১৬ বছরের অসামঞ্জস্যতা দূর করতে নীতিগত পুনঃবিন্যাস জরুরি: বাণিজ্য
Published: 25th, June 2025 GMT
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, “বিগত ১৬ বছরের অর্জিত ক্রিমিনালাইজেশন থেকে উত্তরণে পলিসি ডাইভারশন (নীতিগত পুনঃবিন্যাস) জরুরি। আর এই ডাইভারশন করতে গেলে আমাদের কগনিজেন্ট হতে হবে। আমাদের নিয়ামকগুলোকে সুনির্দিষ্ট করে প্রয়োজনীয় নীতি গ্রহণ করতে হবে।”
বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর ইকোনমিক রিপোটার্স ফোরাম (ইআরএফ) অডিটোরিয়ামে ইআরএফ ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে ‘অটোমোবাইল পলিসি ফর গ্রিন গ্রোথ অ্যান্ড কম্পিটিটিভ ইকোনমি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশে বাল্ক কার্গো আসে। সেটা সিমেন্ট ক্লিঙ্কার, ফার্টিলাইজার বা ফুডগ্রেইন, যার পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি টন। সেমিনারে বলা হয়েছে, আমাদের জিডিপির প্রায় ২০ শতাংশ জলিস্টিক। আমাদের যে ক্যাশ আউট-ফ্লো হয়, তার সঙ্গে এটাকে কলাবরেট করাতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “আমাদের ক্যাশ আউট-ফ্লোর একটা বড় অংশ বৈদেশিক মুদ্রায় ব্যয় হয়। যেমন- আমরা যে এক্সটারনাল ফ্রেইট পরিশোধ করি, যে বিমান ভাড়া পরিশোধ করি, পোর্ট কস্ট পরিশোধ করি, তার সবই জলিস্টিক কস্ট। দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের দেশের লজিস্টিক কস্ট বিশ্বের উন্নত দেশের জলিস্টিক কস্ট এর চাইতে বেশি। এ মুহূর্তে আমাদের দেশে ৪১ বিলিয়ন কিলোমিটার টন লজিস্টিক প্রয়োজন আছে। ২০৪০ সালে এটা নয়গুণ বেড়ে ৩০০ বিলিয়ন কিলোমিটার টনে রুপান্তরিত হবে।”
বাণিজ্য উপদেষ্টা, “আমাদের অর্থনীতির মোটা দাগে নিয়ামকগুলোর মধ্যে কৃষি, শিল্প এবং সেবা অন্যতম। এ সবকিছুর প্রাইমারি এনাবলার হচ্ছে লজিস্টিক। এটার সঙ্গে ইউটিলিটি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ এবং লেবার প্রডাক্টিভিটি। এগুলোকে যদি সমন্বিত করি, তাহলে দেখি আমাদের দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজার বা খাদ্যপণ্যের বাজার ১৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।”
“আমরা যদি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট চিন্তা করি, আমাদের দেশের যেসব স্থানের নাম গঞ্জ দিয়ে আছে, সেটা সিরাজগঞ্জ হোক আর মুন্সিগঞ্জ বা নারায়ণগঞ্জ হোক, এগুলো ছিলো আমাদের দেশের লজিস্টিক হাবস। পৃথিবীতে এমন দেশ আর আছে কিনা জানা নেই, যেখানে ২ শতাধিক নদী আছে.
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “আমাদের ১৭/ ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশ। কোনো খনিজ সম্পদ নেই, আছে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড। এই বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যা খুবই ভাইব্রেন্ট ও প্রডাক্টিভ। এটাকে যদি আমরা ব্যবহার করি, তাহলে লজিস্টিক ক্যাপাসিটি ও শ্রমশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যদি শ্রমের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারি, তাহলে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।”
বাজেটে আমাদের নীতির একটি ম্যানুফেস্টেশন থাকে উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “সেখানে অটোমোবাইল একটি ছোট অংশ হলেও খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এক সময় গাড়ি উৎপাদনের নামে পুরো বডি বিদেশ থেকে এনে চারটা চাকা লাগিয়ে প্রশংসা নেওয়া হয়েছে। বিগত ১৬ বছরের ওইসব অসামঞ্জস্যতা উত্তরণ করতে এখন সুষ্ঠু নীতি করতে হবে।”
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি'র চেয়ারম্যান আবু মমতাজ সাদ উদ্দিন আহমেদ।
সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন, বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট আবদুল হক, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রেসিডেন্ট আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী, উত্তরা মোটরস এর চেয়ারম্যান মতিউর রহমান এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহমান।
অর্থ ও বাণিজ্যবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) এর সভাপতি দৌলত আকতার মালা অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইআরএফ এর সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।
ঢাকা/এএএম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র দ শ র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের হামলায় আল–জাজিরার পাঁচ সংবাদকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় সিপিজের উদ্বেগ
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আল–জাজিরার সংবাদকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। গতকাল রোববার সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন সিপিজের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।
গতকাল গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আল–জাজিরার সাংবাদিক আনাস আল-শরিফ, মোহাম্মদ কুরেইকেহ, ক্যামেরা অপারেটর ইব্রাহিম জাহের, মোহাম্মদ নওফাল ও মোয়ামেন আলিওয়া নিহত হয়েছেন। আল–জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের কাছে তাঁদের সংবাদকর্মীদের ব্যবহৃত একটি তাঁবুতে এই হামলা চালানো হয়।
সিপিজের বিবৃতিতে বলা হয়, যুদ্ধ শুরুর পর গাজায় কাজ করা আল–জাজিরার প্রতিবেদকদের মধ্যে আল-শরিফ সবচেয়ে পরিচিত মুখ ছিলেন। ইসরায়েল আগে কোনো প্রমাণ ছাড়াই যে কয়েকজন সাংবাদিককে হামাসের সদস্য বলে অভিহিত করেছিল, তাঁদেরই একজন ছিলেন শরিফ।সিপিজের বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের একটি প্রবণতা হলো, তারা সাংবাদিকদের সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযুক্ত করে, কিন্তু তার পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেখায় না। শরিফের মৃত্যুর খবর দেওয়ার সময় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তিনি হামাসের একটি সেলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তিনি ইসরায়েলের সাধারণ মানুষ ও সেনাদের বিরুদ্ধে রকেট হামলা চালানোর কাজে সহযোগিতা করছিলেন।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক সারা কুদাহ বলেন, ইসরায়েল কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেখানো ছাড়াই সাংবাদিকদের জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করছে। আর এতে ইসরায়েলের উদ্দেশ্য ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সারা আরও বলেন, সাংবাদিকেরা বেসামরিক নাগরিক। তাঁদের কখনোই হামলার নিশানা করা উচিত নয়। এই হত্যার জন্য যারা দায়ী, তাদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
সাংবাদিকেরা বেসামরিক নাগরিক। তাঁদের কখনোই হামলার নিশানা করা উচিত নয়। এই হত্যার জন্য যারা দায়ী, তাদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।সারা কুদাহ, সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালকসিপিজের বিবৃতিতে বলা হয়, যুদ্ধ শুরুর পর গাজায় কাজ করা আল–জাজিরার প্রতিবেদকদের মধ্যে আল-শরিফ সবচেয়ে পরিচিত মুখ ছিলেন। ইসরায়েল আগে কোনো প্রমাণ ছাড়াই যে কয়েকজন সাংবাদিককে হামাসের সদস্য বলে অভিহিত করেছিল, তাঁদেরই একজন ছিলেন শরিফ। খুব সম্প্রতি শরিফ গাজার মানুষের অনাহারে থাকা নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন করেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা ঢুকতে না দেওয়ায় তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা অনাহারে ভুগছেন।
গত ২৪ জুলাই এক ভিডিওতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র আভিচাই আদরায়ি অভিযোগ করেন, আল-শরিফ ২০১৩ সাল থেকে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসামের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, যুদ্ধ চলাকালে শরিফ ‘সবচেয়ে অপরাধমূলক আক্রমণাত্মক চ্যানেল’-এর জন্য কাজ করছেন।
জুলাইয়ে আল-শরিফ সিপিজেকে বলেছিলেন, আদরায়ির এ প্রচার শুধু গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি বা সুনাম নষ্ট করাই নয়, এটি বাস্তব জীবনের জন্য একটি হুমকি।
আরও পড়ুনইসরায়েলি হামলায় নিহত হওয়ার আগে কী লিখে গেছেন সাংবাদিক শরীফ১ ঘণ্টা আগেআল–শরিফ তখন আরও বলেন, ‘আমি এসব কিছু করছি, কারণ আমার প্রতিবেদন গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি দখলদারদের অন্যায় কাজগুলো তুলে ধরছে, যা তাদের জন্য ক্ষতির। তারা আমাকে সন্ত্রাসী বলছে, কারণ দখলদারেরা আমাকে নৈতিকভাবে ধ্বংস করতে চাইছে।’
সিপিজে বলছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় চলমান যুদ্ধে মোট ১৮৬ জন সংবাদকর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ১৭৮ জনই ফিলিস্তিনি সাংবাদিক। তাঁরা ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন।