মিঠাপুকুর উপজেলার তেকানী গ্রাম। সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের জায়গীর বাসস্ট্যান্ড থেকে পশ্চিমে রানীপুকুর-এরশাদ মোড় সড়ক ধরে গেলেই গ্রামটির অবস্থান। এখানকার প্রয়াত নফেল উদ্দিনের হাত ধরে প্রায় ২০ বছর আগে হাঁড়িভাঙা আম বাজারে আসে। পরে সুস্বাদু ফলটির আবাদ ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। এরপর সুনাম ছড়িয়েছে সারাদেশে।
আজ রোববার থেকে বাজারে আসছে সারাদেশে মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা ‘হাঁড়িভাঙা’ আম। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। এবার উপজেলায় ২৬ হাজার টন আম অন্তত ১৫০ কোটি টাকায় বিক্রি হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের। ভারত, জার্মানি ও মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হবে ২০ থেকে ৩০ টন। গত বছর ১ হাজার ২০৮ হেক্টরে উৎপাদন হয় ২৫ হাজার টন। বিক্রি হয়েছিল ১৩৫ কোটি টাকায়। তিন দেশে গতবারও রপ্তানি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে পাইকাররা বাগান থেকে আম সংগ্রহ শুরু করেছেন। এবার অতিরিক্ত তাপের কারণে আম আগেই পাকতে শুরু করেছে। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই বাজারে আসছে ফলটি। উপজেলার পশ্চিমে এঁটেলমাটিযুক্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় হাঁড়িভাঙার বাগান রয়েছে। এখানে প্রচুর ফলন হয়। স্বাদে অনন্য এ আমের কদর রয়েছে দেশজুড়ে। স্বাদে-মানে অনন্য এ আম ইতোমধ্যে ‘জিআই’ স্বীকৃতি পেয়েছে।
চেংমারী গ্রামে একটি বাগান কিনেছেন ব্যবসায়ী তাইফুর রহমান। এক একরের বাগানটি ২ লাখ টাকায় কিনেছেন তিনি। ৩ লাখ টাকার আম বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা এ ব্যবসায়ীর। ফুলচৌকি গ্রামের মাসুদ চৌধুরীর ১০ একর (চার হেক্টর) জমিতে বাগান রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এবার ফলন ভালো হয়েছে, চাহিদাও অনেক।’ সাজেদুল কবীর নামে আরেক জনের পাঁচ একরের বাগান রয়েছে। তিনিও ভালো দামে আম বিক্রির আশা করছেন।
শনিবার উপজেলার খোড়াগাছ, ময়েনপুর, চেংমারী ও বালুয়া মাসিমপুরে সরেজমিন দেখা যায়, বাগানে বাগানে আম পাড়ার (সংগ্রহ) ধুম পড়েছে। মালিক, ব্যবসায়ী, পাইকার, মৌসুমি বিক্রেতা, পরিবহন ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ জুনের মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাঁড়িভাঙা বাজারজাত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এবার নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা হয়নি। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে ১৫ জুন থেকে বাজারজাতের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আবেদীন।
কৃষি বিভাগ থেকে জানা গেছে, উপজেলায় ১ হাজার ২৬৮ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙার বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। বাড়ির পাশে পতিত জমি, রাস্তার পাশেও গাছ রয়েছে। শুরুতে প্রতি কেজি আম ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। হাঁড়িভাঙার অন্যতম উৎপাদন এলাকা খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জ বাজারে সবচেয়ে বড় হাঁড়িভাঙার হাট বসে। 
এ হাটে আমের আকার ও মানভেদে প্রতি মণ আম দেড় থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ী মণ্ডল মিয়া, শাকিল আহমেদ ও মোকছেদুল ইসলাম জানান, তারা পদাগঞ্জ ও আশপাশের এলাকা থেকে আম কেনেন। কুরিয়ারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। কখনও লাভ বেশি হয়, কখনও কম।
খোড়াগাছ এলাকার বাগান মালিক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এবার বেশি গরম থাকায় আগেই আম পাকতে শুরু করেছে। এ কারণে পেড়ে বিক্রি করা হচ্ছে।’ আখিরাহাট এলাকার বাসিন্দা ও দয়ারদান আম্রকাননের মালিক আব্দুস সালাম সরকারের ১০ একর জমিতে বাগান রয়েছে। পাশাপাশি লটকনসহ অন্য প্রজাতির আমের গাছও রয়েছে। এবার হাঁড়িভাঙা আমের ফলন ভালো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, খরায় একটু ক্ষতি হয়েছে। দাম ভালো থাকায় পুষিয়ে নেওয়া যাবে।
শেষ সময়ে যথেষ্ট বৃষ্টি হওয়ায় হাঁড়িভাঙা আমের আকার বড় হয়েছে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আবেদীন। তিনি বলেন, কৃষক ও বাগান মালিকদের আম সংরক্ষণ ও বিক্রির ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও ভারত, জার্মানি ও মালয়েশিয়ায় কিছু আম রপ্তানি হবে। এখনও অর্ডার মেলেনি, কয়েকদিন পর পাওয়া যেতে পারে। ২৫ থেকে ৩০ টন আম রপ্তানি হবে।
ভারপ্রাপ্ত ইউএনও ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুলতামিস বিল্লাহ বলেন, মিঠাপুকুরে উৎপাদিত হাঁড়িভাঙা আম স্বাদে, গুনে-মানে অনন্য। সারাদেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ আমের সুখ্যাতি বিদেশেও। জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। হাঁড়িভাঙা আমের বাজারজাতে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, এ জন্য তদারকি অব্যাহত আছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

যমুনা সেতুর যানজট এড়াতে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে যানবাহনের চাপ

ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতি পথে যমুনা সেতু-সংলগ্ন মহাসড়কে তীব্র যানজট। তাই অনেকে পাবনার কাজীরহাট ফেরিঘাট দিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন। কাজীরহাট-আরিচা ফেরিঘাটে ভোগান্তি ছাড়াই যানবাহন পারাপার হচ্ছে। আগের ৪টি ফেরির সঙ্গে আরও ২টি যুক্ত হওয়ায় এই নৌপথে মোট ৬টি ফেরি চলাচল করছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) ও বাস কাউন্টারগুলোর সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে যমুনা সেতু-সংলগ্ন সড়কে যানজট শুরু হয়। শুক্র ও গতকাল শনিবার যানজট তীব্রতর হয়। এর মধ্যে শনিবারের যানজটে পাবনা-ঢাকা পথে যাতায়াতকারী অনেক বাস আটকে পড়ে। এতে পাবনা, বেড়াসহ বিভিন্ন বাস কাউন্টারে ঢাকাগামী বাসের সংকট দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকাগামী বাস ও ব্যক্তিগত ছোট গাড়িগুলো যমুনা সেতুর যানজট এড়াতে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথের ফেরি পারাপার বেছে নেয়। এতে আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত কাজীরহাট ফেরিঘাটে ঢাকাগামী বিভিন্ন যানবাহনের চাপ আছে।

বিআইডব্লিউটিসির কাজীরহাট ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘আগে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে ৪টি ফেরি চলাচল করত। ঈদ উপলক্ষে এখন আরও ২টি ফেরি বাড়িয়ে মোট ৬টি ফেরি করা হয়েছে। এগুলো হলো ২টি রো রো ফেরি শাহ আলী ও বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান এবং ৪টি সেমি রো রো ফেরি বাইগার, গৌরী, চিত্রা ও ধানসিঁড়ি। এই ৬টি ফেরি দিয়ে নির্বিঘ্নে যানবাহনের চাপ সামলানো যাচ্ছে। বাসসহ যানবাহনগুলোকে ফেরিঘাটে বেশি দেরি করতে হচ্ছে না।’

কাজীরহাট ফেরিঘাট হয়ে ঢাকামুখী আলহামরা পরিবহনের যাত্রী আবু হানিফ বলেন, ফেরিতে ওঠানামা মিলিয়ে আড়াই ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে। আর আরিচা থেকে ঢাকা পর্যন্ত তেমন যানজট ছিল না। খুব ভালোভাবে ঢাকা পৌঁছাতে পেরেছেন। অথচ আরও দুই ঘণ্টা আগে রওনা দিয়েও তাঁর পরিচিত একটি পরিবারকে যমুনা সেতু-সংলগ্ন সড়কে ৫-৬ ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়।

বিআইডব্লিউটিসির কাজীরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি চাপ ছিল শনিবার। আমাদের বেশ বেগ পোহাতে হলেও যানবাহনগুলো ভালোভাবে পার করে দিয়েছি। শনিবার আমাদের এই ঘাট হয়ে ফেরিতে ১০১টি বাস, ৪০১টি ছোট গাড়ি ও ৮০টি ট্রাক পার হয়েছে। আর আজ রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৫টি বাস, ১৬টি ট্রাক, ৪২টি ছোট গাড়ি ও ২০০টি মোটরসাইকেল পার হয়েছে।’

বেড়া ও ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী আলহামরা পরিবহনের বেড়া শাখার ব্যবস্থাপক বরকত আলী বলেন, ‘যমুনা সেতুর যানজটে আমাদের কয়েকটি বাস এখনো আটকে আছে। এতে নির্ধারিত সময়ে শুধু আমাদের বাসই নয়, অন্য কোম্পানির বাসগুলোও ঢাকার উদ্দেশে ছাড়তে পারছে না। আর কোনো বাস ঢাকা থেকে বেড়া এসে পৌঁছানোর পর সেই বাস এখন থেকে আমরা কাজীরহাট ফেরিঘাট হয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। বতর্মান অবস্থায় এই পথে যাতায়াতে যাত্রীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ