সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএসডিপি)। তবে দলটির প্রধান কার্যালয় হিসেবে খুলনার যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, সেটি একটি আবাসিক এলাকার আবাসিক ভবন। বাস্তবে সেখানে রাজনৈতিক তৎপরতার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

খুলনার বিএসডিপির মতো ঢাকার সাভারের ভূমিহীন পার্টি ও মৌলিক বাংলা, দিনাজপুরের ‘বাংলাদেশ জেনারেল পার্টি’ (বিজিপি) ও ফরিদপুরে ‘বাংলাদেশ মুক্তি ঐক্যদলের’ প্রায় একই অবস্থা। নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলেও ঠিকানায় গিয়ে এসব দলের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কার্যালয় পাওয়া যায়নি। ইসিতে জমা দেওয়া আবেদনে দলীয় প্রধানেরা নিজেদের বাড়ি, অন্য সংগঠনের কার্যালয়কে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে দেখিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারাও এসব দলের কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়েছেন।

নিবন্ধনের জন্য সম্প্রতি ১৪৭টি দল ইসিতে আবেদন করেছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরের বাইরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা উল্লেখ করা পাঁচটি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় গত মঙ্গলবার ঘুরে দেখার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো। নতুন দলের ক্ষেত্রে ইসিতে নিবন্ধন পাওয়ার জন্য দলের সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং কার্যকর কমিটি থাকতে হয় কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায়।

বাসাবাড়িকে কার্যালয় উল্লেখ

খুলনা থেকে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা বিএসডিপির চেয়ারম্যানের নাম বিভূতি রায়। নির্বাচন কমিশনে বিএসডিপি যে ঠিকানা প্রধান কার্যালয় হিসেবে দিয়েছে, সেটি খুলনার নিরালার প্রান্তিকা আবাসিক এলাকার চারতলা আবাসিক ভবন। সেখানে দেখা যায়, দলীয় সাইনবোর্ড তো দূরের কথা, ভবনের নাম বা ঠিকানার কোনো ফলকও নেই।

বাড়িটির চারজন ভাড়াটের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুজন বিভূতি রায় সম্পর্কে কিছু বলতে পারেননি। একজন ভাড়াটে বলেন, মাঝেমধ্যে তিনি আসেন। তবে তাঁর সঙ্গে কোনো লোকজনকে তেমন আসতে দেখেননি। রাজনৈতিক দলের কোনো কিছু তো কোনো দিন চোখে পড়েনি।

হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে দলের প্রধান বিভূতি রায় বলেন, ‘আমাদের কিছু কথা আছে, এ জন্য রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন চেয়েছি। আমাদের জেলা-উপজেলায় এখনো কমিটি নেই। তবে কিছু মানুষ আমাদের সঙ্গে যুক্ত আছেন।’

বিজিপির প্রধান কার্যালয় হিসেবে দেখানো হয়েছে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার জগন্নাথপুর এলাকার হক ভিলার পঞ্চম তলা। তবে সেখানে দলীয় কার্যালয়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। পঞ্চম তলায় গিয়ে দেখা যায়, ফ্লোরজুড়ে ইটের স্তূপ ও নির্মাণসামগ্রী। কোনো আসবাব নেই, নেই কোনো দলীয় চিহ্ন বা সাইনবোর্ড।

স্থানীয় কলেজশিক্ষক মনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশে বাংলাদেশ জেনারেল পার্টি নামে কোনো রাজনৈতিক দল আছে বা তাদের কোনো কার্যক্রম হয় বলে আমার জানা নেই।’

দলটির শীর্ষ পদের নাম ‘জেনারেল চেয়ারম্যান’। ওই পদে আছেন হক ভিলার মালিক রেজাউল হক। তিনি পেশায় আইনজীবী। তিনি ভবনের তৃতীয় তলায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। মুঠোফোনে রেজাউল হক বলেন, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করা এই দলের ৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি আছে। তিনি ভেবেছিলেন, হয়তো নিবন্ধন পাবেন না। সে জন্য টাকা খরচ করে কার্যালয় তৈরির কাজটি আর করেননি।

ঠিকানা চেনেন না কেউ

বাংলাদেশ জাতীয় ভূমিহীন পার্টির কার্যালয়ের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে সাভারের আশুলিয়ার মাঝিপাড়া এলাকায়। ওই এলাকায় গিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছে পার্টির ঠিকানা জানতে চাওয়া হলে কেউ দলটি চেনেন না বলে জানান। মুঠোফোনে দলের নেতাদের সহায়তা নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা হলেও তাঁরা দলটি চিনতে পারেননি। পরে মো.

খাইরুল আলম নামের এক ব্যক্তি এসে পাকা দেয়ালের টিনশেডের একটি কক্ষের সামনের শাটারের তালা খুলে জানান, এটিই দলটির কার্যালয়।

মুঠোফোনে দলের সভাপতি মো. আবু তাহের খন্দকার বলেন, ‘মাঝিপাড়ায় অস্থায়ীভাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার অফিসেই আমরা কার্যক্রম চালাচ্ছি। ওখানে সব সময় আমরা থাকি না, মাঝেমধ্যে যাই।’

মৌলিক বাংলা নামের আরেক দলের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকায় নিক্কন হাউজিংয়ে। প্রথম দফায় ওই হাউজিংয়ে গিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে দলটির বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হলে তাঁরা দলটিকে চেনেন না বলে জানান। পরে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ওবায়দুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি দলের কার্যালয়টি দেখিয়ে দেন। তবে তাঁর কাছে চাবি না থাকায় তালাবদ্ধ কার্যালয়ের ভেতরটি দেখা সম্ভব হয়নি। কার্যালয়টি একটি পাকা দেয়ালে টিনশেডের একটি কক্ষের।

বাংলাদেশ মুক্তি ঐক্যদলের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী রহমানিয়া সুপার মার্কেট। তিনতলা ভবনটি বোয়ালমারী বাজার এলাকার জুতাপট্টি মহল্লায়। সেখানে গিয়ে জানা যায়, ওই ভবনের তৃতীয় তলায় বসতেন দলের প্রধান নূর ইসলাম। তবে এক মাস আগে থেকে আর বসছেন না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি বর্তমানে উপজেলা সদরের তালতলা এলাকায় কাঠের মার্কেটে কার্যালয় বানিয়েছেন। সেখানে গিয়ে নূর ইসলামের ছবি, দলীয় পরিচিতিসহ দুটি ডিজিটাল পোস্টার দেখা যায়। পোস্টার দুটি গাছের সঙ্গে লটকানো এবং এতে লেখা আছে দলটির অস্থায়ী কার্যালয়।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদকপ্রতিনিধিরা]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এসড প দল র ক এল ক র এল ক য় র জন য ন র জন দলট র

এছাড়াও পড়ুন:

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম

সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। এই নামাজের মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি জীবনের বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতে আল্লাহর নৈকট্য ও সাহায্য কামনা করে।

হাদিসে সালাতুল হাজতের ফজিলত ও নিয়ম বর্ণিত আছে, যা মুমিনের আল্লাহর ওপর ভরসাকে দৃঢ় করে।

সালাতুল হাজত নামাজের নিয়ম

সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা সাধারণত দুই রাকাত আদায় করা হয়। তবে ইচ্ছা হলে চার বা ততোধিক রাকাতও পড়া যায়। নামাজের নিয়ম বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো:

১. অজু করা

সালাতুল হাজত নামাজের জন্য পূর্ণ পবিত্রতা প্রয়োজন। তাই প্রথমে অজু করতে হবে। অজুর ফরজ চারটি: মুখমণ্ডল ধোয়া, দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া, মাথায় মসেহ করা এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া। এ ছাড়া সুন্নত অনুযায়ী অজু করা উত্তম, যেমন বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা, কুলি করা, নাকের ভেতরে পানি দেওয়া ইত্যাদি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৫)

সালাতুল হাজত একটি নফল নামাজ, যা বিশেষ প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে আদায় করা হয়। সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হয়।

২. নিয়ত করা

নামাজ শুরু করার আগে মনে মনে সালাতুল হাজতের নিয়ত করতে হবে। নিয়তের উদাহরণ: ‘আমি দুই রাকাত সালাতুল হাজত নফল নামাজ আল্লাহর জন্য আদায় করছি, আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে।’

নিয়ত মনে মনে করা যথেষ্ট, মুখে বলা জরুরি নয়। (সাইয়্যিদ সাবিক, ফিকহুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা: ১৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৮)

আরও পড়ুনইশরাকের নামাজ: সকালের আলোয় আল্লাহর নৈকট্য ০৪ জুলাই ২০২৫

৩. দুই রাকাত নামাজ আদায়

প্রথম রাকাত: তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলে নামাজ শুরু করা। সুরা ফাতিহার পর যেকোনো সুরা পড়া, যেমন সুরা ইখলাস। তারপর রুকু, সিজদা ও অন্যান্য নিয়ম অনুসরণ করে প্রথম রাকাত সম্পন্ন করা।

দ্বিতীয় রাকাত: একইভাবে সুরা ফাতিহার পর একটি সুরা পড়া, রুকু, সিজদা ও তাশাহহুদ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা।

এই নামাজ সাধারণ ফরজ বা নফল নামাজের মতোই পড়তে হবে, তবে খুশুখুজু (মনোযোগ) বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)

৪. নামাজের পর দোয়া

নামাজ শেষে আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ পড়ে নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির আল্লাহর কাছে কোনো প্রয়োজন বা মানুষের কাছে কোনো দরকার থাকে, সে যেন অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে, তারপর আল্লাহর প্রশংসা করে, নবীর ওপর দরুদ পড়ে এবং এই দোয়া পড়ে:

উচ্চারণ: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আসআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিক, ওয়া আজাইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিরর, ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইসম। লা তাদা লি জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু, ওয়া লা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু।’

অর্থ: ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি সহনশীল ও দয়ালু। পবিত্র মহান আরশের প্রভু আল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহর জন্য। আমি তোমার কাছে তোমার রহমতের কারণ, ক্ষমার দৃঢ়তা, প্রতিটি পুণ্যের লাভ এবং সব পাপ থেকে মুক্তি প্রার্থনা করি। আমার কোনো গুনাহ রেখো না, যা তুমি ক্ষমা করোনি এবং কোনো দুশ্চিন্তা রেখো না, যা তুমি দূর করোনি।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস:: ৪৭৮)

৫. অতিরিক্ত দোয়া

ওপরের দোয়ার পর নিজের প্রয়োজন বা দরকারের জন্য নিজের ভাষায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা। দোয়া করার সময় আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা এবং ধৈর্যের সঙ্গে ফলাফলের অপেক্ষা করা।

আরও পড়ুননামাজ আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধির একটি ধাপ১৭ জুলাই ২০২৫সালাতুল হাজতের সময়

সালাতুল হাজত নির্দিষ্ট কোনো সময়ের সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। এটি যেকোনো সময় আদায় করা যায়, তবে নিষিদ্ধ সময় (যেমন সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত বা ঠিক মধ্যাহ্নে) এড়িয়ে চলতে হবে। সর্বোত্তম সময় হলো:

রাতের শেষ প্রহর (তাহাজ্জুদের সময়)।

ফজর বা মাগরিব নামাজের পর।

জুমার দিনে, বিশেষ করে আসর ও মাগরিবের মাঝে। (মুহাম্মদ ইবনে সালিহ, আল-ফিকহুল মুয়াসসার, পৃষ্ঠা: ১৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ২০১৫)

সালাতুল হাজতের ফজিলত

সালাতুল হাজত নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ আছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সালাতুল হাজত পড়ে এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করেন।’ (সুনান তিরমিজি, হাদিস: ৪৭৮)

এই নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যা মানসিক শান্তি ও ইমানের দৃঢ়তা বাড়ায়।

সতর্কতা

নিষিদ্ধ সময় এড়ানো: সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও মধ্যাহ্নে নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকা।

খুশুখুজু: নামাজ ও দোয়ায় মনোযোগ বজায় রাখা, যাতে ইবাদত পূর্ণতা পায়।

হারাম প্রয়োজনে না: সালাতুল হাজত শুধু জায়েজ ও হালাল প্রয়োজনের জন্য পড়তে হবে।

ধৈর্য: দোয়ার ফলাফলের জন্য ধৈর্য ধরা, কারণ আল্লাহ সর্বোত্তম সময়ে প্রয়োজন পূরণ করেন। (ইবনে হাজার আসকালানি, ফাতহুল বারি, ২/৪৮০, দারুল মা’রিফা: ১৯৮৯)

সালাতুল হাজত নামাজ মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার একটি অসাধারণ মাধ্যম। এটি দুই রাকাত নফল নামাজ, যার পর নির্দিষ্ট দোয়া ও নিজের প্রয়োজনের জন্য দোয়া করা হয়। জীবনে ব্যস্ততার মাঝেও এই নামাজ সহজেই আদায় করা যায়।

আরও পড়ুনজীবনকে ছন্দে ফেরাবে ‘ধীর নামাজ’২৪ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ