ভিক্ষা না ছাড়ায় ক্ষোভ, ভৈরবে ছেলের হাতে বাবার মৃত্যু
Published: 23rd, June 2025 GMT
ভিক্ষাবৃত্তি না ছাড়ায় বাবার ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন ছেলে। ক্ষোভের বশে গলা চেপে ধরলে ঘটনাস্থলেই মারা যান বাবা। কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর শহরের ভৈরবপুর উত্তর পাড়ায় গতকাল রোববার দিবাগত রাত দুইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম হাফিজ উদ্দিন (৬৫)। তিনি পেশায় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। অভিযুক্ত ছেলে আল আমিন (২৯) ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান। তাঁরা নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দড়িহাইরমারা গ্রামের বাসিন্দা। তবে কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন ধরে ভৈরবে বসবাস করে আসছিলেন।
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ফুয়াদ রুহানী প্রথম আলোকে বলেন, আল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বাবাকে মেরে ফেলার একটিমাত্র কারণ উল্লেখ করেছেন তিনি। সেটি হলো বাবার ভিক্ষা পেশার প্রতি রাগ। এ ছাড়া আর কোনো কারণ আছে কি না, তা–ও দেখা হচ্ছে।
পুলিশ ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাফিজ উদ্দিন স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দুই সন্তানকে নিয়ে ভৈরবে থাকতেন। মেয়ে আসমা বেগমের (২০) বিয়ে হয়েছে। ছেলেকে বিয়েও দিয়েছিলেন, তবে সংসার টেকেনি। বয়সের কারণে তিনি কাঠমিস্ত্রির কাজ করতে পারছিলেন না। আট মাস ধরে ভৈরবপুর উত্তর পাড়ায় ফিরোজা বেগম নামের এক নারীর বাসায় ভাড়া থাকতেন বাবা-ছেলে। আল আমিন চাইতেন, তাঁর বাবা যেন ভিক্ষা করা বন্ধ করেন। কিন্তু হাফিজ উদ্দিন এ অনুরোধ শোনেননি। বিষয়টি নিয়ে কয়েক মাস ধরে তাঁদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। গতকাল রাতে একই ইস্যুতে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আল আমিন তাঁর বাবার গলা চেপে ধরেন ও ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই হাফিজ উদ্দিন মারা যান।
মৃত্যুর আগে হাফিজ উদ্দিনের গোঙানির শব্দ শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন। তখন ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল। প্রতিবেশীরা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে এবং আল আমিনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
থানায় নেওয়ার পর আল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রিকশা চালাইয়া কামাই মন্দ করি না। দুজনের সংসার ভালা চলছিল। আব্বা ভিক্ষা করে। এটা দেইখা অনেকে আমারে ফোন করে, শরম দেয়। আব্বারে কতবার কইছি, ভিক্ষা ছাইড়া দেও। ছাড়ত না। কইত, নিজের কামাই নিজে কইরা খাইব। আমার বোঝা হইব না। কিন্তু আমি মানতে পারতেছিলাম না। মূলত এই কারণে রাইতে কাইজ্জা হয়। আমি গলা চাইপ্পা ধরি।’
এই ঘটনায় নিহত হাফিজ উদ্দিনের মেয়ে আসমা বেগম ভৈরব থানায় হত্যা মামলা করেছেন। মামলার একমাত্র আসামি তাঁর ভাই আল আমিন। আসমা বলেন, ‘এই কথা সত্য, ভাই চাইত আব্বা রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা না করুক। আবার আব্বা চাইত না কামাই বন্ধ হইয়া যাক।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আদালতে জেরার মুখে সাবেক সিইসি নূরুল হুদা বললেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে’
প্রায় এক ঘণ্টা কাঠগড়ায় বিমর্ষ হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। আজ সোমবার বিকেলে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মুস্তাফিজুর রহমান কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা নূরুল হুদার কাছে জানতে চান, তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন কি না?
জবাবে নূরুল হুদা আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আমি কোনো শপথ ভঙ্গ করিনি। একটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হয় পাঁচজনকে দিয়ে। একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকেন, বাকি চারজন থাকেন নির্বাচন কমিশনার। একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধায়নে ১৭ লাখ কর্মকর্তা–কর্মচারী কাজ করেন। একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোনো গ্রামের ভোটসংক্রান্ত সব তথ্য ঢাকায় বসে জানা সম্ভব নয়। প্রতিটি ভোটকেন্দ্র মনিটরিং করার কোনো সুযোগ থাকে না।’
এ পর্যায়ে সিএমএম সাবেক সিইসি নূরুল হুদার উদ্দেশে বলেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ফেয়ার নির্বাচন করা? তখন নূরুল হুদা আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য অনেক স্টেকহোল্ডার জড়িত থাকে। নির্বাচন আয়োজনের পর রিটার্নিং কর্মকর্তা গেজেট প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশনের আর কিছুই করার থাকে না। বিষয়টি উচ্চ আদালতের ওপর ন্যস্ত থাকে।’
এ পর্যায়ে সিএমএম নূরুল হুদার উদ্দেশে বলেন, নির্বাচনের শিডিউল (তফসিল) ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব কী? জবাবে নূরুল হুদা বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নির্বাচনের পর গেজেট হলে নির্বাচন কমিশনের আর কোনো ক্ষমতা থাকে না।’
এ পর্যায়ে সিএমএম সাবেক এই সিইসির কাছে নির্বাচনের আগে তৎকালীন আইজিপির (পুলিশের মহাপরিদর্শক) ভূমিকা জানতে চান। জবাবে নূরুল হুদা আদালতকে বলেন, ‘২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে সাবেক আইজিপি আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি মনিটরিং করেছিলেন। যে কারণে ওই নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি।’
একপর্যায়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে নূরুল হুদা আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, ২০১৮ সালের নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। সেই বিতর্কের দায় নির্বাচন কমিশনের নয়।’
নূরুল হুদার বক্তব্যের পর তাঁর আরেক আইনজীবী ওবায়দুল ইসলাম আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, উনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। উনি পটুয়াখালীতে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি ভীষণ অসুস্থ। তাঁর ডায়াবেটিস রয়েছে।’
নূরুল হুদাসহ আওয়ামী লীগ আমলের সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করে বিএনপি। দুপুরে ওই মামলা হওয়ার পর সন্ধ্যায় একদল লোক ‘মব’ তৈরি করে নূরুল হুদার উত্তরার বাসা থেকে তাঁকে ধরে এনে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার পর পুলিশে সোপর্দ করে। আজ পুলিশ ওই মামলায় নূরুল হুদাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত নূরুল হুদার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালতের কাঠগড়ায় নূরুল হুদার এক ঘণ্টা
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ কে এম নূরুল হুদার দুই হাত পেছনে নিয়ে হাতকড়া পরিয়ে সিএমএম আদালতকক্ষে তোলা হয়। তখন সময় বিকেল ৪টা ১০ মিনিট। কাঠগড়ায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন নূরুল হুদা।
তখন একজন পুলিশ কনস্টেবল তাঁর মাথা থেকে হেলমেটটি খুলে ফেলেন। পরে চশমা পরেন নূরুল হুদা। একজন আইনজীবী জানতে চেয়েছিলেন তিনি কেমন আছেন? জবাবে নূরুল হুদা ঘাড় ডান দিকে ঘুরিয়ে ইঙ্গিত দিলেন, ভালো। এরপর কাঠগড়ায় মুখ ভার করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি।
নূরুল হুদাকে কাঠগড়ায় তোলার পাঁচ মিনিট পর ঢাকার সিএমএম মোস্তাফিজুর রহমান এজলাসে আসেন। নূরুল হুদার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন গ্রেপ্তার সাবেক সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন ও মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফয়সাল বিপ্লব। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাবিনা আক্তারকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এরপর দিনের ভোট রাতে করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে করা বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন খানের মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক সিইসি নূরুল হুদার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে শুরু করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটার (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাকে আজ সোমবার বিকেলে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। প্রহসনের নির্বাচন করার অভিযোগে করা একটি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নূরুল হুদার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত