কপোতাক্ষের পাড়ে ইউরোপীয় কায়দায় কাঁকড়া চাষ, রপ্তানি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়
Published: 25th, June 2025 GMT
যশোরের কেশবপুরের আবদুল্লাহ আল মামুন (৩৪) ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে স্নাতক শেষ করে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। মাস শেষে ভালো বেতন পেতেন। কিন্তু চাকরির বন্দিজীবন ভালো লাগেনি তাঁর। তাই চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এখন তিনি সফল উদ্যোক্তা।
কেশবপুরের ব্যাসডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মামুনের খামার গড়ে উঠেছে সাগরদাঁড়িতে কপোতাক্ষ নদের তীরে। নাম অ্যাকুয়া ক্র্যাব। এখানে বাগদা, গলদা ও ভেনামি চিংড়ির পাশাপাশি কাঁকড়ার চাষ করছেন তিনি। এই প্রকল্পে এ পর্যন্ত দুই কোটি টাকার মতো খরচ করেছেন তিনি। এরই মধ্যে ৫০ লাখ টাকা উঠে এসেছে। গত বছর প্রকল্প থেকে ২০ লাখ টাকার মতো লাভ হয়েছে। সময় যত বাড়বে, এই আয় তত বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।
২০১৮ সালে চাকরি ছেড়ে দেন আবদুল্লাহ আল মামুন। পরে চট্টগ্রামের ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাৎস্যবিজ্ঞানে একটি কোর্স করেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজে কিছু করতে চেয়েছিলাম।’
এরপর কুমিল্লায় এক বন্ধুর সঙ্গে চিংড়ি চাষ শুরু করেন মামুন। সেখানে একদিন জালে ধরা পড়ে দুটি কাঁকড়া। সেগুলো বিক্রি করে তাঁর মনে হয়, চিংড়ির চেয়ে কাঁকড়া চাষে লাভ বেশি হতে পারে। পরের বছর মহাখালীর বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয়ী হন তিনি। পুরস্কার হিসেবে ২৩ লাখ টাকা পান। সেটিই হয় তাঁর প্রাথমিক পুঁজি। লোনাপানিতে কাঁকড়া ভালো হয় বলে কপোতাক্ষ নদঘেঁষা পাঁচ বিঘা জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন খামার। ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসে যেভাবে কাঁকড়ার চাষ হয়, সেটি অনুসরণ করেন তিনি। বাংলাদেশ শিল্প ও গবেষণা পরিষদ থেকে তিনি এই পদ্ধতি সম্পর্কে শেখেন। এখন এটি একটি লাভজনক খামারে পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে আবদুল্লাহ আল মামুন সজীবের খামারে ৭৩ হাজার বক্সে সমানসংখ্যক কাঁকড়া আছে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ আমদানির সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন
পেঁয়াজ আমদানির সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। ট্যারিফ কমিশন বলছে, এক কেজি পেঁয়াজের দাম সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ওঠায় দ্রুত আমদানির অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। প্রতিবছর অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম বাড়ে।
পেঁয়াজ আমদানির সুপারিশ করে গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্যসচিব ও কৃষিসচিবকে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। ট্যারিফ কমিশন সম্প্রতি স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিতে সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ট্যারিফ কমিশনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কিছু মধ্যস্বত্বভোগী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ এই সময়ে ৯০ টাকার মধ্যে থাকার কথা থাকলেও তা বেড়ে এখন ১১৫ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশে এই পেঁয়াজের দাম এখন প্রায় ৩০ টাকার মধ্যে রয়েছে। তাই সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানির জন্য দ্রুত অনুমতি দিতে কমিশনের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে।
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পেঁয়াজের উচ্চ দামের সুবিধা কৃষক পাচ্ছেন না। মধ্যস্বত্বভোগীরা এ সুযোগ নিচ্ছেন। তাই পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ দিলে বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমে যাবে। ভোক্তারা যৌক্তিক মূল্যে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানি প্রধান উৎস দেশ ভারত। ভারত থেকে পেঁয়াজের মোট আমদানির ৯৯ শতাংশই করা হয়। এ ছাড়া তুরস্ক, পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন ও মিসর থেকেও পেঁয়াজ আমদানি হয়। গত অর্থবছরে মোট ৪ লাখ ৮৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। বর্তমানে পেঁয়াজের ওপর মোট ১০ শতাংশ শুল্ককর প্রযোজ্য।
এদিকে গত অর্থবছরে দেশে ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন। তবে সংরক্ষণ সমস্যাসহ নানা কারণে পেঁয়াজ নষ্ট হয়। তাই গত অর্থবছরে ৩৩ লাখ টনের মতো পেঁয়াজ বাজারে এসেছে।