির উদ্বেগের বিষয়। যে আন্দোলন নিষ্ঠুরভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করে, বিবেকবিরোধী কাজ করতে মানুষকে বাধ্য করে এবং হিংস্র রক্তাক্ত পথে চলে বা গোপনে অপরাধ সংঘটিত করে, সে আন্দোলনকে আমি সমর্থন করতে পারি এমন উদ্ভট চিন্তা আসার কোনো কারণ নেই। আমি বারবারই বলেছি, পশ্চিমের রাষ্ট্রগুলো সযত্নে উগ্র জাতীয়তাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব লালন করে সারা পৃথিবীর সামনে ভয়াবহ বিপদের সৃষ্টি করেছে।’
সি এফ এন্ড্রুসকে লেখা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠি, ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান, লন্ডন, ৫ আগস্ট ১৯২৬
রবীন্দ্রনাথই ছিলেন প্রথম ভারতীয় সাহিত্যিক, যিনি ফ্যাসিবাদের ভয়ানক আগ্রাসী ও বর্বর রূপ উপলব্ধি করে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, আন্তর্জাতিকতার সবচেয়ে বড় বিপদ সাম্রাজ্যবাদ ও উগ্র জাতীয়তাবাদ। তাই সারা জীবন দৃঢ়তার সঙ্গে অজস্র গান, কবিতা, রচনা, সাহিত্যকীর্তি ও বক্তৃতায় এই দুই সংকটের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন তিনি।
বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে যে স্বদেশি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে, এর সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক প্রতীক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি শুধু অসাধারণ কবিতা ও গানই লেখেননি; রাখিবন্ধন, পদযাত্রাসহ সবকিছুতেই সক্রিয় ছিলেন। জাতীয়তাবাদের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবেই তিনি তখন ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ বলেই দূরদৃষ্টিতে উগ্র জাতীয়তাবাদের পূর্বাভাস টের পেয়েছিলেন। সে কারণে সরে দাঁড়িয়েছিলেন স্বদেশি আন্দোলন থেকে। গোরা, ঘরে বাইরে ও চার অধ্যায় উপন্যাসে উগ্র জাতীয়তাবাদের তীব্র সমালোচনা করেছেন। ‘কালান্তর’সহ বিভিন্ন প্রবন্ধে, চিঠিপত্রে, অভিধানে উগ্র জাতীয়তাবাদের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করেছেন। উগ্র জাতীয়তাবাদ ও কট্টর স্বাজাত্যবোধের পরিণতি তুলে ধরেছেন গোরা (১৯১০) উপন্যাসে। ঘরে বাইরে (১৯১৬) উপন্যাসে দেখালেন সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ কীভাবে সাম্প্রদায়িকতা ও বিদ্বেষের বীজ বপন করে। ঘরে বাইরে–এর অন্যতম প্রধান চরিত্র নিখিলেশের মুখ থেকে উচ্চারিত হয়েছিল, ‘দেশকে সাদাভাবে সত্যভাবে দেশ বলেই জেনে, মানুষকে মানুষ বলেই শ্রদ্ধা করে, যারা তার সেবা করতে উৎসাহ পায় না—চিৎকার করে মা বলে, দেবী বলে, মন্ত্র পড়ে যাদের কেবল সম্মোহনের দরকার হয়, তাদের সেই ভালোবাসা দেশের প্রতি তেমন নয় যেমন নেশার প্রতি।’
যেখানেই মানুষের সভ্যতা আক্রান্ত হয়েছে, মানবতা বিপর্যস্ত হয়েছে, সেখানেই বিবেকি শিল্পী রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠ ধ্বনিত হয়েছে। রোমাঁ রোলাঁ, অঁরি বারবুস, আলবার্ট আইনস্টাইনদের সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে নিজের দীপ্ত উপস্থিতি ঘোষণা করেছিলেন। তিনি ১৯২৬ সালে তৃতীয়বারের মতো ইতালি সফরের সময় মুসোলিনির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় রবীন্দ্রনাথের। মুসোলিনির ফ্যাসিস্ট শাসন সম্পর্কে তখন তিনি অবহিত ছিলেন না। অচিরেই নিজের ভুল বুঝতে পারেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথকে ফ্যাসিবাদের ভয়াবহতা ও বিপদ সম্পর্কে অবহিত করে তাঁকে ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনের পুরোভাগে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে রোমাঁ রোলাঁর ভূমিকা প্রশ্নাতীত। রোলাঁকে পাঠানো চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘ইতালি সফরের ফলে আমার মনে যে মলিনতার স্পর্শ লেগেছিল, সম্প্রতি এক মুক্তিস্নানে তা দূর হয়েছে।’ রবীন্দ্রনাথের এই ইউরোপ সফরে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অভিজ্ঞতা ছিল ফ্যাসিজম ও যুদ্ধ সম্পর্কে তাঁর সচেতনতা। এ ঘটনার পর থেকেই রবীন্দ্রনাথ পৃথিবীজুড়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী অন্যতম প্রধান কণ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। মুসোলিনির স্বরূপ উদ্ঘাটিত হওয়ার পর তাঁর একটি ব্যঙ্গচিত্র আঁকেন রবীন্দ্রনাথ।
১৯২৬ সালের পর থেকেই ক্রমান্বয়ে ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে উদাত্ত কণ্ঠস্বর শোনা যেতে থাকল রবীন্দ্রনাথের। ১৯২৭ সালে বিখ্যাত ফরাসি মনীষী ও সাম্যবাদী নেতা অঁরি বারবুস ও ফরাসি দার্শনিক রোমাঁ রোলাঁর মধ্যে মত বিনিময়ের পর তাঁরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী–গুণীদের কাছে ‘দ্য আপিল টু দ্য ফ্রি স্পিরিটস’ শিরোনামের আবেদনপত্র পাঠান, তাঁদের অনুমোদনের জন্য। এর মূল সুর ছিল ফ্যাসিবাদ-বিরোধিতার। সেই আবেদনে সমর্থন জানিয়ে লেখা জবাবে দ্বিধাহীনভাবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নিজের দৃঢ় অবস্থানের কথা জানান রবীন্দ্রনাথ।
ফ্যাসিস্ট ইতালি ও জার্মানির মদদপুষ্ট জেনারেল ফ্রাঙ্কো ১৯৩৬ সালে স্পেনের গণতন্ত্র ধ্বংস করে স্বৈরশাসন চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে পুরো স্পেনে তার প্রতিবাদে ও প্রতিরোধে সংগ্রাম শুরু হয়। স্পেনের যুদ্ধে পপুলার ফ্রন্টের হয়ে রণাঙ্গনে শামিল হয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিকর্মীরা। রবীন্দ্রনাথ এই প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালে লেখা সেঁজুতি কাব্যগ্রন্থে ‘চলতি ছবি’ কবিতায় স্পেনের গৃহযুদ্ধের ছবি ফুটে উঠেছে: ‘যুদ্ধ লাগল স্পেনে;/চলছে দারুণ ভ্রাতৃহত্যা/ শতঘ্নীবাণ হেনে।’
এই সময়েই ‘লিগ এগেইনস্ট ফ্যাসিজম অ্যান্ড ওয়ার’ নামে একটি সংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন কবির ভ্রাতুষ্পুত্র সাম্যবাদী আদর্শে বিশ্বাসী সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ এই সংঘের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। তিরিশের দশকে জাপানের চীন আক্রমণ ও আগ্রাসনের ঘটনা রবীন্দ্রনাথ মেনে নিতে পারেননি। এ প্রসঙ্গে তাঁর অনুরাগী জাপানি কবি নোগুচির সঙ্গে খোলা চিঠি আদান-প্রদানের মাধ্যমে দীর্ঘ বিতর্ক চলে। জাপানের ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা সত্ত্বেও দেশটির হিংস্র ভূমিকার নিন্দা করেছেন রবীন্দ্রনাথ।
১৯৩৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর অমিয় চক্রবর্তীর উদ্দেশে এক চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘দেখলুম দূরে বসে ব্যথিত চিত্তে, মহাসাম্রাজ্যশক্তির রাষ্ট্রমন্ত্রীরা নিষ্ক্রিয় ঔদাসীন্যের সঙ্গে দেখতে লাগল জাপানের করাল দংষ্ট্রাপংক্তির দ্বারা চীনকে খাবলে খাবলে খাওয়া.
আবিসিনিয়া, স্পেন ও চীন রণাঙ্গন—প্রায় সর্বত্রই ফ্যাসিস্টদের আক্রমণের মুখে সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবিরোধী মুক্তিফৌজের পরাজয়ের খবর আসছিল। মানবতাবাদী রবীন্দ্রনাথ সোভিয়েত রাশিয়া কর্তৃক ফিনল্যান্ড আক্রমণের ঘটনাটিকেও ভালো চোখে দেখেননি। এ ঘটনায় তাঁর হতাশা প্রকাশ পায় ‘অপঘাত’ কবিতায়: ‘টেলিগ্রাম এল সেই ক্ষণে/ ফিনল্যান্ড চূর্ণ হলো সোভিয়েত বোমার বর্ষণে।’ রবীন্দ্রনাথ সোভিয়েত রাশিয়াকে সম্পূর্ণ ভিন্ন চোখে দেখতেন। ১৯৩০ সালে রাশিয়া ভ্রমণ ছিল তাঁর কাছে ‘এ জন্মের তীর্থ দর্শন’। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, ‘অন্য কোনো দেশের মতোই নয়, একেবারে মূলে প্রভেদ। আগাগোড়া সকল মানুষকেই এরা সমান করে জাগিয়ে তুলেছে।’
রবীন্দ্রনাথের আঁকা মুসেলিনির ব্যাঙ্গচিত্রউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর ছ ল ন কর ছ ন ত হয় ছ
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলিম সভ্যতায় বিশ্বভাবনার অনুবাদ আন্দোলন
ইসলামের জয়যাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রসারিত হচ্ছিল তার জ্ঞানচর্চার দিগন্তও। মুসলমানরা নিত্যনতুন সভ্যতা, ভাষা ও ঐতিহ্যের সংস্পর্শে আসছিলেন। একদিকে যেমন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে আরবি ভাষা শিক্ষার আগ্রহ বাড়ছিল, তেমনই মুসলিম বিশ্বের কাছে বিভিন্ন সভ্যতার জ্ঞানভান্ডার পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ল বিপুল অনুবাদের।
ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কারণেই তৎকালীন বিশ্বে আরবি ছিল সংযোগ ও ভাবপ্রকাশের মূল মাধ্যম। কিন্তু আরবদের নিজস্ব লিখিত সম্পদ ছিল যৎসামান্য।
প্রাচীন আরবেরা গণিত বা বিজ্ঞানের চেয়ে সাহিত্যানুরাগী ছিলেন বেশি। তাঁদের কবিতা ও বাগ্মিতার ঐতিহ্য ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ। সেই সাহিত্যে জ্ঞানের যে প্রকাশ দেখা যেত, তা মূলত ভূয়োদর্শন ও অভিজ্ঞতালব্ধ; যাকে তাঁরা বলতেন ‘হিকমা’।
অন্যান্য সভ্যতার মুখোমুখি হয়ে আরবেরা যখন এক বিপুল জ্ঞানসমুদ্রের সন্ধান পেলেন, তখন তাঁরা উপলব্ধি করলেন যে এই জ্ঞান কেবল স্মৃতিতে ধরে রাখা সম্ভব নয়।জ্ঞানের সংরক্ষণে লিপিবদ্ধকরণের পরিবর্তে তাঁরা বেছে নিয়েছিলেন শ্রুতি ও স্মৃতির পথ। প্রজন্মের পর প্রজন্মে বাহিত হতো সেই জ্ঞান, এক স্মৃতি থেকে অন্য স্মৃতিতে। লেখার প্রচলন ছিল সামান্যই।
অন্যান্য সভ্যতার মুখোমুখি হয়ে আরবেরা যখন এক বিপুল জ্ঞানসমুদ্রের সন্ধান পেলেন, তখন তাঁরা উপলব্ধি করলেন যে এই জ্ঞান কেবল স্মৃতিতে ধরে রাখা সম্ভব নয়। ইবনে সাইদ আন্দালুসি তাঁর তাবাকাতুল উমাম গ্রন্থে লিখেছেন, ইসলামের আবির্ভাবের পর আরবেরা ভাষা ও সাহিত্যের পাশাপাশি ধর্মীয় বিধিবিধানকে জ্ঞানচর্চার অন্তর্ভুক্ত করে।
তবে চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে তাঁদের জ্ঞান ছিল মূলত লুকায়িত ও আঞ্চলিক পদ্ধতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ; চিকিৎসকও ছিলেন হাতে গোনা। অনুবাদপর্ব শুরু হওয়ার পর চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষায় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নানা নির্দেশিকা।
আরও পড়ুনমুসলিম বিশ্বে আধুনিকতার ধারণা এল যেভাবে২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫উমাইয়া আমলে ইসলামি সাম্রাজ্য উত্তর আফ্রিকা থেকে মধ্য এশিয়া অবধি বিস্তৃত হয়। এই বিশাল ভূখণ্ডে নানা ভাষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতার মানুষের বাস। আলেকজান্দ্রিয়া, জুন্দিশাপুর, এন্টিয়ক, হাররান ও নুসাইবিনের মতো বহু জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র ইসলামি ছত্রচ্ছায়া আসে। এই কেন্দ্রগুলোতে গ্রিক গ্রন্থাদির বিশেষ চর্চা হতো।
এখানকার অধিকাংশ অধিবাসী ছিলেন সুরিয়ানি খ্রিষ্টান, যাঁরা মেসোপটেমিয়া ও প্যালেস্টাইনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বসবাস করতেন। এই সুরিয়ানিরাই হয়ে উঠেছিলেন গ্রিক ও আরবি সভ্যতার মধ্যে যোগসূত্র। তাঁদের হাত ধরেই গ্রিক থেকে আরবিতে অনুবাদের পথ প্রশস্ত হয়।
খলিফা আবদুল মালিক বিন মারওয়ান যখন আরবিকে প্রশাসনিক ভাষার মর্যাদা দিলেন, তখন প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কারণেও অনুবাদের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়।
উমাইয়া যুগেই এই অনুবাদ আন্দোলনের সূচনা হয়। সপ্তম শতাব্দীর শেষ ভাগে উমাইয়া শাহজাদা খালিদ বিন ইয়াজিদ চিকিৎসাবিদ্যা ও রসায়নের গ্রন্থ আরবিতে অনুবাদে আগ্রহী হন। মিসরে থাকা গ্রিক পণ্ডিতদের সাহায্যে তিনি রসায়ন ও জ্যোতির্বিদ্যার বই অনুবাদ করান।
খলিফা আবদুল মালিক বিন মারওয়ান যখন আরবিকে প্রশাসনিক ভাষার মর্যাদা দিলেন, তখন প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কারণেও অনুবাদের প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়।গ্রিক থেকে আরবিতে অনূদিত প্রথম গ্রন্থ হিসেবে দার্শনিক হার্মিসের লেখা একটি জ্যোতির্বিদ্যার বইয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়, যার আরবি নামকরণ হয়েছিল আহকামুন নুজুম। খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজের অনুরোধে বসরার ইহুদি চিকিৎসক মাসারজাওয়াই আলেকজান্দ্রিয়ার যাজক আহরানের লেখা একটি চিকিৎসাবিষয়ক বই অনুবাদ করেন।
উমাইয়া যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অনুবাদক ছিলেন ইয়াকুব রাহাউয়ি, যিনি একাধিক গ্রিক গ্রন্থ আরবিতে ভাষান্তর করেছিলেন।
আব্বাসীয় আমলে এই অনুবাদের স্রোত এক প্রকৃত আন্দোলনের রূপ নিল। তাঁরা পারসিক ও অন্যান্য অনারবীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতার প্রতি বিশেষ আগ্রহী ছিলেন। খলিফা আবু জাফর আল-মানসুর গ্রন্থানুবাদে বিপুল উৎসাহ জোগান। তাঁরই অনুরোধে ইসহাক বিন হুসাইন হিপোক্রেটিস ও গ্যালেনের চিকিৎসাবিষয়ক কয়েকটি বই অনুবাদ করেন।
পারস্য বংশোদ্ভূত আবদুল্লাহ ইবনে মুকাফফা অনুবাদ করেন ভারতের বিদপাই নামে পণ্ডিতের পঞ্চতন্ত্র। আরবিতে এর নামকরণ হয় কালিলা ওয়া দিমনা। আরব্য রজনীর মতো জনপ্রিয়তা না পেলেও আরবি গদ্যের এক অনবদ্য নিদর্শন এবং বিশ্বসাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে এই গ্রন্থ আজও স্বীকৃত।
আরও পড়ুনইসলামে পাঠের গুরুত্ব২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫‘কালিলা ও দিমনা’ দুই শৃগাল। ১২২০ তম সংস্করণের চিত্র, যা প্যারিসের জাতীয় গ্রন্থাগারে সংরিক্ষত আছে