ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণের পর যুবলীগ নেতাকে সে কার্ড দেওয়া হয়েছে দাবি করে সমালোচনা শুরু হয়। ওই অবস্থায় বিতরণ করা স্বাস্থ্য কার্ড ফেরত চেয়েছে প্রশাসন, যাচাই শুরু করেছে কাগজপত্রও। আজ বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটি গঠন করার কথাও জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

গত মঙ্গলবার বিকেলে গফরগাঁও উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগিতায় এবং উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ মধ্যে এই স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ করা হয়। এই অনুষ্ঠানে যাঁদের হাতে স্বাস্থ্য কার্ড তুলে দেওয়া হয়, তাঁদের মধ্যে মো.

তারা মিয়া ছিলেন। তিনি উপজেলা মশাখালী ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য দাবি করে গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়।

গফরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজের আস্থাভাজন পৌরসভার সাবেক মেয়র ইকবাল হোসেনের সঙ্গে তারা মিয়ার ছবি ছড়িয়ে পড়ে। তারা মিয়া মশাখালী টানপাড়া গ্রামের হক মিয়ার ছেলে।

মশাখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম দাবি করেন, তারা মিয়া সাবেক সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ ও সাবেক পৌর মেয়র ইকবাল হোসেনের কাছের লোক। তাঁর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণের ছবি ও ভিডিও আছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর এক দিন রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় নিজের ছোট ভাইয়ের লাঠির আঘাতে চোখে আঘাত পান। এর সঙ্গে জুলাই আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই।

তবে তারা মিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ২০০০ সালের দিকে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদকও ছিলাম। যেসব ছবি ছড়িয়েছে, সেগুলো এডিট (সম্পাদনা) করা। গফরগাঁওয়ে আন্দোলনের সময় পরিবেশ ভালো না থাকায় গাজীপুরের মাওনাতে আন্দোলনে অংশ নিই। সেখানে আমি ডান চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে। আমি যে জুলাই আন্দোলনে আহত, তা প্রমাণ করব।’

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা শাখার আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, তালিকা তৈরির সময় হয়তো সঠিকভাবে যাচাই করা হয়নি। সে কারণে এমনটি হতে পারে। আন্দোলনে ছাত্রলীগের অনেকে ছিলেন। যুবলীগ নেতা তারা মিয়া প্রকৃতই আন্দোলনে আহত হয়ে থাকলে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু ভিন্ন ঘটনাকে যদি জুলাই আন্দোলনে আহত দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় সুবিধা নেন, তাহলে সেটি যাচাই করি বাতিল করা হোক। তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হলে গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এন এম আবদুল্লাহ আল-মামুন গফরগাঁও উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুকে জানান, কোনো ভুল হয়ে থাকলে বা কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে তালিকাভুক্ত হলে তা সংশোধন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে তারা মিয়ার আবেদনের সঙ্গে জমা দেওয়া কাগজপত্র সংগ্রহ করে সেগুলো যাচাই–বাছাই করা হচ্ছে।

ইউএনও বলেন, এ ঘটনায় আজ উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি যথাযথভাবে যাচাই–বাছাই করে প্রতিবেদন দেবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল সদস য ব তরণ

এছাড়াও পড়ুন:

ময়মনসিংহে গারো স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে মামলা, একজন গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে গারো স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তির এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রাত ১০টার দিকে জুগলি ইউনিয়নের নয়াপাগা গ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মিলন মিয়া (২১)। তিনি একই এলাকার বাসিন্দা ও পেশায় অটোরিকশাচালক। এর আগে গতকাল রাতেই মূল অভিযুক্ত আবুল বাশার (২৫) ও তাঁর সহযোগী মিলন মিয়াকে আসামি করে হালুয়াঘাট থানায় মামলা করেন ওই ছাত্রীর মা। তবে মামলার প্রধান আসামিকে আজ সকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা যায়নি।

আরও পড়ুনহালুয়াঘাটে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ১৫ ঘণ্টা আগে

পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দা ওই কিশোরীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরী (১৫) নবম শ্রেণিতে পড়ে। গত সোমবার দুপুরে মিলন মিয়ার (২১) সঙ্গে সে একটি পার্কে বেড়াতে যায়। বিকেলের দিকে সেখান থেকে বাড়ি পৌঁছে দিতে কিশোরীটিকে বাশারের অটোরিকশায় তুলে দেন মিলন। এ সময় বাশার হালুয়াঘাট উপজেলা শহরে পূজামণ্ডপ দেখানোর কথা বলে মেয়েটিকে নিয়ে ঘুরতে থাকেন। একপর্যায়ে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে স্কুলছাত্রীটিকে ধর্ষণ করেন। এরপর রাত ১১টার দিকে গামারীতলা এলাকায় তাকে নামিয়ে দিয়ে অটোরিকশাচালক চলে যান। পরে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে তাকে বাড়িতে নিয়ে যান।

খবর পেয়ে পুলিশ গতকাল রাতেই আবুল বাশারের (২৫) বাড়িতে অভিযান চালায়। তবে তাঁকে পাওয়া যায়নি। ওই সময় অটোরিকশাটি জব্দ করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

হালুয়াঘাট থাকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে আমাদের চেষ্টা চলছে। তাঁর সহযোগী মিলনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিলন জানিয়াছেন, মেয়েটি তাঁর বন্ধু।’

এদিকে হালুয়াঘাটে গারো ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলো। আজ বেলা তিনটায় ঢাকা শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কেন্দ্রীয় সদস্য সাবেক যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) অলিক মৃ।

আজ বুধবার সকালে নিজের ফেসবুকে পেজে পোস্ট দিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ওই ঘটনার নিন্দা ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মেয়েটি জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন। মেয়েটির মা বিএনপি পরিবারের সদস্য ও গত ৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলেও অন্য গারো নারীদের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন। অবশ্যই এই ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ময়মনসিংহে তিন দশকের পঞ্চদুর্গাপূজা
  • ময়মনসিংহে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা, গ্রেপ্তার ২
  • এ বছর ডেঙ্গুতে ২০০ জনের মৃত্যু
  • ময়মনসিংহে গারো স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে মামলা, একজন গ্রেপ্তার
  • ‘আল্লাহ তুই দেহিস’: জোর করে চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় এক আসামি গ্রেপ্তার