গতকাল হরিয়ানার সোনিপতের খারখোদা এলাকার একটি খাল থেকে মডেল সিম্মি চৌধুরী শীতলের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় শীতলের প্রেমিক সুনীলকে আটকের পর হত্যার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। খবর এনডিটিভির।
পুলিশের বরাত দিয়ে এ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ১৪ জুন একটি মিউজিক ভিডিওর শুটিংয়ে অংশ নিতে পানিপাতের আহার গ্রামে যান শীতল। রাত সাড়ে ১০টায় সেখানে পৌঁছান সুনীল। নিজের গাড়িতে করে শীতলকে নিয়ে যান সুনীল। কিছু পানীয় পান করার পর তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। রাত দেড়টায় শীতল তার বোন নেহাকে ভিডিও কলে জানান, সুনীল তাকে মারধর করছে। এরপর লাইন কেটে যায়; পরে নেহা তার বোনের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি। তারপর সুনীল শীতলকে হত্যা করে গাড়িসহ তার মরদেহ খালে ফেলে দেন।
১৫ জুন হরিয়ানা পুলিশ সোনিপাতের একটি খাল থেকে সুনীলের গাড়ি উদ্ধার করে। তবে গাড়ির ভেতরে শীতল ছিলেন না। এদিকে সুনীল হাসপাতালে পৌঁছে দাবি করেন, গাড়িটি খালে পড়ে গিয়েছিল। কোনোমতে সাঁতরে প্রাণ বাঁচলেও শীতল ডুবে যান। এরপর হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তখনো শীতলের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আরো পড়ুন:
খালে পড়েছিল মডেলের গলা কাটা লাশ
সার্ভারে কারিগরি ত্রুটি, সোনামসজিদ স্থলবন্দরে আসেনি আমদানি পণ্য
১৬ জুন পানিপাত জেলার খারখন্দর রিলায়েন্স খাল থেকে গলা কাটা অবস্থায় এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। হাতে ও বুকে উল্কিচিত্র দেখে তার পরিচয় শনাক্ত করা হয়। মরদেহে একাধিক ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পরে সুনীলকে আটক করা হলে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
এর আগে শীতলের বোন নেহা বলেন, “সুনীলের সঙ্গে যাওয়ার জন্য শীতলকে চাপ দিচ্ছিল। এরপর তার ফোন কেটে যায়। তারপর আর শীতলের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।”
১৫ জুন, সুনীলের গাড়ি দিল্লির একটি খালে পড়ে যায়। এ তথ্য স্মরণ করে নেহা বলেন, “আমাদের সন্দেহ, সুনীল আমার বোনকে হত্যা করেছে এবং সে একটি মিথ্যা গল্প তৈরি করছে।”
মডেলিং শুরু করার আগে শীতল একটি হোটেলে কাজ করতেন। মূলত, হোটেলটির মালিক সুনীল। সেখান থেকে তাদের পরিচয় ও প্রেম। শীতল ও সুনীলের প্রায় ছয় বছর প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
শীতলকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন সুনীল। কিন্তু সুনীল বিবাহিত, দুই সন্তানের বাবা হওয়ার তথ্য জানার পর শীতল তা প্রত্যাখ্যান করেন। শীতল নিজেও বিবাহিত, তারও পাঁচ মাস বয়সি একটি সন্তান রয়েছে।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সচিবালয়ে কর্মচারীদের বিক্ষোভ, চলবে মঙ্গলবারও
ঈদের ছুটির পর সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাতিলের দাবিতে আবারও আন্দোলন শুরু করেছেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
সোমবার (১৬ জুন) সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। দাবি আদায়ে একজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি শেষে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সচিবালয়ে বিক্ষোভ কর্মসুচী ঘোষণা করেছেন তারা।
এদিকে, আন্দোলন কর্মসূচি থেকে বিরত থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন এ সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
আরো পড়ুন:
গুম বিষয়ে আইন প্রণয়ন ও কমিশন গঠন করবে সরকার: আইন উপদেষ্টা
সচিবালয় ও যমুনার পার্শ্ববর্তী এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ
অন্যদিকে নেতারা অভিযোগ করেছেন, আধ্যাদেশ বাতিল না করে সরকার তাদের সঙ্গে সাপ লুডু খেলা খেলছে। দাবি মানা না হলে আন্দোলন কর্মসূচি আরো কঠোর হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবে।
ঈদের ছুটির পর সোমবার (১৬ জুন) বেলা ১১টার পর সচিবালয়ের ছয় নম্বর ভবনের সামনে বাদাম তলায় কর্মচারীরা জড়ো হন। সেখান থেকে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।
মিছিলে নেতৃত্ব দেন ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. বাদিউল কবির ও মো. নুরুল ইসলাম।
তারা এ সময় ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, সচিবালয় জেগেছে’, ‘মানি না মানব না’, ‘ফ্যাসিবাদী কালো আইন’, ‘মানি না মানব না, অবৈধ কালো আইন’, ‘ফ্যাসিবাদের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগান ধরেন।
এরপর তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন ভবনের নিচে এসে সমাবেশ করেন।
ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম বলেন, “সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ বাতিলের দাবিতে আমরা মাঠে ময়দানে ঘুরতেছি। অনেক ক্যাডার সার্ভিস থেকে অনেকেই আন্দোলনে নেমে গেছে। আমরা একটা জিনিস বুঝে গেছি সরকার আমাদের সঙ্গে সাপ-লুডু খেলা খেলছে। আমরা চাইলাম মহার্ঘ ভাতা, পদ-পদবি পরিবর্তন, সচিবালয় ভাতা। সেটা ঠেকানোর জন্য সরকার করল অভিন্ন নিয়োগবিধি। তারপর এটা নিয়ে সচিবালয়ে বিশাল হুলুস্থুল শুরু হলে সেটা আমরা থামিয়ে দিলাম।”
তিনি বলেন, “যদি আমাদের কথায় কান না দেন তাহলে আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে সম্মেলন ডাকতে বাধ্য হব। প্রজ্ঞাপনে বলা আছে, অধ্যাদেশ জারির আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। এ পর্যন্ত আমরা কেউ কোনো আলোচনার প্রস্তাব পাইনি। তাহলে প্রজ্ঞাপন জারির মধ্যেও লুকোচুরি আছে। আজ আমরা রোদে পুড়ে আন্দোলন করছি, আপনারা এসিতে বসে আছেন। আমার এক বন্ধু বলেছে উপদেষ্টার দপ্তর, সচিবের দপ্তর, প্রশাসনের শাখায় খবর নেবেন তারা আমাদের মিটিংয়ে আসে কিনা। যদি না আসে আমরা তাদের আসতে বাধ্য করব। আমরা ধরে নেবে তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের আইন প্রণেতাদের সহযোগী।”
নুরুল ইসলাম বলেন, “আমরা এগুলো দেখতে, শুনতে ও বুঝতে চাই না। আমরা শুধু দেখতে চাই এই অধ্যাদেশ বাতিল হয়েছে। আমরা সংশোধন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন বুঝি না। আমরা শুধু বুঝি এই অধ্যাদেশ বাতিল করতে হবে। আমাদের পিছু হঠার কোনো সুযোগ নেই।”
তিনি বলেন, “মঙ্গলবার সচিবালয়ের বাদাম তলায় বেলা ১১টায় জমায়েত হব। প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে আসবেন। যদি না আসেন তাহলে ধরে নেব তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর। এরপর যদি আমরা আলোচনার আমন্ত্রণ না পাই, তাহলে আমাদের দাবির সঙ্গে নতুন নতুন দাবি যুক্ত হবে।”
নুরুল ইসলাম বলেন, “এই অধ্যাদেশ বাতিল করলে আমরা নীরবে ঘরে ফিরে যাব। যদি আমাদের আগুনে জ্বালিয়ে আপনারা খেলা করতে চান, তাহলে আমরা এমন খেলা খেলব আপনারা ঘরে ঢুকতে পারবেন না। আপনারা সে কাজ করতে বাধ্য করবেন না।”
এ সময় ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. বাদিউল কবির, কো-মহাসচিব নজরুল ইসলাম, নিজাম উদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্য নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এরপর নেতারা আধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে দুপুর পৌঁনে ১টার দিকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানকে স্মারকলিপি দেন।
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের খসড়া বাতিলের দাবিতে গত ২৪ মে আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা।
আন্দোলন চলাকালে গত ৪ জুন ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ পর্যালোচনা করে সুপারিশ দিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটি সোমবার বিকেলে প্রথম বৈঠকে বসছে। কমিটির সুপারিশ দেওয়া পর্যন্ত কর্মচারীদের আন্দোলন কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা।
এর আগে কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে রাতে এই অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধুমাত্র কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে।
অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সর্বশেষ ঈদের ছুটির আগে তিন জুন পর্যন্ত সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেন কর্মচারীরা। চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সরকারের সাতজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপিও দিয়েছেন তারা। ১৫ জুনের মধ্যে চাকরি অধ্যাদেশ বাতিল না করলে ১৬ জুন থেকে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার হুমকিও দিয়েছিলেন কর্মচারী নেতারা।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ