বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মাননা পেলেন আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের নারী উদ্যোক্তা
Published: 13th, May 2025 GMT
বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত ‘এসএমই নারী উদ্যোক্তা মেলায়’ সম্মাননা পেয়েছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের নারী উদ্যোক্তা রোজী আহমেদ।
গত ১১ মে বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত চার দিনব্যাপী ‘ব্যাংকার-এসএমই নারী উদ্যোক্তা সমাবেশ, পণ্য প্রদর্শনী ও মেলা ২০২৫’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে রোজী আহমেদের হাতে ক্রেস্ট ও আর্থিক পুরস্কার তুলে দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মো.
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. খসরু পারভেজ, পরিচালক নওশাদ মোস্তফা, ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমান চৌধুরী, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট একেএম আমজাদ হোসেন, সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট ভাইস পেসিডেন্ট এসকে আসাদুল হক এবং নির্বাহীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের বাগেরহাট শাখার উদ্যোক্তা রোজী আহমেদের প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মেসার্স অর্গানিক প্রোডাক্ট’। প্রতিষ্ঠানটি কোকো ফাইবার, কাপড় ও তুলা দিয়ে ১৩ ধরনের পাখির বাসা, বিড়ালের ঘর, সফট টয়, পেট টয়সহ নানা সামগ্রী তৈরি করে। জার্মানি, গ্রিস, বেলজিয়ামসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠানটি তাদের পণ্য রপ্তানি করছে।
ঢাকা/ইভা
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অর্থনীতির প্রাণ ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ
বাংলাদেশে তরুণ-তরুণীর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ অথবা কর্মসংস্থানে নেই। এ হিসাব বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর। বিপুলসংখ্যক নিষ্ক্রিয় জনগোষ্ঠীর অর্ধেককেও কাজে লাগানো গেলে অর্থনীতিতে বড় ধরনের রূপান্তর ঘটানো সম্ভব। এ জন্য সবচেয়ে ভালো বিকল্প হলো ছোট ছোট উদ্যোগ এবং তার জন্য কার্যকর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন।
দেশে প্রতিবছর অন্তত ২০ লাখ তরুণ শ্রমবাজারে আসছে। কিন্তু তাদের অনেকের জন্য আনুষ্ঠানিক খাতে কোনো কাজের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। আবার নিজ উদ্যোগে কিছু করার সুযোগও খুব কম। বিশ্বের অনেক উদীয়মান দেশে বিশেষত পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো তরুণদের দক্ষতা অনুযায়ী প্রশিক্ষিত করে কর্মসংস্থানের বিস্তৃত কর্মসূচির মাধ্যমে অর্থনীতিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে এখনও পিছিয়ে আছে।
এ কথা ঠিক, বাংলাদেশে কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (সিএমএসএমই) অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। তবে এখনও এ খাতের সম্ভাবনা অনেকটাই অব্যবহৃত রয়ে গেছে। অনেক উদীয়মান দেশের মতো বাংলাদেশে এ খাত গোছালো নয়। আনুষ্ঠানিক খাতের বাইরে রয়ে গেছে অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোগ। যারা একটু সুযোগ পেলে নিজের এবং দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারত।
বাংলাদেশ বহির্বিশ্ব থেকে পণ্য আমদানির জন্য যা ব্যয় করে, রপ্তানি করে তার অনেক কম। গত অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছোট ও মাঝারি উদ্যোগে ত্বরণ সৃষ্টি করা গেলে বাণিজ্য উদ্বৃত্তের দেশ হতে পারে বাংলাদেশ। এতে একদিকে আমদানি ব্যয় কমবে, অন্যদিকে রপ্তানি আয় বাড়বে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে দেশে দুই কোটির বেশি মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান রয়েছে। শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৫ শতাংশ এ খাতে। তবে সে অনুযায়ী জিডিপিতে এ খাতের অবদান উদীয়মান অনেক দেশের চেয়ে কম। বাংলাদেশের জিডিপিতে সিএমএসএমই খাতের অবদান প্রায় ৩০ শতাংশ। শ্রীলঙ্কার জিডিপিতে এ খাতের অবদান ৫২ শতাংশ। অন্যদিকে চীনে ৬০ শতাংশ, ভারতে ৩৭ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৪৫ শতাংশ, জাপানে ৫০ শতাংশ এবং পাকিস্তানে এ হার ৪০ শতাংশ। সারাবিশ্বেই ছোট ও মাঝারি উদ্যোগই ব্যবসা-বাণিজ্যের মূলশক্তি। জাতিসংঘের হিসাবে বিশ্বের ব্যবসার ৯০ শতাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের। মোট কর্মসংস্থানের ৭০ শতাংশই এ খাতের। বিশ্ব জিডিপিতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের অবদান অর্ধেক।
বাংলাদেশে সিএমএসএমই খাতের গুরুত্ব কভিড সময়কালে বেশ উপলব্ধি হয়। ওই সময় ঘরে বসেই প্রচুর নতুন উদ্যোগ গড়ে ওঠে, যারা অনলাইনে পণ্য সরবরাহ করে সংকটকালে অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখে। প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত নারীদের জন্য বেশি কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে। বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে, শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো গেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ অর্থনৈতিক শুমারির (২০২৪) প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী দেশে ১ কোটি ১৮ লাখ অর্থনৈতিক ইউনিট রয়েছে। বিবিএস এখনও শুমারির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। তবে দেশের অর্থনৈতিক ইউনিটের বেশির ভাগই ক্ষুদ্র উদ্যোগ। অধিকাংশ উদ্যোগে একজন ব্যক্তি সম্পৃক্ত। অর্থনৈতিক ইউনিটের মধ্যে ৬২ লাখ স্থায়ী এবং ৬ লাখ ক্ষণস্থায়ী। পরিবারভিত্তিক অর্থনৈতিক উদ্যোগ রয়েছে ৫০ লাখ। এসব উদ্যোগের প্রায় সবই অনানুষ্ঠানিক। এ কারণে তারা ব্যাংক ঋণ, প্রণোদনা বা অন্যান্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
যেসব সংকট
বিবিএসের অর্থনৈতিক শুমারিতে ছোট উদ্যোক্তাদের নানা সংকটের কথা উঠে এসেছে। ৪৮ শতাংশ উত্তরদাতা তহবিল সমস্যার কথা জানিয়েছেন। ১৯ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা সহজে ঋণ পান না। তারা অবকাঠামো, দক্ষ জনবল, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধিসহ আরও অনেক সমস্যার কথা জানিয়েছেন।
এসএমই ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, আইন মেনে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে কর কাঠামোকে প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ৫৭ শতাংশ এসএমই উদ্যোক্তা। আর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন পদ্ধতিকে বাধা মনে করেন ৫৪ শতাংশ। শতকরা ৪৪ ভাগ উদ্যোক্তা বলছেন, সরকারি আইনকানুনের জটিলতাও আইন মেনে ব্যবসা করায় অন্যতম বাধা।
সম্প্রতি এসএমই ফাউন্ডেশন এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের উদ্যোগে এক কর্মশালায় জানানো হয়, এসএমই উদ্যোক্তাদের মধ্যে গ্রামীণ ও অনানুষ্ঠানিক খাতের এবং নারী উদ্যোক্তাদের স্থাবর সম্পত্তি না থাকায় ব্যবসা শুরু বা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের ২০২০ সালের এক গবেষণা বলছে, শতকরা ৮০ ভাগ এসএমই উদ্যোক্তারই স্থাবর সম্পত্তি থাকে না। ফলে তারা ব্যাংক ঋণ থেকে বঞ্চিত হন। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতি, কৃষিপণ্যের মতো অস্থাবর সম্পত্তিকেও জামানত হিসেবে গ্রহণের সুযোগ রেখে সরকার ২০২৩ সালে একটি আইন প্রণয়ন করে। তবে এ আইন সম্পর্কে ব্যাংক কর্মকর্তাদের মধ্যে তেমন ধারণা না থাকায় ব্যাংক ঋণ পেতে অসুবিধায় পড়েন এসএমই উদ্যোক্তারা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এমএসএমই একটি শ্রমনিবিড় ও স্বল্প পুঁজিনির্ভর খাত। উৎপাদন সময়কাল স্বল্প হওয়ায় জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এমএসএমইর অবদান অনেক। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও সিএমএসএমই খাতের বিকাশ ও উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। অধিক জনসংখ্যা এবং সীমিত সম্পদের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এসএমই খাত অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে।