এককভাবে নির্বাচনে যেতে জোরালো মত এনসিপিতে
Published: 7th, November 2025 GMT
আগামী নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কারও সঙ্গে জোট গড়বে কি না, তা নিয়ে যখন চলছে কৌতূহল, তখন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কাউন্সিলের সদস্যদের অধিকাংশ এককভাবে নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান জানিয়েছেন। তাঁদের যুক্তি, এনসিপির স্বতন্ত্র রাজনৈতিক পরিচয় তৈরি এবং ভবিষ্যতে একটি শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এটি প্রয়োজন।
রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্প্রতি প্রায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দলের কাউন্সিলের সভা হয়। সেখানে এনসিপির নির্বাচনী চিন্তা, সম্ভাব্য জোট-সমঝোতা এবং দলকে নিয়ে নানা প্রচার নিয়ে চলে আলোচনা।
জানতে চাইলে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন প্রথম আলোকে বলেন, এনসিপি একটি কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করেছে। প্রার্থী নির্ধারণ ও মনোনয়ন জমার প্রক্রিয়া নিয়ে নির্বাহী কাউন্সিলে আলোচনা হয়েছে। সভায় বেশির ভাগ সদস্য মত দিয়েছেন, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে এনসিপি এককভাবে নির্বাচনে যাক।
অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারিতে হবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন। জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের গড়া দল এনসিপি সেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। নতুন দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নিতে ‘শাপলা কলি’ প্রতীক নিয়েছে তারা।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে এনসিপির নেতারা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী উভয় দলের সমালোচনা করে গেলেও এই দল দুটির কোনোটির সঙ্গে তাদের জোট বেঁধে ভোটে যাওয়ার আলোচনাও চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
এর মধ্যেই গত বুধবার রাতে দলীয় কার্যালয়ে বৈঠকে বসে এনসিপির ৫১ সদস্যের নির্বাহী কাউন্সিল। সভায় ৩০ জনের বেশি উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা। দুই মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ ঢাকার বাইরে থাকায় সভায় থাকতে পারেননি।
আরও পড়ুনবিএনপির কাছে ২০ আসন চায় এনসিপি, চায় মন্ত্রিসভায়ও হিস্যা০৫ নভেম্বর ২০২৫নির্বাহী কাউন্সিলের সভায় অংশ নেওয়া তিনজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সভায় দলের নির্বাচনী কার্যক্রমের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কোন নেতা কোন নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন, তা নিয়ে কথা হয়েছে। এনসিপির সব আসনেই প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে মত এসেছে সভায়। নেতাদের অনেকেই বলেছেন, নির্বাচনী আমেজকে কাজে লাগিয়ে সারা দেশে দলের সাংগঠনিক ভিত্তি তৈরি করার সুযোগ রয়েছে।
একজন দায়িত্বশীল নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী দুই দলই আগামী নির্বাচনে এনসিপিকে সঙ্গে রাখতে চায়। কিন্তু কোনো দলের ছায়া নিয়ে কয়েকটি আসনে জেতা সম্ভব হলেও দীর্ঘ মেয়াদে এনসিপির আলাদা রাজনীতি দাঁড়াবে না। আবার বিএনপির চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের যেসব সমালোচনা গত এক বছরে এনসিপির নেতারা করেছেন, তাদের সঙ্গে জোট বা সমঝোতায় গেলে তার দায় নিতে হবে। অন্যদিকে জামায়াতের সঙ্গে গেলে তাদের ঐতিহাসিক দায়ভার বহন করতে হবে। সার্বিক বিবেচনায় এনসিপির স্বতন্ত্র অবস্থানে থাকাই ভালো হবে, এই আলোচনা নির্বাহী কাউন্সিলে হয়েছে।’
আরও পড়ুনবিএনপি–জামায়াত দুই দিকেই দরজা খোলা রাখছে এনসিপি২৭ অক্টোবর ২০২৫তবে গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় দল, এবি পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদের সমন্বয়ে সম্ভাব্য তৃতীয় জোটের একটি সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয় এনসিপির সভায়।
এনসিপির ওই নেতার ভাষ্য অনুযায়ী, শীর্ষ নেতারা নির্বাহী কাউন্সিলকে জানান যে জোটের বিষয়ে অনেক দলই আগ্রহী। কিন্তু এই দলগুলোর অনেকেই বিএনপির সঙ্গে একধরনের সমঝোতায় আছে। তারা সেই অবস্থান থেকে সরে এলে তৃতীয় জোট হতে পারে। পাশাপাশি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে ৯ দল যৌথভাবে কিছু করতে পারে কি না, সেই আলোচনাও রয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে এনসিপিকে নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনকে ‘ভিত্তিহীন’ দাবি করে সেগুলোও পর্যালোচনা করা হয় দলটির নির্বাহী কাউন্সিল সভায়।
আরও পড়ুনএনসিপির মনোনয়ন ফরম পাওয়া যাবে ১০ হাজার টাকায়, জুলাই যোদ্ধা ও কুলি-মজুরদের জন্য ২ হাজার০৬ নভেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এনস প র স ক উন স ল য় এনস প র জন ত ব এনপ সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
আমরা এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, ৩০০ আসনই লক্ষ্য: নাহিদ ইসলাম
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা এককভাবে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। সে লক্ষ্যে সব কটি আসনেই শাপলা কলির জন্য প্রার্থী দেওয়ার কাজ করছি। সমঝোতা বা জোট রাজনৈতিক বা আদর্শিক জায়গা থেকে হতে পারে। জুলাই সনদ ও আমাদের সংস্কারের দাবিগুলোর সঙ্গে যদি কোনো দল ঐক্যবদ্ধ বা সংহতি প্রকাশ করে, সে ক্ষেত্রে জোটের বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত এককভাবেই এগোচ্ছি।’
আজ বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ২ নম্বর ঢাকেশ্বরী এলাকায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। এর আগে তিনি সেখানে জুলাই আন্দোলনে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত গার্মেন্টসের নিরাপত্তাকর্মী গাজী সালাউদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সর্বাধিক আসনে এনসিপির প্রার্থী দেওয়ার কথা জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য মনোনীত আসনগুলোয় হয়তো কোনো প্রার্থী দেওয়া হবে না।
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনের সংস্কৃতিতে দেখেছি, যাদের টাকা আছে, গডফাদারগিরি করে, তারাই নির্বাচনে দাঁড়ায়। আমরা সেই সংস্কৃতিকে চ্যালেঞ্জ করতে চাই। এলাকার যার গ্রহণযোগ্যতা আছে, সাধারণ মানুষের পাশে পাওয়া যায় যাকে, এমন খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে এলাকার শিক্ষক, ইমাম ও গ্রহণযোগ্য কাউকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চাই। আমরা সেই উদ্দেশ্যে কাজ করছি।’
এনসিপির আরেক নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ১৫ নভেম্বরের মধ্যে এনসিপির প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। শাপলা কলি প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
জুলাই আন্দোলনে আহত গাজী সালাউদ্দিনের মৃত্যু প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, তিনি আন্দোলনের সাহসী সৈনিক ছিলেন। গত বছরের ১৯ জুলাই জালকুড়ি এলাকায় গুলিতে আহত হয়ে গলায় স্প্লিন্টারবিদ্ধ ও তাঁর একটি চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে আহত যোদ্ধাদের যে চিকিৎসা দেওয়ার কথা ছিল, তারা যথাযথভাবে সেই দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। ফলে এখনো অনেকেই কষ্টে আছেন, লাশের সারি বাড়ছে। তিনি বলেন, আহত ব্যক্তিদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।
এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আহমেদুর রহমানসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে তাঁরা গাজী সালাউদ্দিনের কবর জিয়ারত করেন।