দুদকের নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা হচ্ছে, এর সঙ্গে কর্মকর্তাদের সম্পর্ক নেই: দুদক মহাপরিচালক
Published: 25th, June 2025 GMT
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘মানহানিকর ও ভিত্তিহীন’ অভিযোগ ছড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক বলছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর একটি পোস্ট কমিশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। পোস্টটিতে তিনি যাচাই-বাছাই ছাড়াই দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য প্রদান করেন।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার দুদক মহাপরিচালক ও মুখপাত্র আখতার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, একটি প্রতারক চক্র দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক বা কর্মকর্তা পরিচয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদানের কথা বলে প্রতারণা করে আসছে। যার সঙ্গে দুদকের কর্মকর্তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘দুদক ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং প্রতারক চক্রের অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।’
দুদক জানায়, ইতোপূর্বে দুদক প্রতারণা রোধে সবাইকে সতর্ক করে আসছে। যা বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এমন প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুদককে দোষারোপ করেন যার ফলে দুদকের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।
প্রতারণামূলক ফোন কল, বার্তা বা ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে কারও কাছ থেকে টাকা চাওয়া হলে কিংবা কোনো প্রতারণা বা অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেলে দুদকের টোল ফ্রি হটলাইন-১০৬ নম্বরে জানানোর অথবা নিকটস্থ দুদক কার্যালয় বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেছে দুদক।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র
এছাড়াও পড়ুন:
হলে রাজনীতির ‘রূপ’ কেমন হবে, আলোচনা হলেও সিদ্ধান্ত হয়নি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের একটি অংশের উদ্যোগে গঠিত গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে প্রকাশ্য ও গুপ্ত—দুই ধরনের রাজনীতিই বন্ধ চায়। অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বিভিন্ন হলে সুস্থধারার রাজনীতি চালু রাখার পক্ষে। তবে গুপ্ত রাজনীতির বিরোধী তারা। হলে রাজনীতির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলেছে ইসলামী ছাত্রশিবির।
হল ও ক্যাম্পাসে রাজনীতির ‘রূপ’ কেমন হবে, এ বিষয়ে গতকাল রোববার বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রশিবিরের নেতারা অংশ নেওয়ায় বৈঠকের শুরুতেই ‘ওয়াকআউট’ করেন ছাত্র ইউনিয়নের একাংশ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ–বিসিএলের নেতারা। গতকাল বিকেল থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চ্যুয়াল শ্রেণিকক্ষে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে উপাচার্য, সহ–উপাচার্য, প্রক্টরসহ প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা শিক্ষকেরা অংশ নেন।
বৈঠক শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান সাংবাদিকদের বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের আগে গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি ছিল। সে কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের ভয়, আশঙ্কা ও ট্রমা রয়েছে। হল ও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতির রূপ কেমন হওয়া উচিত, এ বিষয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনা করেছেন তাঁরা। কারণ, সামনে ডাকসু নির্বাচন রয়েছে। এই নির্বাচনে সব ছাত্রসংগঠনের পূর্ণ ভূমিকা প্রয়োজন এবং তাঁরা চান সবাই অংশ নিক।
এই বৈঠকের আগে গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলে কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রদল। এর প্রতিবাদে সেদিন রাতে হলে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে মিছিল হয়, কয়েক শ শিক্ষার্থী প্রথমে রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন, পরে তাঁরা ভিসি চত্বরে যান। সেখানে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান শিক্ষার্থীদের বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সেটি বহাল থাকবে। অর্থাৎ, হলে ছাত্ররাজনীতি থাকবে না।
কিন্তু উপাচার্যের এই বক্তব্যে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৈঠকের পর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুপ্ত রাজনীতি বন্ধ করতে তাঁরা অনুরোধ করেছেন। এ ছাড়া ছাত্রদলের রাজনীতি করার কারণে কেউ যাতে ‘মব’–এর মাধ্যমে হেনস্তার শিকার না হন, প্রশাসনের কাছে এই দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।
অবশ্য প্রশাসনের সঙ্গে ছাত্রসংগঠনগুলোর বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বৈঠকের বিষয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আবদুল কাদের বলেন, তাঁরা হল ও একাডেমিক এরিয়ায় (যেখানে শ্রেণি কার্যক্রম চলে) প্রকাশ্য ও গুপ্ত—দুই ধরনের রাজনীতিই বন্ধের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। তিনি বলেন, আলোচনায় ছাত্র অধিকার পরিষদও হলে ছাত্ররাজনীতি না থাকার বিষয়ে মত দিয়েছে। অবশ্য কিছু সংগঠন হলে রাজনীতি থাকার বিষয়ে মত দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ছাত্রশিবির কৌশলগত অবস্থান নিয়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে।
বৈঠক শেষে ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ সাংবাদিকদের বলেন, হলে রাজনীতির ধরন কেমন হবে, সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ই–মেইলের মাধ্যমে মতামত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। অধিকাংশের মতামতের ভিত্তিতে যাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের নেতারা নিজেদের বক্তব্য দেওয়ার পর বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান। এই নেতাদের মধ্যে ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ’৯০–এর ‘সামাজিক চুক্তির’ (তখন ক্যাম্পাসে সক্রিয় সংগঠনগুলোর সম্মিলিত সিদ্ধান্ত) মাধ্যমে শিবিরকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু গণ–অভ্যুত্থানের পর কোনো রকম প্রক্রিয়া অনুসরণ করা ছাড়াই তাদেরকে আবার কীভাবে নর্মালাইজ (স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়া) করা হলো, এ বিষয়ে আমরা আপত্তি জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রশিবিরকে নর্মালাইজ করার রাজনীতি করছে প্রতিবার। যারা গুপ্ত রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে, তাদেরকে পলিটিক্যাল স্পেস দেওয়া যাবে না।’