বগুড়ার শিবগঞ্জে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার ভোরে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। রোববার দুপুরে সৈয়দপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে।

মাসুদ রানা একই গ্রামের মৃত হাসান আলীর ছেলে। হামলায় তার মা মনোয়ারা বেগম, বোন শেফালি, চাচাতো ভাই শহিদুলসহ আটজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তারা হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রবিউল ইসলাম।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাসুদের সঙ্গে একই গ্রামের মতিয়ার রহমান মতিনের বাড়ির পাশে এক শতক জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। রোববার দুপুরে আমিন ডেকে সালিশের মাধ্যমে জমি মাপজোখ করে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়। বিকেলে মতিয়ার ও তার অনুসারীরা মাসুদের পরিবারের লোকজনকে লাঠিসোটা দিয়ে বেধড়ক পেটায়।

গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে সোমবার ভোরে মাসুদ মারা যান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ জনতা অভিযুক্তদের দুটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে।

বগুড়ার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) রবিউল ইসলাম জানান, মাসুদ হত্যা মামলায় তিন নারীসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

পাল্টা অভিযোগ পলাশের শ্বশুরের ‘শাশুড়ি এত দজ্জাল হয়, জানা ছিল না’

চট্টগ্রামে র‌্যাব-৭ এ কর্মরত সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পলাশ সাহার মৃত্যুর পর থেকে তার স্ত্রী সুস্মিতা সাহাকে (২০) নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। পলাশের মৃত্যুর পর তার মা ও ভাই অভিযোগ করেছিলেন, সুস্মিতার কারণে সংসারে সব সময় কলহ লেগেই থাকত। আর এসব কারণে আত্মহত্যা করেছেন পলাশ।

তবে, এসব অভিযোগ নাকচ পাল্টা অভিযোগ করেছেন পলাশের শ্বশুর ভরত সাহা (৬১)। তিনি জানান, বিয়েতে মেয়েকে কিছু দিতে না পারায় প্রায়ই নির্যাতন করতেন পলাশের মা। শাশুড়ির অত্যাচারে সুস্মিতা আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে গিয়েছিল।

শনিবার (১০ মে) সরেজমিনে ফরিদপুর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন চৌধুরীপাড়া গেলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপ হয় ভরত সাহার।

আরো পড়ুন:

এসএসসি পরীক্ষার্থীকে হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার

টাঙ্গাইলে সাপের কামড়ে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২

তিনি বলেন, ‘‘সুস্মিতা আমার একমাত্র মেয়ে। প্রায় দুই বছর আগে পারিবারিকভাবে পলাশের সঙ্গে সুস্মিতার বিয়ে হয়। মেয়েকে দেখার পরই পলাশ বিয়ের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। কিন্তু, আমি রাজি ছিলাম না।’’

‘‘প্রথমত, আমার মেয়ের বিয়ের বয়স হয়নি, আর আমার তেমন টাকা-পয়সা ছিল না। পরে পরিবারের সবাই বোঝানোর পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করি। ভাবলাম, মেয়েকে তো একদিন বিয়ে দিতেই হবে। আর যেহেতু নিজস্ব সম্প্রদায়ের (সাহা) মধ্যে ছেলে পাওয়া গেছে। আর ছেলে হিসেবে পলাশ খুবই ভালো।’’- যোগ করেন তিনি।

ভরত সাহা বলেন, ‘‘মেয়েকে বিয়ে দিয়ে সত্যি রত্ম (পলাশ) পেয়েছিলাম। কিন্তু, বিয়ের পর এক দিনের জন্যেও মেয়ের শ্বশুরবাড়ি যেতে পারিনি; শুধুমাত্র সুস্মিতার শাশুড়ির কারণে। শাশুড়ি যে এত দজ্জাল হয়, জানা ছিল না।’’

তিনি বলেন, ‘‘পলাশ মাঝেমধ্যে ফোনে বলত, আমার মা একটু অন্য রকম। আপনাদের এখন পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে আনতে পারিনি, কিছু মনে করবেন না। এজন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’’

নিহত র‍্যাব কর্মকর্তা পলাশ সাহা ও তার স্ত্রী সুস্মিতা সাহা

ভরত সাহা বলেন, ‘‘পলাশ যেদিন মারা গেছে, সেদিন সকালেও ফোন দিয়ে বলেছিল, বাবা সুস্মিতাকে নিয়ে যান। আপনাদের ওখানে কিছুদিন থেকে আসুক। এর আগের দিন, ওরা স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া করেছে। সে সময় সুস্মিতার গায়ে হাত পর্যন্ত তোলেন পলাশের মা।’’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘মেয়েকে প্রায়ই ওর শাশুড়ি না খাইয়ে রাখত। মেয়ের জামাই সারাদিন অফিস করে বাসায় এসে ঘরে যেতে চাইলে পলাশের মা যেতে দিত না। বলত, আগে আমার ঘরে থাকবি; পরে বউয়ের কাছে যাবি।’’

ভরত সাহা আরো বলেন, ‘‘সুস্মিতার শাশুড়ির মূল সমস্যা ছিল, আমরা গরীব। বিয়েতে তেমন কিছু দিতে পরিনি। বিভিন্ন সময় মেয়েকে বলেছিল, বিয়েতে তোমার বাবার একশ ভরি স্বর্ণ, গাড়ি, বাড়ি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, কিছুই তো দিল না। এসব বলে মেয়েকে নির্যাতন করত। মেয়ে একপর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল। তখন মেয়েকে বুঝিয়ে শান্ত করি।’’

এর আগে, বুধবার (৭ মে) দুপুর সাড়ে ১২টায় র‌্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের তৃতীয় তলা থেকে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পলাশ সাহার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মরদেহের পাশে পাওয়া যায় একটি চিরকুট।

চিরকুটে লেখা ছিল, ‘‘আমার মৃত্যুর জনা মা এবং বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।‬‎’’

পরের দিন সকাল ৯টায় অ্যাম্বুলেন্সযোগে পলাশ সাহার মরদেহ নিয়ে আসা হয় গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তাড়াশী গ্রামে। ওই দিন দুপুরে উপজেলার পারকোনা শ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

আরো পড়ুন

চট্টগ্রামে সিনিয়র এএসপির গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার, পাশে ‘সুইসাইড নোট’

এএসপি পলাশের আত্মহত্যার কারণ জানালেন তার ভাই

নিজ গ্রামে এএসপি পলাশ সাহার শেষকৃত্য

‘তোর মা এখান থেকে না গেলে তোকে খুন করব’

ঢাকা/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাল্টা অভিযোগ পলাশের শ্বশুরের ‘শাশুড়ি এত দজ্জাল হয়, জানা ছিল না’