সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ: সন্তানকে লুকিয়ে রেখে চাচাদের নাম মামলা
Published: 4th, June 2025 GMT
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় চাচাদের কাছে ইউরোপে যাওয়ার টাকা চেয়ে না পাওয়ায় নিজ সন্তানকে লুকিয়ে রেখে দুই চাচা ও এক চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করার অভিযোগ উঠেছে চাচাতো বোন সাহানা জাহান পলি ও তার স্বামী দেলোয়ার মাহমুদ জুয়েল বক্সের বিরুদ্ধে।
ছাতক উপজেলার জাউয়া বাজারের পলি ও তার স্বামী দেলোয়ার মাহমুদ জুয়েল বক্সের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করছেন চাচাতো ভাই ইকবাল হোসেন।
সাহানা জাহান পলির দুই চাচা হলেন, নুরুল ইসলাম, তিনি জাউয়াবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। অপরজন হলেন, মো.
আরো পড়ুন:
টেকনাফের পাহাড়ি সড়ক থেকে ৫ জনকে অপহরণ
অপহরণের শিকার সেই পল্লী চিকিৎসক উদ্ধার
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০০৬ সালে ছাতক পৌর শহরের বাগবাড়ি মহল্লার মৃত মাহমুদ আলী বক্স এর ছেলে উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি দেলোয়ার মাহমুদ জুয়েল বক্সকে পরিবারের অমতে গিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন সাহানা জাহান পলি। সে ছাতক পৌরসভার নোয়ারাই ইসলামপুর এলাকার মৃত শাহজাহান মিয়ার কন্যা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দুটি ছেলে ও একটি কন্যা সন্তান নিয়ে তারা সিলেট শহরের এয়ারপোর্ট থানাধীন খাসদবির বন্ধন বি-৫ এর ভাড়াটিয়া বাসায় বসবাস করে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরে যৌতুকের দাবিতে স্বামী তাকে শারীরিক মানসিক নির্যাতন করে আসছিল। স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে পলি বাড়িতে এসে আশ্রয় নেয়। পরে পলি স্বামীর বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জ আদালতে নারীও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় স্বামী জুয়েল ২২ দিন জেল খাটেন। গত ২৬ নভেম্বর ২০২৪ সালে সুনামগঞ্জ আদালতে উপস্থিত হয়ে স্বামীকে তালাকের নোটিশও দেন স্ত্রী।
ইকবাল হোসেন বলেন, জুয়েল কারাভোগের পর প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠে। নতুন এক ফন্দি আঁটেন তিনি। তার স্কুল পড়ুয়া ছেলে তাহসিন বক্সকে লুকিয়ে সিলেটের এয়ারপোর্ট থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন।এবং পুলিশের সহযোগিতা পেতে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি অব্যহত রাখেন। কিন্তু পুলিশ তার এই নাটকীয়তা বুঝতে পেরে মামলা নেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ নিয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে ছাতক প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে স্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে পলি জানায় ১৩ বছরের ছেলেকে লুকিয়ে তার চাচাসহ স্বজনদের অপহরণ মামলা করে ফাঁসাতে মরিয়া হয়ে উঠছেন। নারী নির্যাতন মামলা তুলে নিতেই মুলত এ নাটকের অবতারণা করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।পরে পলি ছেলে উদ্ধারে ১০০ ধারায় একটি পিটিশন করেন আদালতে। পিটিশন দায়েরের পরই তার স্বামী গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তির প্রস্তাব দেন। পরে দু'পক্ষ বসে ঘটনার মিমাংসা হয়। এবং পলি ছেলেকেও ফিরে পেয়ে মামলা প্রত্যাহার করে নেন। স্বামী স্ত্রী একসাথে সংসার করা শুরু করেন।
ইকবাল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্বামী, স্ত্রী মিল হওয়ার পর আমার চাচা সৈয়দুল ইসলামের কাছে আসে পলি। চাচাকে পরিবারসহ ইউরোপে যাওয়ার কথা বলে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে। স্বামীর কথায় পলি এসে এসব বলছেন এমনটি ভেবে চাচা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। টাকা না দেয়ায় স্বামী, স্ত্রী মিলে আবারও সাজায় ছেলে তাহসিনকে দিয়ে অপহরণের নাটক। পরে পলি বাদি হয়ে সিলেটের আদালতে অপহরণ মামলা দায়ের করে চাচা সৈয়দুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। মামলাটি বর্তমানে সিলেট সিআইডিতে তদন্তাধীন আছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “মিথ্যা অপহরণ মামলা করে আমার চাচাসহ আত্নীয় স্বজনকে হয়রানি করছে চাচাতো বোন। তাদেরকে টাকা না দেয়ায় এ মামলা করা হয়েছে। এ মামলার নাটের গুরু তার স্বামী। আমরা চাই ঘটনার তদন্ত করে আসল রহস্য খুঁজে বের করা হোক। এবং আমার চাচাসহ যাদের বিরুদ্ধে এ অপহরণ মামলা সাজানো হয়েছে তাদেরকে ন্যায় বিচারের স্বার্থে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাউয়াবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও তার ভাই মো. সৈয়দুল ইসলাম। তাদের দাবি স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
এ ব্যাপারে সাহানা জাহান পলির স্বামী দেলোয়ার মাহমুদ জুয়েল বক্স বলেন, “এসব মিথ্যা অভিযোগ, তারা আমার সন্তানকে অপহরণ করেছে এটা সত্য, আমরা মামলাও করেছি এটাও সত্য। এবং গত ২৮ অক্টোবর আমার স্ত্রীকেও তাদের বাড়িতে আটকে রাখে। পরর্বতীতে আমার স্ত্রীকে ভুল বুজিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা করে এবং আমাকে কারাভোগ করতে হয়। পরে আমার স্ত্রী আদালতে আমার ঘর করবে বলে জানিয়ে আবার সে আমার সাথে সংসার করে।”
তিনি আরও বলেন, “তারা আমার সন্তানকে অপহরণ করেছিল, অপহরণের ৪ মাস পর বিশ্বম্ভর পুর উপজেলার ধনপুর থেকে পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার করা হয়। আমি এ ব্যাপারে আদালতে মামলা করেছি। মামলা সিআইডি তদন্তে করছে। চাচার কাছে বিদেশে যাওয়ার জন্য টাকার চাওয়ার ব্যাপারে বলেন, এসব মিথ্যে, তাদের এতো টাকা কোথায় পাবে, বরং তারা ( সৈয়দুল ইসলাম) আমার কাছে ৫লাখ টাকা চেয়েছিল।”
ঢাকা/মনোয়ার/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অপহরণ অপর ধ ইকব ল হ স ন অপহরণ র জ হ ন পল আম র স উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে ব্যবসায়ীকে অপহরণ, পটুয়াখালী থেকে হাত–পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার
হাত–পায়ের সঙ্গে চোখ–মুখও রশি আর কাপড়ে বাঁধা। গায়ের শার্ট ভিজেছিল রক্তে। এমন অবস্থায় প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে এক ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার দুপুরে পটুয়াখালী সদর উপজেলার পায়রাকুঞ্জ ফেরিঘাট এলাকা থেকে তাঁকে উদ্ধার করা হয়।
ওই ব্যক্তির নাম সোহাগ (৪২)। তিনি নারায়ণগঞ্জ সদরের নিউ চাষাঢ়ার জামতলা এলাকার বাসিন্দা। নিজেকে একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গতকাল সকালে ফেরিঘাট এলাকায় সেতুর প্রকল্পসংলগ্ন স্থানে দুটি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাঁদের সন্দেহ হয়। প্রথমে ভেবেছিলেন গাড়িগুলো সেতুর কাজের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু একপর্যায়ে একটি প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে হাতের ইশারায় তাঁদের ডাকেন এক ব্যক্তি। এ সময় গাড়ির ভেতর থেকে অনবরত হর্ন বাজানো হচ্ছিল। কাছে গিয়ে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি হাত–পা, চোখ ও মুখ বাঁধা অবস্থায় কাতরাচ্ছেন এবং তাঁর শরীর রক্তে ভেজা। তখন তাঁরা পুলিশে খবর দেন। এরপর তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসারত অবস্থায় সোহাগ জানান, গত রোববার রাতে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে নারায়ণগঞ্জের সরকারি তোলারাম কলেজের সামনে থেকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাঁর গাড়িতে উঠে পড়ে। এরপর তাঁর হাত–পা ও চোখ–মুখ বেঁধে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার অলিগলি ঘোরায়। এ সময় তাঁকে মারধর করা হয়। গতকাল ভোরে তারা তাঁকে পটুয়াখালী–মির্জাগঞ্জ রুটে পায়রাকুঞ্জ ফেরিঘাটে ফেলে যায়।
পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সোহাগের পরিবারের কাছে খবর পাঠালে তাঁর স্ত্রী হেলিকপ্টারে পটুয়াখালীতে আসেন। এরপর একটি জিডি করে তিনি স্বামীকে নিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। এরপর আমাদের কাছে আর কোনো তথ্য নেই। ভুক্তভোগী আমাদের কাছে অপহরণের বিষয়ে মুখ খোলেননি। তাঁর দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন ছিল। এ জন্য আমাদের পক্ষ থেকে তেমন কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।’
এদিকে নারায়ণগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির আহম্মেদ জানান, সোহাগ তাঁর থানা এলাকায় ব্যবসা করেন। কিন্তু ফতুল্লা থানার সরকারি তোলারাম কলেজের সামনে থেকে তিনি অপহরণ হন। তাই আইনগত সহায়তার বিষয়টি ফতুল্লা থানা–পুলিশ দেখবে। তদন্তের স্বার্থে আপাতত বিস্তারিত প্রকাশ করতে রাজি হননি তিনি।