ইরানের সঙ্গে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নিজের ছেলের বিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য পিছিয়ে দিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এ ছাড়া যুদ্ধের কারণে নিজের পরিবারের ত্যাগের কথা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইসরায়েলি জনগণের কটাক্ষের শিকারও হচ্ছেন তিনি।
ছেলে আবনারের বিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য পিছিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন নেতানিয়াহু নিজেই। বলেন, এই যুদ্ধের জন্য তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে ‘ব্যক্তিগত মাশুল’ চোকাতে হচ্ছে। তাঁর পরিবার অন্য সবার মতো ত্যাগের পথে চলছে এখন।
দুঃখ প্রকাশ করে আরও বলেন, বিয়ে পিছিয়ে যাওয়ায় ছেলে আবনার ও তার প্রেমিকা এবং স্ত্রী সারা খুবই কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু দেশের এই পরিস্থিতিতে তাঁকে এবং তাদের পরিবারকে এই ‘ব্যক্তিগত ক্ষতি’ মেনে নিতেই হচ্ছে। ‘যুদ্ধের ব্যক্তিগত মূল্য’ চোকানোর সপক্ষে নেতানিয়াহু জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেনের মতো পরিস্থিতি এখন ইসরায়েলে।
আবনারের প্রথমবার বিয়ে ঠিক হয়েছিল গত নভেম্বরে। কিন্তু সেই সময় হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলা হয় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত বাসভবনে। যদিও নেতানিয়াহু সেই সময় বাড়িতে ছিলেন না। সেই বিয়ে ঠিক করা নিয়েও ইসরায়েলিদের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। কারণ, তখনও গাজায় হিজবুল্লাহর হাতে বন্দি ছিলেন অনেক ইসরায়েলি।
বিয়ের তারিখ নতুন করে ঠিক হয়েছিল গত সোমবার, ১৬ জুন। কিন্তু ইরানের ওপর হামলা চালানো এবং তেহরানের পাল্টা হামলার পরিস্থিতিতে সেই তারিখও আপাতত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান নেতানিয়াহু।
সোরোকা হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেকেই ভারী মাশুল গুনছি। সেখানে আমার পরিবারও ব্যতিক্রম নয়। নিজের স্ত্রী সারাকে এই পারিবারিক ক্ষতি সামাল দেওয়ার কারণে ‘হিরো’ বলে সম্বোধন করেন নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহুর এই যুদ্ধ-ব্যাখ্যাকে ভালোভাবে নেননি ইসরায়েলিরা। অনেকে বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেনের সঙ্গে ইসরায়েলের তুলনা উচিত হয়নি। আর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর ভাবনায় দেশের তুলনায় ব্যক্তিগত ক্ষতির চিন্তা বেশি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে স্ত্রী সারাকে হিরো বলায় আরও বেশি নিন্দিত হয়েছেন নেতানিয়াহু। একজন প্রধানমন্ত্রীকে ‘সীমাহীন আত্মমুগ্ধ’ চরিত্র বলে উল্লেখ করেছেন অনেকে। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল পর স থ ত র পর ব র ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
১০-২০ কোটি টাকা ছাড়া ভোট করা যায় না, তাই আমাদের ভাবতে হয়: আসিফ মাহমুদ
আগামী নির্বাচনেও কালোটাকার দৌরাত্ম্য থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি বলেছেন, তাই নির্বাচনে নামার আগে তাঁর মতো অন্যদেরও ভাবতে হচ্ছে।
আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক গোলটেবিল আলোচনায় এ কথা বলেন আসিফ মাহমুদ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত এই বৈঠকের শিরোনাম ছিল ‘নভেম্বর থেকে জুলাই বিপ্লব থেকে বিপ্লবে’।
বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় ১০-২০ কোটি টাকা না থাকলে সংসদ নির্বাচন করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এই বাস্তবতায় আসলে যাদের কালোটাকা আছে, তাদেরই সুযোগ আছে আরকি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার।...সে জন্য আমাদেরও বারবার চিন্তা করতে হয়, ইলেকশন কী করব, না করব না। করলে কীভাবে করব। মানুষ টাকা ছাড়া ভোট দেবে কি না।’
জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। উপদেষ্টা পরিষদে তাঁর সহকর্মী আরেকজন সমম্বয়ক নাহিদ ইসলাম নতুন দলের নেতৃত্ব নিয়ে রাজনীতিতে নামলেও আসিফ মাহমুদ এখনো স্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। তিনি শুধু বলেছেন, তিনি কোনো দলের হয়ে নির্বাচন করলে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করবেন।
অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। আসিফ মাহমুদের জুলাই আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অভ্যুত্থানের পর ‘ভুল’ হয়েছেজুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে থেকে সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ তোলার পাশাপাশি আসিফ মাহমুদ বলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাঁদেরও কিছু ভুল হয়েছিল।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালানোর এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টাও বোধ হয় হয়নি, আমাদের রাজনৈতিক নেতারা এস্টাবলিশমেন্টের কোলে গিয়ে উঠে গেছেন। তো তরুণ হিসেবে আমাদেরও ভুল আছে, আমরা ২৫-২৬ বছরের কয়েকজন তরুণ ছিলাম পলিসি মেকিংয়ের দায়িত্বে। কিন্তু যখন আমাদের অগ্রজরা এস্টাবলিশমেন্টকে গিয়ে দায়িত্ব দিয়ে আসেন, যে আপনারা একটা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন, তখন আমাদের হাতে আসলে খুব বেশি কিছু থাকে না।’
আসিফ মাহমুদ দাবি করেন, তাঁরা তখন ‘এস্টাবলিশমেন্টের কাছে’ রাজনৈতিক নেতাদের না যেতে বলেছিলেন। কিন্তু তাঁদের আহ্বান শোনা হয়নি। পরবর্তী পরিস্থিতিতে সেদিন দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় ছাত্রনেতারা দ্রুত সরকার গঠনের বিষয়ে একমত হন।
আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, ৫ থেকে ৮ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতারা রাজনৈতিক নেতাদের পাশ কাটিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। তাঁদের সমর্থন ছাড়া একেবারে এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটার পরিণতি কেমন হবে, সেটা বোঝাও তরুণ ছাত্রনেতাদের জন্য কঠিন ছিল।
আসিফ মাহমুদ দাবি করেন, ৫ আগস্ট থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে তিনি প্রস্তাব করেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘মিডল গ্রাউন্ড রেখে’ সেখানে একটা আলোচনা আয়োজনের। সেটি হয়নি। তাঁর ভাষ্যে, ‘আমাদের বলা হলো, আপনারা ক্যান্টনমেন্টে আসেন। তো আমরা বললাম যে ক্যান্টনমেন্টে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তারপর আলোচনার ভেন্যু হিসেবে একটা মিডল পয়েন্টে আমাদেরকেও আসতে হলো।’
এই আলোচনায় অংশ নিয়ে কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, ‘২০২৪ সালের ৮ আগস্ট একটি সাংবিধানিক প্রতিবিপ্লব হয়েছে। সে সময়ে নেতৃত্বে থাকা তরুণেরা কতগুলো ভুল করেছে। সেই ভুল তরুণেরা এখনো চাইলে সংশোধন করতে পারে। তবে তার জন্য বেশি সময় নেই।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদের সঞ্চালনায় এই গোলটেবিলে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, পুসাবের স্থায়ী কমিটির সদস্য ফাহমিদুর রহমান, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট মোহাম্মদ সজল বক্তব্য দেন।