চট্টগ্রাম নগরের সার্কিট হাউস মাঠকে মুক্তাঙ্গন ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন করেছে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টায় নগরের কাজীর দেউড়িতে সার্কিট হাউস মাঠের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

এতে শিক্ষাবিদ, লেখক, নগর পরিকল্পনাবিদ, গবেষক, প্রকৌশলী ও পরিবেশকর্মীদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন। কর্মসূচিতে সবাই একটাই দাবি জানান, সার্কিট হাউস মাঠে কোনো ধরনের স্থাপনা করা যাবে না। এটি নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মুখ চত্বরের জায়গার মালিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ২৩ বছর আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এই জায়গা ইজারা নিয়েছিল সিটি করপোরেশন। ১৯৯২ সালে শিশুপার্ক স্থাপনের জন্য ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেস লিমিটেড নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ইজারার মেয়াদ শেষ হলে ২০২০ সালে মাসিক মাত্র দেড় লাখ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আবারও ১৫ বছরের চুক্তি করে সিটি করপোরেশন। সেখানে শিশুপার্ক ছিল। তবে ২০২৩ সালের অক্টোবরে পার্কটি উচ্ছেদ করা হয়।

মানববন্ধনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আজ অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি। আমরা বারবার বলছি যে আমরা একটি পরিকল্পিত চট্টগ্রাম নগরী চাই। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) যে মাস্টারপ্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) আছে, সেখানেও এটা একটা সবুজ মাঠ আছে। সম্পূর্ণভাবে সব আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে। আমাদের সবাইকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।’

সার্কিট হাউস মাঠে হাসপাতালের মতো স্থাপনা না করার আহ্বান জানিয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, এর আগে সিআরবিতেও হাসপাতাল করার চিন্তাভাবনা করেছিল। কিন্তু এখানে যাঁরা আছেন, সবাই এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। সিআরবিতে রেলওয়ের যে হাসপাতাল আছে, সেটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল করা হোক। সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সে উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে সর্বস্তরের চট্টগ্রামবাসী চিকিৎসা নিতে পারবেন। এখান থেকে (সার্কিট হাউস) রেলওয়ে হাসপাতাল মাত্র এক মিনিটের রাস্তা।

সার্কিট হাউসের পার্কটিকে সবুজ পার্ক করার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উপদেষ্টাকে চিঠি দিলেও এখন পর্যন্ত সাড়া পাননি বলে জানান মেয়র শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখন শুনছি, এখানে হাসপাতাল হবে। আমি তাদের অনুরোধ করছি, আমার কালুরঘাটে ৯ একর জায়গা আছে। ওই ৯ একর জায়গা নিয়ে ওখানে হাসপাতাল করুন, আমাকে এই জায়গা দিয়ে দেন, সবুজ পার্ক করব এখানে। আমি আপনাদের প্রস্তাব দিচ্ছি। এর থেকে ভালো প্রস্তাব হতে পারে না। আপনারা হাসপাতাল করলে সেখানে অবহেলিত মানুষ সেবা পাবেন। এখানে অনেক হাসপাতাল, কাছেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, আশপাশে এত প্রাইভেট হাসপাতাল, এখানে আর হাসপাতাল প্রয়োজন নেই। হাসপাতাল করতে হলে কালুরঘাট এলাকায় একটা বড় হাসপাতাল করেন। সেখানে আমার জায়গা আমি ছেড়ে দিব। বিনিময়ে এটা আমাদের দেন।’

চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম নিয়েও ষড়যন্ত্র হয়েছে জানিয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রামের মানুষ প্রতিবাদ করেছে। এখন মাঠ সিজেকেএসের থাকবে। চট্টগ্রামের সব খেলোয়াড় এখানেই খেলবেন। এ শহরকে আমাদের বাঁচাতে হবে। এই শহরকে যদি না বাঁচাই তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।’

মানববন্ধন কর্মসূচিতে কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্বের একটি ব্যতিক্রম নগর। এই নগরকে রক্ষা করতে না পারলে উত্তর প্রজন্ম তাদের দায়ী করবে। একে বলা হয় বাণিজ্যিক রাজধানী কিন্তু এখানে একটিও উদ্যান নেই, মাঠ নেই। শহরে একসময় পাঁচ থেকে ছয়টা মাঠ ছিল। অথচ এখন শিশু-কিশোররা খেলার মাঠ পায় না। এই মাঠটি সবাই মিলে রক্ষা করব। এর পেছনে যে পুরোনো সার্কিট হাউস, সেটি একটি ব্রিটিশ স্থাপনা। এখানে এ রকম আর একটিও স্থাপনা নেই। সেটি এখন জাদুঘর আর সামনের মাঠটি এর ল্যান্ডস্কেপ হিসেবে আছে। এখানে কোনো স্থাপনা হতেই পারে না।’

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক স্থপতি জেরিনা হোসেন বলেন, ‘একটাই কথা। এই উদ্যানকে জনগণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে। এখানে কোনো স্থাপনা হবে না। উদ্যান কোনো বিলাসিতা নয়। নগরজীবনে নগরবাসী, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের স্বস্তিতে থাকার জন্য এবং তাঁদের জীবন আনন্দময় হওয়ার জন্য নগরে উদ্যান থাকতে হবে।’

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খানের সভাপতিত্বে মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন শিক্ষাবিদ শফিক হায়দার, মনজুরুল কিবরীয়া প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ স ন বল ন র জন য আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

না’গঞ্জে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মানববন্ধন, হুশিয়ারী

বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে নারায়ণগঞ্জে  মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থী,  শিক্ষক ও অভিভাবকরা। সমাবেশ শেষে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়।

বুধবার (৩০ জুলাই) সকাল ১১টায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সিদ্ধিরগঞ্জ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এই কর্মসুচিতে সিদ্ধিরগঞ্জের দেড় শতাধিক কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি  বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অংশ নেয়। শিক্ষার্থীদের হাতে " প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ এ বৈষম্য কেন? শিক্ষা উপদেষ্টা জবাব চাই" সহ বিভিন্ন স্লোগান সম্বলিত প্লেকার্ড শোভা পায়।

সিদ্ধিরগঞ্জ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা বিল্লাল হোসেন রবিন, ঢাকা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের সভাপতি জি এইচ ফারুক, বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন পরিচালক ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো: সামসুজ্জামান, প্রধান সমন্বয়ক মো: সাইফুল ইসলাম রুবেল, মহাসচিব মো: সাখাওয়াত হোসেন খান, সিদ্ধিরগঞ্জ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ হোসেন ঢালী, শিক্ষক কাওসার আহমেদ, এসএম বিজয়, আল মামুন , তরিকুল ইসলাম, বাহাউদ্দিন সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, গত ১৭ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জারি করা প্রজ্ঞাপনে শুধুমাত্র সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। এতে দীর্ঘদিন ধরে এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বেসরকারি, কিন্ডারগার্টেন ও এমপিও-বহির্ভূত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত ও হতাশ হয়েছে।

বক্তারা আরও বলেন, “আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ। অথচ কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত কোমলমতি শিশুদের বৃত্তি পরীক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে তাদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে।”

তারা বলেন, দেশের প্রায় ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেনে প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে, যাদের একটি বড় অংশ দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের আশায় এগিয়ে এসেছে। এখন এই সিদ্ধান্ত তাদের স্বপ্ন ও শ্রমের প্রতি অবিচার।

বক্তারা অভিযোগ করেন, সরকার বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ার অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে এই প্রজ্ঞাপন সেই প্রতিশ্রুতির পরিপন্থী। তারা প্রশ্ন তোলেন, “ই আই আই এন নম্বরধারী নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যদি এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়, তবে কেন নিবন্ধিত কিন্ডারগার্টেন শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না?”

বক্তারা আরও বলেন ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন, প্রতিবাদ ও স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে এই বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
সমাবেশ থেকে অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন বাতিল করে সরকারি ও বেসরকারি সব প্রাথমিক শিক্ষার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। অন্যথায় কঠোর আন্দোলন গড়ে তোরা হবে।

মানববন্ধন ও সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, ১নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি নেজাম উদ্দিন শাহীন, ২নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি জাকির উল্লাহ সুজুন, ৩নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি মো: আজহারুল ইসলাম, ৫নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি মো: শামীম, ৬নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি মো: জাবের হোসেন, ৮নং ওয়ার্ড  প্রতিনিধি মো: আল আমিন, ১০ নং ওয়ার্ড প্রতিনিধি এড: মো: খোরশেদ আলম প্রমুখ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বন্দর নির্বাচনী আসনকে দুই ভাগে বিভক্তি করার প্রতিবাদে মানববন্ধন 
  • অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক
  • জকসুর পথরেখা ও সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের আলটিমেটাম
  • জকসুর রোডম্যাপ ও সম্পূরক বৃত্তি দাবি শিক্ষার্থীদের
  • সোনারগাঁয়ে মাদ্রাসায় কমিটি গঠনের বিরুদ্ধে মানববন্ধন
  • রূপগঞ্জে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
  • ফতুল্লায় জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন
  • না’গঞ্জে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মানববন্ধন : হুশিয়ারী
  • না’গঞ্জে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মানববন্ধন, হুশিয়ারী
  • মশা নিধনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে