যে পাঁচ ক্লাব হতে পারে রদ্রিগোর নতুন ঠিকানা
Published: 26th, June 2025 GMT
রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হয়ে এসে রদ্রিগো গোয়েসের প্রশংসা করেছিলেন জাবি আলোনসো। রদ্রিগো তার পরিকল্পনায় আছেন এবং তাকে শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলার মনে করেন বলেও উল্লেখ করেছিলেন। জাবির অধীনে ক্লাব বিশ্বকাপে রিয়ালের প্রথম ম্যাচের শুরুর একাদশেও ছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান। ম্যাচের একমাত্র গোলও করান তিনি।
কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচেই রিয়ালের শুরুর একাদশে জায়গা হারান রদ্রিগো। ব্রাজিলিয়ান তরুণ বুঝেও গেছেন রিয়ালে যে সম্মান, যে পজিশন, যতটা সময় তিনি খেলতে চান আলোনসোর অধীনে তা মিলবে না। তিনি তাই নতুন এবং সেরা ঠিকানার খোঁজে নেমেছেন। সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছে, রিয়াল মাদ্রিদও ৯০ মিলিয়ন ইউরো পেলে ছেড়ে দেবে এই ব্রাজিলিয়ানকে।
আর্সেনাল: ছয় মৌসুম রিয়াল মাদ্রিদে খেলা রদ্রিগোকে দলে পেতে আগ্রহী ইউরোপের শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কিছু ক্লাব। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছে আর্সেনাল। মিকেল আর্তেতার অধীনে গানাররা ভালো ফুটবল খেলছে। কিন্তু সাফল্যের মাপকাঠি শিরোপা ঘরে তুলতে পারছে না। মিকেল আর্তেতা মনে করেন, তার সিস্টেমে রদ্রিগো খুবই কার্যকরী একজন ফুটবলার হবেন।
আর্সেনাল অবশ্য নিকো উইলিয়ামসের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছিল। তিনি বার্সায় যোগ দেওয়ায় রদ্রিগোয় পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারে গানাররা। এছাড়া আর্সেনাল লেফট ব্যাকে খেলা গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেল্লিকে ছেড়ে দিতে চায়। রদ্রিগোও মূলত রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়তে যাচ্ছেন লেফট উইঙ্গে খেলার সুযোগ না পেয়ে। যেটা আর্সেনালে মিলবে তো বটেই। দলটির মূল খেলোয়াড়ও হবেন তিনি।
বায়ার্ন মিউনিখ: গ্রীষ্মে একজন লেফট উইঙ্গার কিনবে বায়ার্ন মিউনিখ। এরই মধ্যে তারা মার্টিনেল্লির বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছে বলে খবর। নিকো উইলিয়ামসেও আগ্রহী ছিল। বায়ার্ন এখন পর্যন্ত রদ্রিগোকে পাওয়ার চেষ্টা না করার কারণ তার দাম। তবে বায়ার্ন যেহেতু ফ্লোরিয়ান উইর্টজে মোটা অঙ্কের অর্থ খরচে রাজি ছিল সেটা রদ্রিগোয় বিনিয়োগ করতে পারে দলটি। বায়ার্ন মিউনিখও লেফট উইঙ্গার সংকটে ভুগছে। জামাল মুসিয়াল ও মাইকেল ওলিসের সঙ্গে সমন্বয় করে খেলতে পারা ফরোয়ার্ড দরকার তাদের।
চেলসি: গত মৌসুম সেরা চারে শেষ করে চেলসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলা নিশ্চিত করেছে। তবে সত্য হলো, দলটির সাফল্যের পেছনে মিডফিল্ডাররাই ভূমিকা রেখেছেন। ক্লাবটির ফরোয়ার্ড লাইনে প্রতিভাবান ও দক্ষ ফুটবলারের অভাব আছে। রদ্রিগোর মতো একজন হতে পারে চেলসির জন্য স্বপ্নের চুক্তি। অবশ্য ক্লাবটির অস্থিরতা, বারবার মালিকানা ও কোচ বদল হওয়া প্রজেক্ট থেকে ডাক আসলেও রদ্রিগো সাড়া দেবেন কিনা বলা কঠিন।
লিভারপুল ও ম্যানসিটি: গত মৌসুমে রদ্রিগোর প্রতি আগ্রহী ছিল লিভারপুল ও ম্যানচেস্টার সিটি। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ রদ্রিগোর পিঠে ‘বিক্রির জন্য নহে’ ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়ায় তারা অন্যত্র বিনোয়োগ করে ফেলেছে। লিভারপুল যেমন উইর্টজে মোটা অঙ্কের অর্থ ঢেলেছে। ম্যানসিটির লেফট উইঙ্গে ডকু আছেন, সাভিনহোও ওই পজিশনে খেলতে পারেন। আবার ওমর মারমাউশও মূলত লেফট উইঙ্গার। এই দুই ক্লাবের আপাতত রদ্রিগোকে কেনার সুযোগ কম। তবে পেপ গার্দিওলা সহজে রদ্রিগোর মতো ফুটবলার কেনার সুযোগ হাতছাড়া নাও করতে পারেন।
ম্যানইউ: রুবেন আমোরিম নতুন প্রজেক্ট দাঁড় করাতে চান। যে প্রজেক্টে এরই মধ্যে ম্যাথিউস কুনিয়া যোগ দিয়েছেন। রদ্রিগো হতে পারে তার স্বপ্নের সাইন। যদিও ম্যানইউ এক যুগ ধরেই অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বছর বছর ফুটবলার কিনে ছেড়ে দেওয়া, কোচ পরিবর্তন, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা না পাওয়া এসব কারণে ওই প্রজেক্টে খুব একটা সাড়া রদ্রিগোর দেওয়ার কথা নয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ টবল দলবদল আর স ন ল ফ টবল র
এছাড়াও পড়ুন:
সংবেদনশীল না হলে কেউ ভালো শিল্পী হতে পারে না: জুয়েল আইচ
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রায়ই তরুণদের দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ভুগতে। ফলে অনেক সময় যথেষ্ট মেধা, আগ্রহ ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারেন না। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা জোগাতে প্রথম আলো ডটকম ও প্রাইম ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পডকাস্ট শো ‘লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হকের সঞ্চালনায় একাদশতম পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। আলোচনার বিষয় ছিল ‘শিল্প, মুক্তিযুদ্ধ এবং মানবতার সংমিশ্রণে গঠিত এক অনন্য লিগ্যাসি’।
‘মানুষ তার আশার সমান সুন্দর, বিশ্বাসের সমান বড় এবং কাজের সমান সফল। কাজই মুক্তি। তবে আশাও বড় রাখতে হবে। আশা না থাকলে কাজ হবে না।’ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্দেশে কথাগুলো বলেন জুয়েল আইচ। পডকাস্ট শোর এ পর্ব প্রচারিত হয় গতকাল শনিবার প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে।
পডকাস্টের শুরুতেই সঞ্চালক জানতে চান, মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে প্রথম যেদিন জাদু দেখালেন, সেই অনুভূতি কেমন ছিল?
উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সব বাদ দিয়ে যুদ্ধে যোগ দিই। আমরাই খুব সম্ভবত প্রথম পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিহত করি। আমি শৈশব থেকেই জাদু দেখাই। তবে মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থীশিবিরে জাদু দেখানোর সেই অনুভূতিটি ছিল একেবারেই ম্যাজিক্যাল।’
প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, শিল্পকে সাহস করে অস্ত্রতে পরিণত করার এই আত্মবিশ্বাস কোথা থেকে এল?
জুয়েল আইচ বলেন, ‘এটা আত্মবিশ্বাস নয়। আমি অসম্মান সহ্য করতে পারি না। আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই দেখছিলাম, তারা (পাকিস্তান) আমাদের বিভিন্নভাবে অসম্মান করে আসছে। কখনো গানে, কখনো ছবি এঁকে কিংবা কবিতার ভাষায় আমরা সব সময় এর প্রতিবাদ করে এসেছি। এভাবে করেই শেষ পর্যন্ত আমরা মুক্তিযুদ্ধে নেমে গেলাম।’
জুয়েল আইচকে কেউ বলেন ম্যাজিশিয়ান, আবার কেউ বলেন মিউজিশিয়ান। তবে জুয়েল আইচ একজন দার্শনিকও বটে। জাদুর মোহনীয়তা আর বাস্তবতার যে রূঢ় চিত্র—এই দুটো আপনার জীবনে কেমন প্রভাব ফেলেছে?
সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে জুয়েল আইচ বলেন, ‘বাস্তবতাকে আমরা বলে থাকি “কঠিন” আর স্বপ্ন তো আমরা আকাশসমান ভাবতে পারি। একদম রংধনুর মতো সাত রং। এই দুটোকে যদি কেউ আয়ত্ত না করতে পারে, তবে তার জীবন কিন্তু সেখানেই শেষ। সে বেঁচে থাকবে কিন্তু মরার মতো।’ তিনি বলেন, ‘সে জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দরকার। যেমন আপনি কোনোভাবেই আমাকে দুঃখী বানাতে পারবেন না। আমি দুঃখ পাই না, তবে বারবার আমাকে খ্যাপাতে থাকলে আমি রুখে দাঁড়াই।’
জুয়েল আইচ কখনোই পরিপূর্ণ প্রস্তুতি ছাড়া স্টেজে ওঠেন না। সঞ্চালক জানতে চান, এর পেছনে কারণ কী?
জুয়েল আইচ বলেন, প্রস্তুতি ছাড়া কোনো কাজ সুন্দরমতো হয় না। প্রস্তুতি ছাড়া যদি কেউ কিছু করে, তবে সেগুলো অনেক নিম্নমানের হবে। তিনি বলেন, ‘আমি একটি বাঁশি দিয়ে সব রাগ বাজাতে পারি। এটা কি এক দিনেই সম্ভব!’
আপনার পারফরম্যান্সের সময় আপনি মাঝেমধ্যে নিঃশব্দ হয়ে যান। যেখানে কোনো উদ্যম নেই। এই ‘সাইলেন্স’-এর কারণটা কী?
সঞ্চালক জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, শব্দের চেয়ে নিঃশব্দের ভাষা বেশি গভীর। একটি পেইন্টিং, যেখানে কোনো শব্দ থাকে না কিন্তু কত কিছু বলে দেয়! দেখবেন কেউ অনেক খেপে গেলে নীরব হয়ে যায়। আসলে শব্দে যা বলা যায়, নিঃশব্দে তার চেয়ে বেশি প্রকাশ করা সম্ভব।
বর্তমানের এই ডিজিটাল যুগে সবকিছুই হাতের নাগালে, এমনকি জাদুও। জাদু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আসার পর এর আবেদন কিছুটা কমে যাচ্ছে কি না? জানতে চাইলে জুয়েল আইচ বলেন, খালি চোখে দেখলে তা আসলেই কমে যাচ্ছে। কারণ, এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে যে জাদুগুলো দেখানো হচ্ছে, তা দেখে মানুষ বিস্মিত। তিনি বলেন, ‘তারা ভাবছে, আমরা আগে যেসব জাদু দেখেছি, এগুলো তো তার থেকেও বিস্ময়কর। কিন্তু তারা হয়তো বুঝতে পারছে না, এখন সবকিছুর সঙ্গে মিশে গেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।’
সঞ্চালক এরপর প্রশ্ন করেন, আপনি একসময় ‘পালস স্টপিং’ ধরনের ইলিউশন বন্ধ করেছিলেন। এর পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল?
জুয়েল আইচ বলেন, ‘এই পালস স্টপিংয়ের মাধ্যমে আমি পুরো দেশজুড়ে এক বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলাম। দলে দলে মানুষ এটি দেখতে আসত। কিন্তু এসব দেখে মানুষ অনেক বেশি আতঙ্কিত হতো, অনেক মানুষ অজ্ঞান হয়ে পড়ত। একবার একজন অনেক বড় পালোয়ান এটি দেখতে এসে অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। সেদিন শো শেষ করেই আমি আমার টিমকে বলি, এই ম্যাজিক আর হবে না। কারণ, এই ম্যাজিক এত এত মানুষকে ডেকে আনছে বটে কিন্তু এটি মাত্রা অতিক্রম করে ফেলছে। যা মোটেও ঠিক নয়।’
প্রসঙ্গক্রমে সঞ্চালক জানতে চান, তাহলে কি একজন শিল্পীকে সংবেদনশীলও হতে হয়?
‘অবশ্যই।’ জুয়েল আইচ বলেন, একজন শিল্পীকে অবশ্যই সংবেদনশীল হতে হবে। সংবেদনশীল না হলে তিনি ভালো শিল্পী হতে পারবেন না।
আপনি যেমন বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতাদের সামনে পারফর্ম করেছেন, তেমনি এমন শিশুদের জন্যও জাদু দেখিয়েছেন, যারা কখনো টিকিট কিনে শো দেখতে পারে না। আপনার চোখে আসল মর্যাদা কোথায়—বৃহৎ মঞ্চে, নাকি একটিমাত্র বিস্মিত মুখে?
সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে জুয়েল আইচ বলেন, ‘আসলে মঞ্চ ব্যাপার নয়। আমি আমার জাদুতে বিস্মিত এবং মুগ্ধ হয়ে থাকা দেখতে ভালোবাসি। শুধু বিস্ময় নয়, বিস্ময়ের সঙ্গে মুগ্ধতা আমার ভালো লাগে।’
আরও পড়ুননীতি আর মূল্যবোধ শক্ত থাকলে কেউ থামাতে পারবে না: রুবাবা দৌলা১২ অক্টোবর ২০২৫পডকাস্টের শেষ পর্যায়ে সঞ্চালক জানতে চান, আমরা আরেকজন জুয়েল আইচ কবে পাব?
মুচকি হেসে জুয়েল আইচ বলেন, ‘যখন সেই উদ্যম নিয়ে কেউ কাজ করবে, ঠিক তখন। সে হয়তো আমাকেও ছাড়িয়ে যাবে। শুধু ম্যাজিকে নয়, সব দিক দিয়েই।’
আরও পড়ুনবাবা প্রথমে আমাকে অফিস সহকারীর কাজ দিয়েছিলেন: হাতিলের চেয়ারম্যান সেলিম এইচ রহমান০৫ অক্টোবর ২০২৫