ময়মনসিংহে ‘জুলাই যোদ্ধা’ স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণের পর সমালোচনার মুখে ফেরত চাইল প্রশাসন
Published: 26th, June 2025 GMT
ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণের পর যুবলীগ নেতাকে সে কার্ড দেওয়া হয়েছে দাবি করে সমালোচনা শুরু হয়। ওই অবস্থায় বিতরণ করা স্বাস্থ্য কার্ড ফেরত চেয়েছে প্রশাসন, যাচাই শুরু করেছে কাগজপত্রও। আজ বৃহস্পতিবার তদন্ত কমিটি গঠন করার কথাও জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
গত মঙ্গলবার বিকেলে গফরগাঁও উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগিতায় এবং উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ মধ্যে এই স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ করা হয়। এই অনুষ্ঠানে যাঁদের হাতে স্বাস্থ্য কার্ড তুলে দেওয়া হয়, তাঁদের মধ্যে মো.
গফরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজের আস্থাভাজন পৌরসভার সাবেক মেয়র ইকবাল হোসেনের সঙ্গে তারা মিয়ার ছবি ছড়িয়ে পড়ে। তারা মিয়া মশাখালী টানপাড়া গ্রামের হক মিয়ার ছেলে।
মশাখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মনিরুল ইসলাম দাবি করেন, তারা মিয়া সাবেক সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ ও সাবেক পৌর মেয়র ইকবাল হোসেনের কাছের লোক। তাঁর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণের ছবি ও ভিডিও আছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর এক দিন রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় নিজের ছোট ভাইয়ের লাঠির আঘাতে চোখে আঘাত পান। এর সঙ্গে জুলাই আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই।
তবে তারা মিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ২০০০ সালের দিকে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদকও ছিলাম। যেসব ছবি ছড়িয়েছে, সেগুলো এডিট (সম্পাদনা) করা। গফরগাঁওয়ে আন্দোলনের সময় পরিবেশ ভালো না থাকায় গাজীপুরের মাওনাতে আন্দোলনে অংশ নিই। সেখানে আমি ডান চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে। আমি যে জুলাই আন্দোলনে আহত, তা প্রমাণ করব।’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ময়মনসিংহ জেলা শাখার আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বলেন, তালিকা তৈরির সময় হয়তো সঠিকভাবে যাচাই করা হয়নি। সে কারণে এমনটি হতে পারে। আন্দোলনে ছাত্রলীগের অনেকে ছিলেন। যুবলীগ নেতা তারা মিয়া প্রকৃতই আন্দোলনে আহত হয়ে থাকলে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু ভিন্ন ঘটনাকে যদি জুলাই আন্দোলনে আহত দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় সুবিধা নেন, তাহলে সেটি যাচাই করি বাতিল করা হোক। তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হলে গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এন এম আবদুল্লাহ আল-মামুন গফরগাঁও উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুকে জানান, কোনো ভুল হয়ে থাকলে বা কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে তালিকাভুক্ত হলে তা সংশোধন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে তারা মিয়ার আবেদনের সঙ্গে জমা দেওয়া কাগজপত্র সংগ্রহ করে সেগুলো যাচাই–বাছাই করা হচ্ছে।
ইউএনও বলেন, এ ঘটনায় আজ উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি যথাযথভাবে যাচাই–বাছাই করে প্রতিবেদন দেবে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ময়মনসিংহে মামলা করায় নারী যাত্রাশিল্পীকে মারধর, চুল কেটে নির্যাতন
ময়মনসিংহ নগরে এক নারী যাত্রাশিল্পীকে মারধর ও চুল কেটে মুখে কালি মাখিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই ভুক্তভোগী নারী থানায় মামলা করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার শাহ আলম (৪০) চরকালীবাড়ি এলাকার মো. রাশেদের ছেলে। তিনি মামলার ৩ নম্বর আসামি। গতকাল রাত আটটার দিকে তাঁকে জুবিলী ঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নির্যাতনের শিকার যাত্রা নৃত্যশিল্পীর নাম মোছা. রুপা। তিনি নগরের বড় কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলামের স্ত্রী। তবে তাঁরা নগরের পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মাসুদ জামেলী বলেন, ওই নারীকে বেঁধে চুল কেটে মারধর করা হয়েছে, মুখে কালি মেখে দেওয়া হয়েছে। দুটি পরিবারের মধ্যে আগে থেকেই মামলা চলছিল। অপহরণ মামলার আসামিরা জামিনে ছিলেন। আদালতের আরেকটি ভাঙচুরের মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ গত বুধবার দুপুরে ফিরে আসে। তখন প্রতিপক্ষ রাস্তায় রুপাকে আটকে নির্যাতন চালায়।
ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, বড় কালীবাড়ি লোকনাথ মন্দির-সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের একটি বস্তিতে বাস্তুহারা সমবায় সমিতির কাছ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে ৩ লাখ টাকায় একটি জমি কেনেন রুপা। গত বছর সেখানে আধা পাকা ঘর করতে গেলে সমবায় সমিতির সদস্য শাহ আলম চাঁদা দাবি করেন। ১ লাখ টাকা দেওয়ার পরও আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি। টাকা না পেয়ে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর রুপার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় রুপা আদালতে মামলা করেন। এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে চলতি বছরের ৬ এপ্রিল রুপার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে মো. রনি সুলতানকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় রুপা ৯ এপ্রিল মামলা করলে আসামি শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। রুপার করা ভাঙচুর মামলার তদন্ত করতে পুলিশ বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ চলে যাওয়ার পর প্রতিপক্ষ রাস্তায় রুপাকে ধরে নিয়ে বেঁধে মারধর করে, চুল কেটে ও মুখে কালি মেখে হেনস্তা করে। এ সময় তাঁর সামনে মাদক ও টাকা রেখে ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে রুপার স্বামী জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে।
রুপা বলেন, ‘পুলিশ চলে যাওয়ার পরই আমাকে রাস্তায় ধরে নিয়ে গিয়ে বেঁধে চুল কেটে মুখে কালি মেখে দেয়। আমি বিচার চাই।’
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম বলেন, মামলা তদন্ত করে পুলিশ ফিরে আসার পর ওই নারীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে এবং একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে।