মালয়েশিয়া আগামী কয়েক মাসে এক থেকে দেড় লাখ বিদেশি শ্রমিক নিতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, লোক নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী স্টিভেন সিম চি কেওয়ং। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি লোক নেওয়া হবে।

মালয়েশিয়ায় আজ বৃহস্পতিবার দেশটির তিন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে বিকেলে তাঁর ফেসবুকে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় এসব কথা জানিয়েছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে সব রিক্রুটিং এজেন্সি যাতে কর্মী পাঠাতে পারে, সেই সুযোগ করে দিতে দেশটিকে অনুরোধ করা হয়েছে। তাঁরা এটি ভালোভাবে বিবেচনা করে দেখবেন এবং অচিরেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন।

মালয়েশিয়া শ্রমবাজার নিয়ে আলোচনা করতে ১৩ মে আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিনিধিদল দেশটি সফরে গেছে। আজ মালয়েশিয়ার তিনজন মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হয়েছে। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও মানবসম্পদমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। এতে কিছু অগ্রগতি হয়েছে বলে ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

মালয়েশিয়ার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত বন্ধু। গত বছর বাংলাদেশ সফরের সময় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ থেকে যেতে না পারা কর্মীদের দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ করে দেবেন। এটা নিয়ে পরে আরও আলোচনা হয়েছে দুই দেশের মধ্যে। দফায় দফায় কর্মীদের নেবে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়া। এসব তথ্য উল্লেখ করে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ভিডিও বার্তায় বলেন, প্রথম দফায় ৭ হাজার ৯২৬ জন কর্মীকে নেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে। প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাঁদের মালয়েশিয়ায় কাজের সুযোগ দেওয়া হবে।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বলেন, বৈঠকে মালয়েশিয়াকে বাংলাদেশ থেকে নিরাপত্তাকর্মী, নার্স, কেয়ারগিভারসহ দক্ষ কর্মী নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তাঁরা আশাবাদী। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় এটা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। যাঁরা মালয়েশিয়ায় আসতে চান, তাঁদের জন্য সত্যিকারের কল্যাণকর কিছু করাই সরকারের লক্ষ্য।

মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশি শ্রমিকেরা সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা পান। তাঁদের যেন অন্য দেশের শ্রমিকের মতো মাল্টিপল ভিসা দেওয়া হয়, সে অনুরোধ দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে করা হয়েছে। এটা নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়েছে। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁর সঙ্গে থাকা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

ভিডিও বার্তায় আরও জানানো হয়, বাংলাদেশি যেসব শ্রমিক অবৈধ হয়ে গেছেন, তাঁদের বৈধ করে দিতে বৈঠকে অনুরোধ করেছেন প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা। এর জবাবে তাঁরা বলেছেন, এটা মাঝেমধ্যে করা হয়; সর্বশেষ গত বছর করা হয়েছিল। তবে যাঁদের ভিসার মেয়াদ নেই, তাঁদের ক্ষেত্রে এটা করা যায় না। তাঁদেরও বিবেচনায় নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। অনেক সময় নিয়োগকর্তার কারণে শ্রমিকেরা ভিসা নবায়ন করতে পারেন না। তাঁরা এটা বিবেচনা করে দেখবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন উপদ ষ ট অন র ধ

এছাড়াও পড়ুন:

আরও এক লাখের বেশি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করবে স্কিলফো

দেশে বেকারত্ব সমস্যা সমাধানে ২০২৩ সালে ‘স্কুলবহির্ভূত কিশোর-কিশোরীদের জন্য দক্ষতাকেন্দ্রিক সাক্ষরতা’ বা স্কিলফো নামের একটি পাইলট প্রকল্প চালু করেছিল সরকার। ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের কর্মক্ষম করে তুলতে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। এর আওতায় এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৮০৫ জন প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এর মাধ্যমে আরও এক লাখের বেশি কিশোর-কিশোরীকে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ তথ্যগুলো তুলে ধরা হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউনিসেফের সহযোগিতায় প্রকল্পটি পরিচালনা করছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো। সহপরিচালনা করেছে গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন (জিপিই)।

প্রকল্পের আওতায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, বিউটি কেয়ার, দরজির কাজ, মোবাইল সার্ভিসিং, গৃহপরিচর্যা, অটোমেকানিকস, অ্যালুমিনিয়াম ফেব্রিকেশন, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ সার্ভিসসহ ১৩টি কারিগরি শিক্ষা বিষয়ে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গত দুই বছরে কক্সবাজারের নয়টি উপজেলায় প্রকল্পটি কার্যকর করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে, তাদের ৫৫ শতাংশই কিশোরী। তাদেরই একজন আসমা সামস (১৮)। সপ্তম শ্রেণির পর আর স্কুলে যেতে পারেননি। পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। ২০২৪ সালে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে আয়ের পথ খুঁজছিলেন আসমা। তখন স্কিলফোর বিষয়ে জানতে পারেন। ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে এখন নিজেই প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন।

প্রশিক্ষণ নিয়ে আসমার মতো অনেকেই এখন দক্ষ নাগরিক হয়ে উঠেছেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের প্রায় ৮৫ শতাংশই আয় করছেন।

স্কিলফোর কাজ এবং প্রাপ্তি নিয়ে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুবাইয়াত মোরশেদ। তিনি বলেন, সমাজ ও পরিবার যাদের বোঝা মনে করত, প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর খুব অল্প সময়েই তাদের অর্থনৈতিক এমনকি মানসিক অবস্থার পরিবর্তন করেছে। তারা আয় করতে পারছে। সবার কাছে যথাযথ সম্মান পাচ্ছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। তিনি বলেন, ‘বেকারত্ব কমাতে স্কিলফো প্রকল্পটি প্রশংসনীয় কাজ করছে। এটি কারিগরি শিক্ষার প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সাহায্য করবে। চলতি মাসে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হলেও দেশের ৬৪টি জেলায় নতুন করে সীমিত পরিসরে প্রশিক্ষণ চালু করা হবে। এর মাধ্যমে এক লাখের বেশি স্কুলবহির্ভূত কিশোর-কিশোরীকে প্রশিক্ষণের আওতায় এনে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।’

বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু মাধ্যমিকের পর পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। এই শিশুদের কর্মক্ষম করে তোলা অত্যন্ত জরুরি। স্কিলফো এটা প্রমাণ করে যে এই স্কুলবহির্ভূতদের সঠিক প্রশিক্ষণ, সহায়তা এবং সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন করা যেতে পারে। কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে শক্তিতে রূপান্তর করার এটাই সুযোগ।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব (কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ) কে এম কবিরুল ইসলাম। সমাপনী বক্তব্য দেন প্রাথমিক এবং গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সাখাওয়াত হোসাইন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আরও এক লাখের বেশি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করবে স্কিলফো