ভিক্ষাবৃত্তি না ছাড়ায় বাবার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন ছেলে। ক্ষোভের বশে গলা চেপে ধরলে ঘটনাস্থলেই মারা যান বাবা। কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের ভৈরবপুর উত্তর পাড়ায় গতকাল রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ব্যক্তির নাম হাফিজ উদ্দিন (৬৫)। তিনি পেশায় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। অভিযুক্ত ছেলে আল আমিন (২৯) ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান। তাঁরা নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দড়িহাইরমারা গ্রামের বাসিন্দা। তবে কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন ধরে ভৈরবে বসবাস করে আসছিলেন।

ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানী প্রথম আলোকে বলেন, আল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বাবাকে মেরে ফেলার একটিমাত্র কারণ উল্লেখ করেছেন তিনি। সেটি হলো বাবার ভিক্ষা পেশার প্রতি রাগ। এ ছাড়া আর কোনো কারণ আছে কি না, তা–ও দেখা হচ্ছে।

পুলিশ ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাফিজ উদ্দিন স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দুই সন্তানকে নিয়ে ভৈরবে থাকতেন। মেয়ে আসমা বেগমের (২০) বিয়ে হয়েছে। ছেলেকে বিয়েও দিয়েছিলেন, তবে সংসার টেকেনি। বয়সের কারণে তিনি কাঠমিস্ত্রির কাজ করতে পারছিলেন না। আট মাস ধরে ভৈরবপুর উত্তর পাড়ায় ফিরোজা বেগম নামের এক নারীর বাসায় ভাড়া থাকতেন বাবা-ছেলে। আল আমিন চাইতেন, তাঁর বাবা যেন ভিক্ষা করা বন্ধ করেন। কিন্তু হাফিজ উদ্দিন এ অনুরোধ শোনেননি। বিষয়টি নিয়ে কয়েক মাস ধরে তাঁদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। গতকাল রাতে একই ইস্যুতে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আল আমিন তাঁর বাবার গলা চেপে ধরেন ও ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই হাফিজ উদ্দিন মারা যান।

মৃত্যুর আগে হাফিজ উদ্দিনের গোঙানির শব্দ শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন। তখন ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। প্রতিবেশীরা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে এবং আল আমিনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

থানায় নেওয়ার পর আল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রিকশা চালাইয়া কামাই মন্দ করি না। দুজনের সংসার ভালা চলছিল। আব্বা ভিক্ষা করে। এটা দেইখা অনেকে আমারে ফোন করে, শরম দেয়। আব্বারে কতবার কইছি, ভিক্ষা ছাইড়া দেও। ছাড়ত না। কইত, নিজের কামাই নিজে কইরা খাইব। আমার বোঝা হইব না। কিন্তু আমি মানতে পারতেছিলাম না। মূলত এই কারণে রাইতে কাইজ্জা হয়। আমি গলা চাইপ্পা ধরি।’

এই ঘটনায় নিহত হাফিজ উদ্দিনের মেয়ে আসমা বেগম ভৈরব থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলার একমাত্র আসামি তাঁর ভাই আল আমিন। আসমা বলেন, ‘এই কথা সত্য, ভাই চাইত আব্বা রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা না করুক। আবার আব্বা চাইত না কামাই বন্ধ হইয়া যাক।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভাষা আন্দোলনের তাত্ত্বিক বিষয় আমাকে আকর্ষণ করেছিল’

ছবি: প্রথম আলো

সম্পর্কিত নিবন্ধ