নতুন নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের ২০ শতাংশ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ৯৩৩ থেকে ৯৮০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০৩১-৪০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১ দশমিক ৩৭ থেকে ১ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন। অর্থাৎ ২০৪০ পর্যন্ত নবায়ন‌যোগ্য জ্বালা‌নি‌তে প্রায় ২০ বি‌লিয়ন ডলার প্র‌য়োজন হ‌বে। এ জন্য বাংলাদেশে বড় আকারের বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন। গবেষণা প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসে (আইইইএফএ) এ তথ্য জানা গেছে। 

গবেষণা প্রতিবেদনের লেখক ও বাংলাদেশের জ্বালানি খাত বিষয়ক আইইইএফএ’র প্রধান বিশ্লেষক শফিকুল আলম বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য পূরণে এই বিপুল অর্থের চাহিদা শুধু সরকারি অর্থায়নের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব নয়, এ জন্য ব্যাপক বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন। তবে হঠাৎ করে নীতিমালার পরিবর্তন, পাইপলাইন এ প্রকল্প না থাকা, জটিল ঋণ বিতরণ প্রক্রিয়া, ভূমির উচ্চ মূল্য, স্থানীয় মুদ্রার অস্থিরতা (স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন) এবং দেশের দুর্বল ক্রেডিট রেটিং বেসরকারি বিনিয়োগে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে বলেও তিনি জানান।

এসব সংকট কাটাতে বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংক, আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মুদ্রা ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশেষ তহবিল গঠন করার পরামর্শ দিয়েছে আইইইএফএ।

সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিগত সরকারের সময় প্রতিযোগিতাহীনভাবে অনুমোদিত ৩১টি বড় নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাতিল করেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণে নীতিগত স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগকারীদের জন্য গ্যারান্টি পুনর্বহাল, প্রকল্পের জন্য নির্দিষ্ট ভূমি বরাদ্দ এবং ব্যাংকিং ও সার্ভিস সেক্টরের সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

শফিকুল আলম আরও বলেন, পেমেন্ট নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর করতে সরকার ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন ধারা’ পুনর্বহাল অথবা নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনকারীদের আয়ের নিশ্চয়তা দিতে একটি পেমেন্ট সিকিউরিটি কাঠামো গঠন করা যেতে পারে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প লক ষ য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যবহার হবে এআই প্রযুক্তি

সরকার প্রথমবারের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকল্প প্রণয়ন, অনুমোদন ও বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে ৩১৫ কোটি টাকার একটি সংস্কার প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। একই সঙ্গে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন ও অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় বাড়াতে ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প শুরু হতে যাচ্ছে। এ দুটিসহ প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার মোট ১৭টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। 

গতকাল মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলোতে সরকারি অর্থায়ন রয়েছে ৩ হাজার ১৮০ কোটি টাকা, প্রকল্প ঋণ ৫ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন রয়েছে ২৩০ কোটি টাকার বেশি। আগামী অর্থবছরের বাজেট পাস হওয়ার দুই দিনের মাথায় গতকাল চলতি অর্থবছরের শেষ বৈঠকে বসে একনেক।
সভায় অনুমোদন হওয়া প্রকল্পগুলো নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ৩১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ইমপ্রুভমেন্ট অব পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইপিআইএমএস) শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা বিভাগের কার্যক্রম বিভাগে একটি নতুন ডিজিটাল ডেটাবেজ সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত। 

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় নেওয়া এ উদ্যোগের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে– প্রকল্প বাস্তবায়নের বিলম্ব কমানো এবং অর্থায়নের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থার সক্ষমতা বাড়ানো। প্রকল্পের আওতায় একটি একক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, তদারকি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় এআই প্রযুক্তি সংযুক্ত করা হবে।
এছাড়া দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন ও অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় বাড়াতে ১ হাজার ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকার দেবে ৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং বাকিটুকু অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক। ‘অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ শক্তিশালীকরণ প্রকল্প (এসডিআরএমপি)’ শীর্ষক এ প্রকল্পটির মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সক্ষমতা বাড়ানো হবে। ২০২৫ সালের জুলাই থেকে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এবং এনবিআর।

এ ছাড়া আরও যেসব প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে– উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ (দ্বিতীয় সংশোধিত), বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং স্থানীয় জনসমাজের সমন্বিত সেবা ও জীবন-জীবিকা উন্নয়ন, সাতটি বিভাগীয় শহরে ২০০ শয্যাবিশিষ্ট মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ, নবনির্মিত ৪টি মেরিন একাডেমিতে সিমুলেটর ও সংশ্লিষ্ট সুবিধাদি স্থাপনের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি, এক্সেস টু জাস্টিস ফর উইমেন: স্ট্রেনদেনিং কমিউনিটি ডিসপিউট রেজলিউশন অ্যান্ড ইমপ্রুভিং কেইস ম্যানেজমেন্ট, তৃতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত), সার সংরক্ষণ ও বিতরণ সুবিধার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৩টি নতুন বাফার গোডাউন নির্মাণ (তৃতীয় সংশোধিত), কিশোর-কিশোরী ক্লাব স্থাপন (প্রথম সংশোধিত), নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিকার ও প্রতিরোধে সমন্বিত সেবা জোরদারকরণ, কার্যক্রম বিভাগে একটি নতুন ডিজিটাল ডেটাবেজ সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে উন্নয়ন বাজেট ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি শক্তিশালীকরণ (তৃতীয় সংশোধিত), প্রকিউরমেন্ট মডারনাইজেশন টু ইমপ্রুভ পাবলিক সার্ভিস ডেলিভারি (পিএমপিএসডি) প্রকল্প ইত্যাদি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যবহার হবে এআই প্রযুক্তি