বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ১.৪%
Published: 26th, June 2025 GMT
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর বিশ্ববাজারে তেলের সঙ্গে সোনার দামও কমে গেছে। সাধারণত এ ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে সোনার দাম বেড়ে যায়। কিন্তু ১২ দিনের এই যুদ্ধের সময় সোনার দাম তেমন একটা বাড়েনি।
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববাজারে অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সোনার দাম কিছুটা বাড়লেও যুদ্ধের মধ্যভাগ থেকে সোনার দাম কমতে শুরু করে।
১৩ জুন সকালে ইসরায়েল ইরানে হামলা শুরু করে। ইরানও পাল্টা জবাব দেয়। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির জেরে ১৩ জুন সোনার স্পট মূল্য আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৪৩৩ দশমিক ৪৮ ডলারে উঠে যায়। ১২ জুনের তুলনায় যা প্রায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। যুদ্ধ শুরুর আগে সোনার দাম ছিল আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৩৮৬ ডলার। ১৩ জুন গোল্ড ফিউচারসের দাম ৩ হাজার ৪৫২ ডলারে পর্যন্ত ওঠে।
রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, শুরুর দিকে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। বিনিয়োগকারীরা তখন শেয়ারবাজার ও মুদ্রার ঝুঁকি এড়িয়ে সোনা কিনতে শুরু করেছিলেন। লক্ষ্য, যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হলে মূলধনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হবে না, এটা বোঝার পর বিনিয়োগকারীরা সোনার দিকে মরিয়া হয়ে ছোটেননি।
কিন্তু এরপর এক ধাক্কায় সোনার দাম ৩ হাজার ৪০০ ডলারের নিচে নেমে আসে। ১৪ জুন সোনার দাম নেমে আসে আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৩৮৪ ডলারে, ১৫ জুন কিছুটা বেড়ে হয় ৩ হাজার ৩৮৮ ডলার। ১৮ জুন তা ৩ হাজার ৩৬৭ ডলারে নেমে আসে। গতকাল বুধবার এই প্রতিবেদন লেখার সময় সোনার দাম ছিল আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৩২৭ ডলার। অর্থাৎ যুদ্ধ শুরুর আগে ১২ জুন সোনার যে দাম ছিল, গতকাল দাম তার চেয়েও নিচে নেমেছে।
মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই সোনার দাম কমতে শুরু করে। গত মঙ্গলবার বিশ্ববাজারে সোনার দাম ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমে দাঁড়ায় আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৩১৯ দশমিক ৯৬ ডলারে। এমনকি একপর্যায়ে তা ২ শতাংশের বেশি কমে যায়। ফলে মূল্যবান এই ধাতুর দাম ৯ জুনের পর সবচেয়ে নিচে নেমে আসে। মার্কিন গোল্ড ফিউচারসের দাম ১ দশমিক ৮ শতাংশ কমে ৩ হাজার ৩৩৩ দশমিক ৯ ডলারে চলে আসে।
দেখা যাচ্ছে, মঙ্গলবারের তুলনায় গতকাল সোনার দাম বেড়েছে। সেদিন সোনার দাম আউন্সপ্রতি প্রায় ১৪ ডলার বেড়েছে।
রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমেছে, এটাই এখন সোনার দামে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলছে। বিনিয়োগকারীরা এখন নিরাপদ সম্পদ ছেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের দিকে যেতে চাইছেন।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৩০০ ডলারের আশপাশে থাকা ভালো, এই দামে বেচাকেনা বাড়বে। দাম ৩ হাজার ২৫০ ডলারে নেমে এলে তা আরও ভালো। এই দামে বেচাকেনা আরও বাড়বে। এদিকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর মঙ্গলবার বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে, যদিও মার্কিন ডলারের দাম কমেছে।
সোনার দামের সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির গভীর সম্পর্ক আছে। বিশ্ব অর্থনীতি এখন কেমন আছে, এর উত্তর একটাই—অনিশ্চয়তা। একদিকে ট্রাম্পের শুল্কনীতি, আরেকদিকে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা। আগামী দিনগুলোতেও এই অনিশ্চয়তা এবং ঝুঁকি থাকবে বলেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন। অনিশ্চয়তাই অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। কিন্তু অনিশ্চয়তার সময়টাই আসলে সোনার স্বর্ণসময়। যত বেশি অনিশ্চয়তা, তত বেশি সোনা বিক্রি। যত বেশি মূল্যস্ফীতি, তত বেশি সোনার দাম বৃদ্ধি। ঐতিহাসিকভাবেও দেখা গেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময় সোনার দাম সবচেয়ে বেশি বাড়ে। কিন্তু এবার তার কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা গেল।
বিশ্বে সোনাকেই সবচেয়ে স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য পণ্য হিসেবে ধরা হয়। বলা হয়, একমাত্র সোনার দরেই সাধারণত বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা দেখা যায় না। সোনা কিনে রাখলে লোকসানের ভয় নেই বলা যায়। এ কারণেই সোনার প্রতি সবার এত আকর্ষণ। ৫০ বছর আগে কেউ সোনা কিনে রাখলেও তা ভালো বিনিয়োগ হিসেবেই বিবেচিত। শেয়ারবাজার, ডলার বা অন্য কিছু—এই নিশ্চয়তা দেয় না।
ফেড কী করছে
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল কংগ্রেসের শুনানিতে এক লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছেন, আমদানি পণ্যের ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আরোপিত বাড়তি শুল্ক মূল্যস্ফীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে, তা বুঝতে আরও কিছু সময় লাগবে। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রে নীতি সুদহার কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, চলতি বছরের শেষে নীতি সুদহার মোট ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট কমতে পারে। এর মধ্যে অক্টোবরেই ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমানো হতে পারে। সাধারণভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহার কম থাকলে সোনার দাম বাড়ে। ফেড সুদ কমালে মার্কিন ডলারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা কমে যায়। ডলার দুর্বল হলে সোনার মতো বিকল্প সম্পদের দাম বেড়ে যায়। সেই হিসাবে চলতি বছরের শেষ নাগাদ বিশ্ববাজারে সোনার দাম আরও বাড়তে পারে।
এদিকে মঙ্গলবার কমার পর গতকাল রুপার দামও বেড়েছে। এদিন স্পট মার্কেটে রুপার দাম ছিল আউন্সপ্রতি ৩৬ দশমিক ০৫ ডলার। মঙ্গলবার দাম ছিল আউন্সপ্রতি ৩৫ দশমিক ৮৩ ডলার, ৫ জুনের পর যা সবচেয়ে কম। অন্যদিকে প্লাটিনামের দাম বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩১৪ দশমিক ৯১ ডলার, প্যালাডিয়ামের দাম কমে হয়েছে ১ হাজার ৬১ দশমিক ৯০ ডলার।
গোল্ডম্যান স্যাকসের পূর্বাভাস, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ আউন্সপ্রতি সোনার দাম ৩ হাজার ৭০০ ডলারে উঠতে পারে। ২০২৬ সালের মাঝামাঝি তা আরও বেড়ে ৪ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এদিকে ব্যাংক অব আমেরিকা (বিওএফএ) বলছে, আগামী ১২ মাসের মধ্যেই সোনার দাম ৪ হাজার ডলার হতে পারে। দুই প্রতিষ্ঠানের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ধারাবাহিকভাবে সোনা কেনার প্রবণতা বাজারে দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ফলে মূল্যবৃদ্ধির এই সম্ভাবনা।
এদিকে বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের বাজারেও সোনার দামের হ্রাস-বৃদ্ধি করা হয়। বিশ্ববাজারে দাম কমে যাওয়ায় মঙ্গলবার সোনার দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন সোনা ব্যবসায়ীরা। এ দফায় ভরিতে সর্বোচ্চ দাম কমেছে ১ হাজার ৬৬৮ টাকা। তাতে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম কমে দাঁড়াবে ১ লাখ ৭২ হাজার ৮৬০ টাকা। নতুন এই দাম গতকাল থেকে কার্যকর হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন র দ ম কম ব শ বব জ র ন শ চয়ত ১ দশম ক ইসর য় ল গতক ল র সময় সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
এবার পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবিতে কেএমপি ঘেরাও, সড়ক অবরোধ
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারের পদত্যাগের দাবিতে কেএমপি ঘেরাও করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা থেকে তারা কেএমপির সামনের সড়ক অবরোধ ও সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পুলিশের এসআই সুকান্ত দাসকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) ও চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের একটি যৌথ দল চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বৃহস্পতিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।